ক্যান্সার প্রতিরোধে নতুন যৌগের সন্ধান বাঙ্গালী বিজ্ঞানীর, মিলেছে বিশ্ব স্বীকৃতি

0
605

বঙ্গদেশ ডেস্ক:ক্যান্সার প্রতিরোধে নতুন ধরনের জটিল যৌগের সন্ধান পেয়েছেন বাঙ্গালী বিজ্ঞানী শঙ্কর চন্দ্র মই। তিনি এনআইটি দুর্গাপুরে রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। তিনি বিভাগের গবেষক পড়ুয়াদের একাংশকে নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ল্যাবরেটরিতেই। সামান্য ও সীমিত পরিকাঠামোতে এই সাফল্য লাভে উচ্ছ্বসিত এনআইটি কর্তৃপক্ষ। বাঙ্গালী বিজ্ঞানীর এই গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন আমেরিকান কেমিক্যাল স্যোসাইটির গবেষণাপত্র ‘ল্যাংমুইর’। বিশ্বজুড়ে খ্যাতিসম্পন্ন এই জার্নালে মাত্র কয়েকদিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। গবেষকদের দাবি, ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধ সিসপ্ল্যাটিন ও কার্বোপ্ল্যাটিনের তুলনায় ওই নতুন জটিল যৌগটি বেশি কার্যকার। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ক্যান্সার কোষের উপর এটিকে প্রয়োগ করলে অন্য যৌগগুলির তুলনায় সমপরিমান বা বেশি কাজ করছে। অথচ, সাধারণ কোষের ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া অন্যদের তুলনায় অনেক কম। অর্থাৎ কেমোথেরাপির পর রোগীর শরীরে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, এই যৌগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা অনেকটাই কম হবে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হতেই দুনিয়াজুড়ে শোরগোল শুরু হয়েছে।

এনআইটি দুর্গাপুরের অধিকর্তা বিজ্ঞানী অনুপম বসু জানিয়েছেন, পরিমিত পরিকাঠামোর মধ্যে দিয়ে এইরকম একটি কঠিন গবেষণায় সাফল্য লাভ করেছেন। যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং গর্বের। গবেষণা করে দেখা গিয়েছে নতুন এই যৌগটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম। ট্রায়ালের পর ওষুধ হিসাবে এই যৌগ বাজারে এলে বহু মানুষ সুবিধা লাভ করবে। গবেষকরা বলেছেন, প্ল্যাটিনামের সঙ্গে জৈব যৌগের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এই বিশেষ জটিল জৈব যৌগ তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরীক্ষাগারে ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ‘এ-৫৪৯’-এর উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। একই ধরনের সেলের উপর সিসপ্ল্যাটিনও প্রয়োগ করেও দেখা হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, দু’টি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সমপরিমাণ কাজ করছে। কোনও ক্ষেত্রে আবার নতুন যৌগটি আগেরটির তুলনায় বেশি ভালো কাজ করেছে। এরপর নতুন জটিল যৌগটি ও সিসপ্ল্যাটিনটিকে সাধারণ সুস্থ এমব্রায়োনিক বৃক্ক (কিডনি) সেল লাইন ‘এইচইকে-২৯৩’-এর উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। তার অভূতপূর্ব সাফল্য দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন গবেষকরা। সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত হয়েছেন তাঁরা। গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, সিসপ্ল্যাটিনের প্রতিক্রিয়ার চেয়ে নতুন আবিষ্কার হওয়া যৌগটিতে প্রতিক্রিয়া অনেক কম। গবেষকরা দাবি করেছেন, ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধগুলি ক্যান্সার কোষের উপর কাজ করতে গিয়ে সাধারণ কোষগুলিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। ফলত, চুল উঠে যাওয়া সহ নানান উপসর্গ দেখা যায়। এমনকি অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে। এই নতুন যৌগকে গবেষণার ভাষায় ‘ড্রাগ ক্যান্ডিডেট’ বলা হয়। সেটা এবার ইঁদুর, গিনিপিগ, বাঁদর ও মানুষের শরীরে প্রয়োগে সফল হলে ড্রাগ বা ওষুধ হিসাবে স্বীকৃতি পাবে। সঙ্গে সঙ্গে খুলে যাবে ক্যান্সার চিকিৎসার এক নতুন দিগন্ত।

ক্যান্স্যার নিয়ে ধারাবাহিক গবেষণার জন্য এবছরই লন্ডনের ‘রয়্যাল সোস্যাইটি অব কেমিস্ট্রি’ শঙ্করচন্দ্র মইকে ফেলো মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত করেছে। শঙ্করবাবু বাঁকুড়ার রাইডি-দলদলি গ্রামের এক কৃষক পরিবারের সন্তান। গবেষণার কাজে তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁরই বিভাগেরই দুই গবেষক পড়ুয়া সৈকত মণ্ডল ও স্বরূপকুমার তরা‌ই। তাঁরাও উল্লেখযোগ্য কাজ করার জন্য ভীষণ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এরই পাশাপাশি, এনআইটি কেমিষ্ট্রি বিভাগের পিএইচডি করা আরও তিন পড়ুয়া ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পিএইচডি করা ছাত্র এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। রসায়ন বিভাগের অন্য তিন অধ্যাপক হলেন অপূর্ব পাত্র, দীপঙ্কর শুকুল ও রাজনারায়ণ সাহাও সাহায্য করেছেন শঙ্করবাবুকে। যৌথভাবে আবিষ্কৃত এই যৌগ দ্রুত ড্রাগের স্বীকৃতি পেয়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হলে ক্যান্সার চিকিৎসায় আরও সাফল্য মিলবে।