ভারতের ঔপনিবেশিক শাসনের দীর্ঘায়িত সময়ে, ১৯৪৭ সালটি উল্লেখযোগ্য স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। অন্য এক যুগের সূচনাও চিহ্নিত করে এই সাল। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের এক মাস পরে, পোল্যান্ডে সোভিয়েত পলিটব্যুরোর কর্মকর্তা আন্দ্রেই জ্দানভের নেতৃত্বে একটি তথ্যমূলক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটিতে ইউ এস এস আর এবং তার মিত্র শক্তিগুলির মধ্যে যুদ্ধকালীন মধুর সম্পর্কের অন্ত্যেষ্টির কথা প্রকাশিত হয়েছিল। সম্মেলনে, জ্দানভ আমেরিকাকে যুদ্ধবাজ এবং সাম্রাজ্যবাদী নামে দোষারোপ করে ঘোষণা করেছিলেন যে কেবল সমাজতন্ত্রই বিশ্বে সত্যিকারের গণতন্ত্র ও শান্তি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
“সমস্ত জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির একনিষ্ঠ পুজারী দেশগুলি, জাতীয় ও জাতিগত শোষন ও নিপীড়ন এবং ঔপনিবেশিক শোষণের শত্রু” বলতে কারা? ইউ এস এস আর, যুগোস্লাভিয়া, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া এবং হাঙ্গেরির মতো দেশগুলি আবার কারা! ইউ এস এস আর ই ছিল প্রথম দেশ এই সম্মেলনের আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়ার জন্য।
ফেব্রুয়ারি ২৪- ২৭, ১৯৪৮: কলকাতা
ইভেন্ট: দক্ষিণ- পূর্ব এশীয় যুব সম্মেলন
নীতিনির্ধারকদের এই গুপ্ত আলোচনা সভাতে রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, “এশিয়াটিক দেশগুলিতে প্রযোজ্য কমিউনিস্ট নীতি”র বিশদ বিবরণের জন্য। তদনুসারে, সম্মেলনটিতে এই ধরণের একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল যে, “দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াটিক” দেশগুলিতে সহিংস বিদ্রোহ এবং গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কমিউনিস্ট দলগুলির পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।
এপ্রিল মাসে, বার্মায়, জুন মাসে, মালয়ে এবং সেপ্টেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হলো হিংস্র বিদ্রোহ। তবে, ভারতবর্ষ একটি ভিন্নতর নিদর্শনের উপস্থাপনা করেছিল কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি নিন্দিত হয়েছিল, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামকে নাশকতামূলক আখ্যা দেওয়ায় এবং দেশজুড়ে জাতীয়তাবাদের যে স্রোত বয়ে চলেছিল তার বিরোধিতা করায়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্য মুসলিম লীগের দাবির প্রতি তাদের উন্মুক্ত পক্ষপাতের কারণে তারা দেশবাসীর সমর্থনও হারিয়ে ফেলল। নবাব নেহেরু ছাড়াও, বাকী জনগনকেও তারা বোকা বানাতে পারল না যখন তারা তাদের “সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের” স্লোগানকে “জনগণের যুদ্ধে” রূপান্তরিত করতে চাইল।
মিনু মাসানী, লিখলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির(সিপিআই) চমৎকার ইতিহাস… তাদের পৌনঃপুনিক ছলচাতুরী, প্রতারণা এবং রঙ বদলানো গিরগিটির মতো ক্রিয়াকলাপগুলির সম্বন্ধে, যা পাল্টে দিয়েছিল মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী। ক্রেমলিনের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির বন্ধনের দৃঢ়তা শিথিল হয়ে আসছিল। ১৯৪৫ সালে সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সাধারণ নির্বাচনের ফল প্রকাশে দেখা গেল, তারা একটিও নির্বাচনী অঞ্চলে জয়লাভ করতে পারেনি। সুতরাং, জ্দানভের ঘরোয়া সন্ত্রাসবাদের আহ্বান সি পি আইয়ের কানে যেন মধু বর্ষণ করল।
বিশ্বাসঘাতক “কোলকাতা পার্টি লাইন”
রাজনৈতিক তত্ত্ব: উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অবিলম্ব, দ্রুতগতির কার্যকলাপ পূর্বোক্ত সম্মেলনের ঠিক একদিনের মধ্যে। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ সালে কলকাতায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হলো। এই যজ্ঞে ৮০০ জন ভারতীয় প্রতিনিধি এবং অস্ট্রেলিয়া ও বার্মা দেশের পনেরো জন বিদেশি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এই জমায়েতেই পেশ করা হলো সেই সাংঘাতিক ‘কলকাতা থিসিস’ যা ছিল জ্দানভের শর্তগুলির অন্ধ অনুকরণ।
জ্দানভের বক্তব্যের বর্ণনা করেছেন মিনু মাসানী:
‘বুর্জোয়া নেতৃত্বের কাহিনী যদিও বোঝাতে চেয়েছিল যে স্বাধীনতার জয় হয়েছে কিন্তু আসলে স্বাধীনতা- সংগ্রামীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল এবং জাতীয় নেতৃত্ব এক অনৈতিক চুক্তির বাস্তবায়ন করেছিল, অনাহারী মানুষদের অজান্তেই… গণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রতিটি শ্লোগানেরই বিরোধিতা করা হয়েছিল। সাংবিধানিক উপায়ে সমাজতন্ত্র অর্জন করা যেতে পারে’ এই প্রচারের জন্য তীব্র ভাবে নিন্দিত হলেন ভারতীয় সমাজতান্ত্রিকেরা। কমিউনিস্টদের আহবান জানানো হলো সমস্ত জঙ্গী সংগঠনকে একত্র করে একটি ‘গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ গঠন করে, সত্যিকারের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জনের জন্য চূড়ান্ত লড়াই শুরু করতে।
কল্পনার কোনও অবকাশ না রেখেই ব্যাপারটি অতি সুস্পষ্ট। আমার মতো একজন প্রবীণ (বর্তমানে মৃত) শিক্ষানীতিবিদের মতে “মস্কো হাঁচলেও, রাশিয়ার আনুগত্যে ভারতের মাটিতে সর্দিতে ভুগবে ভারতীয় কমিউনিস্টরা।”
কন্নড় ভাষাতে যেন শব্দগুলো আরও বেশী প্রাণবন্ত। সেইমতে, সি পি আইয়ের কেন্দ্রীয় কমিটি একটি বিবৃতি জারি করে, সংবিধানের খসড়া হিসাবে ভারতের সংবিধানের ছকা খসড়াটির নিন্দা ক’রে।
মিনু মাসানীর দেওয়া, ঘাতক বিবরণ অনুযায়ী ঘটনাবলীর পর্যালোচনা করা যাক…
কম্যুনিস্ট পার্টিকে তখন সমস্ত রকম ‘সংস্কারবাদী’ উপাদান থেকে মুক্ত এবং স্বৈরতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ বাইরে রাখা হলো… ভারতের কমিউনিস্টরা আগে কখনও এইধরনের নীতি অনুসরনের কথা চিন্তাও করতে পারেনি।
রণদিভে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে ভারতবর্ষ তখন তৈরি ছিল বিপ্লবের জন্য, সময়টি সঠিক ছিল এবং রাশিয়ার ১৯১৭ সালের অক্টোবর- অভ্যুত্থানের মতো ভারতে চূড়ান্ত বিপ্লব- প্রকৌশলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ছিলেন তিনিও।
‘শক ব্রিগেড’ এবং ‘গেরিলা ব্যান্ড’ গুলিকে সংগঠিত করা হয়েছিল, গোঁড়া লেনিন-স্টালিন মতবাদ অনুসারে… যাঁদের তিনি তাঁর পথনির্দেশক মনে করতেন। বেপরোয়া এবং হিংস্র বিদ্রোহের একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন তিনি, যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ভারত সরকারকে উৎখাত করা।
সৌভাগ্যক্রমে, ১৯৪৮ সালের ভারতবর্ষ, প্রারম্ভিক কমিউনিস্ট চরমপন্থীদের তৃতীয় প্রজন্মের প্রাণঘাতী মারণের দখলে পড়া সোনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস সরকার ছিল না। সুতরাং দ্রুত কর্মক্ষমতায়, মার্চ- এপ্রিলের মধ্যেই সন্ত্রাসবাদী এস এ ডাঙ্গে সহ সি পি আইয়ের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বেরা কারারুদ্ধ হলেন। সি পি আই সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক ভাবে ঐতিহাসিক আগ্রহ জাগিয়েছিল।
এই গ্রেপ্তারের বৈধতা সম্পর্কে মুখ খুললেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরণ শঙ্কর রায়।
কম্যুনিস্ট পার্টির দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় নিরবচ্ছিন্ন প্রচার শুরু হলো, আগামী ছ’মাসের প্রত্যাশিত, উন্মুক্ত ও গুপ্ত সশস্ত্র অভ্যুত্থান এবং হিংস্র ক্ষমতা দখলের প্রস্তুতি হিসেবে।
তারা প্রকাশ করল যে সমগ্র ভারতে সশস্ত্র গণ-উত্থানই পার্টির চূড়ান্ত লক্ষ্য।
মাদ্রাজ সরকারের একটি বিবৃতি অনুযোগ তুলেছিল যে কমিউনিস্টরা প্রান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষকে ভীত- সন্ত্রস্ত করে, সমান্তরাল প্রশাসন ব্যবস্থা স্থাপনের চেষ্টা করে চলেছে… সাধারণ মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলছে শ্রেণী- বিদ্বেষ ও লাগামহীন সহিংসতা। তারা তাদের নাশকতা- নীতির মাধ্যমে দেশের উৎপাদনশীল শিল্প সত্বার শ্বাসরোধ করে, গণতন্ত্রের ভিত্তিতে আঘাত হেনে জনপ্রিয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চলেছে তারা।
সত্তর বছর পরে ভারতের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত রূপ পেল।
কমিউনিস্ট দেশ-বিধ্বস্তকারী, ভার্নন গনসাল্ভেস, সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেরা, এবং বারভারা রাও- এর মতো বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে কোনও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে অসহায়তায় ভুগতে থাকল ভারতীয় রাষ্ট্র কেননা সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও বিরোধিতার সাহস দেখাতে বা আওয়াজ তুলতে সক্ষম ছিল না কেউই। কারণবশত কমিউনিস্ট সন্ত্রাসীরা, দেশের প্রশাসনিক এমনকি বিচার বিভাগীয় কর্মক্ষেত্রেও ব্যাপক, গভীর এবং সফলভাবে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিল।
তবে ১৯৪৮ এর দিকে যদি ফিরে দেখা যায়, যে পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন মাসানী।
নাশকতা, বিবাদ, লুটপাট এবং খুন জখম ভারতীয় সমাজের নিত্য নৈমিত্তিক বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে পরবর্তী দেড় বছরে। বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তারের হাত এড়িয়ে, আন্দোলন পরিচালনার জন্য গুপ্ত পন্থা অবলম্বন করলেন। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলি ছিল পশ্চিমবঙ্গ… প্রধানত কলকাতা, অন্ধ্র প্রদেশ ও মাদ্রাজের মালাব্বার, বোম্বের আহমেদনগর জেলা, ইউ পির পূর্ব ভাগ, পাঞ্জাবের অমৃতসর জেলা, ইন্দো-বার্মা সীমান্তের মণিপুর এবং হায়দরাবাদ।
পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, হায়দরাবাদ এবং ট্রাভানকোর- কোচিনের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যে নিষিদ্ধ হয়ে গেল কমিউনিস্ট পার্টি। ইন্দোর এবং ভোপাল রাজ্যেও পার্টির ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে বন্দীদশাগ্রস্ত কমিউনিস্টের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫০০।
কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দী কমিউনিস্ট এবং জেল কর্মকর্তাদের মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষ বাধতে থাকল… বোম্বাই রাজ্যের সাবরমতী কারাগারে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল। পুলিশসহ দু’জন নিহত ও বত্রিশজন আহত হয়। মাদ্রাজের কুদ্দালোরে এক ব্যক্তি নিহত এবং আশি জনের বেশি আহত হয়েছিল। বাংলায়, দম দম কারাগারেও তিনজন নিহত ও আঠারো জন আহত হয়।
এই ধরনের ঘটনা গুলি কোরিয়ার নিকটবর্তী কোজে দ্বীপের যুদ্ধ- বন্দীদের মধ্যে ঘটতে থাকা, আন্তর্জাতিক পরিচিতি প্রাপ্ত কৌশল নীতিগুলির ছোট নমুনা মাত্র।
তবে কম্যুনিস্ট সন্ত্রাসীদের হিংসাত্মক কাজকর্মের সবথেকে বেশী বাড়াবাড়ি ঘটেছিল তেলেঙ্গানায়। এই ঘটনা এতটাই নির্মম ও ব্যাপক ছিল যে হায়দরাবাদ সরকার (তখন এই নামেই পরিচিত ছিল ) “হায়দরাবাদ কমিউনিস্ট ক্রাইম” নামে একটি মনোগ্রাফ(বিবরণ গ্রন্থ) প্রকাশ করেছিল, যেখানে সি পি আইয়ের অসাধারণ নিষ্ঠুর অত্যাচারের বিবরণ নথিভুক্ত করা হয়েছিল।
একটি নমুনা দেওয়া যাক:
১৯৪৬ সালের ১৫ ই আগস্ট থেকে ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা প্রায় ২,০০০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, আক্রান্ত হয়েছিল ২২ টি পুলিশ ফাঁড়ি। গ্রামের নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে ধ্বংস করে দিয়েছিল গ্রামগুলিকে, বলপ্রয়োগের দ্বারা বিশাল সংখ্যক গ্রাম কর্মকর্তাকে নাজেহাল করা হয়েছিল।
“চাদ্রি” এবং শুল্ক ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে, তারা বাজেয়াপ্ত করে ২৩০টি বন্দুক, ফসলের ধান নষ্ট করে দেয় এবং এক লক্ষ টাকারও বেশি মূল্যের নগদ ও গহনা লুট করে।
তারা যোগাযোগ ও সরবরাহ পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে ব্যাপকভাবে। সুষ্ঠু ও সংগঠিত ভাবে গেরিলা যুদ্ধের কৌশল রপ্ত ক’রে তারা লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে তাদের সংগ্রহীত অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে।
৫০০ জনের বেশী সশস্ত্র কমিউনিস্ট নলগোন্ডা জেলার হুজুরনগর তালুকের পেডাভিড গ্রামে হানা দিয়ে, নারী- শিশু নির্বিশেষে প্রায় দশজন গ্রামবাসীকে হত্যা করে… আহত করে আরও জনা দশেককে। শিশুদের ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় জ্বলতে থাকা আগুনে। প্রায় ৭০টি বাড়ি জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয় তারা।
এই ঘটনাগুলি ঘটে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য… কেননা, পেডাভিডের এক গ্রামবাসী নিকটবর্তী গ্রামে লুকিয়ে থাকা কুখ্যাত কম্যুনিস্ট সমাজবিরোধী কোট নারায়নের উপস্থিতি সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য সরবরাহ করেছিল।
পেনগোটের নিকটবর্তী স্থানে, এক মহিলাসহ ষোল জনকে অপহরণ করে লিঙ্গগিরিতে নিয়ে যায় কমিউনিস্টরা। হত্যা করে তাদের মৃতদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দগ্ধ লাশগুলি পরে লিঙ্গগিরি সীমান্তের কাছে পড়ে থাকতে দেখা যায়। মহিলাটির সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পঁচিশটি কমিউনিস্টদের একটি দল রাতে ধামিপাহাদ গ্রামে প্রবেশ করে, এক বয়স্ক মুসলিম মহিলাকে ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায় এবং বল্লমবিদ্ধ করে হুত্যা করে তাকে।
এই সংবাদ গুলি, প্রবাদমূলক গণহত্যার হিমশৈলের মাথাটুকু মাত্র।
কমিউনিজমের সত্যিকারের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসাধারণকে শিক্ষিত করতে “ভারতে কমিউনিস্ট হিংসা” শিরোনামে একটি পৃথক মনোগ্রাফ প্রকাশ করেছে, ভারত সরকার। কমিউনিস্ট দলের এই সমস্ত রকম বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ কাণ্ডকারখানার প্রায় পুরো বিবরণীই জনগনের জন্য উন্মুক্ত এবং উপলব্ধ সেখানে। সমালোচকদের উক্তি কিন্ত এই বিবরণীর অন্তর্ভুক্ত নয়। ভাষণ, পুস্তিকা, মনোগ্রাফ, প্রচারের উপাদান, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের রেকর্ডগুলি এক কথায় সম্পূর্ণ প্রমাণপত্র। একে, এই দেশের কমিউনিস্টদের আরও একটি দুর্দান্ত সাফল্য বলা যায় যেভাবে তারা প্রমাণের নথিপত্র গুলিকে সরিয়ে ফেলতে কার্যকর এবং সফল হয়েছে।