বোরখার আড়ালে লুকানো ছিল ধারালো অস্ত্র, বিস্ফোরক মনিকা অরোরা

0
1136

বঙ্গদেশ ডেস্ক: ‘দিল্লি রায়ট ২০২০; দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ব‌ইটি এখনও অবধি বেশ কয়েকবার শিরোনামে উঠে এসেছে। অপ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি এই ব‌ইয়ের লেখিকা মনিকা অরোরা দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে প্রকাশিত হতে চলা ব‌ইয়ে দাবি করেছেন, “দিল্লি দাঙ্গায় জড়িত মহিলা বিক্ষোভকারীরা তাঁদের বোরখার নিচে লুকিয়ে থাকা ধারালো তরোয়াল ও ছুরি দিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করেছিল।”

চলতি বছরের শুরুর দিকে রাজধানীতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল৷ সেখান থেকেই দিল্লি দাঙ্গায় ইন্ধন যোগানো হয়েছিল বলে অভিযোগ৷ আর তা নিয়েই বই লিখেছেন মনিকা অরোরা, প্রেরণা মালহোত্রা ও সোনালী চিতলকর৷ বইয়ের নাম ‘দিল্লি রায়ট ২০২০: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’৷

এই ব‌ইটি বারবার বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। বইটি প্রথমে ব্লুমসবারি ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত হওয়ার কথা বলা হলেও বামপন্থী লিবেরালদের চাপে পিছু হটতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। পরে ওই প্রকাশনা সংস্থা ব‌ইটি প্রত্যাহার করে নেয়। বইটির অন্যতম লেখিকা মনিকা অরোরা তাঁর লিখিত বই থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতাংশ তুলে নিয়ে টুইট করেন, “দিল্লি দাঙ্গা কোনও স্বতঃস্ফূর্ত বিরোধিতা নয়৷ বরং একটি সূক্ষ্ম পরিকল্পনাযুক্ত পদক্ষেপ ছিল।”

লেখিকা মনিকা অরোরা অভিযোগ করেছেন, যে সমস্ত লোকজন ডিএসপি শর্মা ও তার কনস্টেবল রতন লালকে ধাওয়া করেছিল, তারা একটা সচল নার্সিংহোম পর্যন্ত ভেঙেচুরে তছনছ করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত, পুলিশ কর্মকর্তারা ওই নার্সিংহোমে ডিএসপি শর্মাকে আহত অবস্থায় ভর্তি করেছিল।

অরোরা তাঁর ব‌ইয়ে উল্লেখ করেছেন, “হামলাকারী লোকজন পাথর, লাঠি ও রড নিয়ে পুলিশকে তাড়া করেছিল। হামলাকারীদের মধ্যে অবশ্য মহিলারাও যুক্ত ছিল। মহিলার দল ক্রমাগত পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকে এবং রড দিয়ে পুলিশবাহিনীকে আঘাত করতে শুরু করে। সেই সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজন এগিয়ে এসে দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে পুলিশবাহিনীকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে।” পরবর্তীতে পুলিশের ওপর হামলার এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।

তাঁর আসন্ন বই থেকে কিছু অংশ তুলে নিয়ে অরোরা ট্যুইট করে বলেছেন, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের নামে বিক্ষোভকারীরা যে হিংস্র প্রবণতা দেখিয়েছেন, তা এই ব‌ইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। শাহীনবাগে বিক্ষুব্ধ জনতা ভারতের জাতীয় পতাকার মর্যাদা ভুলুন্ঠিত করেছে। প্রকাশ্যে উত্তেজিত জণগণকে তেরঙা পতাকায় আগুন ধরিয়ে দিতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, পেট্রল ঢেলে পুড়িয়েও দেওয়া হয়েছে জাতীয় পতাকা। এবং অনেক হামলাকারীকে পতাকায় মুড়ে বোমা ছুড়তে দেখা গেছে। ফলে সমগ্র এলাকা জুড়ে এক অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল।”

ব‌ইটির একটি অংশে লেখা হয়েছে, গান্ধীজি ও বিআর আম্বেদকরের ছবিতে মাল্যদান করে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে যে বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল৷ তার অন্তিম পরিণতি হয় দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতীয় পতাকা পোড়ানোর মধ্যে দিয়ে। জাতীয় পতাকায় মুড়ে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়, আশেপাশের দোকান ও বাড়িগুলো ভেঙেচুরে তছনছ করে দেওয়া হয়।

প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ব্লুমসবারি ইন্ডিয়া প্রকাশনা থেকে ‘দিল্লি রায়ট:২০২০; দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ বইটি প্রকাশ করা হবে। কিন্তু এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বামপন্থী লিবেরালরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ব্লুমসবারি কর্তৃপক্ষ রাতারাতি ব‌ইটি প্রত্যাহার করে নেয়। তখন উক্ত ব‌ইটি গড়ুর প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত করবে বলে ঘোষণা করে। বিতর্কিত অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর সহ কয়েকজন বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীদের দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে লিখিত বইটির বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে, যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরোধিতার নাম করে বামপন্থী সংগঠনগুলি প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জনগণকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করাটাই এই দাঙ্গার আসল উদ্দেশ্য ছিল। ‘দিল্লি রায়ট ২০২০; দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ব‌ইটি ২০ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন অর্ডারের মাধ্যমে পাঠক পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন প্রকাশক।