মাদার তেরেসা ও চার্চের কর্মকর্তারা এক হাজারেরও বেশি যৌন নির্যাতনকারীকে রক্ষা করেছিলেন

0
1565

নির্যাতিতের বক্তব্য অনুযায়ী, মাদার তেরেসা ও চার্চের কর্মকর্তারা এক জেসুইট আধিকারিকের অপরাধ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন, যে এক হাজার বারেরও বেশি সময় নির্যাতিতকে যৌন নির্যাতন করেছিল এবং সব জানার পর‌ও তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

এক কুখ্যাত জেসুইট প্রচারকের দ্বারা যৌন-নির্যাতনের শিকার একজন নির্যাতিত এখন দাবি করছেন যে মাদার টেরেসা তার যৌন অপরাধ সম্পর্কে জানতেন এবং সবকিছু জেনে বুঝেও তিনি না দেখার ভান করে চুপ করে ছিলেন। মাদার টেরেসা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করেছেন বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। তাঁর বর্ণময় অতীত, শাসক
সম্প্রদায় এবং অপরাধীদের সাথে দহরম-মহরম, এবং তাঁর আশ্রয়কেন্দ্রগুলির অস্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা ইত্যাদির কারণে পূর্বে যারা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল ছিল তারাও অনেকে আজ ভিন্নমত পোষণ করে।

যাই হোক, মাদারের এই ধরণের কাজগুলি যদিও খারাপ ছিল,  তাঁর বিরুদ্ধে যে সর্বশেষ অভিযোগ উঠেছে তার সমকক্ষ এগুলোর কোনোটাই নয়। কুখ্যাত জেসুইট ধর্মযাজকদের মধ্যে থেকে একজন দোষী ব্যক্তি, রেভ. ডোনাল্ড জে. ম্যাকগুইয়ারের যৌন-নির্যাতনের শিকার এক এখন দাবি করেছেন যে মাদার টেরেসা তার যৌন অপরাধ সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং তিনি সবটা জেনেও চুপচাপ ছিলেন।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের বক্তব্য অনুযায়ী,বর্তমানে ৬১ বছর বয়সী রবার্ট. জে. গোল্ডবার্গ একটি মামলায় দাবি করেছেন যে টেরেসার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত একজন জেসুইট, রেভ. ডোনাল্ড জে. ম্যাকগুইয়ার গোল্ডবার্গকে একাধিক রাজ্যে ও দেশে মিলিয়ে এক হাজারেরও বেশি বার তার সঙ্গে আপত্তিকর ব্যবহার করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই ঘটে যাওয়া যৌন নিগ্রহের মধ্যে রয়েছে “যৌন স্পর্শ, মুখসঙ্গম এবং পায়ুসঙ্গম”।  গোল্ডবার্গের আইনজীবীরা দাবি করেছেন যে সেই সময়কালে এই নির্যাতন ঘটেছিল যখন ‘সেন্ট’ মাদার তেরেসা সহ চার্চের প্রভাবশালী পোপ- পাদ্রীরা জানতেন যে ম্যাকগুয়ার ছোট ছোট শিশুদের যৌন নির্যাতন করছে। মামলাটির দ্বারা এই অভিযোগ করা হয়েছে যে চার্চ এই ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে।

গোল্ডবার্গ তার পিতার মৃত্যুর পরে ক্যাথলিক মহিলার কাছে বড়ো হয়ে উঠতে থাকে, যিনি সিঙ্গেল মাদার ছিলেন। মা গোল্ডবার্গ এবং তার পরিবারের অর্থের প্রয়োজন ছিল। সুতরাং, তার পরিবার ম্যাকগুয়ারের ওপর আস্থা স্থাপন করেছিল যে তার সহকারী হিসেবে কাজ করলে তাদের মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ চলার আয় হবে। গোল্ডবার্গের এই আর্থিক নির্ভরতাকে ব্যবহার করে যৌন লালসাক্ত ম্যাকগুয়ার তার ওপর যথেচ্ছভাবে যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়ে যেতো।

মিশনারিস অফ চ্যারিটির সদস্য হওয়ার জন্য সন্ন্যাসিনীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলার সময় অবশেষে ম্যাকগুয়ের টেরেসার ‘আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা’ হয়ে ওঠেন। ম্যাকগুয়ের শিশুদের যৌন নির্যাতন করতো এরকম এক ইতিহাস ছিল। অস্ট্রিয়ার এক আধিকারিক ১৯৬০-এর দশকে লিখেছিলেন ম্যাকগুয়ারের অল্প বয়স্ক ছেলেদের সাথে বিশেষত কিছু ছেলে যারা আমাদের রান্নাঘরে কাজ করে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তারা ঘন ঘন তার ঘরে যেতো।

এপি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “প্রতিবার জেসুইটদের কাছে অভিযোগ যেতো যে ম্যাকগুয়ার ছেলেদের উপর যৌন নির্যাতন করছে, তারা তাকে তখন সেই পদ থেকে সরিয়ে অন্য পদে নিয়ে যেতো, যেখানে সে পুনরায় তার অপকর্ম চালিয়ে যেতো। মানসিক বিশেষজ্ঞের মূল্যায়নের পরে দেখা গেছে যে ম্যাকগুয়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের প্রতি যৌন আকৃষ্ট ছিল, জেসুইটস কর্তৃপক্ষ বারবার জোর দিয়ে বলেছিল ম্যাকগুয়ার একজন ভালো সমঝদার যাজক ছিল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাদার তেরেসার অনুরোধের ভিত্তিতে তারা এমন বক্তব্য পেশ করতো।”

টেরেসা ২ শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ তারিখে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন,

“আমার এফআর. ম্যাকগুয়ারের প্রতি পূর্ণমাত্রায় আস্থা ও বিশ্বাস আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে যেন তার গুরুত্বপূর্ণ যাজকবৃত্তি পুনরায় শুরু করে তা তিনি দেখতে চান।”

গোল্ডবার্গের কথা অনুযায়ী, “সেন্ট” টেরেসার ইচ্ছার ফলে ম্যাকগুয়ের তার বিশ্বব্যাপী যাজকবৃত্তি অব্যাহত রেখেছিলেন, ছোট ছেলেদের তাঁর সহযোগী হিসাবে সাথে নিয়ে প্রকাশ্যে ভ্রমণ করতেন। ২০০৩ সালের জুন মাসে ম্যাকগুয়ার এবং তার উর্ধ্বতনদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত একটি বিচারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিচার চলাকালীন, টেরেসার মিশনারিজ অফ চ্যারিটির সন্ন্যাসিনীরা তাদের পোশাকের ওপর দিয়ে একধরনের প্ল্যাকার্ড পরেছিলেন যাতে লেখা ছিল: “আমি ম্যাকগুয়েরকে সাপোর্ট করছি”।

খ্রিস্টান ধর্মীয় আদেশের মধ্যে সংগঠিত যৌন নির্যাতন তখন থেকেই একটি পরিচিত সত্য হয়ে উঠেছে।সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হল একেবারে প্রথম থেকেই অপরাধের পুরো সিরিজটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছিল।এটি খ্রিস্টান গোষ্ঠীর পুরো ধর্মীয় শ্রেণিবিন্যাসের সাথে আপস করা হয়েছে কিনা তা প্রশ্নচিহ্ন দাঁড় করিয়ে দেয়।এখন এটি একটি সাধারণ জ্ঞানের পর্যায়ে চলে গেছে যে, চার্চ কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে যৌন নিপীড়নে অংশ নিয়েছে এবং তাদের পদ মর্যাদা দ্বারা যৌন নিপীড়নের মতো জঘন্য অপরাধগুলিকে চাপা দেবার চেষ্টা করেছে। ম্যাকগুয়ারকে ২০০৭ অবধি তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি এবং ২০০৮ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তিনি যে অপরাধ করেছেন তার জন্য তাকে ২৫ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছিল।

অপইণ্ডিয়ায় প্রকাশিত মূল প্রবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন দীপান্বিতা।