রামমোহন-বিদ্যাসাগরের কলকাতায় হিজাবের সমর্থনে মিছিল, প্রতিবাদে সরব মুক্তমনা বুদ্ধিজীবিরা

0
589

বঙ্গদেশ ডেস্ক:শিক্ষাঙ্গনে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে বিতর্কের জেরে সরগরম সমগ্র দেশ। একাধিক রাজ্যের পাশাপাশি মুসলিম মেয়েদের সমর্থনে সুর চড়িয়েছে কলকাতায় অবস্থিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার কলকাতার আলিয়া ইউনিভার্সিটির মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সদস্যদের হিজাব পরার সমর্থনে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে। এদিন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করেছেন তারা। ব্যানার এবং প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘হিজাব আমার গণতান্ত্রিক অধিকার’, ‘আল্লাহকে যারা ভয় পায়, তারা অন্য কাউকে ভয় পায় না’, ‘আমি হিজাব পরেই থাকবো, এটা একজন মুসলিম মহিলার অবিচ্ছেদ্য অংশ, হিজাব মানবিক বস্ত্র’।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ডিসেম্বর মাসে কর্নাটকের উদুপিরের একটি কলেজে হিজাব পরে আসা কয়েকজন ছাত্রীকে কলেজে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। এরপর থেকেই ওই কলেজে নিষিদ্ধ করা হয় হিজাব। প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করে দিল্লির পড়ুয়ারা। এরপর মুসকানের ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগানের ভিডিও ভাইরাল হতেই বুধবার কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সদস্যরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। কলকাতায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের সামনে বুধবার মিছিল করে পড়ুয়ারা।‘হিজাব আমার সাংবিধানিক অধিকার’, ‘রক্ত চাই, রক্ত নাও, আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।

হিজাব পরার অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছে,বাম সংগঠন ও নেতারা এবং সংঘের মুসলিম সংগঠন রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চ। এছাড়াও তালিবান জনগোষ্ঠী হিজাবের সমর্থন জানিয়েছে। এর পাশাপাশি মালালা ইউসুফজাই‌ও হিজাবের সমর্থনে সরব হয়েছে।

তবে কলকাতায় এই আন্দোলনের বিরোধিতা করে অনেকে মুক্তমনা বুদ্ধিজীবী প্রতিবাদ করেছে‌ন। শিক্ষক ওসমান মল্লিক বলেছেন,” এই শহরে পদচারণা করেছিলেন রামমোহন ও বিদ্যাসাগর l নারীদের স্বাধীনতার জন্য আমরা তাদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী এই শহর l কিন্তু বুরখা হিজাব এর জন্য মিছিল কলকাতার বুকে। এখানে বুরখা, হিজাবের বিরুদ্ধে মিছিল বেরোবে সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু তা হল না। উল্টোটা হল, জানিনা এতে কলকাতার কতটা সম্মান বাড়লো।”

শিক্ষিকা শালিমা হালদার বলেছেন, “কর্ণাটকে এবং কোলকাতায় বোরখার সপক্ষে বোরখা পরা মহিলাদের যে বিশাল মিছিল দেখলাম তাতে আমি আতঙ্কিত ।দুঃখিত । এতদিন পর্যন্ত আমি এবং আমার মতো যারা নারী স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার অধিকারীরা বোরখার বিরোধীতা করে এসেছি এই কারণেই যে এটা নারীর পক্ষে অপমানজনক একটি বস্ত্র ।কারণ এই বস্ত্র প্রমাণ করে যে ‘ নারী একটি যৌন বস্তু’।” এবিষয়ে উল্লেখ্য, প্রায় এক দশক আগে, আলিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষিকা শিরিন মিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরখা পরে আসার ফতোয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ফলস্বরূপ তাকে অনত্র বদলি করা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার কর্ণাটক হাইকোর্টের বিগ বেঞ্চ এই বিষয়ে শুনানি করে কড়া নির্দেশ দিয়েছে। রায় না আসা পর্যন্ত ধর্মীয় পোশাক পরা যাবে না বলে জানিয়েছে আদালত।এছাড়াও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া পড়ুয়াদের ধর্মীয় পোশাক পরার জন্য চাপ দেওয়া হবে না।