ট্রাম্পের পতনে হিংসায় মত্ত আমেরিকা! ‘ব্ল‍্যাক লাইভস’ দাঙ্গার পুনরাভিনয়, অভিনেতা ভিন্ন

0
515

বঙ্গদেশ ডেস্ক – সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের ‘বৃহত্তম রপ্তানিকারক’ হিসেবে পরিচিত আমেরিকার রাজধানী কেঁপে উঠল হিংসায়। গতকাল ট্রাম্পকে বিদায় জানিয়ে বাইডেনকে বিজয়ীর সার্টিফিকেট প্রদান করার কথা ছিল। এমতাবস্থায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাতে ‘ক্যাপিটাল হিল’-এ জড় হন ট্রাম্প সমর্থকরা। বাকিটা ‘ইতিহাস’!

জো বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর

মার্কিন সেনেট ও হাউজের যৌথ অধিবেশনে জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প মোট ২৩২ টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছেন, অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬ টি। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বাইডেন ২০ শে জানুয়ারি শপথ নেবেন।

রাজধানীতে হামলা ও জরুরী অবস্থা ঘোষণা

আমেরিকার রাজধানীতে ট্রাম্প সমর্থকদের ভয়াবহ হামলার ফলে সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়েছে। বিবিসি সূত্রে খবর, বিক্ষোভের নামে চলতে থাকা হিংসায় এখনও অবধি চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বাইডেনের জয়ের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প সমর্থকেরা ধৈর্য হারিয়ে হিংসার পথে নামে, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর আসে। ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ জারী করা হয়েছে, আগামী ১৫ দিনের জন্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। অনেক নেটিজেন এই অবস্থাকে ভারতের কৃষক আন্দোলনের সাথে তুলনা করে বিদ্রুপও করেছেন। যেভাবে আমেরিকার লিবারালরা কৃষক আন্দোলনের নামে চলা হিংসাকে বিভিন্ন সময়ে সমর্থন করেছেন, সেভাবে হয়তো ডিসি-র হিংসাকেও ‘সমর্থন’ করতে পারেন বলে অনেকেই শ্লেষোক্তি করেছেন।

ধারাবাহিক পদত্যাগ

দাঙ্গা শুরু হবার পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গোয়েন্দা সুরক্ষার আড়ালে সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন, রয়টার্স সূত্রে খবর। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকেই পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। ট্রাম্পের ডেপুটি নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাট প্যাটিঙ্গারের পদত্যাগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সিএনএন তদের রিপোর্টে জানিয়েছে, গোটা ঘটনাকে তিনি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) আমেরিকার ইতিহাসে ‘একটি কালো দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

হোয়াইট হাউজের উপ প্রেস সচিব সারা ম্যাথিউজ, সামাজিক সম্পাদক ঋকি নিকিতা, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অফ স্টাফ স্টেফানি গ্রীশাম বুধবার রাতে তাঁদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে বুধবার রাতে ব্রিটিশ মিডিয়া ‘দ্যা ইণ্ডিপেন্ডেন্ট’ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে।

আমেরিকার প্রতিবাদে হিংসার প্রাবল্য

দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিভিন্ন আন্দোলন ও রাজনৈতিক প্রতিবাদে কমপক্ষে ২৫ জন আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। এই তথ্য ৩১ শে অক্টোবর, ২০২০ অবধি প্রকাশিত, এরপরে এই পরিসংখ্যান বেড়েছে বই কমেনি। এসিএলইডির সার্ভেতে দেখা গেছে, জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পর গোটা আমেরিকা জুড়ে ৯০০০ টিরও বেশি ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছিল। ফ্লয়েড হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটা বিক্ষোভের তীব্রতা ও তার সাথে জড়িত ডজন খানেক মৃত্যুর কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল একাধিক প্রতিবেদনে। তাদের মধ্যে অনেকেই বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে আশপাশে ঘটা মারাত্মক অপরাধেরও শিকার হন। কোভিডেড় মারের উপরে এইসব দাঙ্গাবাজের লুঠতরাজে আমেরিকার অর্থনীতিও আঘাতপ্রাপ্ত হয়, যার প্রভাব গোটা বিশ্ববাসীকে ভুগতে হয়।

এখনও অবধি হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে কারফিউ লঙ্ঘনের জন্যে ৪৮ জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। যে ভয়াবহ হিংসা শুরু হয়েছে, তার দায় আমেরিকান লিবারাল থেকে সোশ্যালিস্ট সমর্থকদেরও কিছু কম নয়। বারবার ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলনে তারা যেভাবে হিংসাকে সমর্থন জানিয়েছে, তাতে এরকম কিছু অদূর ভবিষ্যতে হবার সম্ভাবনা ছিল। এখন দেখার, এই হিংসার শেষ কোথায়।