উহানের সরকারি ল্যাবেই তৈরি COVID-19, দাবি চিনা ভাইরোলজিস্টের

0
515

বঙ্গদেশ ডেস্ক: চলতি বছরের শুরুতে যখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করে, তখন থেকেই চিনের বিরুদ্ধে এই মারণ ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ উঠছিল৷ এর আগে করোনার ভাইরাসের মূল কেন্দ্র উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল৷

এবার সামনে এল আরও চাঞ্চল্যকর দাবি৷ চিনের সরকারি ল্যাবেই নাকি তৈরি হয়েছে করোনা ভাইরাস৷ এক চিনা ভাইরোলজিস্ট একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেছেন৷ তাঁর দাবি, তাঁর কাছে যথোপযুক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সৃষ্টি চিনের উহান প্রদেশের সরকারি পরীক্ষাগারে হয়েছিল।

বিজ্ঞানী ড. লি-মেন ইয়াং হংকং স্কুল অফ পাবলিক হেলথে কর্মরত ছিলেন যখন তিনি অভিযোগ করেছিলেন করোন ভাইরাসের এই প্রজাতিটিকে পরীক্ষাগারে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, উহান প্রদেশের নিউমোনিয়া নিয়ে পড়ার সময় তিনি এই ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পেরেছিলেন।

এখানেই না থেমে তিনি একই সঙ্গে অভিযোগে বিদ্ধ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও৷ তিনি জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ অবগত হ‌ওয়ার পরেও কোনওরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি এবং সমগ্র বিশ্ব যে বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছে সে সম্পর্কে সচেতন করা সত্ত্বেও চিনা কর্মকর্তারা তার সতর্কবাণী উপেক্ষা করেছিলেন।

করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রথম দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং চিনা সরকার যোগসাজশ করে লুকোচুরি করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এই ভাইরাসের সংক্রমণ অতি দ্রুত একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে, বিষয়টি জানার পরেও লুকোছাপা করা হয়। ফক্স নিউজকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষৎকারে এমন তথ্য তুলে ধরেন তিনি। সেই সময় তিনি কোভিড-১৯ নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে বেজিং তাতে সাড়া দেয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

গত বছরের শেষ দিকে চিনের উহান প্রদেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় বলে দাবি করে আসছে বেজিং। কিছুদিনের মধ্যেই তা ত্রাস সৃষ্টি করে গোটা বিশ্বে। করোনা ভাইরাসের থাবায় আক্রান্ত ও মৃত্যু মিছিলে বিপর্যস্ত বিশ্ববাসী।

তবে এই ভাইরাস যখন শনাক্ত হয়েছিল তখনই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হত বলে জানিয়েছেন চিনের‌ই এই ভাইরোলোজিস্ট। লি মেন ইয়াং বলেন, “যখন করোনার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারি, তখনই সত্যতা অনুসন্ধানের চেষ্টা করি। হংকং প্রশাসনকেও অবগত করি এই বিষয়ে। ভেবেছিলাম মৃত্যুর হাত থেকে কোটি কোটি মানুষকে বাঁচাতে পারব। কিন্তু কেউই আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। যার ফলাফল এখন বিশ্ববাসী ভোগ করছে।”

এই চিনা ভাইরোলোজিস্ট জানান, কোভিড-১৯ বিষয়ে গবেষণা শুরু করলে নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হন তিনি। করোনা মহামারি রূপ নিতে পারে এ বিষয়ে তিনি সতর্ক করলেও পাত্তা দেয়নি চিনা সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

চিনের ভাইরালোজিস্ট বলেন, ‘‘বহু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা পায়নি। সাধারণ মানুষ এবং চিকিৎসকদের মধ্যেও সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারে উদাসীনতা ছিল। করোনা বিষয়ে কাউকে কোনওরকম তথ্য দেওয়া হত না। এমন পরিস্থিতি দেখে আমি ভেঙে পড়ি। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ লুকোচুরির জন্যই আজকের এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি।’’ করোনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বেজিং-এর গোপন তথ্য ফাঁস করে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলে জানান এই চিনা বিশেষজ্ঞ।

করোনা প্রকোপে বিশ্বে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫ লাখ ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ২৮ লাখের বেশি মানুষ। তবে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ করছে বিশ্বের শতাধিক প্রতিষ্ঠান।

ইয়ান সাক্ষাৎকারে বলেছেন,”তিনি সত্য বলতে চাইলে চিনা কর্মকর্তাদের হুমকির শিকার হন। প্রাণ বাঁচানোর তাড়নায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।” তিনি চিনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সংগৃহীত সমস্ত তথ্য মুছে ফেলার এবং তাঁকে হেনস্থা করার জন্য লোকজন নিয়োগ করার অভিযোগ‌ও তুলেছেন। ইয়াং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আত্মগোপন করে থাকলেও নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন।

তবে ‘উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি’-র পরিচালক ইয়ান ঝিমিং এর আগে সমস্ত অভিযোগ ঝেড়ে ফেলেছিলেন। ডঃ ইয়াং-এর অভিযোগ সন্দেহের জন্ম দেয় কারণ অতিমারির কেন্দ্রবিন্দু উহান বাদুড় করোনা ভাইরাসের গবেষণার বিশ্বব্যাপী কেন্দ্র হিসাবে খ্যাত।

উহানে অবস্থিত ‘উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি’ (WIV), যা চিন এর প্রথম এবং একমাত্র বায়োসেফটি স্তর ৪ (BSL -4) সুবিধালব্ধ। এটি ২০০২-২০০৩ সালে সার্সের প্রাদুর্ভাবের পর বাদুড়ের শরীর থেকে করোনা ভাইরাসের প্রচুর নমুনা সংগ্রহ করে।

২০২০ সালের ১৪ এপ্রিলে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি নিবন্ধ অনুসারে, মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরা ২০১৮ সালে ডাব্লুআইভি পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার বায়োসিকিউরিটি সম্পর্কে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

উহানে ‘উহান সেন্টারস ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’ (ডাব্লুসিডিপিসি) নামে একটি ল্যাবও রয়েছে। এটি হল বিএসএল-২ ল্যাব যা হুয়ানানের বাজার থেকে মাত্র আড়াইশ মিটার দূরে। এখানেও বাদুড়ের দেহ থেকে সংগ্রহ করা স্যাম্পেলগুলো অতীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে খবর পাওয়া যায়।

যদি সত্য‌ই প্রমাণিত হয় যে কোভিড -১৯ পরীক্ষাগার থেকে মানুষের হাতে তৈরি তবে ইতিহাসের পাতায় এ ঘটনা নতুন কিছু নয়।

১৯৭৭ সালে রাশিয়ার একটি পরীক্ষাগার (বা সম্ভবত চীন) সম্ভবত ফ্লু ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর সময় দুর্ঘটনাক্রমে বিলুপ্ত এইচ1এন1(H1N1) ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়ে যা বিশ্বব্যাপী মহামারী সৃষ্টি করেছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে সার্সের প্রাদুর্ভাব শুরু হ‌ওয়ার পর জানা যায় গবেষণাগার থেকে তৈরি ছয়টি সার্সের প্রকোপে প্রাদুর্ভাব ঘটেছে যার মধ্যে চারটি চীনের । এবং এর প্রকোপে ১৩ টি পৃথক সংক্রমণ ঘটে এবং একজনের মৃত্যু অবধি হয়।