মধ্য ভিয়েনায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার ইসলামিক স্টেটের

0
564

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- কালাসনিকভ নিয়ে ভিয়েনার রাস্তায় এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছিল বছর কুড়ির কোঠার কুজটিম ফেজুলাই। ইসলামিক স্টেটের একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একজন জঙ্গি। পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়ার আগে কমপক্ষে অন্তত চার জনকে হত্যা করেছে সে। তার গুলিতে জখম হয়েছে বহু মানুষ।

ফ্রান্সের পর ভিয়েনাও যে ইসলামপন্থী জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে সেই নিয়ে আগে থেকেই সন্দেহ শুরু হয়েছিল। অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ গতকালই বলেছিলেন, বছরের ভয়ংকরতম জঙ্গি হামলার শিকার মধ্য ভিয়েনা। এই হামলার পিছনে জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে সন্দেহে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ভিয়েনার নানান জায়গায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাতে এই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করে নেয় ইসলামিক স্টেট।

ঘটনার সূত্রপাত ঘটে সূত্রপাত সোমবার। স্থানীয় সময় রাত আটটা নাগাদ মধ্য ভিয়েনার একটি ইহুদিদ উপাসনালয়ের(সিনাগগ) কাছে আচমকা কান ফাটানো গুলির আওয়াজে কেঁপে ওঠে চারিদিক। তার পরেই গগনভেদী আর্তচিৎকার। ততক্ষণে অবশ্য আততায়ীর গুলিতে জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন অনেকেই। পুলিশ জানিয়েছে, মধ্য ভিয়েনার আরও ছ’টি জায়গায় একই সময়ে হামলা চালায় আততায়ীর দল। তাদের কাছে মজুত ছিল অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এই ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে এক পুলিশ অফিসারের।

অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহমার বলেছেন, সিনাগগের কাছে বন্দুক হাতেতে একজনকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। সেই ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। পরে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী ওই এলাকা ঘিরে ফেলে। কয়েক রাউন্ড গোলাগুলি চলে পুলিশ ও জঙ্গিদের মধ্যে। পুলিশের গুলিতে জখম হয় ওই জঙ্গি। জানা গিয়েছে ওই জঙ্গির‌ই নাম কুজটিম ফেজুলাই। তার কাছ থেকে একাধিক অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কুজটিমের ব্যক্তিগত কম্পিউটার ঘেঁটে তদন্তকারী অফিসাররা দেখতে পেয়েছেন হামলা চালানোর আগে ফেসবুকে নিজের ছবি পোস্ট করেছিলো এই জঙ্গি। হাতে ছিল কালাশনিকভ, সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হয়ে উঠেছে সেই ছবি।

ইসলামিক স্টেটের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি কুজটিম ফেজুলাই। অভিযোগ উঠেছে, এর আগেও একাধিক সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপ কুজটিমের নাম জড়িয়েছে। আদপে অস্ট্রিয়ান হলেও উত্তর মেসিডোনিয়ার নাগরিকত্ব‌ও রয়েছে তার। সিরিয়ায় আইএস শিবিরে যোগ দিতে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ২২ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছিল তাকে। তবে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সে মুক্তি পেয়ে যায়‌ তদন্তকারী অফিসাররা বলেছেন, জুরিখের কাছে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে সুইস পুলিশ। এই জঙ্গির নেটওয়ার্ক কতদূর ছড়িয়েছে তার খোঁজ করছেন অফিসাররা। তবে তাদের ধারণা এর হাত বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। ভিয়েনায় ইতিমধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাদের যোগ রয়েছে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে। প্রশাসনের দাবি, এদের প্রত্যেকেই ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কাজ করে।

নেহমার জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি হামলাকারী জঙ্গি দলকে পাকড়াও করা হবে। ভিয়েনার মানুষের মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রকে কিছুতেই নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সোমবার রাতে জঙ্গি হামলার পর থেকে গোটা শহর কার্যত কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মুড়ে ফেলা হয়েছে। রাস্তাঘাট দোকানপাট শুনশান। সাধারণ মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করা হয়েছে। শহরের নানা জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল সংখ্যক পুলিশ বাহিনী। পুলিশের ধারণা জঙ্গি একজন ছিল না। বাকিরা সুযোগ বুঝে ঢাকা দিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।