২০২৪ সালের মধ্যে মোদি লাটয়েন্সের শক্তি-কাঠামো এবং তার রূপ দুইই বদল করবেন

0
1040
  • নতুন দুর্ধর্ষ পরিকল্পনাটি ভারতের প্রধান শক্তিক্ষেত্র লাটয়েন্স অর্থাৎ শক্তিশালী দিল্লির বাহ্যিক গঠনটিকে পরিবর্তিত করে দেবে এবং অতঃপর তা একটি নতুন ভারতের মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষার পক্ষে সওয়াল করবে।
  • পুনরায় উন্নয়নের পরিকল্পনাটিতে  অনেক গুরত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক রয়েছে এটি বাস্তব রূপ প্রতীকী।

তাঁর শর্তপূরণ শেষ হবার মধ্যেই নরেন্দ্র মোদি কেবল ভারতের রূপরেখা পরিবর্তন করে দেবেন, তা নয়, বরং সম্ভবত ভারতের প্রধান শক্তিক্ষেত্র শক্তিশালী দিল্লির বাহ্যিক গঠন পরিবর্তন করে দেবেন।

শক্তিশালী দিল্লির কেন্দ্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির পুনরায় উন্নয়নের  নতুন পরিকল্পনায় যা রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এর মধ্যে সংসদ ভবন এবং কেন্দ্রীয় সচিবের বাসভবন আছে।  দ্রুত পুনরায় উন্নয়নের জন্য হয়তো লুটিয়েন্স ক্ষেত্রে চার বর্গ কিমি অংশ রাখা হবে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া মারফত এই প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

২০২৪ এর  সীমিত অন্তিম সময়সীমাকে মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় গণপূর্ত বিভাগ (সি পি ডব্লিউ ডি) নতুন জায়গাটির জন্য দুর্ধর্ষ পরিকল্পনা করার উদ্দেশ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কোন আশ্চর্যের ব্যাপার নয়, মোদির দ্বিতীয় শর্তের সঙ্গে এর সাদৃশ্য আছে। একটি নতুন দুর্ধর্ষ পরিকল্পনা উপস্থাপন করার জন্য পরামর্শ চাওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য সংস্থাগুলির কাছ থেকে দরপত্র চাওয়া হয়েছে যা “একটি নতুন ভারতের মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিবিম্বিত করে-  সুশাসন, দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি করার ক্ষমতা এবং সাম্য এর শিকড় ভারতীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যেই নিহিত।”

যখন অনেক পুরাতন অট্টালিকা গুলিকে ধ্বংস করা হবে সেখানে সংসদ নিজেও একটি নতুন অট্টালিকা পেতে পারে কারণ এর পুরাতন ঐতিহ্যবাহী গঠনের বহিরাঙ্গিকগত পরিবর্তন করা হচ্ছে, কিন্তু মূলগত কাঠামো কোন পরিবর্তন করা হচ্ছে না। প্রধান পরিকল্পনা হলো পুরনো ঐতিহ্যবাহী অট্টালিকাকে নতুন ঐতিহ্যবাহী অট্টালিকা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা-  যা তাদের বিচারের উত্তীর্ণ হবে অন্তত একটি বা দু’টি শতাব্দী তো বটেই ।

এটি একটি দারুণ পরিকল্পনা।  এটিকে  যদি লুটিয়েন্স বাংলো ক্ষেত্র (এল বি জেড) এর অন্যান্য পরিবর্তনের সঙ্গে একত্রিত করা হয়,  তবে দিল্লির শক্তির উপর পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাবে।  এল বি জেড আসলে একটি ছদ্ম গঠন যেখানে প্রচণ্ড ধনী, শক্তিশালী, অভিজাতরা –  ব্যবসায়ী থেকে মন্ত্রী, আমলা থেকে প্রকৃত ক্ষমতা সম্পন্ন পরজীবীরা- বিলাসবহুল বাংলোতে বসবাস করেন, যখন শহরের অবশিষ্ট অংশ অন্য প্রকারের ক্ষুদ্রতর অংশে বসবাস করে ।

কেন্দ্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির পুনরায় উন্নয়নের পরিকল্পনাটি হঠাত করে জন্ম নেয়নি। ২০১৭ সালে নীতিন গড়করি একই পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ” সরকারের এমন একটি ভাবনা আছে যে যদি সব কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তর গুলিকে একই স্থানে স্থাপন করা যায়। একই ভাবে আমরা মন্ত্রীদের জন্য ৬০০০-৭০০০ বর্গ কিমি আয়তনের ফ্ল্যাট রাখতে পারিনা? বাংলো বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই বড় ব্যাপার।”

এন বি জেড এ বিরাট বহুতল বিশিষ্ট বাঙালির বাংলো গুলির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা খরচ হয় কিছু বছর আগে আসামের একটি সংস্থা এদের লুটিয়েনস বাংলো হাজার কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বেচে দিতে চেয়েছিল। যদি সরকারের মালিকানাভুক্ত মন্ত্রী বর্ষীয়ান সাংসদদের  বাংলোগুলিকে ধনী ভারতীয় অথবা বিদেশীদের কাছে বেচে দেওয়া হয়, তবে ২০২৪ এর মধ্যে কেন্দ্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির পুনরায় উন্নয়নের পরিকল্পনাটি যদি সম্পূর্ণও না হয়, তবুও কিছুটা পরিমাণ হলেও এই বিক্রয় গুলির অর্থ দ্বারা পোষিত হতে পারবে। ভারতীয় অর্থনীতি কিছুটা কমে আসতে পারে, কিন্তু এমন বিলাসব্যসন বহন করতে পারে না এমন লক্ষপতি ও কোটিপতির উদ্ভব কখনোই বন্ধ হবে না।

পুনরায় উন্নয়নের পরিকল্পনা টিতে  অনেক গুরত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক রয়েছে এটি বাস্তব ও  প্রতীকী।

প্রথমত, সমস্ত কেন্দ্রীয় দপ্তরগুলোকে সন্নিবিষ্ট অঞ্চলে আনতে যেসব কাজে সহযোগিতা প্রয়োজন সেগুলিতে দপ্তরগুলি নানা প্রকল্পের স্বার্থে পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে পারবেন।  যদি প্রতিটি মন্ত্রক একে অপরের থেকে দূরবর্তী ভবনে অবস্থিত হয়,  তবে এতে সংকীর্ণ চিন্তাভাবনার উদয় হতে পারে ।

দ্বিতীয়ত, এর জন্য বিশেষত সুরক্ষা খাতের প্রধান প্রধান মন্ত্রীবর্গ ও আধিকারিকদের গৃহ ও দপ্তরের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় অধিকাংশই কমে যাবে। একটি বিশাল এলাকায় বাংলো রয়েছে এবং তার চারিদিকে ঝোপঝাড় ও লুকোনোর জায়গা রয়েছে, এমন জায়গার থেকে উচ্চ অট্টালিকাকে সুরক্ষা দেওয়া অনেক সহজ।

তৃতীয়ত, কিছু ক্ষেত্রে ভারতের আরো অধিক সাংসদের সংসদের বসবার জন্য স্থান সংকুলান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।  সীমানা নির্দেশের পর নির্বাচনী ক্ষেত্রে যদি ছোট হয়ে যায় অথবা সংসদের এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণ যদি মহিলাদের জন্য বাড়ানো হয় তবে ভারতের ৭০০ এর  অধিক সাংসদ হবে এবং তার জন্য অনেক স্থান প্রয়োজন। বর্তমানে লোকসভায়  এত জায়গা হয় না এবং যখন পূর্ণ উপস্থিতি থাকে তখন একেবারে ঘিঞ্জি হয়ে যায়।

গড়ে ভারতীয় সাংসদরা ২.৩  মিলিয়নের বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন যখন সেখানে ৯০ টিরও বেশি দেশের মোট জনসংখ্যা এর চেয়ে কম থাকে। পরিষ্কারভাবে, আমাদের আরো বেশী আধুনিক ও বেশি জায়গা যুক্ত সংসদ ভবন প্রয়োজন। পুরনোটি আনুষ্ঠানিক কাজে ও নতুনটি দপ্তর এর কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চতুর্থত জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে ভুললে চলবে না যদি মন্ত্রী ও বাবু রা বাংলো থেকে ফ্ল্যাটে যেতে পারেন, যদিও তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে বড় জায়গায় থাকবেন- এটি একটি সামনের বার্তা দেয়, যা বাংলোয় বসবাস করলে দেওয়া সম্ভব নয়। ভারতের ঠিক যেমন প্রজাতন্ত্র হিসাবে গড়ে ওঠার কথা তা ঠিক সেইদিকেই ধীরে ধীরে  এগোচ্ছে।

মূল লেখাটি স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত, লিখেছেন আর জগন্নাথন। অনুবাদ করেছেন ।