ধারা ৩৭০, নাজি ইণ্ডিয়া ও ইমরান খান

0
930

আরেকজন ইস্লামিস্ট যখন ‘ফ্যাসিস্ট’ মোদীর অধীনে নাজি ইন্ডিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বোধ করছেন, তখন হাসি পায় বৈকি। বর্তমান পাকিস্তানী প্রধান ইমরান খান নিজেই সেদেশের জনতার কাছে ‘তালিবান খান’ নামেই পরিচিত। পাকিস্তান তো বটেই ভারতের অনেক মানুষের কাছেই ‘তালিবানদের’ প্রতি ইমরান খানের ‘ভালবাসা, সহানুভূতি এবং সংশ্রবের’ কথা অজানা নেই। সেই ইমরান যদি বলেন আর.এস.এস নাকি বিশ্বশান্তির পক্ষে হুমকি স্বরূপ, তাহলে ভণ্ডামি কথাটি বললে কিছুই বলা হয় না।  ভণ্ডামিতম জাতীয় কোন শব্দের আমদানি আবশ্যক। ইমরান খান কতখানি প্রবঞ্চক, দুমুখো সাপ, সেটা অনেকেরই জানা নেই।

ভারতের অধিকাংশ মানুষই ‘আসল’ পাকিস্তানকে চেনে না। ভারতীয় বলতে এখানে দুই ধরণের লোকের কথা বলা হচ্ছে।

ক। যারা মিডিয়া রিপোর্ট, নিউজ ইত্যাদির দৌলতে পাকিস্তানকে ‘শত্রু দেশ’ হিসাবে ভাবেন। কিছু ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর কর্মচারীরা এই ধরণের ভারতীয়দের মধ্যে পড়েন।

খ। যারা পাকিস্তানের সাথে ‘দোস্তি’ চান। প্রধানত ‘লিবারেল’ শ্রেণীর মানুষ এই গোত্রের মধ্যে পড়ে। এদের মতে, পাকিস্তানীদের মধ্যে ভাল ও খারাপ দুইই আছে, যেমনটা সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই পাওয়া যাবে। ভারতীয়দের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলারাই মুখ্যত এই শ্রেণীর মধ্যে অগ্রগণ্য, যারা আশির দশকে মনে মনে ইমরান খানকে বিবাহ করতে চাইতেন। ঐ সময়ে ইমরান খান ছিলেন তার ক্রিকেটিং কেরিয়ারের তুঙ্গে। বহু পাঞ্জাবী (হিন্দু ও শিখ) মনে করেন দেশভাগ একটা দুঃখজনক ঘটনা বটে, কিন্তু বর্তমানে তার জের টেনে লাভ নেই। দুই দেশের খাদ্য, ভাষা (পাঞ্জাবের সীমান্তের অধিকাংশই পশ্চিম পাঞ্জাবের অন্তর্গত ও ভারতের মধ্যে পূর্ব পাঞ্জাব রয়েছে) ও সংস্কৃতি যখন এক; তখন অতীত তিক্ততার জের টেনে লাভ নেই। তারা প্রায়ই পাকিস্তান ঘুরে গল্প করেন যে, লাহোরে কি শান্তির সাথে ভারত-পাক ম্যাচ দেখেছেন, তার পরেরদিন পূর্বপুরুষের ভিটে দেখেছেন। সেখানে বসবাসরত আজকের পাকিস্তানীরা তাদের পরিচয় জানা মাত্র কিরকম আতিথেয়তা করেছেন। তারা সব দেখেশুনে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছান — দেশভাগ কিছু দুষ্টু লোকের চক্রান্ত ছিল, যারা দুই পাঞ্জাবকে আলাদা করে রাখতে চেয়েছিল। নাহলে তারা নাকি একসাথেই থাকতে পারতেন!

যখন ভারত ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া পুলওয়ামার সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে ২৭ ফেব্রুয়ারিতে বালাকোটে বায়ুসেনার হামলা চালিয়ে পাকিস্তানকে জবাব দেয়, তখন ইমরান খান সেদেশের মন্ত্রীকে তীব্র হিন্দু বিদ্বেষ দেখানোর জন্য মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন এবং উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তিদান করেন। তার এই কাজের প্রশংসা করতে গিয়ে বলিউড বুদ্ধিজীবীরা ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া উচিত বলে অসংগত দাবি করে বসেন। এবং ‘হিন্দুবাদী সরকারের’ কাছ থেকে এও দাবি করেন যে তারা যেন ইমরান খানের কাছ থেকে কিভাবে শান্তি বজায় রাখতে হয় তা শেখেন!

আমার মতে, দুই ধরণের ভারতীয়রা মারাত্মক ভুল করছেন। কারণ নিচে দেওয়া হল।

ক। ইহা সত্য যে, পাকিস্তান ভারতের শত্রু  নয়।

খ। আবার এও সত্যি পাকিস্তান চাইলেও কোনদিন ভারতের বন্ধুও হতে পারবে না।

কি একটু গোলমেলে উত্তর মনে হচ্ছে তো? এবার পুরো বাক্যটাকে সম্পূর্ণ করা যাক —

ক। ইহা সত্য যে, পাকিস্তান ভারতের শত্রু  নয়। পাকিস্তান হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের শত্রু।

খ। আবার এও সত্যি পাকিস্তান চাইলেও কোনদিন ভারতের বন্ধুও হতে পারবে না। কারণ, ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগুরু ।

এবার দেখা যাক ইমরান খানের দেশের কার্যকলাপ দেখে নেওয়া। তাতে পাকিস্তানকে বুঝতে সুবিধা হবে।

১। সেটা হচ্ছে পাকিস্তানের সংবিধানে পরিষ্কার বলা আছে — কোনও অমুসলিম কোনওদিনও পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হতে পারবে না।

মুখ্যত হিন্দুদের গণহত্যা দিয়েই পাকিস্তান রাষ্ট্রের পথচলা শুরু হয়েছিল, যারা ছিল পাকিস্তানের আসল ভূমিপুত্র। হিন্দুদের হেয় করতে লিবারেলরা প্রায়শই বলেন যে, ‘সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই ভাল ও খারাপ মানুষ আছেন এবং কিছু খারাপ লোকের জন্য পুরো সম্প্রদায়কে বদনাম করা ঠিক নয়।’

ঠিক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে — পাকিস্তানের সংবিধানটাই তৈরি হয়েছে খারাপ লোকের স্বার্থ রক্ষার্থে। এটাই আসল সমস্যা। সেটা কি?

২। ইমরান খান — ক্রিকেটও যাঁর কাছে জিহাদ ছিল

শুনলে তাজ্জব হতে হবে — ইমরান খানের কাছে ক্রিকেট ছিল জিহাদের সমান। হ্যাঁ হ্যাঁ তিনিই — যিনি বহু ভারতীয় মহিলাদের কাছে স্বপ্নের পুরুষ!

কি বলেছিলেন ইমরান? বলেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে খেলা তাঁর কাছে কোন খেলা নয়, বরং জিহাদ। কাশ্মীরের কথা ভেবে জিহাদ।

এবার মনে করুন ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলছেন — আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করলে আমি খুশি হই, কেননা পাকিস্তানের লাহোর থেকে একদিন আমাদের পূর্বপুরুষ বিতাড়িত হয়েছিলেন হিন্দু হওয়ার অপরাধে। আমি লাহোরকে অখণ্ড ভারতের অঙ্গ হিসাবে দেখি। ভারতের লিবারেলরা কিরকম উত্তেজিত ভাষণ দেবেন কোহলির বিরুদ্ধে তা কল্পনা করতে মোটেই কষ্ট হয় না। এই লিবারেলরাই কিন্তু ইমরানের জন্য নোবেল পুরষ্কার চেয়েছিলেন।

৩। ইমরান খানের অগুনতি অবৈধ সন্তান

ইমরান খানের স্ত্রী রেহাম খান তার ‘নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিদার’ স্বামীর জীবনের কিছু কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছেন তার আত্মজীবনীতে। তার মতে সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে নাকি অন্তত পাঁচটা অবৈধ সন্তান ছড়িয়ে আছে, যার মধ্যে শ্বেতাঙ্গিনীরাও আছেন। রেহামের মতে, ইমরান নাকি কিছু ভারতীয় মেয়েকেও গর্ভবতী করেছেন! তার সবচেয়ে বড় অবৈধ ভারতীয় উত্তরাধিকারীর বয়স ৩৪ বছর। এতে অবশ্য বিস্মিত হবার কিছু নেই। এথেকে পাকিস্তানী মানসিকতাই প্রকাশিত হয় — যেখানে অন্য ধর্মের মেয়েকে অপহরণ করে বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে নিকাহ করাটা মোটেই অন্যায় চোখে দেখা হয় না। পাকিস্তানের সিন্ধ ও পাঞ্জাব প্রদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার হিন্দু মেয়ের ভাগ্যে এই জিনিসটাই ঘটে। ইদানিংকালে ইন্টারনেটের যুগে পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের এই কুৎসিত রূপ ফাঁস হয়ে গিয়েছে।

৪। ইমরান খানের মন্ত্রী সব হিন্দু মন্দির ধ্বংস করতে চান

পাকিস্তানের রেলওয়ে মন্ত্রীকেই দেখুন না — তিনি বলছেন পাকিস্তান তো বটেই, ভারতেরও সব হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে দেবেন!

 

দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল এই হিন্দু বিদ্বেষী মহাপ্রভুর নাম শেখ রশিদ আহমেদ। তিনি আবার ছয়বার পাকিস্তানের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এঁকে ইমরান খানের ডানহাত ধরা হয়।

৫। পাকিস্তানের মন্ত্রী বিড়লা জীর মন্দিরকে ধ্বংস করতে পারমাণবিক হামলার হুমকি দিচ্ছেন।

ইমরান খানের এই রেলওয়ে মন্ত্রী আবার কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীর সান্নিধ্য পছন্দ করেন। নিচের ছবিতে রশিদ আহমেদ (বাঁদিক থেকে), হাফিজ সৈয়দ (২৬/১১ মাস্টারমাইন্ড), মৌলানা সামি উল হক (তালিবানদের জন্মদাতা), সৈয়দ মুনাবার হুসেইন (জামাত-ই-ইসলামি প্রধান) এবং অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল হামিদ গুলকে (প্রাক্তন আইএসআই প্রধান) দেখা যাচ্ছে।

৬। ইমরান খানের মন্ত্রী হুমকি দিচ্ছেন — “আমি জারজ মোদীকে হত্যা করবই”

৭। ইমরান খানের মন্ত্রী — সোমনাথের ধ্বংসকারী গজনির মাহমুদ ছিলেন গাজোয়া-ই-হিন্দের (ইসলামবাদে বর্ণিত অবশ্যম্ভাবী ভারতের উপর বিজয়) প্রথম সৈনিক

পাকিস্তানের পার্লামেন্টারি এফেয়ার্স মন্ত্রী আলী মহম্মদ খানের সাথে পরিচিত হন।তিনি ৩৬ লক্ষ পাকিস্তানী হিন্দু ও ১০০ কোটি ভারতীয় হিন্দুদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন গজনির সুলতান মাহমুদ গজনভির কথা — যিনি ১০০০ খ্রিস্টাব্দে ভারতকে আক্রমণ করে গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরকে ধ্বংস করে সর্বস্ব লুটে স্বদেশে ফিরে যান। আলী মহম্মদ খান আবার গাজোয়া-ই-হিন্দের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন — যার কথা হাদিসে আছে। হাদিস অনুসারে ভারতকে দখল করে প্রত্যেক হিন্দুকে হত্যা করতে হবে অথবা বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হবে।

মনে করুন কোনও হিন্দু মন্ত্রী হুমকি দিচ্ছেন মুসলিমদের পবিত্র নগরী কাবাকে আক্রমণ করে সৌদি আরবের পুরো জনবসতি ধ্বংস করে দেবেন! সেক্ষেত্রে কিরকম হইচই পড়ত, আন্দাজ করাই যায়।

৮। ইমরান খানের মন্ত্রী বলছেন — “কাশ্মীর হিন্দু কাফিরদের জন্য তৈরি হয় নি!”

৯। ইমরান খানের মন্ত্রী হিন্দুদের উদ্দেশ্য করে বলছেন — “তোমরা কি করে আশা করো যে, গোমূত্র পান করে আর মূর্তিপূজা করে আমাদের (মুসলিম) সাথে লড়বে?”

এবার পাকিস্তানের প্রাক্তন সাংস্কৃতিক মন্ত্রী ফৈয়াজ উল হাসানের সাথে পরিচিত হওয়া যাক। তিনি হিন্দুদের উদ্দেশ্য করে বলছেন — “তোমরা কি করে আশা করো যে, গোমূত্র পান করে আর মূর্তিপূজা করে আমাদের (মুসলিম) সাথে লড়বে?”

তিনি বরখাস্ত হয়েছিলেন মাত্র চার মাসের জন্য। পরে ইমরান খান নিজেই তাকে অন্য মন্ত্রকের দায়িত্ব দেন।

আমার মতে, ইমরানকে অবশ্যই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত এমন হিন্দু বিদ্বেষ দেখানোর জন্য মন্ত্রীকে অন্তত চার মাসের জন্য হলেও বরখাস্ত করেছিলেন বলে!

এখানে একটা কথা ভারতীয়দের মনে করিয়ে দেওয়া আবশ্যক, প্রত্যেক পাকিস্তানীই — সে পাকিস্তানী মন্ত্রীই হোক বা পুলওয়ামার আত্মঘাতী বোমারু আদিল দার বা হাফিজ সৈয়দ; প্রত্যেকেই ভাষণে বার বার হিন্দুদের গোমূত্র পানের বা মূর্তিপূজার কথা তুলে কটাক্ষ করেছেন। অথচ তারা নিজেরাই যে উটের মুত্র পান করা ইসলামে ফর্জ (আবশ্যক কর্তব্য) সে কথা ভুলে গেছেন।

১০। ইমরান খানের মন্ত্রী হুঙ্কার দিচ্ছেন — “যতদিন ইমরান খান ক্ষমতায় থাকবে, কারুর ক্ষমতা হবে না হাফিজ সৈয়দের কেশাগ্র স্পর্শ করার”

 

১১। ইমরান খানের মন্ত্রীকে নুর উল কাদরি, হাফিজ সৈয়দ ও মৌলানা সামি উল হকের সাথে আধ্যাত্মিক আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে।

ইমরান খানের তরফে যে ভারতের বিরুদ্ধে নাজি ইন্ডিয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে, তার পাশাপাশি ইমরান মন্ত্রীসভার ‘রত্নদের’ কার্যকলাপের তুলনা টানা যাক। পাকিস্তানী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার ইজাজ শাহের কথাই ধরা যাক। প্রাক্তন পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান হামিদ গুলের আত্মজীবনী অনুসারে এই ইজাজ শাহই নাকি কুখ্যাত আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে বহু বছর ধরে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের সামরিক ঘাঁটির খুব কাছে বসবাস করার ব্যবসাথা করে দিয়েছিলেন! মারা যাবার আগে প্রাক্তন পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো তৎকালীন পাকিস্তানী রাষ্ট্রপ্রধান ও সেনাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা পারভেজ মুসারফের কাছে চিঠি লিখে আশঙ্কা করেছিলেন ইজাজ শাহ তাকে গুপ্তহত্যা (assassination) করাতে পারেন। এই হচ্ছে ইজাজ শাহের কীর্তি, একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ‘সম্ভাব্য হত্যাকারী’ কিনা ইমরান খানের মন্ত্রী হয়ে বসে আছেন

১২। পাকিস্তানী মিডিয়া পুলওয়ামার ব্যাপারে তাদের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছে — “তারা ৩৫ জন ভারতীয় সেনা নয়, ৩৫০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে!”

মজার কথা হচ্ছে এই একই লোক (ব্রিগেডিয়ার ইজাজ শাহ) দাবি করেছিলেন যে, ভারত নাকি নিজেই পুলওয়ামা সন্ত্রাসবাদী হামলা করিয়েছে লোকসভা নির্বাচনে লাভ ওঠাবার জন্য। অথচ তিনিই এখন পরোক্ষে স্বীকার করেছেন যে, তারাই পুলওয়ামা করিয়েছে। তিনি কাশ্মীর ইস্যুতে পুলওয়ামার মত কাণ্ড ঘটাবার হুমকিও দিয়েছেন!

১৩। প্রাক্তন পাকিস্তানী জেনারেল হামলার চার মাস আগেই পুলওয়ামা সন্ত্রাসবাদী হামলার প্ল্যান লিক করেছিলেন!

 

আমি ২ অক্টোবর ২০১৮ সালে ভারত সকারের কাছে টুইট করে জানিয়েছিলাম পাকিস্তান পুলওয়ামাতে আত্মঘাতী হামলা করিয়ে দিতে পারে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমার টুইটার অ্যাকাউন্ট এরপরেই সাসপেন্ড হয়ে যায় কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভঙ্গের দায়ে।

 

১৪। পাকিস্তানী সেনা ব্রিগেডিয়ার হ্যারিস নওয়াজ মোদীকে উদ্দেশ্য করে — “চাওয়ালা, মাক্কার (শঠ), সন্ত্রাসবাদী হিন্দু প্রধানমন্ত্রী।”

 

হ্যারিস নওয়াজ একটি ভাষণে কিভাবে হিন্দুদের কাপুরুষ জাতি হিসাবে গণ্য করেছেন দেখুন। তিনি এও বলেছেন হিন্দুরা বিশ্বাসের অযোগ্য। সাথে মোদীকে গালিগালাজ করা তো বাদই দিলাম।

১৫। ইমরান খানের ব্রিগেডিয়ার — “আমরা অবশ্যই নন স্টেট অ্যাক্টরদের পাঠাব, যেমন তালিবান, আইসিস জঙ্গিদের। এরাই কাশ্মীরে ভিতু হিন্দুদের উপযুক্ত জবাব দেবে।”

তিনি বলেছেন,

— পাকিস্তান অতীতে যেমন বারংবার হিন্দু সম্প্রদায়কে উচিত শিক্ষা দিতে নন স্টেট অ্যাক্টর পাঠিয়েছেন ভবিষ্যতেও তাই করবেন। তার মতে হিন্দু সম্প্রদায়কে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দিলে তারা মাথায় চড়ে বসবে। কাজেই তাদের চাপে রাখার জন্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতেই হবে।

— হিন্দুরা কাপুরুষ তাই যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের সাথে পারে না।

— একবার আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলেই পাকিস্তান তালিবানদের বাধ্য করবে ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে।

— শীঘ্রই আইসিসও কাশ্মীরে আসবে, ভারত কিছুতেই তাদের রুখতে পারবে না।

— এমনকি FATF অবধি আমাদের কিছুই করতে পারবে না। কারণ আমরা মুজাহিদদের কাশ্মীরে জিহাদ করতে পাঠাব ঠিকই, এজন্য আমরা কোনও প্রকার আর্থিক সাহায্য দেব না।

কি সুন্দর যুক্তি! আমি কাউকে সুপারি দিয়ে খুন করালে আমার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় মামলা হবে, কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে উঠবে না — এরকমই হাস্যকর।

 

১৬। ব্রিগেডিয়ার বলছেন — “পরমাণু যুদ্ধ হলে বিশ্বের একমাত্র হিন্দু দেশ ভারতবর্ষ ইতিহাসের পাতায় চলে যাবে। সাথে হিন্দু ধর্মের বিলুপ্তি সম্পূর্ণ হবে।”

 

১৭। ব্রিগেডিয়ার বলছেন — “হিন্দুরা হচ্ছে ভিতু জাতি। তারা আমাদের সাথে পারবে না।”

১৮। কম্যান্ডার বলছেন — “কাসিম থেকে গজনভি থেকে আজকের সোশ্যাল মিডিয়া গাজিরা এক লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে — গাজোয়া-ই-হিন্দ সম্পূর্ণ করা।”

 

১৯। কম্যান্ডার বলছেন — “নবী মুসলিম সৈনিকদের নিয়ে ভারতের হিন্দুদের ধ্বংস করতে নেতৃত্ব দেবেন। পুরো ভারত একদিন ইসলামের রাজত্বে চলে আসবে। ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়া হবে গাজোয়া-ই-হিন্দের প্রথম ধাপ।”

 

২০। কম্যান্ডার বলছেন — “হিন্দুরা মুসলমানদের ভয় পায়। মুসলিমরা ভারতে হিন্দুদের ১৩০০ বছর ধরে দাস হিসাবে রেখেছিল। এই জন্য হিন্দুদের ডিএনএতে মুসলিমদের সম্বন্ধে প্রচণ্ড ভীতি কাজ করে।”

 

২১। কম্যান্ডার বলছেন — “ভারতীয় কাশ্মীরে জিহাদি পাঠাতে হবে।”

ভিডিওতে বাঁদিকে যিনি বসে আছেন তিনিই ডাক্তার ফারহান ভির্ক, তিনি পেশায় এম.বি.বি.এস ডাক্তার। তিনি আবার ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইন্সাফ দলের সোশ্যাল মিডিয়া প্রধানও বটে। তিনি ইসলামাবাদ শহরের বাণী গালা অঞ্চলে অবস্থিত ইমরান খানের বাড়ী থেকে অপারেট করেন। জাইদ হামিদ ভিডিওতে ডানদিকে রয়েছেন। তিনি নবম প্রজন্মের ধর্মান্তরিত মুসলিম, যার পিতা দেশভাগের পূর্বে বিহারে থাকতেন। তিনি পাকিস্তানে দারুণ জনপ্রিয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার কয়েক কোটি অনুসরণকারী রয়েছে। তিনি আইএসআইয়ের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন।

 

২২। কম্যান্ডার বলছেন — “হিন্দুদের উচিত শিক্ষা দিতেই হবে।”

 

২৩। কম্যান্ডার বলছেন — “হিন্দুদের ক্ষতি করে এমন সবকিছুই গাজোয়া-ই-হিন্দের অঙ্গ। আমরা শীঘ্রই দিল্লিতে মিছিল বের করব, যখন ভারত জয় করব।”

২৪। কম্যান্ডার বলছেন — “হিন্দুরা কখনই বিশ্বাসের পাত্র নয়।”

 

২৫। কম্যান্ডার বলছেন — “হিন্দুরা হচ্ছে একটা অদ্ভুত জন্তু, যারা গোমূত্র পান করে এবং ১০০০ বছর ধরে দাসত্বের শৃঙ্খলায় আবদ্ধ ছিল।”

 

২৬। কম্যান্ডার বলেছেন — “মুসলিম দেশগুলিতে যে এক কোটি হিন্দু আছে, তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করো।”

 

২৭। পাকিস্তানী লিবারেল সাংবাদিক নিসার হাসান — “মুসলিমদের কাছে ৫৬ দেশ আছে। কিন্তু তোমাদের (হিন্দুদের) জন্য মাত্র একটা দেশ আছে। একটা পরমাণু বোমা পড়লে হিন্দুরা দুনিয়া থেকে মুছে যাবে।”

আমন কি আশা পন্থী লিবারেলরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারেন যে, আমি নাকি শুধু উগ্রপন্থীদের উদ্ধৃতি দেখিয়ে মুসলমানদের বদনাম করি। হাসান নিসার ভারতের লিবারেলদের খুব প্রিয় এবং পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক। ছিলেন। তিনিই এই ভিডিওতে কি বলেছেন দেখুন — “মুসলিমদের কাছে ৫৬ দেশ আছে। কিন্তু তোমাদের (হিন্দুদের) জন্য মাত্র একটা দেশ আছে। একটা পরমাণু বোমা পড়লে হিন্দুরা দুনিয়া থেকে মুছে যাবে।”

 

২৮। পাকিস্তানী প্রশাসনিক আধিকারিক ও বিশ্লেষক — “কোরআন অনুসারে ইহুদিদের মতই মূর্তিপূজক হিন্দুরা হচ্ছে ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু।”

অরিয়া মকবুল জান, প্রাক্তন পাকিস্তানী প্রশাসনিক আধিকারিক ও বিশ্লেষক। তিনি বলেন, মহম্মদ হাদিস ও কোরআনে অনেকবার বলেছেন ইহুদিরা এবং যারা মূর্তিপূজা করে তারা হচ্ছে ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু। এই মুহূর্তে হিন্দুরাই হচ্ছে পৃথিবীর শেষ মূর্তিপূজক সম্প্রদায়, তা বলা যায় ইহুদিদের মতই এরাও ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু।

 

২৯। পাকিস্তানী জ্যোতিষী ‘দুর্বৃত্ত’ হিন্দুদের নতুন গ্রন্থ আবিষ্কার করেছেন

 

৩০। “হিন্দু ব্যবসায়ীরা কেবল ব্যবসা করতেই পারে। আমরা সামরিক জাত, তাই আমাদের সাথে হিন্দুরা পারবে না।”

৩১। পাকিস্তানী বিশ্লেষক — “মুদি (মোদীকে ওনারা এই ভাবেই ডাকেন) হচ্ছে একজন সন্ত্রাসবাদী। ওর জন্যই একদিন কাশ্মীর হবে সব হিন্দুর কবরস্থান।”

 

৩২। পাকিস্তানী বিশ্লেষক — “আমরা মুসলমানরা সবাই যখন বেঁচে থাকি তখন গাজি, আর মরলে সবাই শহিদ। আর হিন্দুরা তোমরা সবাই কাপুরুষ।”

 

৩৩। পাকিস্তানী সাংবাদিক — “আমি সুইসাইড ভেস্ট পরে কাশ্মীরে যাব।”

৩৪। ইমরান খানের মন্ত্রী – “এটা ভারত নয়। পাকিস্তানের সবার কাছেই বন্দুক আছে, এমনকি আলু-কাবলিওয়ালাদের কাছেও আছে। আমরা সবাই কাশ্মীর দখল করেই ছাড়ব।”

 

৩৫। ইমরান খানের মন্ত্রী — “আমি সুষমা স্বরাজকে এই বয়সে আর লজ্জা দিতে চাইনি। ইমরান শিখদের মন জয় করতে কর্তারপুর করিডোরের কথা বলে দুর্দান্ত গুগলি ঝেড়েছেন!”

এই হচ্ছে একটি দেশের বিদেশ মন্ত্রীর সভ্যতার নমুনা। তিনি কিভাবে একটি মহিলা বিদেশ মন্ত্রীর সাথে কথা বলতে হয় তাও জানেন না। তাঁর ভাষণ শুনলেই বোঝা যায় পাকিস্তানকে কেনই বা বলা হয় অমুসলিম নারীদের জন্য জীবন্ত নরক বিশেষ। বিশেষ করে হিন্দু মেয়েদের বলপূর্বক অপহরণ, বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরকরণ, বলপূর্বক মুসলিমদের সাথে নিকাহ করতে বাধ্য করা পাকিস্তানে জলভাত। ইসলামিক শাসনে ভারতে অমুসলিম নারীদের অবস্থা কেমন ছিল, সেটা আজকের পাকিস্তানের অবস্থা দেখলেই মালুম হয়। অমুসলিম মেয়েরা বরাবরই পাকিস্তানীদের ‘প্রিয় খাদ্য’।

আমি এখানেই থামব। আমি এখানে একটা কথা পরিষ্কার করে জানাতে চাই। একজন ভারতীয় পাকিস্তানের মানুষকে পাকিস্তানী হিসাবে গণ্য করে। আর একজন সাধারণ পাকিস্তানী ভারতীয়কে হিন্দু হিসাবে গণ্য করে, যারা ইসলামের নিয়ম অনুসারে কখনই বন্ধু হতে পারে না। পাকিস্তানের জন্মটাই হয়েছে হিন্দু বিদ্বেষ থেকে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব। মনে করে দেখুন যখন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দনকে যখন টিভির সামনে আনা হয়েছিল, তাকে এই কথা বলতে বাধ্য হয়েছিল —

“আমার নাম অভিনন্দন আর আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী।”

যদি এই ভাষণ শুনেও বুঝতে না পারেন, কিছুই শিখতে পারবেন না। পাকিস্তান আদৌ কোনও দেশই নয়। পাকিস্তান একটা মতবাদের নাম মাত্র। মনে রাখতে হবে এককালে পাকিস্তান ভারতের একটা অঙ্গরাজ্য ছিল। তারা আজ কাশ্মীর দাবি করছে। আপনি যদি ভাবে কাশ্মীর ছেড়ে দিলেই মুক্তি পাবেন, ভুল ভাবছেন। পাকিস্তানের লক্ষ্য হচ্ছে দিল্লি। আজ কাশ্মীর ছেড়ে দিলে কাল তারা পাঞ্জাব চাইবে, পাঞ্জাব ছেড়ে দিলে পরশু তারা হিমাচল চাইবে। কোনও ভাবেই তাদের ক্ষুধা মেটাতে পারবেন না। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ভারতকে আরেকটা পাকিস্তান থুড়ি ইসলামিক দেশ বানানো। সে লক্ষ্যে তারা দিনরাত এক করে খাটছে।

যাঁরা মনে করেন ‘সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই ভাল ও খারাপ মানুষ আছেন এবং কিছু খারাপ লোকের জন্য পুরো সম্প্রদায়কে বদনাম করা ঠিক নয়’ তাঁরা শুনুন। ভারতের তথাকথিত  বুদ্ধিজীবীদের কজন দেখেছেন টিভি শোতে মুসলিমদের সম্বন্ধে অবমাননা মূলক কথা বলা হচ্ছে, যেমনটা পাকিস্তানে হিন্দুদের বলা হয়? ভারতে  তথাকথিত ‘সাম্প্রদায়িক’ গণধোলাইয়ে কটা মানুষ মারা গেছে? ১০? ২০? ১০০? শুধু ১৯৭১ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানে বাংলাদেশ অংশে ৩০ লক্ষ হিন্দু খুন হয়েছিল পাকিস্তানী সেনাদের হাতে। ১০০ মুসলিম নিহতের সাথে ৩০ লক্ষ হিন্দু নিহতের তুলনা করে নিজেদের নির্বোধ প্রতিপন্ন করবেন না।

উপরের ভিডিওগুলো পাকিস্তানের জাতীয় দূরদর্শনের কথা। সেখানে এইরকম বিদ্বেষের ঘনঘটা হলে ওদের হৃদয়ের গভীরে কতটা কালো?

“এখানে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে কোনও একতা থাকতে পারে না। অতীতে আমরা আমাদের পিতাকে হত্যা পর্যন্ত করেছি তিনি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে রাজি হন নি বলে!”

 

 

লেখক ডঃ বশী শর্মা আই আই টিতে অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা দুইই করেছেন। মূল প্রবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন জি সদানন্দ।