ঐতিহাসিক বাবরি মামলার রায় এবং আডবাণীর প্রতিক্রিয়া

0
568

বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় আডবানি, যোশী, উমা ভারতী সহ ৩২ অভিযুক্তই বেকসুর খালাস হলেন। একই সঙ্গে আদালত জানালো বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কোনও পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। এই ঘটনা আটকানোর চেষ্ট করেছিলেন নেতারা, কিন্তু ভিড়ের জন্যই আটকাতে পারেননি, রায় দিতে গিয়ে বললেন বিচারক। এদিন রায় দান শেষে কোর্ট জুড়ে জয় শ্রীরাম ধ্বনি উঠল। আডবাণীকে শুভেচ্ছা জানালেন অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা। অন্যদিকে রায়ের পর মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড বলল তারা সুপ্রিম কোর্টে যাবে।

গত ২৮ বছর ধরে চলা এই ঐতিহাসিক মামালার রায় দিলেন সিবিআই বিচারক সুরেন্দ্র কুমার যাদব। আদালতে ২০০০ পাতার রায় পাঠ করেন তিনি। উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা শহরে একদল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জনতা ষোড়শ শতকের বাবরি মসজিদের কাঠামো ভেঙে ফেলার প্রায় ৩ দশক পর বুধবার এই বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় দিল সিবিআই-এর বিশেষ আদালত। ১৯৯২এর ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদের কাঠামোটিকে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। যার দরুণ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, বেধেছিল দাঙ্গাও।

বাবরি মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারক বলেন, ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অশোক সিঙ্ঘল সহ সঙ্ঘ পরিবারের বিভিন্ন নেতারা চেয়েছিলেন, যেহেতু ওই কাঠামোর নিচে রামলালা রয়েছেন, তাই সেই কাঠামো অক্ষত থাকুক। কিন্তু পরিস্থিতি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। বাবরি ধ্বংসের ভিডিও ও ছবি বিকৃত করা হয়েছে। যে ছবি তোলা হয়েছে, তার কোনও নেগেটিভ নেই সিবিআইয়ের কাছে। সমাজবিরোধীরা মসজিদ ভাঙার চেষ্টা করেছিল। অভিযুক্তরা তাঁদের থামাতে চেষ্টা করেছিলেন। অডিও ক্যাসেটে কয়েকজনের ভাষণ শোনা গেলেও কী বলা হয়েছে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। ফলে সসম্মানে মুক্তি দেওয়া হল সমস্ত অভিযুক্তদের।

রায় শুনে ৯২ বছর বয়সী আডবাণী বলেন, “রামমন্দির নিয়ে আমার তথা বিজেপির অবস্থানই সঠিক বলে প্রমাণিত হোল।” এরপর তিনি বলেন “জয় শ্রীরাম! এখন আমাদের আনন্দের সময়”।

পরে এক বিবৃতিতে আডবাণী বলেন, “এই রায়ে আমার ও বিজেপির বিশ্বাসই সঠিক বলে প্রতিপন্ন হোল। ২০১৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দেয়। সেই রায়ের পরে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের সূচনা হয়েছে।”

তিনি আরোও বলেন, লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর মতো আমিও অপেক্ষা করে আছি, কবে রামমন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হবে।

রায় শুনে বিজেপি নেতা তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী বলেন, “১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম আমি। পুরো ব্যাপারটাই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। এর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র ছিল না। আমি মঞ্চ থেকে একটি সভা পরিচালনা করছিলাম। এমন সময় দেখলাম কয়েকজন করসেবক বাবরি মসজিদের ওপরে উঠে পড়েছে। আডবাণীজি তাতে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।”

বিজেপি নেতা রাম মাধব বলেন, “অনেকদিন আগেই অভিযুক্তদের নির্দোষ বলে ঘোষণা করা উচিত ছিল। দেশের সবচেয়ে সম্মানিত নেতাদের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছিল। তিন দশক বাদে সেই মামলায় তাঁরা খালাস পেলেন। এই রায়কে প্রত্যেকের অভিনন্দন জানানো উচিত।”

করসেবকরা বিশ্বাস করত, যেখানে বাবরি মসজিদ দাঁড়িয়েছিল, সেখানেই জন্ম হয়েছিল রামচন্দ্রের। তাই তারা মসজিদটি ভেঙে ফেলে। তারপরে দেশ জুড়ে দাঙ্গা শুরু হয়। সরকারি হিসাবমতো দাঙ্গায় ৩০০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। অযোধ্যার জমি নিয়ে যে মামলা চলছিল, তা এই বাবরি ভাঙার মামলার থেকে আলাদা। জমির মামলায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে। গত ৫ অগাস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে পুলিশ দু’টি এফআইআর করে। প্রথমটি করা হয় কয়েক লক্ষ করসেবকের বিরুদ্ধে। তাঁরা ৬ ডিসেম্বর মসজিদের ওপরে উঠে হাতুড়ি ও কুড়ুল দিয়ে সৌধটি ভেঙে ফেলেছিলেন। দ্বিতীয় এফআইআরটি হয় আটজনের বিরুদ্ধে। তাঁরা হলেন বিজেপির আডবাণী, যোশি, উমা ভারতী এবং বিনয় কাটিহার ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অশোক সিঙ্ঘল, গিরিরাজ কিশোর, বিষ্ণুহরি ডালমিয়া এবং সাধ্বী ঋতাম্ভরা। তাঁদের মধ্যে বিষ্ণুহরি ডালমিয়া, গিরিরাজ কিশোর ও অশোক সিঙ্ঘল মারা গিয়েছেন।

করসেবকদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করে সিবিআই। অন্যদিকে বিজেপি ও ভিএইচপি নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় উত্তরপ্রদেশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে।