ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠদানের অপরাধে ‘আল্লাহু আকবর’ রব তুলে ফ্রান্সে মুণ্ডচ্ছেদ শিক্ষকের

0
1140

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- ইউরোপে ইসলামী সন্ত্রাস আজ‌ও অব্যাহত। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার ‘আল্লাহু আকবর’ রব তুলে প্রকাশ্য রাস্তায় শিক্ষকের মাথা কাটল এক যুবক। এমনটাই জানানো হয়েছে ফরাসি পুলিশের তরফে।

ফের ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী থাকল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। অভিযোগ, প্যারিসের রাস্তায় এক শিক্ষকের মুণ্ডুচ্ছেদ করেছে এক জেহাদি। জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ভয়াবহ এই ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনাকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এক নাবালক সহ চারজনকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। নিকেশ করা হয়েছে মূল অভিযুক্তকে।

ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছিল কয়েকদিন আগে। জানা গিয়েছে, প্যারিসের একটি স্কুলে পড়াতেন স্যামুয়েল পি নামের নিহত ওই শিক্ষক। ছাত্রদের ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষা দিতে গিয়ে হজরত মহম্মদের একটি কার্টুন চিত্র দেখিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই বিপত্তি শুরু। ওই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েই স্যামুয়েলের উপর সশস্ত্র হামলা চালায় ওই চেচেন মৌলবাদী। ঘটনার পর ফ্রান্সের নিরাপত্তারক্ষীরা সেই জেহাদিকে গুলি করে হত্যা করে।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১০ দিন আগে ইতিহাসের ওই শিক্ষক ক্লাস চলাকালীন হজরত মহম্মদের কার্টুনচিত্র দেখিয়েছিলেন, যা এক শ্রেণীর কাছে ক্রোধের কারণ হয়ে ওঠে। এর পর থেকেই ক্রমাগত খুনের হুমকি পাচ্ছিলেন তিনি। শুক্রবার নিজ কর্মস্থল মিডল স্কুলের সামনের রাস্তাতেই খুন করা হয় ওই শিক্ষককে। ঘটনাটি ঘটেছে প্যারিসের উত্তর-পশ্চিমে কনফ্লানস সেইন্তে-হনোরাইন এলাকায়। ওই এলাকা থেকে ৬০০ মিটার দূরে মূল অভিযুক্তকে গুলি করে পুলিশ।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে একজন অভিভাবক নরডিন চৌয়াদি বলেছেন, “আমার ছেলে জানিয়েছে উনি খুবই ছাত্রদরদী বন্ধুবৎসল ছিলেন। সেদিন ক্লাসে উনি কিছু মুসলিম ছাত্রকে বলেন, আমি চাই তোমরা ক্লাসের বাইরে যাও কিছুক্ষণের জন্য, কারণ তোমাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়।” তারপরেই মহম্মদের কার্টুন চিত্র (ব্যঙ্গচিত্র নয়) ছবি ছাত্রদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।

অবশ্য এই ঘটনায় প্রথম নয়। ২০১৫ সালে ফ্রান্সে তোলপাড় শুরু হয় শার্লি এবদোর ঘটনায়। সেই বার মহম্মদের একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের জন্য প্যারিসের ইহুদি সুপারমার্কেট অঞ্চলে শার্লি এবদোর অফিসে আক্রমণ চালানো হয় বলে অভিযোগ।

প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকদিন আগেই মৌলবাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সেই সময় মৌলবাদের উত্থান নিয়েও দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এই ঘটনা। এহেন পরিস্থিতিতে শুক্রবারের ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে ফ্রান্সে ক্রমেই শিকড় মজবুত করছে কট্টরপন্থা।

শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে একটি জরুরি বৈঠক‌ও ডেকেছেন। সাংবাদিকদের কাছে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে ঘৃণ্য মৌলবাদ। ওই শিক্ষক ছাত্রদের বাকস্বাধীনতার শিক্ষা দিচ্ছিলেন তাই তার বাক্ রহিত করে দেওয়া হল।’