কৃষক আন্দোলনঃ তারা লক্ষ্য সরিয়ে দিয়েছিল পরিবেশবাদে, উল্টে মুখ পুড়ল তাদেরই

0
702
ক্ষেতে শস্যের অবশেষ পোড়ানোঃ ছবি ঋণ স্বরাজ্য

পাঞ্জাবের কৃষক আন্দোলন বিভিন্ন কারণেই আমাদের শঙ্কিত করে। খালিস্তানি শক্তির অংশগ্রহণের বিষয়টি তো আছেই, যা দেশের অখণ্ডতার পক্ষে ক্ষতিকারক, সাথে সাথে গরীব কৃষকদের উপর বন্দুক রেখে বিত্তবান কৃষকদের নিজেদের আরো প্রভূত উন্নতি ঘটিয়ে নেওয়ার পক্ষেও এই আন্দোলন। সাথে সাথে সরকারী কোষাগারকে নিংড়ে নেওয়ার পথে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে পাঞ্জাবে সেই বিষয়টিও ত্বরান্বিত করবে যদি এই আন্দোলন সফল হয়।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই বিভ্রান্তিকর অগ্রগতিতে, আমি সম্প্রতি একটি টুইটের সম্মুখীন হলাম, যাতে বলা হয়েছে কীভাবে পরিবেশবিদরা কৃষকদের এই সংগ্রামকে সমর্থন করেছে। আমি বিভিন্ন কারণে বিভ্রান্ত ছিলাম। কারণ উত্তর ভারতের কিছু অংশে এক শ্রেণীর ধান চাষিদের জন্য পরিবেশের অবক্ষয় রুখতে কট্টর পরিবেশবিদরাই আইনের দ্বারস্থ হয়।

অদ্ভুতভাবে, এই শ্রেণীর কৃষকরাই নতুন আইনের বিরুদ্ধে বেশি সরব হয়েছে এবং তাই পরিবেশবিদদের এই কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তাদের ক্রমবর্ধমান নীতি পরিচালনের অগ্রাধিকারের দাবিকে অসম্মান করছে।

এই শ্রেণীর কৃষকরা যে পরিবেশের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। অতিরিক্ত মাত্রায় সারের ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ জল সংগ্রহ করতে অল্প মূল্যে বিদ্যুতের ব্যবহার এবং শীতকালে খড়কুটো জ্বালানোর ফলে পরিবেশ নানাভাবে দূষিত হয়েছে। এই প্রত্যেকটি বিষয় সম্প্রতিকালে পরিবেশবিদদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং তারাই সরকারকে বেশি দেরি হওয়ার আগেই কড়া পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছে।

এই নতুন আইন পরিবেশের অবক্ষয়ের বিষয়কে কি সরাসরি সম্বোধন করেছে? সরাসরি হয়তো না, তবে ভবিষ্যতে গৌণ প্রভাব হিসেবে ফসলে বৈচিত্র্য দেখা যাবে। তবে, কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করা মানে স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করা, যার অর্থ বিগত কয়েক বছরে পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সক্রিয়তার পথপ্রদর্শক সমস্ত পরিবেশ ভাবনার অমর্যাদা করা।

দুঃখজনকভাবে, এই আইনের বিরোধিতায় সরব হওয়া ব্যক্তিবর্গের বিরোধী পন্থা খুবই বিস্ময়কর। কয়েকজনের সাথে কথোপকথনের পর আমি যা বুঝলাম, তা হল এরা কেউই ফলিত তথ্য জানতে আগ্রহী নয়, আগে থেকেই এরা নিজেদের মনস্থির করে নিয়েছে। কিন্তু তথ্য খুবই জরুরি এবং আমাদের সেই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা আবশ্যক যেখানে প্রধানমন্ত্রী দেশে নবীকরণযোগ্য শক্তি পরিকাঠামোর মানোন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি উপলব্ধি করেন যে, পরিবেশগত সীমাবদ্ধতা বা সম্পদের সীমাবদ্ধতা দেশের দীর্ঘমেয়াদী শক্তি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করবে। তাই তিনি তৎকালীন ভারতের সর্বোত্তম  উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেন। বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য খালের ওপর সৌরকোষ বসান। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই, তিনি নবীকরণযোগ্য শক্তি বিভাগে বিশেষ দৃষ্টিপাত করেছেন এবং সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সৌর জোট গঠন করেছেন।

সবুজ করিডোরের সম্প্রসারণ, সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্র বিকাশ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উন্নয়ন স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে, ভারত সরকার সেই সমস্ত নীতিতে বিশ্বাসী, যা আমাদের বিকাশের লক্ষ্যে পরিবেশের স্থায়িত্বকে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করবে।

এই পয়েন্টটিকে আরও ব্যাখ্যা করলে বলা যায়, বেশিরভাগ দেশই উচ্চ মাত্রায় বৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে চায় যার অর্থ একটি নির্দিষ্ট হারে ক্রমাগত বৃদ্ধি। পরিবেশের স্থায়িত্ব বলতে বোঝায় আগামী প্রজন্ম এবং ভবিষ্যতে বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদ সঞ্চিত রেখে বর্তমানে বিকাশের চিন্তাভাবনা করা।

এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় দেখা গেছে, বিকাশের কথা বলতে গিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবদ্ধতাকে অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করা হয়। কিন্তু নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার এবং অন্যান্য বিষয় যথা- বিদ্যুৎশক্তি চালিত যানবাহনের সক্রিয়করণে উৎসাহ প্রদান প্রমাণ করে যে ভারত সরকার বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সচেতন। জ্বালানি দ্রব্যের ওপর অতিরিক্ত কর ধার্য করা এই পন্থার(অতিরিক্ত কর আদায়ের বিবেচনাসহ) অন্যতম পরিণতি।

একদিকে, বিভিন্ন উপায়ে ক্রমহ্রাসমান  পরিবেশগত সম্পদের সংরক্ষণে যে সমস্ত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় সেগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর কতটা নির্ভরশীল, সরকার সেটি দক্ষতার সাথে ঠাহর করতে পারছে। অন্যদিকে, রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত সারের ব্যবহার ও ভূগর্ভস্থ জলসংকট।

একজন হয়তো আশা করবে, যে জলবায়ু ন্যায়বিচার নিয়ে সরব কর্মীরা সরকারকে দোষারোপ করবে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য এবং যারা এই পরিবেশের অবক্ষয়ে ভূমিকা নিচ্ছে তাদের কোনোভাবেই সমর্থন করবে না। দুঃখজনক ভাবে, এটি সত্য নয় বরং উল্টোটা সত্য যা একজনকে ভাবতে বাধ্য করে যে ২০২১ এ বোধহয় সবই সম্ভব?

এ বছরের প্রথম দুই মাসেই অভাবনীয় বিষয় ঘটছে, আসন্ন মাসগুলিতে না জানি আমাদের আরও কী কী দেখতে হবে।

কিন্তু এটি স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, কৃষক আন্দোলনের সাথে সম্প্রতি প্রণীত কৃষি আইনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং সম্প্রতি ঘটনাগুলো লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে এই আন্দোলনের সাথে হয়তো কৃষির ও কোনো সম্পর্ক নেই। বেশিরাগ মানুষই এটিকে জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং আরও কী কী ক্ষেত্রের আলোচনার বিষয়ে পরিণত করেছে।

একজনের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এই সমস্ত আন্দোলনের লক্ষ্য কী? নাকি এটি লক্ষ্যহীন আন্দোলনগুলির মধ্যে অন্যতম একটি আন্দোলন যা কোনো কারণ ছাড়াই বিপ্লব আনতে চায়?

মূল লেখাটি স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত, লিখেছেন করণ ভাসিন। অনুবাদ করেছেন পিয়ালি।