খাদ্যসংকটে চীন, স্বল্পমূল্যে ভাতের যোগানের আশায় কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের শেষ ভরসা ‘পুঁজীবাদী’ ভারত!

0
896

বঙ্গদেশ ডেস্ক – চীনে প্রবল খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলস্বরূপ তারা এখন দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগণের জন্য ভারতের চাল আমদানির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। উহানের ল্যাব থেকে তৈরি ভাইরাসজনিত মহামারী ছাড়াও চীন বন্যা, মহামারী, পঙ্গপালের আক্রমণসহ বিভিন্ন দুর্যোগের মোকাবিলা করছে। অন্যদিকে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতির ফলও ভোগ করছে, যা তাদের দেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। খাদ্য ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিং খাদ্য অপচয় রোধে দেশ জুড়ে প্রচারও শুরু করেছিলেন।

উইওন নিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু চীনা বিশেষজ্ঞ দাবি করেছিলেন, যে সম্ভবত দেশটি খাদ্য সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যথারীতি চীন সরকার তার অভ্যাসবশত সংবাদমাধ্যমের কন্ঠরোধ রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। থাইল্যান্ড, মায়ানমার এবং ভিয়েতনাম থেকে চালের সরবরাহ হ্রাস পাওয়ার পরে চীন এখন চাল আমদানির জন্য ভারতে দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে চীন, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ভিয়েতনাম এবং পাকিস্তান থেকে তারা চাল কিনে আসছে। তবে এখন এইসব দেশগুলি এক টন চালের জন্য ৩০ ডলার অতিরিক্ত মূল্য দাবী করছে, তার পরেও পরিমাণ অপ্রতুল। ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’-এর খারাপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও তাই চীন, ভারত থেকে চাল আমদানি করছে; এই বিষয়টিই প্রমাণ করে যে দেশটির চালের মরিয়া প্রয়োজন। চীন, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতি টনের জন্যে ৩০০ ডলারের বিনিময় মূল্যে ‘ভাঙ্গা চাল’ আমদানির জন্য চুক্তি করেছে।

ওপ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, চীনে বর্তমান খাদ্য সঙ্কটের বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে মহামারীর প্রভাব, পশুসম্পদজনিত রোগ, বিশ্বজুড়ে সরবরাহের চেইন ব্যাহত হওয়া, লকডাউনের কারণে চীনে কৃষি চক্রের ব্যাহত হওয়া, শ্রমিকের অভাব এবং বিধ্বংসী বন্যা, এসবই খাদ্যসংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

চীন খাদ্য অপচয় রোধে প্রচার শুরু করেছে

সম্প্রতি, চীনের রাষ্ট্রপতি দেশে খাবারের অপচয়কে ‘শকিং’ এবং ‘মন খারাপ করার মত’ বলে অভিহিত করেছেন। চলতি বছরের আগস্টে তিনি দেশে ‘অপারেশন খালি প্লেট’ নামে একটি প্রচারণা শুরু করেছিলেন। চীনা কর্মকর্তারা বড় বড় উৎসবগুলিকে লক্ষ্য রেখে এই অভিযানটি প্রথম শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। এখন প্রচারটি জনসাধারণের মধ্যে অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। চীনা রাষ্ট্রপতি লোকজনকে খাবারের অপচয় রোধ করতে এবং ভেবেচিন্তে খেতে বলেছেন। তিনি খাদ্য ঘাটতি সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করেননি, বরং এর পরিবর্তে দাবি করেছিলেন যে দেশে এবার ‘বাম্পার’ ফলন হয়েছে।

চীনের ভুট্টা উৎপাদনে ঘাটতি

সেপ্টেম্বর মাস থেকেই এমন খবর পাওয়া গিয়েছিল যে, আসন্ন ২০২০ – ২০২১ মরসুমে দেশটিতে ভুট্টার উৎপাদনে ঘাটতির কারণে চীনে ভুট্টার দাম বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশটি প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন ঘাটতির মুখোমুখি হতে পারে এ বছর, যা মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ। চীনের চাহিদা মেটাতে ভুট্টা আমদানি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে আশা করা হয়েছিল।

খাবারের অপচয় রোধ করতে ‘এন – ১ মডেল’

‘এন – ১ মডেল’ নামে একটি নতুন নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল যা গ্রুপ ডাইনিংয়ে পরিবেশন করা খাবারের অংশের সংখ্যা সীমিত করে। এর বিশদ অর্থ হ’ল, যদি কোনও রেস্তোরাঁয় ৫ জনের একটি দলের জন্য খাবার অর্ডার করা হয়, তবে কেবল ৪ জনের অংশের খাবার পরিবেশন করা হবে। এই প্রচারের অংশ হিসাবে, চীন সরকার ভিডিওগুলিতে খাবারের অপচয় রোধকে উৎসাহিত করেছে। চীনা সরকার আরও বলেছে যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়াতে বহু ভিডীওতে দেখানো হয় যে দ্রুত প্রচুর পরিমাণে খাবার খাচ্ছে কিছু মানুষ এবং সেসব ভিডীও ভাইরালও হচ্ছে, তাই অনলাইন মাধ্যম থেকে এই ‘কন্টেন্টগুলি’ সড়িয়ে দেওয়া হয়। আবার দেশের কিছু রেস্তোরাঁয় খাবার অর্ডার দেওয়ার আগে গ্রাহকদের নিজেদের ওজন মাপতে বলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখার পরে এই অনুশীলনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

চীনা গণমাধ্যম খাদ্য সংকটকে অস্বীকার করে বলেছে যে অর্থ বা সংস্থান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে, বিশেষত অপব্যয় এড়ানোর বিষয়টি চীনা সংস্কৃতির একটি অংশ। তাই এত কিছু প্রচার করা। যদিও সরকারি প্রোপাগান্ডা সরিয়ে আসল সত্য সবার সামনে উন্মোচিত হয়ে গেছে। ভয়াবহ খাদ্য সংকটে পড়তে চলেছে চীন, যা কমিউনিস্ট শাসনের ভীত নড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা।