গণতন্ত্রের রাণীমা!

লেখক: সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়

কার্টুনিস্ট: চাণক্য

 

ভাবছিলাম যা তাই হল ।

আজ সন্ধ্যে থেকে CN চ্যানেলের ওপর ছুড়ির কোপ পড়ল । SITI cable কে দিয়ে সম্প্রচার বন্ধ করা হল । কালার বার impose করে গলাটি টিপলেন তিনি ।

বল বল আমার হয়ে কথা বলবি বল । সবাই বলছে তুই বলবি না কেন ? স্থায়ী ভাবে black out করলে হুল্লোড় হবে । সংবাদ স্বাধীনতা নিয়ে চিৎকার হবে । তাই ঘুরিয়ে বন্ধ করা হল সম্প্রচার । আর SITI CABLE যেহেতু বৃহত্তম কেবল অপারেটর তাই তাদের দিয়েই করা হল কাজটি ।

দুটি ঘটনার কথা মনে এল ।

২০১৬, কলকাতা টি ভি তখন অনুপ্রাণিত নয় । নিজের মত করে কথা বলত । তৎকালীন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সমস্ত অপেরেটর দিয়ে কলকাতা টিভি র সম্প্রচার বন্ধ করালেন । তারপর অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগ করে পথে আনলেন চ্যানেলকে । এখন পুরোপুরি ‘অনুপ্রাণিত’ । purpose served ।

অনিক দত্তের ‘ভবিষ্যতের ভূত’ এর কথাও মনে পড়ছে । নন্দন চত্তরে ফিল্ম উৎসবে নির্লজ্জের মত মমতার কাট আউট দেখে শালীন ভাবে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন । অন্যান্য তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা তখন এটা ওটা পাওয়ার লোভে দেখেও না দেখার ভান করছিলেন । ফলে সব রাগ জমা হল অনিক দত্তের ওপর । রাতারাতি ভবিষ্যতের ভূত ভ্যানিসড হল ২০টি হল থেকে । ফিল্ম দুনিয়ার দুই বিশ্বাস brothers কে দিয়ে কাজটি করিয়েছিলেন তিনি । সামনে উর্দি ধারীদের রেখে । অনুপ্রাণিত জয় গোস্বামী, নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী, শাঁওলি মিত্র কিম্বা অরিন্দম শীলরা তখনও চুপ । ভবিষ্যতের ভূতের producer নাকে খদ দিতে বাধ্য করেছিলেন রাজ্য সরকারকে । হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট দৌড়ে ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণও আদায় করেছিলেন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ।

হলে কি হবে নির্লজ্জের তো লজ্জা নেই । দু কান কাটা । চামড়া মোটা । বেলতলায় বারবার যায় । মুখ পোড়ে । পুড়লে কি হবে জানে ‘পোড়া মুখ’ বারবার পুড়লে লোকে ধরতে পারেনা ।

ক’দিন আগেই নবান্নের evening show তে CNএর মণীশ কীর্তনিয়াকে ধমকেছিলেন । তোমার প্রশ্নের উত্তর দেব না । পরে চমকেছিলেন – মণীশ, তুমি নবান্নে ঢুকলে কি করে ? তোমার তো accredition নেই । বিশ্বর সঙ্গে যোগাযোগ করো ।

কে এই বিশ্ব ? সে অন্য কাহিনী ।আজ নয়, লিখব কোনদিন ।

accredition সত্যিই নেই । CN চ্যানেলের কোন সাংবাদিককে accredition দেয়নি নবান্ন । অনুপ্রাণিত না হওয়ার অপরাধে ।

তাও চলছিল । পছন্দ হল না তাঁর । লেলিয়ে দিলেন cable operator দের । একদম ২০১৬ স্টাইল । যে ভাবে কাছে এনেছিলেন কলকাতা tv কে । পুরানো ছক । শুধু নতুন খদ্দের ।

CN চ্যানেল বশ্যতা স্বীকার করবে কি না জানিনা । বিশ্ব কে দিয়ে accredition আটকাবেন । একের পর এক একে ওকে দিয়ে legal notice খাওয়াবেন । পুলিশ লেলিয়ে দেবেন । নবান্ন সহ সব সরকারি অফিসে ঢোকা বন্ধ করে দেবেন । বিজ্ঞাপনের হাত ছানি দেওয়াবেন । পুরসভাকে দিয়ে CN চ্যানেলের building tax লাগামহীন করে দেবেন । সব অস্ত্র প্রয়োগ করবেন । বিদায় যোগ যত কাছে আসবে ।

আর অন্য সব সংবাদ মাধ্যম ? সবাই চুপ করে থাকবেন ? অনুপ্রেরণার ঘাটতি দেখলে NEWS 18 এর ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক হতে এক ঘণ্টাও সময় লাগবে না । যাকে একটা সংবাদ পরিবেশনের দায়ে ৬ ঘণ্টা থানায় জেরার নামে বসিয়ে রেখে humiliate করা হয়েছিল । অনুপ্রেরণার জুতো পায়ে একবার গলালে কতটা অনুগত হতে হয় তার ইতিহাস অনেক । বাকি সংবাদ মাধ্যম যদি এখনো তা না বোঝে ‘ধ্রুবজ্যোতি’ হতে তাঁদেরও সময় বেশী লাগবে না । সেদিন চ্যাঁচালে লোকে বলবে বেশ হয়েছে ।

আজ পাঠক সব দেখছে, দর্শক সব শুনছে । মনে মনে প্রহরও গুনছে । কোন সংবাদ মাধ্যম কোন দলের পক্ষে এ কথা বিচার করে তার মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেবে রাষ্ট্রশক্তি ? ঘুঁটে পুড়লে গোবর হাসলে ‘একদা ২৪ ঘণ্টা’র বিরুদ্ধে রাষ্ট্র শক্তি মৃত্যু দণ্ডাদেশ দিলে হাসতেন তো তাঁরা ? গণশক্তিকে আদালতের নির্দেশের পরেও এই সরকার বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ রেখেছে । ঐতিহাসিক কালান্তরের কাতর আবেদনেও এই সরকার বিজ্ঞাপন দেয়নি । মৃত্যুর বালিশে মাথা রেখেছে সে । শুধু শাসকের রোষানলে থেকে ।

সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার এই নির্লজ্জ শয়তানির মগজের বিরুদ্ধে আজ কথা বলতেই হবে সব্বাইকে । জাত, ধর্ম, দল, রং খোঁজার সময় আজ নয়। আগুন লেগেছে শিয়রে । ঔদ্ধত্বের সেই আগুন নেভাতেই হবে ।

প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি কলমে, মস্তিষ্কের অন্দরে, হৃদয়ের অলিন্দে ।

শুরু হোক নতুন করে – বুঝিয়ে দেওয়ার দিন ।। মুখ খোলার দিন ।।