আপনারা প্রায়ই দেখে থাকবেন যে ধর্ম-নিরপেক্ষ কমিউনিস্টরা অন্যান্য ধর্মমতের ব্যাপারে উদাসীন ও নিরপেক্ষতা অবলম্বন করলেও ইসলামের ব্যাপারে তারা নিরপেক্ষ নন। আপনারা দেখে থাকবেন শুধুমাত্র ভারতের না ভারতের বাইরের ইস্যুও টেনে এনে এই লিবারেল বামেরা কলকাতার চাকা জ্যাম করে দেন। যেমন-গাজায় ইজরায়েলি সেনার অপারেশনে মারা যাওয়া প্যালেস্তানিয়ান পাথরবাজদের নিয়ে, ইরাকে আইসিসের বিরুদ্ধে আমেরিকার সৈন্য-অভিযান নিয়ে, আফগানিস্তানের থেকে আমেরিকার সৈন্য অপসারণের জন্য এনারা খুবই অগ্রণী কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নরসংহারের প্রতিবাদে নৈব নৈব চ, পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখদের ওপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিবাদসভাতে টিকিও দেখা যায় না। এমনকি রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য রাস্তায় নেমে গেলেন কিন্তু রোহিঙ্গা হিন্দুদের জন্য না। এরাই হল সেই কমিউনিস্ট যাঁরা কাশ্মীরের পাথরবাজদের মানবাধিকারের দাবি করে, এরাই জেএনইউ তে শ্লোগান তোলে ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে ইনশাল্লাহ, এরাই ভারতীয় সেনাকে ধর্ষক বলে, এরাই হিন্দু দেবীর নগ্ন ছবি এঁকে বলে হিন্দুদের আরও সহনশীল হতে হবে। কিন্তু কেন, ভেবে দেখেছেন কখনও? ধর্ম-নিরপেক্ষ কমিউনিস্টদের ইসলামোফিলিয়ার কারণ ? চলুন জানাই- কমিউনিজম এবং ইসলাম এদের মতাদর্শগত বহু মিল রয়েছে তাই এমনটা হয়।
১
২
৩
৪
গণতন্ত্রের স্থান কি এই কমিউনিজম ও ইসলামতন্ত্রে তা এর আগেই বলেছি। গণতন্ত্রের অবস্থান কমিউনিজম ও ইসলামতন্ত্রে ঠিক সোনার পাথর-বাটির মতো।
৫
অতি-বামপন্থীরা বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে খর্ব করে কমিউনিস্ট দেশ গড়তে চায়। সর্বহারার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে কমিউনিস্ট নেতাদের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অতি-বামপন্থী বা মাওবাদী নেতারা এরজন্য গরীব, সমাজের দ্বারা শোষিত বঞ্চিত লোকজনদের একজায়গায় জড়ো করে ও তাঁদের মস্তিষ্কে ঠেসেঠেসে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ভরে দেয়। কিরকম সেটা? একটিই কথা – রাষ্ট্র তাঁদের শোষণ করেছে, তাঁদের গরীবী, পিছিয়ে পরার প্রধান কারণ হল রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের সরকার। আর তাঁদের এই অধিকার কেড়ে নিতে হবে বন্দুকের নলের দ্বারা। মাওবাদী নেতারা সেই সমস্ত পিছিয়ে পড়া, আদীবাসী এলাকাকে চিহ্নিত করে ও তাঁদের মধ্যে নোংরা দেশবিরোধী প্রচার চালায়। এই সমস্ত এলাকায় কিশোর-যুবদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিতে এরা যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সেই পরিমাণ অর্থ কিন্তু তাঁদের উন্নতিতে ব্যয় করে না। এমনকি সরকার সেই সমস্ত এলাকায় বিকাশ করতে গেলেও করতে দেওয়া হয় না। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক ছত্রিশগড়ের সুকমা জেলা। সেখানে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যখন পাকা রাস্তা নির্মাণ করতে ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিক পাঠায় তাঁদের ওপর হামলা চালায় মাওবাদীরা। তারা তো গরীবের জন্য নিবেদিত প্রাণ, বঞ্চিত শ্রেনীর জন্য লড়ছে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার সেই একই কাজ করার চেষ্টায় রত। বিকাশের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে চাইছে – সেখানে পাকা রাস্তা হবে, বিদ্যালয় হবে। সমাজের বঞ্চিত মানুষজন সমাজের মূল স্রোতে ফিরবে। তাহলে? মূল কারণ হল, এসব হলে এই মাওবাদী নেতাদের ব্যবসা বন্ধ হবে। তাই তারা এই সমস্ত এলাকায় সরকার দ্বারা প্রবর্তিত শিক্ষা, স্বাস্থ্যের সুবিধা সাধারণের কাছে পৌছে দিতে চায় না। সেনাবাহিনী ওই এলাকায় প্রহরায় থেকে রাস্তা নির্মাণ করে। সেনাবাহিনীর ওপরেও এই মাওবাদীরা হামলা চালায়। আর এই গ্রামের মাওবাদী আন্দোলনকে মহিমান্বিত করে শহরে প্রচার করে ও সংবাদপত্রে লেখনী ছাপে মাওবাদী-সমর্থক, অতি-বামপন্থী লেখক-লেখিকারা। এই সমস্ত মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাতে বিদ্যালয়ও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই হল কমিউনিস্ট বিপ্লবের ধারণা।
এবার জিহাদ প্রসঙ্গে আসা যাক। জিহাদ কি? ইসলামে জিহাদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। জিহাদ শব্দটির অর্থ হল ধর্মযুদ্ধ যাকে ইংরাজীতে বলা হয় ক্রুসেড। কোরানে মুসলিমদের জিহাদের জন্য অনুপ্রেরিত করা হয়েছে। জিহাদ হল সারা বিশ্বে ইসলামকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রোগ্রাম। তাদের লক্ষ্য হল সমস্ত বিশ্বে অমুসলমান অর্থাৎ কোরানের ভাষায় কাফেরদেরকে ইসলামে ধর্মান্তকরণ করা নতুবা তাঁদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। খিলাফত অর্থাৎ ইসলামিক জগৎের সর্ব্বোচ্চ ধর্মগুরু খলিফার শাসন। এটাই হল জিহাদের স্বরূপ। গোটা বিশ্বে একটাই ধর্ম – ইসলাম, গোটা বিশ্বে একজন সরকার – খলিফা, গোটা বিশ্বে একটাই সংবিধান – কোরান ,গোটা বিশ্বে একটাই কানুন – শরিয়া। এই হল বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত মুসলিম-ব্রাদারহুড বা প্যান ইসলামিক আদর্শ। আইসিস, তালিবান, সিমি, জামাতি, বোকো হারাম, লস্কর এরা প্রত্যেকে একই লক্ষ্যে লড়ছে।
রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থে জিহাদ শব্দটাকে খুবই চতুরতার সঙ্গে সেকুলার শব্দ বানিয়ে প্রচার করে যে জিহাদ করো মনের সঙ্গে, লোভের সঙ্গে, কামের সঙ্গে, হিংসার সঙ্গে। আচ্ছা এই একই কথা প্রসঙ্গে যদি আমি আরবি শব্দ জিহাদ উল্লেখ না করে ধর্মযুদ্ধ উল্লেখ করি তাহলে কেমন লাগবে? ধর্মযুদ্ধ করুন নিজের মনের সঙ্গে, লোভের সঙ্গে, হিংসার সঙ্গে। খটকা লাগছে? ধর্মযুদ্ধ অর্থাৎ ধর্ম প্রতিস্থাপনা হেতু যে যুদ্ধ। লোভ হিংসার বিরুদ্ধে নিজের মনে সংঘর্ষ হতে পারে, বিদ্রোহ হতে পারে, যুদ্ধ হতে পারে,কিন্তু ধর্মযুদ্ধ কিভাবে হবে? আরবি ভাষায় আমাদের অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এই সমস্ত নেতারা সেকুলার সেজে ভোট লোটে আর যখন কাশ্মীরে এই পবিত্র শব্দ ‘জিহাদ’ খাঁড়ার ঘায়ের মতো নেমে আসে কাশ্মীরী পন্ডিতদের ওপর তখন এরা চুপ থাকে।
আশা করি বুঝতে পারলেন কমিউনিস্ট ও ইসলামিস্টদের মধ্যে এতো মিল কেন? এই দুজনেই কেন দেশদ্রোহী? কারো কোনও মতামত থাকলে জানাবেন। এই সমস্ত মানুষজনদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন সর্বদা।