কোরোনা ভাইরাস কি ভাবে চেপে রাখা হয়েছিল

0
915

সারা বিশ্বজুড়ে এই মুহূর্তে যে বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার নাম কোরোনা ভাইরাস। এই কোরোনা ভাইরাস বিপর্যয় শূন্য থেকে আসেনি। এর জন্ম চীনে। চীন থেকে উৎপত্তি হলেও এই মুহূর্তে সারা বিশ্বকে ভয়ে কম্পমান করে ছেড়েছে। কোরোনা ভাইরাস যে দেশ থেকে উৎপত্তি হয়েছে সেই চীনে ১৯৪৯ সাল থেকে কমিউনিস্টরা শাসন করে আসছে। চীনে করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি সৃষ্ট হয়েছে, যা ভয়াবহ ঘাতক। যদি যথাসময়ে এই তথ্য সবাইকে জানানো হত, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ৯৫%ই হত না। একথা এখন সবাই জানেন যে, চীন নিজের স্বার্থে এই ভাইরাস সৃষ্টি করেছে এবং বাতাসে ছেড়েছে। বহু সপ্তাহ ধরে তারা সে তথ্য গোপন রেখে গেছে। যারাই এ বিষয়ে মুখ খুলেছে, চীনের কমিউনিস্ট সরকার কঠিন শাস্তি দিয়েছে – মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে।

এই ডিসেম্বরেই ৩৩ বছর বয়স্ক লি ওয়েনলিয়াং নামে একজন চীনা চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, যিনি ঊহানেরই বাসিন্দা ছিলেন; তিনি উইচ্যাটের মাধ্যমে তার বন্ধুদের কাছে প্রথমবার করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে জানিয়েছিলেন – তার মতে, এ ছিল সার্স (সেভেয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেট্রি সিনড্রোম) রোগের একটি শাখা। তবে অনেক মারাত্মক। লি যেখানে কাজ করতেন সেই উহান সেন্ট্রাল হসপিটালে অনেকগুলি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে, তাও জানিয়েছিলেন। সার্স ২০০২-০৩ সালে প্রথমবার চীনে আক্রমণ করে, চীন সরকার অতুলনীয় দক্ষতার সাথে এই রোগের কথা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে সফল হয়েছিল, যে রোগে চীন ও বহির্বিশ্ব মিলিয়ে ৭৭৪ জন মারা গিয়েছিল তা প্রায় সবাই ভুলেই গিয়েছিল। লি ওয়েনলিয়াং তার ডাক্তার বন্ধুদের সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, এবার যেন তারা চিকিৎসার সময়ে সতর্ক থাকেন। তিনদিন পরে লিকে ডেকে উহান সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ধমক দিয়েছিল, চাকরী খাওয়ার ভয় দেখিয়ে উইচ্যাটের সব সতর্কবাণী মুছতে বাধ্য করেছিল। এতেই শেষ নয়, পুলিস এসে তাকে ‘সরকার বিরোধী মিথ্যা অভিযোগে’ গ্রেফতার করলেও দুদিন পরে ছেড়ে দেয়। ছেড়ে দেওয়ার আগে তাকে রীতিমত স্ট্যাম্প পেপারে সই করিয়েছিল – তাতে লেখা ছিল “আমি কোরোনা ভাইরাসের ভয় দেখিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার জন্য দুঃখিত। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর করব না।”

এরপর লি ওয়েনলিয়াং আবার উহান সেন্ট্রাল হসপিটালে ফিরে আসেন এবং চিকিৎসা শুরু করেন। এই সময়েই তার দেহে কোরোনা ভাইরাসের লক্ষণ ফুটে ওঠে। তার এই অবস্থার সংবাদ পেয়ে ভয় পেয়ে চীনের কমিউনিস্ট সরকার কোরোনা ভাইরাসের সব নমুনা ধ্বংস করে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয়। সাথে প্রায় ৪ লক্ষ কোরোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের আলাদা জায়গায় সরিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তাইওয়ান ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহেই ডব্লুএইচও কর্তৃপক্ষকে সাবধান করে দিয়েছিল, এবার সার্স সদৃশ আরেকটা ভাইরাস বাহিত রোগ ছড়াচ্ছে ঊহান জুড়ে, যা বাতাসের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। কিন্তু তাইওয়ানের সাবধানকে গ্রাহ্য করার বদলে ১৪ জানুয়ারি ২০২০ সালে ডব্লুএইচও প্রধান চীনের রাজধানি বেইজিঙ্গে এসে জানান, “আমরা অদ্যাবধি কোনও প্রমাণ পাইনি যে, করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।” বলা বাহুল্য চীন সরকার এই কথাটাই ডিসেম্বর থেকে বলে আসছিল। ডব্লুএইচও একই কথা বলায় চীনের খুব সুবিধা হয়ে যায়। অথচ ২ জানুয়ারিতেই চীন সরকার জানতে পেরেছিল যে, করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়। চীন সে কথা যদি তখনই স্বীকার করে নিত, তবে সারা বিশ্ব আজকের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে রেহাই পেত। কিন্তু চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিংপিং জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ঊহান করোনাভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারটা চেপে যান অসৎ উদ্দেশ্যে। কিন্তু জানুয়ারি মাসের শেষদিকে ২০০ বা তার বেশী মানুষের মৃত্যু হওয়ায় তার পক্ষে আর চাপা সম্ভব হয়নি। লি ওয়েনলিয়াং ২ ফেব্রুয়ারি মারা যায় কমিউনিস্ট সরকার আরও বিপাকে পড়ে।

মার্চ মাসের শুরুতে যখন সারা বিশ্বের প্রত্যেক দেশে ছড়িয়ে যায়, তখন মুখরক্ষা করতে মরিয়া চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃপক্ষ একের পর এক মিথ্যা প্রোপ্যাগান্ডা শুরু করে। তারা বলতে শুরু করে চীনের সরকারের বিরুদ্ধে বলা মানেই চীনাদের বিরুদ্ধাচরণ করা, অর্থাৎ এক কথায় রেসিজম। পশ্চিমী দেশগুলিতে এই ধরণের প্রোপ্যাগান্ডা শুধু চীন সরকার নয়, তার পোষা দালালরাও করছিল। উদাহরণ হিসাবে ফ্লোরেন্সের বামপন্থী মেয়রের কথাই ধরা যাক। তিনি চীনাদের বিরুদ্ধে ‘রেসিজম’ থামাতে একটি প্রচারণা শুরু করেন – ‘চীনাদের আলিঙ্গন করুন।’ তার প্রোপ্যাগান্ডা অনুসারে এইভাবেই নাকি ‘ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।’ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত ‘দ্য পিপলস ডেইলি’ মেয়রের এই কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে। তাদের নির্দেশে ইতালিয়ানদের চীনাদের সাথে আলিঙ্গন করার ছবিকে সারা বিশ্বের সব বামপন্থী মনোভাবাপন্ন সংবাদপত্র ছাপাতে শুরু করে। চীনারা কিন্তু সে সময়ে একবারও বলেনি যে, কোরোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। ফলাফল যা হবার তাই হয়।

চীন অদ্যাবধি কোরোনা ভাইরাস নিয়ে যা যা হয়েছে তার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চায়নি, অনুতাপ প্রকাশ করেনি। তার বদলে চীনের কল্পিত চীনাদের বিরুদ্ধে রেসিজমের অভিযোগকে গ্রহণ করেছিল। অথচ কমিউনিস্ট চীনের মত রেসিস্ট দেশ বিশ্বে সম্ভবত একটাও নেই। তারা যে সংখ্যাগুরু হান সম্প্রদায় ছাড়া কাউকে ‘মানুষ’ হিসাবে গণ্য করে না, উল্টে গণহত্যা চালায় সেটা ঐ সময়ে পশ্চিমী দেশগুলি ভুলে গিয়েছিল। উদাহরণ হিসাবে শিনজিয়াং প্রদেশের উইগুর মুসলিম, তিব্বতের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ‘জেনোসাইড ড্রাইভ’ এর কথা স্মরণ করা যেতে পারে। এমনকি ক্যান্টনিজ, মাঞ্চুদের মত চীনা বংশোদ্ভূত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করে এসেছে ৭১ বছর ধরে। এখানে ঊহান স্টেট মিউজিয়ামে তিন বছর আগে একটা প্রদর্শনীর কথা মনে করা যেতে পারে, যেখানে আফ্রিকানদের বন্য জানোয়ারদের সাথে তুলনা টেনে পোস্টার দেওয়া হয়েছিল।

যত সময় যাচ্ছে চীন সরকারের এই ধরণের প্রোপ্যাগান্ডা ক্রমশ বাড়ছে, যার মধ্যে কোনও যুক্তি, সত্যতার লেশমাত্র নেই। চীন সরকার যত বুঝতে পারছে যে, বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর দায়ভার নিতে হবে; ততই তারা উন্মত্তের মত প্রোপ্যাগান্ডার মাত্রা বাড়াক। ১৫ মার্চ ২০২০ নাগাদ চীনা বিদেশ মন্ত্রক মুখপাত্র ঝাও লিজান যখন বলেন, “সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে ঊহানে এসে আমেরিকান সেনাবাহিনী আমাদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে।” তখন চীন কর্তৃপক্ষের মানসিক অবস্থা বুঝতে বাকি থাকে না। ঝাওয়ের টুইটার একাউন্টে পালটা জবাব আসে, তিনি যেন এই ধরণের প্রোপ্যাগান্ডা বন্ধ করেন। ২০১০ সালে নোবেল প্রাইজ প্রাপ্ত সাহিত্যিক মারিও ভারগাস লোসাকে চীনা বিদ্বেষী তকমা দেয় চীন সরকার। তার অপরাধ? তিনি চিলির একটি সংবাদপত্রে লিখেছিলেন, “চীনের বিরুদ্ধে কেউই কিছু বলত না, যদি চীন একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক দেশ হত।” জনৈক চীনা আধিকারিক বলেন, “লোসার উচিত এই ধরণের আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা এবং ভেবেচিন্তে বলা।”

অথচ এই মুহূর্তে এমন লোকের সংখ্যাই কম নয়, যারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রোপ্যাগান্ডাকে অম্লান বদনে মেনে নেওয়ার পাশাপাশি সেগুলো মেনে নিয়ে সমান তালে প্রোপ্যাগান্ডাকে আরও এগিয়ে দিতে সাহায্য করছে। পশ্চিমী দেশগুলিতে চীনের দালালের সংখ্যা কম নয়, যারা সব জেনেশুনে প্রোপ্যাগান্ডাকে টিকিয়ে রাখতে ‘চীনের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষ’কে হাইলাইট করছে; চীনের অ-হান সম্প্রদায়ের প্রতি কমিউনিস্ট পার্টির মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, রেসিজমের প্র্যাকটিসকে ভুলে গিয়ে। এরা চীনের অপরাধমূলক পরিকল্পনাকে যেভাবে সাহায্য করছে, তার জন্য কোনও নিন্দা, ধিক্কার যথেষ্ট নয়। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত শিনহুয়া নিউজ এজেন্সি, যার নামে অতীতে বহুবার রেসিস্ট চিন্তাভাবনা সম্পন্ন প্রবন্ধ ছাপাবার অভিযোগ উঠেছে, এখন তারাই ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বিদ্রূপ করার জন্য তাদেরই ব্যবহৃত বাক্য ব্যবহার করছে – “তোমার নিজস্ব অযোগ্যতা ঢাকার জন্য বর্ণবিদ্বেষ সঠিক অস্ত্র নয়!” চীন জানে, পশ্চিমী অনেক দেশেই যেহেতু আমেরিকা তেমন জনপ্রিয় নয়, তাই তাদের কাছে এই বাক্যবন্ধনী বেশ জনপ্রিয় হবে। কিন্তু বাস্তব এত সহজ নয়। পশ্চিমী দেশগুলির মধ্যে এই আমেরিকা বিরোধী ফেনোমেননকে লক্ষ্য করেই সুসান সন্টাং বলেছিলেন, “স্টুপিড টুগেদার!”

পশ্চিমী পণ্ডিতরা যেমন মনে করেন, চীনের সাথে এই মহামারীর কোনও সংযোগ দেখা উচিত নয়। তাতে নাকি বর্ণবিদ্বেষ প্রকাশ পায়। এই ধারণা সঠিক নয়, এই ধারণা যে করে, সে সঠিক পশ্চিমী দেশের মানুষ নয়; তাকে চীনের দালাল বলাই যুক্তিসঙ্গত হবে। যেমন এই ভাইরাসকে যদি পশ্চিমীরা ঊহান ভাইরাস বলে, সেই ডাককে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির তরফে চীনাদের অপমান করা হচ্ছে এভাবে দেখা ঠিক হবে না। চীনের ঔদ্ধত্যের কাছে পশ্চিমাদের মাতা নট করা উচিত নয় – সে যতই পশ্চিমীরা চীনের কাছে নানা ভাবে ঋণী হয়ে থাকুক না কেন। যদিও সমস্যা হচ্ছে সেটাই হয়ে আসছে। চীনারা এত অকল্পনীয় রকমের সস্তা শ্রম দেয়, যে কেউই তাদের সাথে পেরে উঠবে না। উদাহরণ হিসাবে ঔষধ শিল্পের কথাই বলা যাক। এই ক্ষেত্রে চীন মোটামুটি একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে বলতে পারি। ৯৭% আমেরিকান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি শুধুমাত্র চীনেই ঔষধ বানায়। এই মার্চ মাসেই শিনহুয়া ঔদ্ধত্যের সাথে একটা প্রবন্ধ ছাপিয়েছিল, তাতে লেখা ছিল আমেরিকা যদি চীনে প্রস্তুত আলোপ্যাথি ঔষধের আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপায়, সেক্ষেত্রে আমেরিকায় চিকিৎসা খাটে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। চীন আমেরিকার ওপর প্রতিশোধ নিতেই তাই কোরোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে এমন সন্দেহ করাটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক। কদেইন আগেই আমেরিকার ওয়াশিংটন পোষ্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সংবাদপত্রের হয়ে কাজ করে এমন সাংবাদিকদের সেদেশ থেকে চীন বিতাড়িত করেছে। তাও পশ্চিমীদের জ্ঞানচক্ষু খোলেনি। চীন যে মেডিক্যাল কিটস, গ্লাভস, মাস্ক পাঠিয়েছে, সেজন্য ইতালি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। অথচ চীনারাই যে সেদেশে কোরোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে সেজন্য হেলদোলও নেই। সার্বিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্লজ্জের মত বলে ফেলেছেন, “শি জিংপিং আমাদের কাছে ভাই ও বন্ধুর ন্যায়।” মনে হচ্ছে অনেক পশ্চিমী দেশই এদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।

এই মহাবিপর্যয় আসলে অনেক কিছুই ফাঁস করে দিয়েছে। লন্ডন থেকে ওয়াশিংটন, সবাই পশ্চিমী সরকার চীনের প্রোপ্যাগান্ডার সামনে শোচনীয় রকমের ব্যর্থ। তাদের অর্থনীতি এই কোরোনা ভাইরাস মহামারীর সামনে এতটাই ধ্বসে গেছে যে, এখন চীন যা চাইবে, তাই করতে বাধ্য হবে। অন্তত তাদের আচরণ দেখে এমনটাই আশঙ্কা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। অনেক দক্ষিণপন্থী নেতাই দাবি করছেন এই মুহূর্তে চীনই যে একমাত্র সুপারপাওয়ার, সেটা পশ্চিমী নেতাদের নতজানু হওয়া থেকে পরিষ্কার। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা আত্মতুষ্টিতে ভুগে চীনের সাথে এমন সব চুক্তি করেছে, যা কার্যত আমেরিকাকে চীনের ক্রীতদাসে পরিণত করেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, চীন বেঁকে বসলেই আমেরিকা দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আমেরিকা চাইলেও বাণিজ্য চুক্তি ভাঙতে পারবে না। চীন এমনভাবে চুক্তিকে ব্যবহার করেছে যে, চীন একমাত্র রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে, আমেরিকা আমদানিকারক দেশ। চীন আমেরিকাকে মেড ইন চাইনা জিনিসে ভরিয়ে দিলেও নিজের দেশে মেড ইন আমেরিকা জিনিস প্রায় ঢুকতে দেয়না বললেই চলে।

নতুন সহস্রাব্দে চীন এতটাই শক্তিশালী যে, সব দেশ তাদের তৈল মর্দনে বাধ্য। চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান শি এক দশক আগে যতটা নির্মম অত্যাচারী ছিলেন, এখন তার দশগুণ বেশী নির্মম অত্যাচারী হয়ে উঠেছেন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে। পশ্চিমী লেখকরা পর্যন্ত চীনকে চটাবার সাহস পান না। হলিউড পর্যন্ত এমন কোনও সিনেমা রিলিজ করে না যাতে চীনের বিরুদ্ধে সামান্য বিরূপ মন্তব্য আছে। যেসব দেশ মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার, তারাও পর্যন্ত তিব্বতের শাসক দলাই লামাকে আমন্ত্রণ করার সাহস দেখাতে পারেন না; পাছে চীন চটে যায়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন পর্যন্ত চীনের বিরুদ্ধে নীরব। ডব্লুএইচও একা নয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পর্যন্ত চীনের প্রশংসা করেছে! অথচ মানবতার প্রশ্নে চীনের রেকর্ড সব দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ।

তাইওয়ান থেকে হংকং, তিব্বত থেকে দক্ষিণ চীন সাগর – চীন আশা করে সব দেশ তাদের আধিপত্য মেনে নেবে। কিন্তু এই চীনই কারুর কাছে নিজের সমালোচনা শুনতে একেবারেই প্রস্তুত নয়। লন্ডনে এরাই গুণ্ডা পাঠিয়ে তিব্বতি প্রতিবাদকারীদের মারধর করিয়েছে, নরওয়েকে শাস্তি দিয়েছে কমিউনিস্ট বিরোধী চীনা নেতাকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেওয়ার জন্য। চীন আমেরিকার বিরুদ্ধে ১৫ বছর ধরে একটানা সাইবার অ্যাটাক চালিয়ে গেছে। নদীর উৎসকে ঘুরিয়ে নিজের দেশের জন্য ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশকে উচিত শিক্ষা দেবার অসৎ চেষ্টা করে গেছে। এতকিছু কারণে চীনকে কোনও মতেই ভদ্র শক্তি বলা যায় না – বরং রাস্তার মস্তান বলা যায়, যার মধ্যে বিন্দুমাত্র নৈতিকতা বোধ নেই, ভদ্রতাবোধ নেই, সভ্যতার লেশমাত্র নেই। চীনকে সবচেয়ে নরম ভাষাতেও বলা উচিত – আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী মস্তান।

চীন এখন নিজের শক্তি আরও বৃদ্ধি করতে এবং বিশ্বের বড় বড় শক্তিকে দুর্বলতোর করতে যে কোরোনা ভাইরাসকে ব্যবহার করেছে, তাতে সন্দেহ নেই। সেই জন্য কোরোনা ভাইরাস পশ্চিমীদের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে। পশ্চিমী দেশগুলি কোরোনা ভাইরাসের সৌজন্যে গণকবরের দেশে পরিণত হচ্ছে। সামনের দিনগুলি আরও ভয়াবহ হতে যাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। পশ্চিমাদের মধ্যে এখনও এমন লোক আছে, যারা পশ্চিমাদেরই কেউ মারা যাচ্ছে দেখে আনন্দ পাচ্ছে। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত ভাইরাস শত্রুমিত্র চেনে না। সবাইকেই সে নির্বিচারে আক্রমণ করে বসে। পশ্চিমাদের এখন উচিত চীনকে সর্বত ভাবে বয়কট করা। সেই কাজে অনেক দেশ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।

ব্রিটেন যেমন হুয়ায়েই সংস্থাকে ৫জি পরিষেবা দয়া থেকে নিষিদ্ধ করেছে। ব্রিটেনের মানুষ চীনা প্রডাক্ট কিনতে চাইছে না। ভারতেরও উচিত হবে তিব্বতকে একই ভাবে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা। বস্তুত চীনের সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা হচ্ছে তিব্বত। তিব্বতের প্রধান দলাই লামাকে সরকারী অতিথি বানিয়ে আমন্ত্রণ করে চীনকে একটা বার্তা দেওয়া উচিত। অতীতে আমেরিকান রাষ্ট্রপ্রধানরা এই জিনিসটাই করতেন। কিন্তু বারাক ওবামা ২০০৯ সালে এই প্রথা বন্ধ করে দেন পাছে চীন চটে যায় এই ভয়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচিত আবার সেই পুরানো প্রথা ফিরিয়ে এনে শি জিংপিংকে একটা বার্তা দেওয়া – তাদের কোনও আবদার আর মানা হবে না।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: দ্য ক্রিটিক।  অনুবাদক সদানন্দ গৌড়াপ্পা।