ধর্ম কি?

শিষ্য। অনুশীলনকে ধর্ম বলা যাইতে পারে, ইহা বুঝিতে পারিতেছি না। অনুশীলনের ফল সুখ, ধর্মের ফলও কি সুখ?

গুরু। না ত কি ধর্মের ফল দুঃখ? যদি তা হইত, তাহা হইলে আমি জগতের সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করিতে পরামর্শ দিতাম।

শিষ্য। ধর্মের ফল পরকালে সুখ হইতে পারে, কিন্তু ইহকালে কি তাই?

গুরু। তবে বুঝইলাম কি! ধর্মের ফল ইহকালে সুখ ও যদি পরকাল থাকে, তবে পরকালেও সুখ। ধর্ম সুখের একমাত্র উপায়। ইহকালে কি পরকালে অন্য উপায় নাই।

শিষ্য। তথাপি গোল মিটেতেছে না। আমরা বলি খ্রীষ্টধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, বৈষ্ণবধর্ম- তৎপরিবর্তে কি খ্রীষ্ট অনুশীলন, বৌদ্ধ অনুশীলন, বৈষ্ণব অনুশীলন বলিতে পারি?

গুরু। ধর্ম কথাটার অর্থটা উলটাইয়া দিয়া তুমি গোলযোগ উপস্থিত করিলে। ধর্ম শব্দটা নানা প্রকার অর্থে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য অর্থে আমাদিগের প্রয়োজন নাই; তুমি যে অর্থে এখন ধর্ম শব্দ ব্যবহার করিলে, উহা ইংরাজি Religion শব্দের আধুনিক তর্জমা মাত্র। দেশী জিনিষ নহে।

শিষ্য। ভাল, Religion কি, তাহাই না হয় বুঝান।

গুরু। কি জন্য? Religion পাশ্চাত্য শব্দ, পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা ইহা নানা প্রকারে বুঝাইয়াছেন, কাহারও সঙ্গে কাহারও মত মিলে না।

শিষ্য। কিন্তু রিলিজনের ভিতর এমন কি নিত্য বস্তু কিছুই নাই, যাহা সকল রিলিজনে পাওয়া যায়?

গুরু। আছে। কিন্তু সেই নিত্য পদার্থকে রিলিজন বলিবার প্রয়োজন নাই; তাহাকে ধর্ম বলিলে আর কোন গোলযোগ হইবে না।

শিষ্য। তাহা কি?

গুরু। সমস্ত মনুষ্য জাতি- কি খ্রীষ্টিয়ান, কি বৌদ্ধ, কি হিন্দু, কি মুসলমান, সকলেরই পক্ষে যাহা ধর্ম।

শিষ্য। কি প্রকারে তাহার সন্ধান পাওয়া যায়?

গুরু। মনুষ্যের ধর্ম কি, তাহার সন্ধান করিলেই পাওয়া যায়।

শিষ্য। তাই ত জিজ্ঞাস্য।

গুরু। উত্তরও সহজ। চৌম্বকের ধর্ম কি?

শিষ্য। লৌহাকর্ষণ।

গুরু। অগ্নির ধর্ম কি?

শিষ্য। দাহকতা।

গুরু। জলের ধর্ম কি?

শিষ্য। দ্রাবকতা।

গুরু। বৃক্ষের ধর্ম কি?

শিষ্য। ফল পুষ্পের উৎপাদকতা।

গুরু। মানুষের ধর্ম কি?

শিষ্য। এক কথায় কি বলিব?

গুরু। মনুষ্যত্ব বল না কেন?

শিষ্য। তাহা হইলে মনুষ্যত্ব কি বুঝিতে হইবে।

গুরু। কাল তাহা বুঝাইব।