বাঙালীর খণ্ডিত জাতীয়তা: দেশভাগ ও প্রাদেশিক পেক্ষাপট

0
771

১৮ তম পর্বের পর

শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

৪র্থ অধ্যায়
আসামের প্রাদেশিকতায় বিপন্ন বাঙালী

দেশভাগের প্রত্যক্ষ ফলশ্রুতি সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোয় প্রাদেশিক সমস্যা। লাগাতার শরণার্থীর আগমণ ও অনুদেশের ফলে দেশের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে জনমানচিত্রের বদল, স্থানীয়দের জমি বেদখল হয়ে যেওয়া, কর্মসংস্থানে সংকট – এগুলো সেই রাজ্যগুলি মেনে নিতে পারেনি, কারণ সেখানকার স্থানীয় কিছু গোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালীদের মতো সহনশীল উদার নয়, ভোট ব্যাংক তৈরির তাগিদেও নয়। দেশের যেসব প্রান্তে ধারাবাহিকভাবে আক্রান্ত হয়েছে বাঙালী, তার মধ্যে আসাম ও ত্রিপুরায় বিষয়টা রীতিমতো জাতিবিদ্বেষ ও দাঙ্গার চেহারা নিয়েছে। এর মধ্যে আসামের অবস্থা সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ ও জটিল। ১৯৬২-র ১৯শে মে তারিখ ও শিলচর-কাছাড়-বরাক নামগুলি ইদানিং বিশেষ আলোচিত। ১৯শে মে দিনটিকে ‘ভাষা শহীদ দিবস’ রূপে পালন করার প্রস্তাবও উঠেছে। কিন্তু আসামে বাঙালী বিদ্বেষ সর্বব্যপী, শুধু বরাক কেন্দ্রিক নয়, তফাত এটাই যে বরাক উপত্যকা বাঙালী অধ্যুষিত। বস্তুত অসমীয়ারা সমস্ত অন-অসমীয়া জাতিগুলির প্রতিই অসহিষ্ণু যাদের মধ্যে সংখ্যাধিক্য ও অন্যান্য কিছু কারণে বাঙালীরা প্রধান ও বিশেষ বিদ্বেষের স্বীকার। এখন জাতিবিদ্বেষের মূল আধার হয়ে দাঁড়িয়েছে কারা আসামের মূল অধিবাসী ও কারা নয়। তাই ১৯শে মের আলোচনার পাশাপাশি তাই যারা আসামের ‘খিলাঞ্জিয়া’ বা ভূমিপুত্র হওয়ার দাবিদার তাদের ইতিবৃত্তটা খুব সংক্ষেপে হলেও স্পর্শ করা দরকার। তার আগে বরাক উপত্যকা, কাছাড় ও আসামের ইতিহাসটা সংক্ষেপে ঝালিয়ে নেওয়া যাক।

প্রাচীন আসাম

প্রাচীন আসামের ঐতিহাসিক সূত্র পাওয়া যায় কামরূপ সাম্রাজ্যে (Kamarupa kingdom) ৪র্ধ শতকে পুষ্যবর্মণ দ্বারা ‘বর্মণ’ রাজবংশ (Varman dynasty) প্রতিষ্ঠার পর থেকে। কামরূপ সাম্রাজ্য পশ্চিমে কারাটোয়া থেকে পূবডে সাদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল[3]।বর্মণ ও তার পরবর্তী দুই রাজবংশ পুরাণের নরকাসুরের (Narakasura) বংশধর বলে প্রচলিত বিশ্বাস ছিল[4] । ৭ম শতাব্দীতে ভাস্করবর্মণের (Bhaskaravarman ) আমলে এই সাম্রাজ্য সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছায়। এই সময় ভারত ভ্রমণকালে চিনা পর্যটক হিউয়েন সাং বা জ়ুয়ানজ়াং (Xuanzang) ভাস্করবর্মণের রাজসভা পরিদশর্নেরও গুরুত্বপূর্ণ নথি তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। ভাস্করবর্মণের নিঃসন্তান হওয়ায় রাজ্য শলস্তম্ভর দখলে চলে যায় যিনি ‘ম্লেচ্ছ’ বংশ (Mlechchha dynasty) প্রতিষ্ঠা করেন। ম্লেচ্ছ বংশের পতনের পর ৯ম শতকে ব্রহ্মপাল নির্বাচিত হলে পাল বংশের (Pala dynasty) প্রতিষ্ঠা হয়। ১১১০ খ্রীস্টাব্দে শেষ পাল রাজাকে গৌর (Gaur) রাজ রামপাল সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু তাঁর পরবর্তী দুই রাজা তিঙ্গদেব ও বৈদ্যদেব গৌর বংশ প্রতিষ্ঠার পরেও মূলত কামরূপ সাম্রাজ্যের অধীনে ও শিলমোহর ব্যবহার করে স্বাধীন রাজা হিসাবে শাসনভার পান। দ্বাদশ শতাব্দীদে এই দুই গৌর রাজার পতন আনুষ্ঠানিকভাবে আসামের প্রাচীনযুগের অবসান ও মধ্যযুগের শুরু। চিন থেকে আগত ‘তাই’ জনগোষ্ঠী দ্বারা ১২২৮ সালে ‘অহম’ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর তারাই আধুনিক আসামের নামকরণ ও ভৌগোলিক রূপরেখার দাবিদার হয়ে ওঠে। এদের ইতিবৃত্ত পরে আবার আলোচিত হবে।

মূল অধিবাসী

আসামের জাতি বিদ্বেষদের সাম্প্রতিকতম রূপ হল ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার (NPR), যার মাধ্যমে কারা আসামবাসী তথা ভারতবাসী হিসাবে নাগরিক অধিকার লাভ করবে, আর কারা বহিরাগত হিসাবে হয় বহিষ্কৃত হবে বা ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী থাকবে, তা নির্ধারিত হয়ে যাবে। ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার (NPR)-এর অন্যতম ভিত্তি হল আসামের মূল নিবাসী কাদের বলা হবে আর কাদের নয়। এই নিয়ে বিস্তারিত পরে আলোচনা করেছি। আপাতত প্রামাণ্য ঐতিহাসিক সূত্রগুলো কী বলছে দেখা যাক।

অসামীয়া[7] বলতে সাধারণভাবে অহম ও কিছু উপভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয় যাদের বাস আসামে (Assam)। যে চারটি জাতিগোষ্ঠীর (races[6] ) মিশ্রণে অসমীয়াদের উদ্ভব বলে মনে করা হয় তারা হল – অস্ট্রোএশিয়াটিক (Austroasiatic), ইন্দো-আর্য ( Indo-Aryan), টিবেটো-বর্মণ ও তাই গোষ্ঠী (Tibeto-Burman and Tai)। এর মধ্যে অসমীয়া ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, অহোম, বাঙালী, কোচ, রাজবংশী, সোনোয়াল-কাচারি, রাভা, কার্বি, চুটিয়া, কালিতাস, কিয়োট বা কালিব্রত, তিওয়া, মেচ-কাচারি, থেঙ্গাল-কাচারি, সাঁওতাল, সারানিয়া-কাচারি, দিমাসা, নাথ, কুমার, হীরা, চা-শ্রমিক উপজাতি (Tea Tribes), তাই ফেক এবং অন্যান্য উত্তর-পূর্বীয় রাজ্যের তাই গোষ্ঠীর মানুষজন আছে।

২০০১-এর লোকগণনা অনুযায়ী স্থানীয় আসামীয়া ভাষীর সংখ্যা ১৩ মিলিয়ান যা আসামের মোট জনসংখ্যার ৪৮.৮%। ২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী মোট ১৩,২৫৭,২৭২ জন অধিবাসীর মধ্যে ১০,০১৩,০১৩ জন বা ৭৫.৫২% হিন্দু, ২,৮৩০,০৭২ জন বা ২১.৩৪% মুসলমান এবং ৪,১৪,১৮৭ জন বা ৩.৪% খ্রীস্টান ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ। এর মধ্যে অসসমীয়া শিখ ও খ্রীস্টানদের মাতৃভাষা অসমীয়াই। স্বাধীনতার ১৬ বছর আগে ১৯৩১ সালের জনগণনায় প্রকাশ: সুরমা-বরকা উপত্যকার সিলেট, কাছাড়, করিমগঞ্জে বাংলাভাষী ২৮,৪৮,৪৫৪ ও অসমীয়াভাষী ৩৬৯২; আর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও পার্বত্য অঞ্চলে অসমীয়াভাষী ১৯,৭৮,৮৩২, বাংলাভাষী ১১,০৫,৫৮১, পার্বত্য ১২,৫৩,৫১৫। অর্থাৎ তথাকথিত আসামরাজ্যে বাংলাভাষীর সংখ্যা ছিল অসমীয়াভাষীর দ্বিগুণ। স্বাধীনতার পরেও তাই অসমীয়াভাষীরা হিসাবমতো ভাষিক সংখ্যাগুরু নয়; এমনকি ব্যাপক বঙ্গাল খেদানোর পরেও এবং আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মুসলিম বাঙালীরা নিজেদের অসমীয়া পরিচয় দিয়ে আত্মগোপন করার পরেও অসমীয়াভাষীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেকও নয়।

কিন্তু লাগাতার বঙ্গাল খেদা ও পরে হিন্দীভাষীদের ওপরেও আক্রমণের জেরে কাদের অসমীয়া বলা হবে তার সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য ১৯৮৫ সালে ভারত সরকার ও আসামের অন-অসমীয়া বিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। বুঝতে অসুবিধা হয় না, আসাম নামের রাজ্যে অন্যান্য ভাষাভাষীদের মোট সংখ্যাগুরুত্ব অসমীয়াভাষীরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। ২০০৩-এ তৎকালীন আসাম সরকার একটি মন্ত্রীমণ্ডলীয় কমিটি (ministerial committee) তৈরি করে মার্চ ২০০৭-এর মধ্যে এই সংজ্ঞায়িত করার কাজটি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়। এরই ভিত্তিতে আসু (AASU ) ১০ই এপ্রিল ২০০৭-এ ৬ দফা স্মারকে অসমীয়াদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করল: “All those whose names appeared in the 1951 National Register of Citizens and their progenies should be considered as Assamese”।

কিন্তু এই সংজ্ঞার ভিত্তিতেও অধিকাংশ বাঙালী বিশেষত হিন্দু বাঙালীদের বহিরাগত বলা যায় না। খিলাঞ্জিয়া বা ভূমিপুত্র বলে যারা দাবি করে তাদের মধ্যে অহম জনগোষ্ঠী অন্যতম। তাদের আসামে আগমণের ইতিহাসটাই দেখা যাক।

‘অহম’রা জাতিগতভাবে চিনের উইনান প্রদেশ বা অধুনা থাইল্যান্ডের শান (Shan) জাতির ঘণিষ্ঠ ‘তাই’ প্রজাতির মানুষের (Tai people ) উত্তরাধিকারী। শানদের রাজধানী ছিল মং মাও (Mong Mao)। ‘শান’ রাজকুমার সুকফা (Sukaphaa) পাটকাই পাহাড় (Patkai mountains) অতিক্রম করে এসে অহম সাম্রাজ্যের পত্তন ঘটান। তাঁর সঙ্গে এসে বসতি গাড়ে প্রায় ৯০০০ তাই প্রজাতির চিনা। বর্তমান আসাম বা প্রাক্তন ‘অহম’ রাজ্যে এই তাই-মানবরাই ‘অহম’ রাজবংশের সূচনা করে ১২২৮। ১২৫৩ সালে সুকফা রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন চরাইদেও-তে (Charaideo) যা বর্তমান শিবসাগরের (Sivasagar) নিটকবর্তী এবং রাজ্য বিস্তারে মন দেন। তারপর এই তাই বংশই ১৮২৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬০০ বছর রাজত্ব করে।

এখানে উল্লেখ্য অহমরা এখানে রাজ্য বিস্তার শুধু সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে করেনি, স্থানীয় সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে আপন করে এই অঞ্চলের ভূমিসন্তান হয়ে উঠেছিল। ১৫২৪ সালে রাজা সুহুংমুং (Suhungmung)-এর আমলে অহম সাম্রাজ্যের আওতায় চলে আসে চুটিয়া রাজ্য (Chutiya kingdom)। এই রাজাই প্রথম হিন্দু নাম গ্রহণ করেন, ‘স্বর্গ নারায়ণ’। তাঁর উত্তরাধিকারীরা পরিচিত হতে থাকে ‘স্বর্গদেও’ বা স্বর্গের দেবতা হিসাবে। ১৫৩৬ সালে ডিমাসা রাজকে তাঁদের রাজধানী ডিমাপুর থেকে উৎখাত করে ফেলে অহমরা। ফলে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝাজমাঝি নাগাদ অধুনা পূর্ব আসামের পুরোটার দখল চলে যায় অহমদের হাতে। সম্ভবত অহমদের কাছ থেকে তাড়া খেয়েই ডিমাসা রাজবংশ কাছাড়ে রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হয়। ১৬৮২ সালে মুঘলদের সঙ্গে ইটাখুলি (Itakhuli) যুদ্ধে জিতে কোচ রাজ্যেরও (Koch Hajo) কিছুটা দখল করে নেয়।
মাওমোরিয়া (Moamoria) বিদ্রোহের সময় সাময়িকভাবে রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ অহমদের হাতছাড়া হয়েছিল। পরে অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে বর্মার আক্রমণে স্থায়ীভাবে অহম রাজ্যের পতন হয়, গদিতে বসানো হয় বর্মার হাতের পুতুল এক অহম রাজাকে। অতঃপর ব্রিটিশরা ১৮২৬ সালে প্রথম অ্যাংলো-বার্মিজ় যুদ্ধ (First Anglo-Burmese War) জয় করে ইয়ান্ডাবো চুক্তি (Treaty of Yandabo) অনুযায়ী অহম রাজ্যে অধিগ্রহণ করলে ব্রিটিশ ভারতে অহমের অন্তর্ভুক্তি ঘটে এবং অহমেরও ভারতীয় সংস্কৃতিতে আত্তিকরণ হয়ে যায়।

বিজয়ী অহমরা কিন্তু নিজেদের ‘তাই’ শেকড় আঁকড়ে ধরে না থেকে ক্রমশ হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে ও স্থানীয় ভাষা আত্মস্থ করে নেয়। অতি প্রাচীন ফ্রালুং (Fralung) ধর্ম বিরল ক্ষেত্রে অনুসৃত হলেও কার্যত তা হিন্দু ধর্মে অঙ্গীভূত। অহিন্দু প্রথা বলতে ছিল মৃতদেহ দাহ না করে কফিনবন্দী করে রাখার রেওয়াজ যার নাম ছিল ময়ডাম (Maidam), সেটিও স্বর্গদেও রাজেশ্বর সিং-এর সময় পরিত্যক্ত হয়, এবং মৈথেলি ব্রাহ্মণ ও দেওধর পুরোহিতরা পারলৌকিক কাজের দায়িত্ব লাভ করে। তাদের নিজস্ব তাই-অহম ভাষা খুব কম মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ অবস্থায় রক্ষিত। অধুনা আসামের সংস্কৃতি দেশীয় অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, টিবেটো-বর্মন ও হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে বিদেশী তাই বা অহোম শৈলির সংমিশ্রণ। এর মধ্যে টিবেটো-বর্মন ভাষার বোরাহি (Borahi people) উপজাতি সহ আরও কিছু জনজাতি অহোমদের সঙ্গে প্রায় মিশে গেছে। যার ফলে উত্তর আসামের (Upper Assam) উত্তর-পূর্ব ভারতের (North East India) বৃহত্তর প্রাচীন জনগোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃত। ক্রমশ অস্ট্রিক দ্রাবিড় গোষ্ঠীও নিজেদের ‘অহোম’ পরিচয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মোটামুটি উত্তর বা ঊর্ধ্ব আসামের গোলাহাট, জোরহাট শিবসাগর, ডিব্রগড়, তিনসুকিয়া, লখিমপুর, ধেমাজি জেলায় অহমদের সংখ্যাধিক্য। আছে লোহিত জেলাতেও। এমনকি কার্বি আলং উপজাতির (Karbi Anglong) মানুষরাও অহম প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করা হয়। সুতরাং আধুনিক আসামের মূল অধিবাসী ও রূপকার হিসাবে অহমদের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।

কিন্তু অধুনা আসাম রাজ্যে বিশেষত দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকায় হিন্দু বাঙালীর অস্তিত্বের সাক্ষ্য পঞ্চম-ষষ্ঠ শতাব্দীর আমলের, যার পরিচয় বরাকের ইতিবৃত্ত আলোচনার সময় দিয়েছি। কিছু হিন্দু তীর্থস্থানের অবশেষও সেই একই কথা বলে যেখানে অহমদের বা ‘তাই’ জনগোষ্ঠীর আগমন ত্রয়োদশ শতকে। সুতরাং ‘খিলাঞ্জিয়া’ গর্বে গর্বিত অহমরা যদি মূল অধিবাসী হয়ে থাকে, বাঙালীদের কোন যুক্তিতে বহিরাগত বলা হচ্ছে? দেশভাগের আগে থাকতে পূর্ববঙ্গ থেকে মুসলিম আগমণ এবং দেশভাগের পর বাঁধভাঙা শরণার্থী ও অনুপ্রবিষ্টের স্রোতই বাঙালীর ভূমিজ পরিচয় কেড়ে তাকে বহিরাগত উদ্বাস্তুর শীলমোহরে দেগে দিয়েছে। যে দেশভাগে বাঙালীর দায় ছিল না, কেবল ভারতভাগের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে বাধ্য হয়ে মানতে হয়েছে, সেই দেশভাগের দায়ে আজ হিন্দু বাঙালীরা বিনা বিচারে দণ্ডিত। অসমীয়াদের সঙ্গে সদ্ভাব বা মুসলিম বাঙালীদের সাথে মৈত্রী কোনওটাই কোনও সমাধান বলে গ্রাহ্য হচ্ছে না।

চলবে