বিদেশি অনুদানে বিভেদ ছড়ানো বন্ধে বিল আসতেই হইচই শুরু লিবেরাল-সেকুলারদের

0
963

বঙ্গদেশ ডেস্ক: বিদেশি অনুদান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে ভারতে৷ বিদেশ থেকে অনুদান নিয়ে এই দেশের একাধিক অসরকারি সংস্থা বা এনজিও বিভেদ তৈরি করে৷ ধর্মান্তরণ করে৷ এক সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উস্কানি দেয় বলে বারবার অভিযোগ ওঠে৷ পাশাপাশি এমনও অভিযোগ শোনা যায় যে ওই বিদেশি অনুদানকে সুকৌশলে নির্বাচনী রাজনীতিতেও ব্যবহার করা হয়৷

কিন্তু সেই কৌশলই ভেস্তে যেতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন বিদেশি অনুদান বিলের জন্য৷ অসুস্থতার কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখন সংসদে উপস্থিত থাকতে পারছেন না৷ তাই গত রবিবার লোকসভায় পেশ করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই৷ সোমবার সংসদে বিরোধীদের আপত্তি খারিজ হয়ে যায়৷ আর পাস হয় বৈদেশিক অনুদান (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধনী বিল৷

বিলটি পেশ করতে গিয়েই মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই লোকসভায় জানিয়েছিলেন, ভারতে আসা বিদেশf অর্থ জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে বা কোনও দেশবিরোধী কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা এই বিলের লক্ষ্য। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই বিলটি কখনওই এনজিওগুলির বিরুদ্ধে নয়৷ তবে সরকার চায় তাদের কাজ কর্মে আরও স্বচ্ছতা আসুক।

কিন্তু সরকারের এই যুক্ত মানতে নারাজ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং বামপন্থী লিবেরাল ও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষরা৷ লোকসভায় বিল পেশের পরই অক্সফাম ইন্ডিয়ার প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা তীব্র বিরোধিতা ও সমালোচনা করেন। স্বরাজ্যম্যাগের একটি প্রতিবেদনে এমনটাই প্রকাশিত হয়েছে৷

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে কেন এই বিল নিয়ে এত হইচই হচ্ছে? কী আছে ওই সংশোধনীতে৷ তাহলে আগে একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিষয়টি৷

১) FCRA-র অধীনে বিদেশি অনুদানপ্রাপ্ত অর্থ সাহায্য প্রশাসনিক কাজে খরচ করার পরিমাণ ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

২) সরকারী কর্মচারী বা যে কোনও সরকারি মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত সংস্থার কর্মচারী বিদেশি অনুদান গ্রহণ করতে পারবে না। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২১ নম্বর ধারা অনুসারে সরকারি কর্মচারীকে শাস্তি প্রদান করা হবে।

৩) এই সংশোধনে ব্যক্তি বা এনজিওগুলিকে বিদেশি অনুদান স্থানান্তরকরণের ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে অন্য এফসিআরএ শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে বা যারা এই জাতীয় অনুদান গ্রহণের জন্য আগে থেকেই অনুমতি নিয়েছিল৷ তারাই একমাত্র বিদেশি তহবিল স্থানান্তর করার অনুমতি পাবে।

৪) প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী ‘সামারি এনকোয়ারি’-র আয়োজন করে আইন অমান্যকারীর বৈদেশিক সূত্রে প্রাপ্ত অর্থ খরচের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা থাকবে সরকারের হাতে।

৫) সংশোধিত বিলে বিদেশি আর্থিক সহায়তা প্রাপ্ত এনজিও ও অন্যান্য সংস্থার সমস্ত কর্মীর ক্ষেত্রে আধার আবশ্যিক করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে যে এই নিয়ম মানতে সমস্যা কোথায়? এতে স্বচ্ছতা থাকবে৷ দুর্নীতি কম হবে৷ যাঁদের সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন, তাঁরা উপকৃত হবে৷ তার পরও কেন এত প্রশ্ন উঠছে, সেটাই অনেকে বুঝে উঠতে পারছেন না৷

যদি বিলের যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বক্তব্য এই বিল বাণিজ্যে মন্দা ডেকে আনবে৷ ভারতের জাতীয় ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী পরিচালক বিরাজ পট্টনায়কের অভিযোগ, এই সংশোধন ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা ডেকে নিয়ে আসবে। এমন অনেক ছোট ছোট সংস্থা আছে যারা বৃহৎ সংস্থার ওপর নির্ভরশীল, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে অক্সফামের সিইও অমিতাভ বেহার দাবি, এই বিল স্বল্প আয়ের সংস্থাগুলির উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলবে।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি অনুদানে পুষ্ট সংস্থাগুলি ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে৷ এই সংস্থার সঙ্গে জড়িতরা আমলাতন্ত্রের উচ্চস্তর, আইনব্যবস্থা, শিক্ষাজগত, এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও কুক্ষিগত করেছে। এই সংশোধনী বিল সেসব কাজে রাশ টানবে বলেই এই আপত্তি উঠছে৷

অন্যদিকে সম্প্রতি বিজেপি সাংসদ সতপাল সিং অভিযোগ করেছেন, বহু এনজিও খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তকরণের জন্য বিদেশি তহবিলের অপব্যবহার করছে। এবং তা‌ রোধ করার জন্য সরকার শক্ত হাতে রাশ টানতে চাইছে‌। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সতপালের বক্তব্য একেবারে ফেলে দেওয়ার নয়৷ শুধু ধর্মান্তকরণ নয়, দেশের মানুষের মনে ধর্মনিরেপক্ষতার নামে হিন্দুত্ব সম্পর্কে ভুল বোঝানো৷ মগজ ধোলাইয়ের কাজ৷ এমনকী, সন্ত্রাসবাদ ছাড়ানোতেও ব্যবহার করা হয়৷

যদিও এই বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী সাংসদরা কেউই এই প্রসঙ্গে নজর দেননি৷ বরং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন৷ যার সঙ্গে যদিও এই বিলের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই৷ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে নজরদারি চালানোর অভিযোগ করেছেন৷ কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী পিএম কেয়ার্স ফান্ডে বিদেশি অনুদান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ কংগ্রেসের একে অ্যান্টনি আবার এই বিলের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের নিশানা করার অভিযোগ করেছেন৷

প্রসঙ্গত, বিদেশি অনুদান সংক্রান্ত এই FCRA চালু হয় ২০১১ সালে৷ ২০১৬ সালে এই আইন একবার সংশোধন করা হয়৷ ২০১৮ সালে আরও একবার সংশোধন করে সরকার৷ তার পর আবার সংশোধন করা হল৷ এই আইনে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা আছে যে জনবিরোধী কাজে বিদেশি অর্থ অনুদান হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না৷