গ্রেটার হায়দ্রাবাদ মিউনিসিপ্যাল ভোটের ফলাফল: কেন বিজেপির জয়যাত্রা অব্যাহত?

0
795

স্বর্ণেন্দু দেব

 

পেশাগত রাজনীতির সাথে যুক্ত না থাকলেও রাজনীতি বরাবর পছন্দের বিষয়। আর পাঁচজন বাঙালির মতোই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম এবং তাদের প্রতিশ্রুতির সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক বোঝার চেষ্টা থেকে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান সম্পর্কে পর্যালোচনা থেকে এই লেখা। ভারতবর্ষের রাজনীতি ২০১৪ সালের পর থেকেই একটি অন্য খাতে বইতে শুরু করেছিলো। মূলতঃ জাতীয়তাবাদী আবেগের ওপর নির্ভর করে নতুন ভারতবর্ষ উপহার দেওয়ার সংকল্প নিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি নেতৃত্ব।দেখতে দেখতে ৬ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সেই উন্মাদনা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। প্রমাণ গ্রেটার হায়দ্রাবাদ নগর নিগম ভোটের ফলাফল। জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সাথে দুর্নীতিহীন সরকার এবং মানুষের বেসিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে যে ভারতবর্ষের মতো বিপুল, বিভিন্ন ভাষাভাষী, ধর্ম, বর্ণ, জাতপাতের রাজনীতিতে পুরো মাত্রায় নিমজ্জিত একটি দেশের খোলনলচে বদলে ফেলা যায় তা প্রমাণ করে দেখাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি।

 

হায়দ্রাবাদে কি হল?

এবার আসা যাক আজকের ফলাফল বিশ্লেষণে, মানুষের মধ্যে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে, বিজেপি উত্তর ভারতের দল, দক্ষিণ ভারতে কোনও না কোনও আঞ্চলিক দলের সান্নিধ্যে দু একটি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আজকের পর এই ধরনের ভাবনা হয়তো আস্তাকুঁড়ে স্থান পাবে। কর্ণাটকের পর আবারও একটি দক্ষিণী রাজ্য তেলেঙ্গানার ফলাফল অন্তত সেরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। একসময় কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি আপাতত কংগ্রেস মুক্ত হয়ে গেছে তাদের ট্র্যাডিশনাল তোষণমূলক রাজনীতির কারণেই সেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এবং স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি উঠে আসছে শূন্যস্থান পূরণে, তাদের সবকা সাথে সবকা বিকাশের মন্ত্রে।

গতবারের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এই হায়দ্রাবাদ নগর নিগমের ভোটে টিআরএস ৯৯টি আসন, মিম ৪৪টি, কংগ্রেস ২টি এবং টিডিপি বিজেপি জোট ৪ টি আসন পেয়েছিল। আর এবার মিম ৪৪টি সীটই পেয়েছে। কিন্তু বিজেপি পেয়েছে ৪৮টি। টিআরএস নেমে গেছে ৫৫টিতে এবং কংগ্রেস সেই দুইয়েই পড়ে আছে।  মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে কি এমন হলো যে বিজেপির দক্ষিণের একটি রাজ্যে এমন উত্থান, খালি কি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি? নাকি শহুরে, শিক্ষিত, চাকুরিজীবী, ব্যাবসায়ী মানুষের মধ্যে স্থিতিশীল সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থান খোঁজার চেষ্টা। একজন একবিংশ শতাব্দীর সাধারণ খেটে খাওয়া ভারতবর্ষের নিন্ম মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে উপলব্ধি করার চেষ্টা থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম দীর্ঘ ছবছর বাদেও এই মোদী ম্যাজিক কি কারণে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে দিকে দিকে।

 

মানবজাতির বিবর্তন: কেন আজ মানুষ মানুষের শত্রু

১৯৮২ সালে মাত্র ২ টি লোকসভা আসন নিয়ে যাত্রা শুরু করা একটি রাজনৈতিক দল মাত্র পঞ্চাশ বছরের কম সময়ে নিজেদের গো বলয়ের তকমা ঝেড়ে ফেলে আজ উত্তর, পশ্চিম, পূর্ব ভারতের মানুষের মন জয় করে দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হয়েছে, যদিও কর্ণাটকে অনেক আগেই থাবা বসিয়ে ছিলো পদ্মের এই দাপট। কি করে সম্ভব হলো? খুব স্বাভাবিক চোখে দেখলে একটি রাজনৈতিক দল ভারতবর্ষের মতো একটি দুর্নীতিযুক্ত রাজনৈতিক পরম্পরার বিরুদ্ধে গিয়ে স্বচ্ছ প্রশাসন দেওয়ার নজির সৃষ্টি এবং আজকের একবিংশ শতাব্দীতে এসে হিংসা, দ্বেষ, ধর্মীয় তোষণ, জাতপাতের বাইরে বেড়িয়ে সাধারণ মানুষের জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসনিক শাসন ব্যবস্থা তুলে ধরতে যখনই পেরেছেন তখনই অর্ধেক ভারত বিজয় সম্ভব হয়ে গিয়েছিল।

এবার দেখে নেওয়া যাক একবিংশ শতাব্দীর মানুষ কি চায়? মানবসভ্যতার আদি যুগ থেকে লক্ষ্য করলে একটি বিষয় পরিস্কার মানুষ বাঁচতে চায়, সে ক্ষুধা নিবারণের জন্যই হোক কি হিংস্র জন্তুর আক্রমণ থেকে, অথবা জলে ডুবে মৃত্যুর থেকে হোক কি প্রাকৃতিক যে কোনও সমস্যার হাত থেকে। মোট কথা নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ করে অন্য জীবজন্তুর ক্ষতি কম করেও নিজেদের সুরক্ষিত করা। এক্ষেত্রে আমরা ইতিহাস প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে জানতে পারি বিভিন্ন ?যুগের (age) কথা, কখনও স্টোন এজ, ব্রোঞ্জ এজ এবং আইরন এজ। ঠান্ডা গরম, হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকে বেঁচে থেকে ক্ষুধা নিবারণের জন্য চাষ আবাদ শুরু করা থেকে, মাছ ধরা, আগুনের ব্যবহার অবধি। তারপর যখন এই যুদ্ধ জয় সম্ভব হলো তখন নির্মোহ মানবজীবনের জন্য শুরু হলো ধর্মের প্রতিষ্ঠা, কিছু বিশৃঙ্খল জীবনযাত্রাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ করে শিক্ষার পাঠ দেওয়া। যখন মানুষ আরও শিক্ষিত হলো তখন ধীরে ধীরে সেই শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনকে নতুন আবিস্কারের দিকে ঠেলে দিলো। নিজের জ্ঞান বুদ্ধিকে প্রসারিত করে নতুন ভূখন্ড আবিস্কারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আরোহণের চেষ্টা শুরু হলো। এভাবেই মানুষ সৃষ্টি করে চলেছে উন্নত পৃথিবীর, আজ মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপনের বাইরে বেরিয়ে চাঁদে, মহাকাশে পাড়ি জমাচ্ছে।

অথচ এই উন্নত পৃথিবীর অপর অংশে এখনও অপুষ্টি, ক্ষুধা পীড়া দেয়, ধর্ম, জাতপাত ক্ষতবিক্ষত করে মানবাধিকার। পৃথিবীতে আব্রাহামিক ধর্ম সৃষ্টির পর থেকে আমরাই অধিকারী, বাকিদের অধিকার নেই এই চিন্তা স্থাপিত হয়েছে কিছু মানুষের মধ্যে, সেখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে মানুষে মানুষে বিভেদ। যে মানুষ একসময় হিংস্র প্রাণীর বিরুদ্ধে সুরক্ষা কবচ তৈরি করেছিলো তারাই হয়ে উঠলো হিংস্র। তৈরি হলো হানাদার, সুখী মানুষকে হত্যা করে লাঞ্ছিত করে দখল করতে লাগলো সুস্থ পরিসর। সেখানে রোপন করতে শুরু করলো হিংস্রতার নিশান, এভাবেই সভ্যতা এগিয়ে চললো, রক্তাক্ত হলো পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ। আজ এই উন্নত সভ্যতায় তাই একদিকে যেমন সুখ সমৃদ্ধি, অন্য দিকে ঠিক তেমনই হিংস্রতার চিহ্ন। সুখী পরিসর দখল করে হানাদারদের হতাশা প্রকাশের চিহ্ন ছাপ রাখছে সর্বত্র। বাইজান্টাইন, কনস্টান্টিনোপল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আজকের সিরিয়া, ইরান, ইরাক, আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে। সভ্যতা সৃষ্টির ভূমি ই ক্রমশ হয়ে উঠছে সভ্যতা ধ্বংসের কারণ। সিন্ধু, মেসোপটেমিয়া, মিশর, চীন সভ্যতার ভূমিই আজ মানবাধিকার হরণ করছে সবথেকে বেশি। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি ছিলো। কারণ সূদুর পাশ্চাত্য সভ্যতা বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এই সমস্ত অঞ্চল থেকেই সংগ্রহ করেছিলো বেঁচে থাকার, শিক্ষা, সংস্কৃতির রসদ।

আজ একবিংশ শতাব্দী, নতুন ভারতবর্ষ কি আবারও সভ্যতা কে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পাঠ দেবে? আবার কি চাকা ঘুরবে? কেউ কেউ বলেন পৃথিবীখ্যাত জ্যোতিষবিদ নস্ত্রাদামুস নাকি সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কবির কথায়  “ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন ও লবে” এরকম একটি ইঙ্গিত নাকি তাঁর ভবিষ্যৎ কল্পনায় স্থান পেয়েছে। নিন্দুকেরা বলেন নরেন্দ্র মোদীর মাধ্যমে সেরকম সম্ভাবনা নাকি উঁকি দিতে শুরু করেছে। সভ্যতা, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞানের আদি ভূমি নাকি আবারও জেগে উঠেছে পৃথিবীর বুকে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়। অপেক্ষা হয়তো একটু দীর্ঘস্থায়ী হবে তবে একটি রেনেসাঁ চলছে এটুকু দিনের আলোর মতো পরিস্কার।

 

২০১৪ থেকে নতুন ভারত

আবার ফিরে আসা যাক বাস্তবের মাটিতে। ২০১৪ সাল, দীর্ঘ সহস্রাব্দ ধরে খুন, জখম, রাহাজানি, দারিদ্র্যে ছেয়ে ফেলা ভারতবর্ষ তার আধুনিক যুগের সংসদীয় গণতন্ত্র মেনে দায়িত্ব তুলে দিলো এক ঘরের ছেলের হাতে। শুরু হলো নতুন করে পথচলা, শ্রেষ্ঠত্বের জয়ধ্বজা ওড়ানোর পালা। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জানতো না ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কি? সেরকম ৫০ কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক খাতা খুললো। যে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠন করে আজ তথাকথিত উন্নত সভ্যতার সৃষ্টি, সেই আদি দেশের অধিকাংশ মহিলা জানতই না স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার, তাদের জন্য শুরু হলো মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার শিক্ষা। যে দেশের মহিলারা জানতো না গ্রীণ হাউস গ্যাস কি এবং কতটা ক্ষতিকর স্বাস্থ্যের জন্য, তাদের জন্য চালু হলো উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে LPG এর বন্টন। যে দেশ সভ্যতা সৃষ্টির ভূমি সেই দেশের মানুষের মধ্যে কন্যা সন্তানের প্রতি যে অমানবিক আচরণ, সেই দেশে শুরু হলো বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও ক্যাম্পেন। Worldometer এর হিসেবে ১৩৮ কোটি জনসংখ্যা ছুঁইছুঁই দেশটির অধিকাংশ মানুষের মাথায় ছাদ ছিলো না, আজ ২০২২ কে লক্ষ্য মাত্রা ধার্য করে দ্রুত পদক্ষেপ চলছে সকলের মাথায় ছাদ প্রকল্পের। যে বিপুল জনসংখ্যার দেশের মানুষের ঘরে electricity পৌঁছায় নি এই সেদিনও, আজ দেশের সবথেকে প্রত্যন্ত গ্রামেও বিদ্যুৎ সহজলভ্য হয়েছে। যে বিপুলায়তন দেশটির অধিকাংশ মানুষ জানতো না সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা কাকে বলে, সেই দেশের ৫০ কোটির অধিক দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে পৃথিবীর বৃহত্তম সরকারি স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত। ১৩৮ কোটি মানুষের সুস্থ জীবনধারণ যেখানে অসম্ভব চ্যালেঞ্জ সেখানে তৈরি হয়েছে মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে নিজ উদ্যোগের মাধ্যমে সাবলম্বী হওয়ার সুবন্দোবস্ত। যে দেশে সুলভ শৌচালয়ের অভাবে নীরোগ জীবনযাপন অধিকাংশ মানুষের সমস্যা ছিলো, সেদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে সুলভ শৌচালয়, তৈরি হচ্ছে নীরোগ ভবিষ্যৎ পরিকাঠামো। এরকম বহু উদাহরণ চলছে এবং মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এ তো গেলো অন্তর্দেশীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ।

এবার আসি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, এই সেদিনও যে ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ দেশের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবেচিত হতো, আজ তাই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বাজার হিসেবে দেখা হয়। যে বাজারে যত খরিদ্দার সে বাজার তত ই সমৃদ্ধ। এও এক প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার প্রমাণিত সত্য। ফলস্বরূপ চীন নয়, আমেরিকা নয় পৃথিবীর তাবড় বহুজাতিকদের স্বাভাবিক পছন্দের গন্তব্য হিসেবে উঠে আসছে ভারতবর্ষের নাম। আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন ভারতবর্ষের সমস্ত দাবী দাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ। এই সেদিনও যে আমেরিকা নরেন্দ্র মোদী নামটির আমেরিকার ভিসা বাতিল করেছিল আজ তারাই লাল কার্পেট পেতে অভ্যর্থনা জানাতে দ্বিধাবোধ করছে না। যে ভারতীয় উপমহাদেশের মিডিয়া, বিরোধী রাজনৈতিক দল একত্রে নরেন্দ্র মোদীকে মুসলমান বিরোধী অমানবিক হিসেবে দাগিয়ে দিতে চায়,তাদের বিরুদ্ধে গিয়েই যে দেশগুলো মূলত ইসলামের জন্মদাতা এবং পৃষ্ঠপোষক সেরকমই ছ ছটি ইসলামিক দেশ তাদের দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সন্মান দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন পৃথিবীর অন্যতম রাষ্ট্র নেতা হিসেবে আমাদের ঘরের ছেলে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। পৃথিবীর তাবড় কমিউনিস্ট দেশ হিসেবে মানবাধিকার হরণকারী চীন যতই ভারত বিরোধিতা করুক না কেন, তাইওয়ান বা ভিয়েতনামের মতো কমিউনিস্ট শাসকরা ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে কোনও রকম কার্পণ্য করছে না। এভাবেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের নাম ক্রমশই সম্ভাবনা থেকে অন্যতম হয়ে উঠছে।

উপরিউক্ত উদাহরণগুলি ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের উদাহরণ স্বরূপ। তাই যখন সমস্ত পৃথিবীর মানুষ এক ধারণা পোষণ করবে তখন ভারতবর্ষের অংশ হিসেবে দক্ষিণ ভারতীয় মানুষেরা কি অন্য ভাবনা পোষণ করতে পারে? স্বাভাবিক ভাবেই তাই অন্যথা না হয়ে ভারতবর্ষের দক্ষিণ অংশেও বিজেপির প্রসারের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে স্বাভাবিক উন্নয়ন এবং মানুষের প্রতি মোদী সরকারের দায়বদ্ধতা। এছাড়াও ওয়াইসী ভাইদের লাগাতার হুমকি হিন্দুদের প্রতি, কংগ্রেসসহ দক্ষিণ ভারতের আঞ্চলিক দলগুলোর নির্লজ্জ সংখ্যালঘু তোষণ দক্ষিণ ভারতের মানুষের মনেও বিজেপির প্রতি চাহিদা বাড়িয়ে চলেছে ক্রমশ।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মানুষ সুষ্ঠু, স্বাভাবিক জীবন চায়, তরোয়াল হাতে ঘোড়ায় চেপে যুদ্ধ করে দখল করা ধরনের প্রাচ্য ইসলামিক চিন্তা ধারার সাথে মানুষের কোনও সম্পর্ক নেই। ধীরে ধীরে ভারতবর্ষের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষও এই ধারণা উপলব্ধি করবে, আর সেদিন থেকে ভারতবর্ষে আবারও আঞ্চলিক এবং সর্বভারতীয় দলগুলোর নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা চালু হবে। যতদিন না সেই অবস্থা তৈরি হচ্ছে বিজেপির জয়যাত্রা ক্রমশই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। কারণ সেই একটাই সরকারি প্রকল্প জাতি, ধর্ম, বর্ণের ওপর গিয়ে সমস্ত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং ভয়ঙ্কর উগ্র ধর্মীয় জেহাদের ঘোষণা সহ বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্লজ্জ সংখ্যালঘু তোষণ। যেখানে একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক দেশে যদি অমরনাথ বা হিন্দু তীর্থযাত্রীদের জন্য ভর্তুকি না থাকে তাহলে হজ যাত্রীদের জন্য ও থাকবে না, যদি গণতান্ত্রিক কাঠামোয় শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকে তাহলে ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধ করতে হবে, যদি বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ আইন সরকারি সংবিধান হিসেবে থাকে তাহলে ধর্মীয় বা শরিয়তি আইন থাকবে না, যদি হাম দো হামারা দো নীতির বাস্তব প্রয়োগ হয় তাহলে সমস্ত সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে।

হ্যাঁ ঠিক এই সব কারণগুলোই একজন সাধারণ নাগরিকের মনে ঘোরাফেরা করে। আজ একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে যখন সমস্ত পৃথিবী হাতের মুঠোয় তখন মানুষ চায় সুস্থ গণতন্ত্র। যেখানে মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান নিশ্চিত হবে আর তার সাথে থাকবে সুস্থ ভবিষ্যতের আশ্বাস।থাকবে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ আর অন্যায় ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ।ঠিক এই কারণগুলোই অন্যতম এবং প্রধান কারণ আজকের ভারতবর্ষে বিজেপির জয়ধ্বজা ওড়ানোর বলেই মনে হয়।

মতামত লেখকের ব্যক্তিগত, বঙ্গদেশ পত্রিকার নয়।