ইসলামবাদীদের সভায় বক্তব্য রাখা হামিদ আনসারী “ধর্মীয় গোঁড়ামি ও উগ্র জাতীয়তাবাদ” নিয়ে চিন্তিত!

0
859

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই হামিদ আনসারী বেশ ভয়ে রয়েছেন। দেশের মধ্যে থেকেই হামিদ আনসারী ভয় পেতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

হামিদ আনসারী অবশ্য এর আগেই এ বিষয়ে আঙুল তুলেছিলেন। এখন পুনরায় উনার ভীতি জাগ্রত হয়েছে। হামিদ আনসারী এখন রাষ্ট্রবাদকে ‘রোগ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এর আগে হামিদ আনসারী রাষ্ট্রবাদকে ‘বিষ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।গত শুক্রুবার দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি বলেছেন, দেশ করোনা মহামারীর আগে থেকেই ২ টি আর‌ও মহামারী দ্বারা আক্রান্ত ও জর্জরিত। এই দুটি হল- প্রথমত, ‘ধার্মিক কট্টরতা’ দ্বিতীয়ত, ‘আক্রামণাত্মক রাষ্ট্রবাদ’।

কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানের সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হামিদ আনসারী।।‘The Battle of Belonging’ নামক বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হামিদ আনসারী রাষ্ট্রবাদ শব্দের সঙ্গে আক্রামণাত্মক শব্দটি জুড়ে দেন এবং রোগ বলে চিহ্নিত করেন। হামিদ আনসারী বলেন, করোনা মহামারী একটা ভয়ঙ্কর মহামারী। তবে আমাদের দেশ ও সমাজ আগে থেকেই করোনা অপেক্ষা আরও ২ টি মহামারীর শিকার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগে ভারতে বেড়ে চলা রাষ্ট্রবাদ নিয়ে চীনা মিডিয়ায় হাহাকার করেছে। চীনের গ্লোবাল টাইমস লাদাখ উত্তেজনা সৃষ্টির কারণ হিসেবে ভারতের উগ্র রাষ্ট্রবাদকে দায়ী করেছিল।

প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী বলেছেন, আমাদের দেশ এমন ‘প্রকাশ্য ও সুপ্ত’ মতামত এবং আদর্শের দ্বারা আক্রান্ত জর্জরিত রয়েছে যা ‘আমাদের এবং তাদের’ এই কাল্পনিক বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, “করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে থেকেই ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা ‘ধর্মীয় গোঁড়ামি’ এবং ‘আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ’ নামক দুই ভয়ঙ্কর মহামারীতে আক্রান্ত।

তিনি মন্তব্য করেছেন, হিন্দুত্ববাদ একটি রাজনৈতিক মতবাদ, এর সঙ্গে ধর্মীয় কোন‌ও সম্পর্ক নেই।এই মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে জাতীয়তাবাদীদের কেউ কেউ বলেছেন, হামিদ আনসারীর মতো ইসলামপন্থীদের হিন্দু এবং হিন্দুত্ববোধকে বোঝার বুদ্ধির যথেষ্ট অভাব রয়েছ। তারা নিজেদের সেক্যুলার সত্ত্বা বজায় রাখার জন্য ক্রমবর্ধমান উগ্রপন্থার বিষয়ে অন্ধ হয়ে বসে আছেন পরিবর্তে হিন্দু ও জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মূল্যবোধ নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করছেন।

উল্টোদিকে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারীকে ইসলামপন্থী পিএফআইয়ের প্রোগ্রামে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল, এখন তিনিই আবার ‘আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে মুখ খুলেছেন।

শুধু তাই নয়, প্রাক্তন উপ রাষ্ট্রপতি প্রায়শই তাঁর ইসলামপন্থী প্রবণতা প্রকাশ করেছেন এবং ইসলামী শরিয়া আদালতের পক্ষে‌ও তাঁকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। তিনি দেশের প্রতিটি জেলায় শরীয়ত আদালত স্থাপনের মতকে সমর্থন করেছিলেন। বলেছিলেন , প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব ব্যক্তিগত আইন অনুশীলনের অধিকার রয়েছে।

উগ্রপন্থী ইসলামপন্থী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগদান করত‌ও আনসারী কোনও লজ্জা প্রকাশ করেননি। ২০১০ সালে পিএফআইয়ের গুন্ডারা ইসলামী নবী মোহাম্মদকে অপমান করার অভিযোগে কেরালায় এক অধ্যাপকের হাত কেটে নিয়েছিল। এনআইএ পিএফআইয়ের বিরুদ্ধে কেরালায় ‘লাভ-জিহাদ’ জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিল।

বারংবার আনসারী তার বিকৃত ইতিহাস বোধের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছিলেন, যে সরদার প্যাটেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ন্যায় দেশভাগের জন্য সমানভাবে দায়ী। আনসারী বলেছিলেন যে কেবলমাত্র পাকিস্তানি বা ব্রিটিশরা নয়, দেশ বিভাগের জন্য ভারতীয়রাও সমানভাবে দায়ী।

এছাড়া অভিযোগ ওঠে, কূটনীতিক হিসাবে তাঁর মেয়াদকালে আনসারী মধ্য প্রাচ্যের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে যেতেন , যেখানে তিনি আইএফএস অফিসার হিসাবে তাঁর বেশিরভাগ সময়কালের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি ১৯৯০-১৯৯২ সালের মধ্যে ইরানের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের সময় তেহরানে RAW অফিসারদের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন এবং সেই সংক্রান্ত নথিও অফিসারদের হাতে এসেছিল।

তিনি একথাও বলেছেন, চার বছরের অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ভারত মৌলিক উদারতাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের একটি নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তা পরিবর্তিত হয়েছে, যা জনসাধারণের মধ্যে বাজে প্রভাব ফেলেছে। প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি বলেছেন, করোনা খুবই ভয়ঙ্কর মহামারী কিন্তু এর আগে থেকেই ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা ‘ধর্মীয় গোঁড়ামি’ এবং ‘আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ’-এর শিকার হয়ে পড়েছে।