ধর্মীয় উস্কানির অভিযোগ তুলে ইসলামিক বাংলাদেশে হিন্দু গ্রাম তছনছ করলো উগ্র মুসলিমরা

0
1518

বঙ্গদেশ ডেস্ক: ইসলামিক বাংলাদেশের কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট করে এক হিন্দু যুবক। ফলে বুধবার সকালে এই হেফাজত নেতার অনুসারী কয়েক হাজার মুসলিম সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার একটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলা চালিয়েছে। হামলার পাশাপাশি তারা পুরো গ্রামটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালায়। বর্তমানে গ্রামটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে আতঙ্কিত হিন্দুরা। হামলাকারী স্থানীয় মুসলিমরা এখনও হামলার মানসিকতায় রয়েছে। 

গত ১৫ মার্চ তারিখে দিরাইয়ে একটি সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে হেফাজতের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে মামুনুল হকও উপস্থিত ছিল। সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মামুনুল বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখে ও হুমকি দেয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় নোয়াগাও গ্রামের ঝুমন দাস নামের এক হিন্দু যুবক। মামুনুল হকের বক্তব্যের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করে। এই পোস্টকে কেন্দ্র ক্ষুব্ধ হয়ে ঝুমনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানির অভিযোগ তুলে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের অনুসারী উগ্র মুসলিমরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে হামলা করে। 

হামলার সময় কয়েক হাজার উন্মত্ত মুসলিম দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম নোয়াগাও এর প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। এর পাশাপাশি তারা লুটপাট চালায় প্রতিটি হিন্দু বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। গ্রামের ভুক্তভোগী এক হিন্দু সজল চন্দ্র দাস বলেন, “আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। ঘরের সব কিছু লুটপাট করা হয়েছে। আমরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে এসেছি প্রাণ বাঁচাতে।” পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থাই নেয়নি৷ উল্টো ঝুমন দাসকে আটক করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বুধবার দিন ছিল ইসলামিক বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবের জন্মদিন। বাস্তবে শেখ মুজিবকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের রূপকার বলা হলেও দ্যা ক্যালকাটা কিলিং এর মূল হোতা সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিল শেখ মুজিব। ১৯৭১ সালে ভারতের সাহায্যে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে বরাবরই বিরোধ করে আসা সৌদি আরবকে খুশি করার জন্য মরিয়া হয়ে বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা করেন শেখ মুজিব। এছাড়াও মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে বিশেষ দৃষ্টিও দিয়েছিলেন, যদিও তাকে অসাম্প্রদায়িকতার রূপকার বলে আখ্যায়িত করা হয় সেখানে। 

সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব হত্যার শিকার হওয়ার পর, সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। নিজেকে ইসলামপন্থী প্রমাণের জন্য শেখ মুজিব অনেক চেষ্টা করলেও ইসলামিক দেশগুলো ভরকেন্দ্র সৌদি আরব তাতে সন্তুষ্ট ছিল না। ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান হলে মুসলমানদের জন্য আলাদা দেশ হবে সেই স্বপ্ন দেখে ভারতভাগে প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল শেখ মুজিবের, যা তিনি নিজের অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে নিজেই লিখে গিয়েছে শেখ মুজিব। এছাড়াও দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তৎকালীন মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী ও সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ শিষ্য শেখ মুজিবের। প্রকারান্তরে বলা যায় যে, শেখ মুজিবের জন্মদিনে তার কট্টর ইসলামপন্থার ফলাফল দৃশ্যমান হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হেফাজতে ইসলামের এই হামলার মাধ্যমে।