খালিস্তান আন্দোলন(১১): স্বর্ণমন্দির চত্বরে হিংসা, দাঙ্গা, হিন্দু হত্যা ও কংগ্রেস-আকালির সুবিধাবাদ

– চিন্ময়ানন্দ অবধূত

(১০ম পর্বের পর)

পাঠকদের হয়তো ধারণা থাকতে পারে কোনও কোনও অফিসের বড় বসেরা প্রোমোশন দেওয়ার সময় ইয়েস ম‍্যানদের প্রতি একটু বেশি পক্ষপাতিত্ব দেখান। যোগ‍্যতার থেকেও বসের প্রতি আনুগত্য পদোন্নতির প্রধান মাপকাঠি হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও এর ব‍্যতিক্রম ছিলেন না।

দরবারা সিংয়ের সরকারকে বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতির শাসন চালু করে ইন্দিরা গান্ধী এবং পঞ্জাব পুলিশের দায়িত্ব অর্পণ করলেন পি এস ভিন্দারকে। ভিন্দারের স্ত্রী ছিলেন কংগ্রেসের একজন সাংসদ। নিজের পুলিশজীবনে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য কীর্তি না থাকলেও ভিন্দারের ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি অপরিসীম আনুগত্য ছিল, একেবারে খাঁটি হীরের মত নিষ্কলুষ।

পি এস ভিন্দর

এদিকে দরবারা সিংয়ের মত বেপরোয়া মুখ‍্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার ফলে তখন ভিন্দ্রান‌ওয়ালেরও ‘পোয়া বারো’। ভিন্দার তৈলমর্দনে যতটা পারদর্শী ছিলেন, ভিন্দ্রান‌ওয়ালের মোকাবেলা করতে ততটাই অপদার্থতার পরিচয় দিলেন। প্রতিদিনই প্রচুর লোকজনকে গ্রেফতার করা হতে লাগল,কিন্তু আসলে তারা ছিল পাতি ছিঁচকে চোর পকেটমার জাতীয় অপরাধী, পুলিশের কাছে যাদের পরিচয় ছিল “দশ নম্বরী”। এইসব চুনোপু্ঁটি ধরে ভিন্দার প্রেসের সামনে দাবী করে যেতে লাগলেন প্রতিদিনই তিনি রাঘববোয়াল ধরে চলেছেন। এদিকে সত‍্যিটা একদিন ফাঁস করে দিলেন পঞ্জাব পুলিশের একজন সিনিয়র অফিসার, বিবিসির সাংবাদিক মার্ক টালির কাছে।

খালিস্তানি জঙ্গিদের বুলেটে এত পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল যে পুলিশকর্মীদের মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল, বিশেষ করে প্রকাশ‍্যে ডিআইজি আট‌ওয়ালের নৃশংস হত‍্যাকান্ডের পর। অনেক পুলিশকর্মী প্রাণের ভয়ে কিংবা আদর্শের জন্য ভিন্দ্রান‌ওয়ালেকে সমর্থন করা শুরু করেছিল। প‍্যারামিলিটারি পুলিশ (CRPF – Central Reserve Police Force) ডেকে কোনও লাভ হয়নি কেননা সিআরপিএফের বেশিরভাগ ছিল অন্য রাজ‍্যের, পঞ্জাব তাদের কাছে অজানা। আর সিআরপিএফ পঞ্জাব পুলিশকে কিছুটা হয়ত অবিশ্বাস করত, কেননা তাদের মনে হত পঞ্জাব পুলিশের অনেকে হয়তো ভিন্দ্রান‌ওয়ালের সমর্থক।

সিআরপিএফের সন্দেহ অমূলক ছিল না। অমৃতসরের ডেপুটি কমিশনার গুরদেব সিং নিজেই ছিলেন ভিন্দ্রান‌ওয়ালের সমর্থক। তিনি সিআরপিএফকে স্বর্ণমন্দিরের চারপাশে একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরী করতে ক্রমাগত বাধা দিয়ে যেতেন। এমনকি একবার সিআরপিএফ একটি অস্ত্রবোঝাই ট্রাক আটক করলে ডেপুটি কমিশনার সেটাকে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেন। বালি, সুরকি, সিমেন্ট ইত‍্যাদির বস্তার মধ্যে লুকিয়ে অস্ত্রশস্ত্র স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে পাচার করা হত।

ভিন্দ্রান‌ওয়ালের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ বক্তৃতার ক‍্যাসেট পুলিশের নাকের ডগার ওপর দিয়ে স্বর্ণমন্দিরের সংলগ্ন দোকানগুলোতে বিক্রি করা হত। পুলিশ, নির্বাক দর্শক।পঞ্জাবের গ্রামে গ্রামে এই ক‍্যাসেটগুলো বিলি করা হতে থাকে, যা তৎকালীন সমাজে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল।

শুধু পঞ্জাব পুলিশ নয়, সি আর পি এফের হাত বেঁধে দিয়েছিল  ইন্দিরা গান্ধীর থিংক ট‍্যাঙ্ক। স্বর্ণমন্দিরের আগন্তুকদের তল্লাশি নেওয়া তো দূর, স্বর্ণমন্দিরের দুশো গজ দুরত্বের মধ্যে সিআরপিএফের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ইন্দিরার থিংক ট‍্যাঙ্কের ধারণা ছিল এইরকম কিছু ব‍্যবস্থা নিলে পঞ্জাবে শিখ কৃষকদের মধ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যাবে। ফলে স্বর্ণমন্দিরে বাইরে থেকে অবাধে অস্ত্র এবং রসদ সরবরাহ চলতে থাকে। ভিন্দ্রান‌ওয়ালের সেনাপতি শাহবাগ সিং স্বর্ণমন্দিরকে একটি দুর্গে পরিণত করে।

স্বর্ণমন্দিরে

কিন্তু একটা ঘটনায় সিআরপিএফের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। সীমান্তবর্তী গুরদাসপুর জেলায় সিআরপিএফের ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। তার পরের দিন সিআরপিএফ স্বর্ণমন্দিরে ঢোকার সময় ভিন্দ্রান‌ওয়ালের লোকদের তল্লাশী নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। সিআরপিএফ মন্দিরের কাছাকাছি বিল্ডিংয়ে পজিশন নিয়ে প্রত‍্যুত্তর দেয়। লোঙ্গোয়াল প্রথমে ফোন করেন ভিন্দারকে, কিন্তু ভিন্দার জানিয়ে দেন সিআরপিএফের ওপর তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এদিকে গৃহমন্ত্রকের থেকে ফোন যায় লোঙ্গোয়ালের কাছে, স্বর্ণমন্দিরের থেকে গুলিবর্ষণ বন্ধ করার জন্য, কিন্তু ভিন্দ্রান‌ওয়ালের জঙ্গিরা লোঙ্গোয়ালকে পরোয়া করত না। শেষে প্রেসিডেন্ট জৈল সিংয়ের ফোন আসে সিআরপিএফের দফতরে। সিআরপিএফকে গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে হয়।

টেলিফোন এক্সচেঞ্জ পর্যন্ত ছিল ভিন্দ্রান‌ওয়ালের নিয়ন্ত্রণে। অপারেশন ব্লু স্টারের সময় সেনাবাহিনী পঞ্জাবের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাকালীন সবিস্ময়ে লক্ষ্য করে, ভিন্দ্রান‌ওয়ালের ফোন কল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভিন্দ্রান‌ওয়ালে কিংবা স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে অল ইন্ডিয়া শিখ স্টুডেন্ট ফেডারেশনের হেড অফিসের ফোন লাইনে কখনোই যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা যেত না।

পঞ্জাবের রাজ‍্যপাল ভৈরব চান্দ পান্ডের অবস্থাও দরবারা সিংয়ের থেকে খুব একটা ভালো ছিল না। পঞ্জাব সরকার ভিন্দ্রান‌ওয়ালের সমর্থক পুলিশ এবং আমলাদের ট্রান্সফার করার চেষ্টা করলে দিল্লির আদেশে তা আটকে যেত।

ডানদিক থেকে দ্বিতীয়, রঘুনন্দন লাল ভাটিয়া

শুধু তাই নয়, পঞ্জাব  কংগ্রেসের সভাপতি রঘুনন্দন লাল ভাটিয়া নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ভিন্দ্রান‌ওয়ালের সঙ্গে, অপারেশন ব্লু স্টারের একমাস আগে পর্যন্ত এই যোগাযোগ অক্ষুন্ন ছিল। নিয়মিতভাবে একটি গাড়ি স্বর্ণমন্দিরে পাঠানো হত ভিন্দ্রান‌ওয়ালের ডান হাত অমৃক সিংকে নিয়ে আসার জন্য। অর্থাৎ পঞ্জাবে যে ‘প্রেতনৃত‍্য’ চলছিল সেটা ছিল অনেকটাই একটি রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণাধীন। হয়তো বা তারা চাইছিল ১৯৮৫ -র সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত এই সমস্যা জিইয়ে রাখতে। ঠিক সাধারণ নির্বাচনের আগে খালিস্তান সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে নিঃসন্দেহে ১৯৮৫ -এর নির্বাচনে তাদের আটকানোর সাধ‍্য কারো ছিল না।

এদিকে ১৯৮৪ -এর প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন স্বর্ণমন্দির লাগোয়া একটি বিল্ডিং থেকে খালিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা যায়। ভিন্দ্রান‌ওয়ালের থেকে ধর্মযুদ্ধ মোর্চার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়ার জন্য আকালি দলের নেতারা ঠিক করলেন এবার তাঁরা সংবিধান থেকে আর্টিকেল ২৫ -এর উচ্ছেদের দাবিতে আন্দোলন করবেন। আর্টিকেল ২৫ অনুযায়ী শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধরা হিন্দু বলে পরিগণিত হত। আকালি দলের নেতারা ঘোষণা করেন তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধানের কপি পুড়িয়ে প্রতিবাদ করবেন। ফলে লোঙ্গোয়াল ছাড়া আকালি দলের বাকি নেতাদের পুলিশ গ্রেফতার করে। ১৯৮৪ -এর ৮ ই ফেব্রুয়ারি আকালি দল পঞ্জাবে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ওইদিন পঞ্জাবে ট্রেন এবং প্লেন পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিখ মৌলবাদীরা তলোয়ার উঁচিয়ে সরকারী অফিসগুলো বন্ধ তো করেই, এমনকি হিন্দু ব‍্যবসায়ীদেরও দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করে।

কেন্দ্রীয় সরকার ১৪ -ই ফেব্রুয়ারি পুনরায় আকালি দলকে আলোচনার জন্য আহ্বান জানায়। ওই দিন সকালে খালিস্তানি জঙ্গিরা স্বর্ণমন্দিরের সামনে একটি পুলিশ পোস্টে হানা দিয়ে ছয় জন পুলিশকর্মীকে অপহরণ করে। তাদের একজনকে হত্যা করা হয় এবং পাঁচজনকে পরে ফেরত দেওয়া হয়। ঐদিনই পঞ্জাবে “হিন্দু সুরক্ষা সমিতির” নেতা পবন কুমার শর্মা ধর্মঘট আহ্বান করেন। বনধের দিন হিন্দু আর শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে চোদ্দ‌ জনের মৃত্যু হয়, তবে তাদের বেশিরভাগই ছিল শিখ। এই সংবাদ আকালি দলের কাছে পৌঁছলে তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা মুলতুবি রাখে।

আশ্চর্যজনকভাবে এই পবন কুমার শর্মাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন কংগ্রেসের নেতা অমরিন্দর সিং। দ‍্য টেলিগ্রাফের সাংবাদিক সীমা মুস্তাফা একবার পবন কুমার শর্মার মায়ের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এই বলে যে তিনি বুঝতে পারছেন না পাটিয়ালার মহারাজা কেন তাঁর ছেলেকে নষ্ট করছেন। অমরিন্দর সিংয়ের গাড়ি প্রায়ই পবন কুমারকে নিতে আসত।

পার্শ্ববর্তী রাজ‍্য হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল ঠিক এইরকম একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। পানিপথে একটি সভায় ভজনলাল খোলাখুলিভাবে হিন্দুদের প্রত‍্যুত্তর দেওয়ার উস্কানি দেন। তার ফলে পানিপথের একটি গুরদোয়ারায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আটজন শিখকে পিটিয়ে মারা হয়। বাস থেকে শিখদের নামিয়ে জোর করে তাদের দাড়ি কামিয়ে দেওয়া হয়। অনেক শিখ মালিকানাধীন দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছু সময়ের জন্য পুলিশ গ্র‍্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হয়।

ভজনলাল

দাঙ্গা যেমন শুরু হয়েছিল, তেমনি হঠাৎ করে থেমে যায়। ইন্দিরা গান্ধী এক্ষেত্রেও মৌনব্রত অবলম্বন করা সমীচীন মনে করেন, কেননা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার থেকে হরিয়ানার হিন্দু ভোটব‍্যাঙ্ক অটুট রাখা তাঁর কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফরাসী সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের মত তিনিও ভাবতে শুরু করেছিলেন “লে তা, সে মু, আমিই রাষ্ট্র।”( L’etat, c’est moi. I’m the state)

তাভলীন সিংকে এইসময় তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভাপতি রাজীব গান্ধী একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “মাকে আমি অনেকবার বলেছি আমাদের কিছু করা উচিত, কিন্তু মা তাঁর রাজনৈতিক পরামর্শদাতাদের কথা শুনে চলেন। ওরা মাকে বোঝাচ্ছে এইসময় এমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয় যাতে শিখদের মর্যাদাহানি হয়।”

তাভলীন সিং যখন প্রশ্ন করেন নিরীহ শিখদের অনেক জায়গায় যে লাঞ্ছিত, নিগৃহীত এমনকি হত্যা করা হচ্ছে, সেটা কি তাদের কাছে বেশী অবমাননাকর নয়?

এর কোন উত্তর রাজীব গান্ধীর কাছে ছিল না। কেননা সেক্ষেত্রে বলতে হত কংগ্রেসের কাছে একমাত্র লক্ষ্য হল ১৯৮৫ -এর সাধারণ নির্বাচনে জেতা, দেশের অখণ্ডতা গৌণ।

নিরীহ শিখেদের লাঞ্ছনা বেশি করে শিখ জনসাধারণকে ভিন্দ্রান‌ওয়ালের সমর্থক করে তুলতে লাগলো।

১৯৮৪ -এর ২৮ -শে মার্চ দিল্লির ‘শিখ গুরদোয়ারা ম‍্যানেজমেন্ট কমিটি (DSGMC) -এর প্রেসিডেন্ট এস মানচন্দা, যিনি আকালিদের ধর্মযুদ্ধ মোর্চার কট্টর সমালোচক ছিলেন, তাঁকে খালিস্তানি জঙ্গিরা প্রকাশ‍্য দিবালোকে আইটিও অফিসের সামনে গুলি করে হত্যা করে। ৩ -রা এপ্রিল পুরো পঞ্জাব উপদ্রুত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ‘ন‍্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ বলবত করা হয়।

ন‍্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ভিন্দ্রান‌ওয়ালেকে বিচলিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ৩ -রা এপ্রিলেই ভারতীয় জনতা পার্টির একজন সাংসদ হরবন্স লাল খান্না -কে অমৃতসরে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার পরের দিনই চন্ডীগড়ে হত‍্যা করা হয় রাজ‍্যসভার সদস‍্য পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বিশ্বনাথ তেওয়ারিকে। ২২ -শে এপ্রিল একজন এয়ারফোর্সের অফিসারকে তাঁর বাড়িতে ঢুকে হত‍্যা করা হয়। ২৬ -শে ভিকিউইন্দ গ্রামে একজন হিন্দু কমিশন এজেন্টকে একজন শিখ মোটরসাইকেল আরোহী গুলি করে মেরে ফেলে। ৩০ -শে এপ্রিল প্রাক্তন পুলিশ সুপারিটেন্ডেন্ট বচন সিং, তাঁর স্ত্রী এবং কন‍্যাকে গুলি করে হত‍্যা করা হয়। বচন সিং একসময় ভিন্দ্রান‌ওয়ালের ডান হাত অমৃক সিংকে পুলিশ কাস্টডিতে মারধর করেছিলেন।

১২ -ই মে মিডিয়া ব‍্যরন লালা জগৎ নারাইনের পুত্র রমেশ চন্দর খালিস্তানিদের গুলিতে নিহত হন। মৃত্যুর ঠিক আগেই তিনি তাঁর সম্পাদিত সংবাদপত্রে ভবিষ্যদ্বানী করে গিয়েছিলেন, “পুরো পঞ্জাবের অবস্থা একটা কসাইখানার মত। কেউ জানে না কখন কার পালা আসবে।”

রমেশ চন্দরের হত‍্যাকান্ড পুরো ভারতের মিডিয়াকে ইন্দিরা গান্ধীর তীব্র সমালোচক করে তুলেছিল। শুধু ১৯৮৪ -এর মার্চ এপ্রিলেই ট্রিগার হ‍্যাপি খালিস্তানি জঙ্গিদের বুলেটে কমপক্ষে আশি জনের মৃত্যু হয়।

১৯৮৪ -এর এপ্রিলেই পঞ্জাবের হিন্দুদের মনে বদ্ধমূল ধারণা হয় পঞ্জাবে তাদের আর কোনো স্থান নেই। হিন্দু ব‍্যবসায়ীরা পঞ্জাব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা, দিল্লি এমনকি মুম্বাইয়ে পর্যন্ত পাড়ি জমাতে থাকে। পঞ্জাবের শিল্পব‍্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।শিল্পপতিদের বেশিরভাগ ছিলেন হিন্দু, তাঁরা তাঁদের কারখানা হরিয়ানায় নিয়ে যান। একটার পর একটা ব‍্যাঙ্ক ডাকাতির ফলে ব‍্যাঙ্কিং সেক্টর ভেঙে পড়ে। সাধারণ মধ‍্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত, যাদের পঞ্জাব থেকে যাওয়ার উপায় ছিল না, তারা বাধ‍্য হয়ে দাড়ি এবং পাগড়িতে শিখের ছদ্মবেশ নিতে বাধ‍্য হয়, নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য।

তথ‍্যসূত্র:

1. Amritsar, Mrs Gandhi’s Last Battle. Mark Tully and Satish Jacob.

2. The Khalistan Conspiracy. GBS Sidhu

3. India,The Siege Within. M J Akbar

4. The Punjab Story. Forwarded by KPS  Gill.

5.Durbar. Tavleen Singh.