ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ কিভাবে ভারতের ইতিহাস ধ্বংস করেছে

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ এর গঠনই করা হয়েছিল বিশেষ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে – ভারতের ইতিহাস রচনার নামে বিকৃত ইতিহাস রচনা তৈরি করা।

রমেশ চন্দ্র মজুমদারকে ‘সাইডলাইনে’ বসিয়ে এই সংগঠন তার কলঙ্কিত জীবন শুরু করে। এ বিষয়ে ইতিহাসবিদ দিলীপ কুমার চক্রবর্তী তাঁর বইতে লিখেছেন

“আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে, রোমিলা থাপারের ‘বাক-স্বাধীনতা’ অদ্ভুত ধরণের। ১৯৭০ দশকে রোমিলা থাপার উক্ত ইতিহাসের সাথে সম্বন্ধিত কুখ্যাত সংগঠনে যোগ দেন। তিন শুরু থেকেই যুক্তিবাদী ইতিহাস রচনার নামে ইতিহাস বিকৃত করার কাজ শুরু করেছিলেন সরকারের মদতে। সরকারী অর্থসাহায্য নিয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ চলতে শুরু করলেও তারা কোনওকালেই এমন কোনও ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করতে পারেনি, যাকে কালজয়ী বলা চলে। তারা শুরু থেকেই প্রোপ্যাগান্ডা ভিত্তিক ইতিহাস রচনা আর আগেকার ইতিহাস রচনাকারদের বিরুদ্ধে কুৎসা তৈরিতেই অধিকতর মনোযোগ দিয়েছিল। এইভাবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ ইতিহাস রচনা করার নামে যা করে আসছে জন্মলগ্ন থেকে; তাকে অপরাধমূলক কার্যকলাপ বলা চলে। এরা কোনওদিনই বিরুদ্ধ মতবাদ সহ্য করে নি, সর্বত্র নিজেদের মতামত চাপিয়ে গেছে। এইরকম একটা সংস্থার অধিপতি হওয়া অবস্থায় যখন রোমিলা থাপার বাক-স্বাধীনতার কথা তুলেছিলেন, আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম বৈকি।”

১৯৭২

এই বছরেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ স্থাপিত হয় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল হাসান। জন্মলগ্ন থেকেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ ছিল কমিউনিস্টদের ডেরা, যারা বরাবরই ভারতের ইতিহাসকে বিকৃত করে লেখায় বিশেষ উৎসাহ দেখিয়েছে। সত্যি বলতে কি, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ বরাবরই বিদেশী ইতিহাস রচয়িতাদের লেখা চুরি করে; যাকে ইংরেজিতে বলে প্ল্যাজিয়ারিজম – তাই করে এসেছে এবং ধরা পড়ার পরেও সরকারের মদতে টিকে গিয়েছে। এতেই শেষ নয়, করদাতার অর্থে কিভাবে নয়ছয় করে মৌজমস্তি করা যায়, তা হতেকলমে করে দেখিয়েছে। এদের বৈভব দেখলে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়, ভাবতেই হয় যে; এরা সরকারী মদতদাতার প্রশ্রয়ে কতবড় অন্যায় করে চলেছে।

সত্যি বলতে কি, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ জন্মের চার বছরের মধ্যেই ‘অপরাধমূলক’ কার্যকলাপ শুরু করেছিল এবং তাতে গান্ধী পরিবারের সস্নেহ প্রশ্রয় ছিল।

১৯৭৬ সালে, অর্থাৎ জরুরি অবস্থা চলাকালীন জনৈক প্রাচীন ফার্সি ভাষা ও মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ পরমাত্মা শরণ ‘তারিখ-ই-আকবরি’ গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ প্রধান মহম্মদ আরিফের হাতে তুলে দেন।

শরণ আবিষ্কার করেন পাণ্ডুলিপি গায়েব হয়ে গিয়েছে।

কয়েক মাস বাদে শরণের জামাতা সরকারী তদন্তের দাবি জানানোয় বিব্রত ভারত সরকার একটি কমিশন বসায়। ঐ কমিশনের প্রধান ছিলেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ এর মধ্যযুগ শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর তাসনিম আহমেদ কয়েক মাস তদন্তর পর জানান – ‘পাণ্ডুলিপি পেয়েছিলাম বটে, কিন্তু এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

ঠিক পঁচিশ বছর বাদে ঐ পাণ্ডুলিপির প্রত্যেক বাক্য আরেকটা পিএইচডি থিসিসের আকারে বেরোয়। আজ্ঞে হ্যাঁ, সেই থিসিসের রচয়িতা (!) ছিলেন তাসনিম আহমেদ নিজেই। থিসিসের মুখবন্ধে থিসিস সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে।

“তারিখ-ই-আকবরি গ্রন্থের যে পুর্ণাঙ্গ ইংরেজি অনুবাদ রচিত হয়েছে, তার মত নিখুঁত অনুবাদ আর দেখিনি। এই অনুবাদ করেছেন যে তাসনিম আহমেদ, তিনি অন্যান্য সূত্র থেকে অনেক খেটেখুটে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য অনুবাদ করেছেন; যা দেখে আমি খুবই খুশি হয়েছি। মহামতি আকবরের ৪৫০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এর চেয়ে ভাল উপহার কিছুই হতে পারত না। আমি নিশ্চিত এই অনুবাদের পর দেশবাসী জানতে পারবে, ভারতের ঐক্য সাধনে ও সংস্কৃতি রক্ষায় ওনার ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ছিল।”

এখানে বলে রাখা দরকার মুখবন্ধ রচনা করেছিলেন সেই ইরফান হাবিবই, যিনি ২০১৫-১৬ শীতকালে আর.এস.এসের সাথে কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার বা আইসিসের তুলনা করেছিলেন। আর হ্যাঁ এটাও জেনে রাখা দরকার – ইরফান হাবিব পাঁচবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চের সদস্য হবার পাশাপাশি সংগঠনের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন অন্তত দুবার।

এখানে একটা কুৎসিত সত্য প্রকট হয়ে উঠেছে – ডঃ তাসনিম আহমেদ নিঃসন্দেহে শরণের পাণ্ডুলিপি ‘না বলিয়া গ্রহণ’ করেছিলেন এবং পিএইচডি ডিগ্রিও পেয়েছিলেন পাণ্ডুলিপির ওপর ভিত্তি করে ‘অনুবাদ’ রচনা করার জন্য। এই চৌর্যবৃত্তির জন্য তাকে কখনও আইনি শাস্তি পেতে হয় নি। আর ডঃ পরমাত্মা শরণ বহুদিন আগেই মারা গিয়েছেন।

জাতীয় বর্জ্য পদার্থের কৃষ্ণ গহ্বর বিশেষ!

আবার আমি একটু আগেই যা বলছিলাম – রমেশ চন্দ্র মজুমদারের কাহিনীতে আসা যাক।

প্রথমে তার বিখ্যাততম রচনা হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান ফ্রিডম, যা রেকর্ড বার পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল পাঠকদের চাহিদার দরুন এবং নেহেরু সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে ‘ঐতিহাসিক’ তারা চাঁদ একই বিষয়ের ওপর রচনা করেছিলেন মূল রচনার প্রচুর বিকৃতি সাধন করে।

১৯৭২ সালে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ স্থাপিত হবার পর ভারত সরকার ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামের ওপর নয় খণ্ডের ইতিহাস রচনার ভার দেয় ঐ সংস্থাকে। মজার কথা হচ্ছে – ৪৩ বছর বাদেও নয় খণ্ডের ইতিহাস রচনা আজও সম্পূর্ণ হয়নি। এবং অসমাপ্ত অবস্থাতেই সে ‘প্রজেক্ট’ বন্ধ হয়ে যায়। ১৬ জুলাই ২০১৫ সালে একটি সংবাদপত্রে এই অসম্পূর্ণ প্রজেক্টের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের তীব্র সমালোচনা করে লেখা হয়েছিল –

“কোনওদিন শুনেছেন কোনও সরকার একটা বই রচনা করতে চল্লিশ লাখ টাকা খরচ করেছে? বা একটা বই রচনার প্রজেক্ট ৪৩ বছর ধরে চলেও তা শেষ হয়নি; অথচ তার পেছনে কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে? ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছে বিখ্যাত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ সংস্থার ক্ষেত্রে। ইহা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হলেও ভারত সকারের দ্বারা অর্থপুষ্ট। এরা ভারত সরকারের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি টাকা গ্রহণ করেছে ‘স্পেশ্যাল রিসার্চ প্রজেক্ট’ গালভরা নাম দিয়ে বই তৈরির প্রজেক্ট দিয়ে।

আমাদের মত হল এইসব তথাকথিত ‘স্পেশ্যাল রিসার্চ প্রজেক্ট’ কয়েক বছরের মধ্যেই শেষ হওয়া উচিত ছিল এবং এদের পেছনে ২-৩ লাখ টাকার বেশী খরচ না হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে দশকের পর দশক প্রজেক্ট টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তার ফলে করদাতার তরফে কয়েক কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। এই ঘটনার জন্য যারা একক ভাবে দায়ী তারা হলেন – প্রয়াত বিপান চন্দ্র, ইরফান হাবিব ও কেএম শ্রীমালী ও তারা চাঁদ।

এপ্রিল ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রজেক্ট আজও শেষ না হওয়ার জন্য এরা ভয়াবহ রকমের দায়ী বলা চলে। অথচ এই প্রজেক্টকে বলা যায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চের ইতিহাসে সবচেয়ে অর্থবহুল, সবচেয়ে পুরাতন ও সবচেয়ে বিতর্কিত প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের পেছনে অদ্যাবধি কয়েক কোটি টাকা ব্যয়িত হয়েছে; যা ভারতের সৎ করদাতারা দিয়েছেন। ১৯৯৮ সালে অরুণ শৌরি তার বিখ্যাত ‘এমিনেন্ট হিস্ট্রিয়ান্স’ গ্রন্থে এই প্রজেক্টের ব্যর্থতার সমালোচনা করে প্রজেক্টের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ১.৭০ কোটি টাকা তছরুপ করার অভিযোগ এনেছেন। এখানে তিনি অভিযোগ করেছেন যে যুগপৎ হাবিব ও শ্রীমালী, দুজনের কেউই ‘ডিকশনারি অফ সোশ্যাল, ইকনমিক অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ টার্মস ইন ইন্ডিয়ান/ সাউথ এশিয়ান ইন্সক্রিপশন্স’ গ্রন্থের জন্য অদ্যাবধি পাণ্ডুলিপি তৈরি করার সময়ই পাননি! অথচ এই প্রজেক্ট ১৯৮৯ সাল থেকে চলছে তো চলছেই। এই প্রজেক্টের পেছনে ইতোমধ্যেই ৪২ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। শ্রীমালী তো এখনও পর্যন্ত একটা খণ্ডের পাণ্ডুলিপিই বানাতে পারেন নি। এই তথ্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চের কাছ থাকা কম্পিউটারাইজেড ইলেক্ট্রনিক্স ডাটাই বলছে, তার হয়ে ভাড়ায় খাটা অধ্যাপকরা তার হয়ে কাজ করেছে; তাও অসম্পূর্ণ।

ইরবান হাবিব তো আরও এককাঠি সরেস। যদি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চের বাৎসরিক প্রতিবেদন সত্য বলে থাকে, তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রজেক্ট ২০০৬-০৭ বসন্তের মধ্যেই শেষ করে ফেলবেন। কিন্তু যখন মেইল টুডে সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চের কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিল, তারা অম্লান বদনে বলেছিলেন, ‘ইরফান হাবিব এই প্রজেক্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন বহুদিন আগেই।’ এরপর কিছু বলার থাকে না।”

এই যে নিছক ‘এই প্রজেক্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন বহুদিন আগেই’ মানসিকতা – এটাই ইরফান হাবিবের সম্পর্কে দেশবাসীকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। তারা ইরফান হাবিবের সততা নিয়েই বিরাট প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু এই ‘ব্যর্থতার’ জন্য লজ্জা পাওয়া দূরে থাক, নিজের বার্ধক্যের অজুহাত দিয়ে ইরফান হাবিব বারংবার প্রসঙ্গ কাটাতে চাইছেন। তার এই মানসিকতা কোথায় যেন আরেক কুখ্যাত বামপন্থী বুদ্ধিজীবী তরুণ তেজপালের নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি অজুহাতের সাথে অদ্ভুত খাপ খায়। বলা বাহুল্য তরুণ তেজপাল মহাশয় একটি তরুণী সহকর্মীকে শ্লীলতাহানির মামলার প্রধান অভিযুক্ত আছেন।

ভারতের বাক স্বাধীনতার নামে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ যেভাবে বছরের পর বছর ধরে ভারত সরকারকে দোহন করে চলেছেন, অর্থ তছরুপ করে ধনী হয়েছেন এর সদস্যরা; তার তুলনা মেলা ভার। এটাই কমিউনিস্টদের বিশেষত্ব। আর ঠিক এই কারণেই তারা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চকে ‘জাতীয় বর্জ্য পদার্থের কৃষ্ণ গহ্বর বিশেষে’ পরিণত করতে সমর্থ হয়েছেন। অথচ আমাদের মিডিয়া তাদের এই ‘ব্যর্থতাকে’ দোষারোপ করা বদলে অদ্ভুত ভাবে চুপ করে বসে আছে।

 

ইতিহাসবিদ : তাদের প্রযুক্তি, তাদের কর্মপন্থা তাদের প্রতারণা

হ্যাঁ, যা বলছিলাম, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ ন্যক্কারজনক রেকর্ড সম্বন্ধে অরুণ শৌরির পর্দাফাঁসের  কথায় আসা যাক। ১৯৯৮ সালে বিখ্যাত ‘এমিনেন্ট হিস্ট্রিয়ান্স : দেয়ার টেকনোলজি, দেয়ার লাইন্স অ্যান্ড দেয়ার ফ্রড’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের রিভিউ লিখতে গিয়ে এন.এস. রাজারাম লেখেন –

“এমিনেন্ট হিস্ট্রি পড়তে গিয়ে সত্যিই হতাশায় ভুগতে হয়। এটা পড়তে পড়তে যে কোনও পাঠকের মনে হবেই যে, উক্ত তথাকথিত ‘এমিনেন্ট হিস্ট্রিয়ান্স’দের কার্যকলাপ ও মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। অথচ সেটাই হচ্ছে না। এদের কার্যকলাপ যেন অনেকটাই নাজি প্রোপ্যাগান্ডিস্ট জোসেফ গোয়েবলস বা সোভিয়েত লাইসেঙ্কোর মত; যাদের কাজই ছিল মিথ্যাচার চালিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করে একটা মিথ্যাকে সত্যিতে পর্যবসিত করা। ঐ ইতিহাসবিদরাও মোটামুটি একই কাজ করেছেন। তারা দেশের সত্যকারের ইতিহাস দেশবাসীকে জানাতে দেন নি, দেশের প্রাচীন সংস্কৃতিকে যতটা সম্ভব ঘৃণা করতে শিখিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ভারতের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদরা যেমন নিজ যোগ্যতায় সারা বিশ্বের কাছে প্রশংসা ও সম্মান অর্জন করে এনেছেন, এইসব এমিনেন্ট হিস্ট্রিয়ান্সরা ঠিক উল্টোটাই করেছেন। তারা বিদেশীদের কাছে ভারতকে যতটা সম্ভব বিকৃত, অপমানিত করেই তবে ছেড়েছেন। এরা ইতিহাস রচনার নামে ভারতের সংস্কৃতির যে ক্ষতি করেছেন তা অপূরণীয়।”

অরুণ শৌরি শুধু এদের কুকীর্তি ফাঁস করেই ছাড়েন নি, সাথে এদের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের অভিযোগও এনেছেন।

“যে প্রজেক্টটা কয়েক লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ করা উচিত ছিল, সেটাই তেতাল্লিশ বছর ধরে টেনে নিয়ে অবশেষে অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই বাতিল করায় এক কোটি সত্তর লাখ টাকার অপচয় বা বলা উচিত ধ্বংস হয়েছে; তা কিন্তু করদাতার টাকা। সবচেয়ে বড় কথা – তারা অদ্যাবধি একটা খণ্ডের কাজও সম্পূর্ণ করেন নি। এর চেয়ে অনৈতিক কাজ আর কিছু হতে পারে; কল্পনারও অতীত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটাই হয়েছে।”

১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে চলা অসম্পূর্ণ প্রজেক্টের পেছনে কত টাকা উড়েছে, তার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। তারপরেও কাজ অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা তারা করদাতার অর্থের এমন নয়ছয় করতে বিন্দুমাত্র বিবেকের কামড় অনুভব করেন নি। আমরা এখানে অরুণ শৌরির একটা উদাহরণ দেখাতে পারি, যার লক্ষ্য ছিল প্রয়াত ইতিহাসবিদ বিপান চন্দ্র। সেটা এরকম –

“১৯৮৭-৮৮ শীতকালে একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদকে ৭৫,০০০ টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল ‘অ্যা হিস্ট্রি অফ দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ রচনা করার জন্য। পরের বছরে তিনি ৫৭,৫০০ টাকা পান, কিন্তু  বাকি ১৭,৫০০ আর দেওয়া হয় নি। অথচ তিনি দাবি করেন তিনি নাকি পুর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছেন। আসলে তিনি কখনই পাণ্ডুলিপি জমাই দেন নি। যখন এ নিয়ে সরকারী তদন্ত শুরু হয় তখন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্ট্রিক্যাল রিসার্চ শৌরিকে জানিয়েছিলেন – বিপান চন্দ্র নাকি এখনও পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়ার সময় করে উঠতে পারেন নি; অথচ বাকি টাকা ফেরত চাইছেন।”

হ্যাঁ, এখানেই কিন্তু কাহিনী শেষ হয় নি।

ধর্ম ডিসপ্যাচ পত্রিকায় প্রকাশিত মূল প্রবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন সদানন্দ গৌড়াপ্পা।