ছোটোমনের বড়োলোক: অমর্ত্য সেনের মিথ্যার ব্যবসা

0
1435

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লামন্ট স্মৃতি সাম্মানিক অধ্যাপক অমর্ত্য সেন ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল জিতেছেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন, ডঃ সেন সম্পদের অসম বন্টন এবং তার জন্য গরিবদের মর্মবেদনা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আর তাই সমষ্টিগত সিদ্ধান্তে ব্যক্তির মূল্য আর দারিদ্র ও কল্যাণের মাপ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা তিনি করেছেন, যাকে স্বীকৃতি দেয় এই পুরস্কার। দারিদ্র আর দুর্ভিক্ষ নিয়ে কাজ করেই নোবেল পেয়েছেন অমর্ত্যবাবু, বলছে হার্ভার্ড গেজেট। তা, অমর্ত্য সেনের সম্পত্তি এখন কত? হোক না হোক ১৬ মিলিয়ন ডলার (১০০ কোটি টাকারও বেশি)। যা দেখা যাচ্ছে, দারিদ্র নিয়ে কাজ করলে কামাইটা ভালোই হয়। শুধু কি তাই? বাবুর স্ত্রী-রত্ন হার্ভার্ডেরই এক ইতিহাস অধ্যাপিকা এমা জর্জিনা রথস্চাইল্ড তো আবার, হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, সেই বি(?)খ্যাত রথস্চাইল্ড পরিবারেরই উত্তরসূরী, যাদের সর্বমোট সম্পত্তি আনুমানিক ৪০০ বিলিয়ন ডলার।

অশীতিপর অমর্ত্যবাবু সদ্য দ্য নিউ ইয়র্কারকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তার ভূমিকায় অবশ্য এসব আপনি পাবেন না। “ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে অমর্ত্য সেনের আশা-আশঙ্কা” শীর্ষক এই সাক্ষাৎকারে, কিংবা এই বিশিষ্ট “দার্শনিক”-এর হাতখোলা প্রশংসা করে লেখা অসংখ্য ছোটো বড়ো প্রবন্ধে – কোথাও উপরের কথাগুলো নেই। কেন নেই? কারণ আমাদের এই একদা সুদর্শন বাদামি সাহেব “মার্টি” (পশ্চিমে বন্ধুমহলে এই নামেই উনি পরিচিত), বাচাল বিশারদ আমাদের এই অমর্ত্যবাবু, ইউরোপ আমেরিকার বুদ্ধিজীবী সমাজে বেশ একটা কবজা বানিয়ে ফেলেছেন সুকৌশলে। আর সেই ঠাটের জোরেই ভারতেও তাঁর বেজায় রমরমা। ২০১৪ থেকে নিয়মিতই তিনি ভারতের বিজেপি সরকারের প্রতি তাঁর রাগ আর ঘেন্না উগরে দেন, আর তার জন্য ওৎ পেতেই থাকে পশ্চিমের তাবড় মিডিয়া।

ডঃ সেনের সাথে কখনো আমার দেখা হয় নি, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মার্থা নুসবামকে একটা সাক্ষাৎকার আমি দিয়েছিলাম। “মার্টি”-র দিন যাপনের দু-চার টুকরো খবর তাঁর কাছে পেয়েছিলাম। যাক গে, তা এই মার্থাদেবীর লেখা “অন্তরের সংঘাত: গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং ভারতের ভবিষ্যৎ” বইটাকে হাস্যকর ছাড়া কীই বা বলতে পারি? অমর্ত্যবাবু আর তাঁর এই একনিষ্ঠ ভক্ত একসাথে বহু গবেষণা করেছেন। আসলে কী জানেন? দারিদ্রের দগদগে রসালো ছবি পশ্চিমে খুব বিকোয়, আর পশ্চিমা প্রগতিশীলরা পুরনো উপনিবেশগুলোতে জন্মানো দারিদ্রের সওদাগরদের পুরস্কার দিয়ে আসলে অপরাধবোধ থেকেই মুক্তি পেতে চান।

দু দশকের চেনা আমার এক বন্ধু পরিকল্পনা পরিষদে ডঃ সেনের অধীনে ছিলেন, আর ষাট-সত্তরের দশকে ব্যক্তিগতভাবেও ওনাকে চিনতেন। আমার এই বন্ধু তাঁর তরুণী ভার্যাকে নিয়ে অমর্ত্যবাবু আর তাঁর কিছু সহকর্মীর মাঝে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিলেন বলে শুনেছি। বোধকরি সুপুরুষ অমর্ত্যবাবুর নীতি নৈতিকতা নিয়েই প্রশ্নের অবকাশ রেখে দেয় এই অস্বস্তি। এক রসিক বাঙালি লেখক বলছেন, নিজের আমলে অমর্ত্যবাবু হয়তো বা শশী থারুরকেও টেক্কা দিতেন “বিশেষ” কিছু ক্ষেত্রে।

বাদ দিন, অমর্ত্যবাবুর চরিত্রের দোষ নিয়ে লিখতে বসি নি। আমি আজ দেখাতে চাই কী ভাবে ডঃ সেন বিভিন্ন মিথ্যা আর অর্ধসত্যের প্রচার করে মোদী সরকারকে নিয়ে জনতাকে ডরাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি কতটা বাড়িতে বলতে বা নির্ভেজাল মিথ্যে বলতে ভালোবাসেন, তার কয়েকটা উদাহরণ দিই –

১। “বহু হিন্দু মোদী সরকারের বিরোধী। তাদের অনেককেই গুলি করা হয়েছে, অনেককে জেলেও ভরেছে সরকার।”

২। “গান্ধীকে মেরেছিল আরএসএসের এক সদস্য। এই হিন্দু ফ্যাসিবাদী আরএসএসই বিজেপির চালিকাশক্তি। আগে তো এরা ক্ষমতায় ছিল না, তাই আমরা ভয় পাই নি। ভাবি নি ওরা মূল ধারার শক্তি হয়ে উঠবে।”

৩। “শুধু দু তিন জন বড়ো ব্যবসাদারই নয়, বৃহত্তর ব্যবসায়ী শ্রেণি যেভাবে সমর্থন করেছে তাতে আমি বেশ অবাক।”

৪। “মানুষ আতঙ্কিত। ফোনে সরকারের সমালোচনা করতে ভয় পায়, কারণ তারা নিশ্চিত যে ওরা শুনছে।”

৫। “সরকার যে সব খবরের কাগজের বিরুদ্ধে তারা বিজ্ঞাপন পায় না; সরকারি তো নয়ই, বেসরকারিও নয়।”

৬। “[মোদীর] বড়ো একটা কৃতিত্ব হল – আদালতকে হাত করে উনি আর অমিত শাহ ২০০২ এর গুজরাত দাঙ্গার মামলাটা থেকে বেকসুর খালাস হয়ে গেছেন, তাই জনতা আর সেটা বিশ্বাস করতে চায় না।”

৭। “হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা আমি দেখেছি। মুসলিম এক দিনমজুরকে আমাদের হিন্দু এলাকায় স্থানীয় হিন্দু গুণ্ডারা ছুরি মেরেছিল। উনি রক্তাক্ত অবস্থায় জল চাইছিলেন। আমি বাবাকে বলে জল দিই। বাবা ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান।”

আসুন, একে একে দেখে নিই তাঁর প্রতিটা মন্তব্য কেন ফালতু, এবং কতটা ফালতু।

১। প্রথমেই অমর্ত্যবাবু বলছেন প্রচুর বিজেপি বিরোধী হিন্দুকে গুলি করেছে বা জেলে ভরেছে মোদী সরকার। নাম বা সংখ্যা কিছু দেন নি। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৩-১৭ – র মধ্যে ৭ জন হিন্দু সাংবাদিক বা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছেন। ৪ জন মোদী ক্ষমতায় আসার আগেই! ৩ জন মারা গেছেন মাওবাদী অথবা কোনো আঞ্চলিক দলের কর্মীদের হাতে। বিজেপির সরকার, নেতা-কর্মী কিংবা আদর্শ কী ভাবে দায়ী? পরিষ্কার নয়। মোদী আসার পর ২ জন – কালবুর্গি(২০১৫) আর গৌরী লঙ্কেশ(২০১৭) খুন হয়েছেন কর্ণাটকে। রাজ্য সরকারে কংগ্রেস-জেডিএস, তবু তদন্তে অগ্রগতি তেমন কিছুই হয় নি। এখানে বলে রাখি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি এরা গৌরী লঙ্কেশকে মাথায় তুলেছেন এখন, কিন্তু উগ্রপন্থীদের সাথে যোগসাজশ ছিল এনার। ওনার “খবরের কাগজ” টি ন্যক্কারজনক ভুয়ো প্রচারের জন্য কুখ্যাত, আর সেটার মালিকানা নিয়েও ভাইয়ের সাথে তাঁর ঝামেলা চলছিল।

২। ডঃ সেন বলছেন গান্ধীর খুনি নাথুরাম গডসে আরএসএস সদস্য ছিলেন, যারা কিনা আবার হিন্দু ফ্যাসিবাদী। ঠিকই, নাথুরাম আর তাঁর ভাইয়েরা আরএসএস সদস্যই ছিলেন। কিন্তু পরে তাঁরা হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন, আর রাজনীতির আঙিনা বেছে নেন, যেখান থেকে আরএসএস নিজেকে সচেতনভাবেই সরিয়ে রেখেছিল। হিন্দু রক্ষা দলের গুটিকয় সদস্য আরএসএস বা হিন্দু মহাসভার অন্য কাউকে কিছু না জানিয়েই গান্ধী হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেন। সে নিয়ে গডসের নানা যুক্তি তর্ক অন্য আলোচনার বিষয়, আর সে নিয়ে অমর্ত্যবাবু মাথা না ঘামালেও চলবে। যাকে তাকে “ফ্যাসিবাদী” বলতে বড্ড ভালোবাসে বাম-প্রগতিশীলরা। যদি আরএসএস তাই হবে, তাহলে তাদের দ্বারা “চালিত” বিজেপি কেন স্থানীয়, রাজ্য আর জাতীয় স্তরে নির্বাচন হতে দিচ্ছে, কেন তাতে অংশ নিচ্ছে, কেনই বা মাঝেমাঝেই হেরেও যাচ্ছে, কেন বিরোধীদের প্রচারে কোনো বাধাই দিচ্ছে না, কেন বজায় রেখেছে এখনো তারা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো? কেন অমর্ত্যবাবু? অবশ্য আপনি অগুপিছু না ভেবেই এইসব শব্দ দুমদাম প্রয়োগ করতেই পারেন, বাম-মুক্তমনা মিডিয়া আর বুদ্ধিজীবীরা আপনাকে একটাও প্রশ্ন করবে না।

৩। অমর্ত্যবাবু ভারতীয় বা হিন্দু ব্যবসায়ীদের দিকেও আঙুল তুলে দিতে পারেন এমনি এমনিই। তাঁরই ভাষায় “হিন্দু উগ্রবাদী” বিজেপিকে এক ধার থেকে সমস্ত হিন্দু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো সমর্থন করে, এমন গুরুতর অভিযোগ করতে ডঃ সেন দু বার ভাবেন না। বিবেকে তাঁর বাধে না, আর আইনও অসহায়। আসলে ভারতের রাজনীতিতে জাতিবাদ বিশাল এক অভিশাপ, আর বিজেপি সেই গণ্ডি টপকে হিন্দু তথা ভারতীয়দের এক হবার ডাক দেয়। বাবুর তা সহ্য হবে কেন?

৪। ডঃ সেন বলছেন ফোনে কথা বলতেও মানুষ ভয় পাচ্ছে কারণ “আধিপত্যবাদী হিন্দু রাষ্ট্র” আড়ি পাতছে। বিগত দশকগুলোতে নানা সরকার এই আড়ি পাতার কাজে হাত পাকিয়েছে, আর সেনবাবুর মাথায় যাদের হাত, সেই কংগ্রেস তো এ জন্য কুখ্যাত। বিভিন্ন রাজ্য সরকার নানা ছুতোনাতায় ফেলে দেওয়া, কিংবা ১৯৭৫-৭৭ – এর জরুরি অবস্থা, কংগ্রেসের হাতে প্রচুর দাগ। অথচ, কেমন দেখুন, ডঃ সেন ওদেরকেই সমর্থন করেন মন থেকে। যে কমিউনিস্টরা তাঁর রাজ্য পশ্চিমবঙ্গকে শাসন করেছে, তারাও রাজনৈতিক হিংসার জন্য বেশ পরিচিত। আর পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারও তার নাগরিকদের ওপর নানারকম জুলুমবাজিতে পটু। এই সবকটা সরকার নানা ভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার অন্যায় প্রয়োগ করে বিরোধীদের গলা টিপে ধরতে চেয়েছে। কর্ণাটকে তো গত তিন দশক ধরে আড়ি পাতাকে কেন্দ্র করে সরকার তোলাপড়া হচ্ছে। কিন্তু, কোনো প্রমাণ ছাড়াই মোদী সরকারের নামে যা নয় তাই বলে অমর্ত্যবাবু আসলে লোক খেপিয়ে রাজনৈতিক রুটি সেঁকে নিতে চাইছেন।

৫। বড়ো তিনটে ইংরেজি খবরের কাগজে মোদী সরকার সত্যিই কিছুদিন বিজ্ঞাপন দেয় নি। কিন্তু গত সাত দশকে নানা রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার এই কৌশল এত বেশি ব্যবহার করেছে যে এটাকে অস্বাভাবিক কিছুতেই বলা যায় না। সব জেনেও কেবল মোদী সরকারকেই কাঠগড়ায় তোলা কি সত্যের অপলাপ নয়, অমর্ত্যবাবু? ভুলে যাবেন না, গত পাঁচ বছরে সরকারের থেকে বিজ্ঞাপনী আয়ে তিনটে খবরের কাগজই কিন্তু ওপর দিকেই আছে, আর টাইমস অফ ইন্ডিয়া তো সবার ওপরে রয়েছে। ইন্দিরা গান্ধীর ২৭ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে করদাতাদের প্রচুর অর্থ অপচয় করে ভুরি ভুরি বিজ্ঞাপন দিয়ে কংগ্রেস সরকার যে মিডিয়াকে তুষ্ট করতেই চেয়েছিল, সেটা অস্বীকার করবেন নাকি? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রমানাথ গোয়েঙ্কা ইন্দিরার আমলে কী রকম চাপের মুখে পড়েছিলেন, জানা আছে তো? নাকি সব কিছু ভুলে বিজেপির পিছনে পড়লেন, যাতে আপনি যাদের অকুন্ঠ সমর্থন করেন, যাদের সাথে আপনার নিত্য ওঠাবসা, তাদের মারাত্মক অপরাধগুলো লুকিয়ে ফেলা যায়? ভাবলে অবাক লাগে ১৯৯৯ সালে বিজেপির সরকারই আপনাকে ভারত রত্ন দিয়েছিল!

ভারত রত্ন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন!!!

স্বভাবতই মোদী আর বিজেপি সরকারকে সেনবাবু ক্রমাগত অন্যায় আক্রমণ করতে থাকায় অনেকেই বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। আর তাই কেউ কেউ তাঁর ভারত রত্ন কেড়ে নেওয়ার দাবিও রেখেছেন। অধ্যাপক জগদীশ ভগবতী, যিনি অর্থনীতিতেই অনেক ভালো অর অনেক বেশি কাজ করে নোবেলের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন, ঠাট্টা করে বলেছেন যে অটল বিহারী বাজপেয়ী বললেই ভারত রত্ন ফিরিয়ে দেবেন ডঃ সেন।

৬। গুজরাত দাঙ্গার মামলা নিয়ে অমর্ত্যবাবু যে নির্জলা মিথ্যেখানা বলেছেন, তা কোনো নির্লজ্জই বলতে পারে। বুঝি না, দ্য নিউ ইয়র্কারের সাংবাদিক এগুলো চুপচাপ বসে শুনলেন কী ভাবে। গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও গৃহমন্ত্রী, যথাক্রমে মোদী ও শাহ, হাই কোর্ট আর সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটা আদেশ পালন করেছেন আর সমস্ত রকম তদন্তে সহযোগিতাও করেছেন। তাছাড়া তখন (২০০৪-১৪) কেন্দ্রেও ছিল কংগ্রেস সরকার। এত সবের পরেই বিশেষ তদন্তকারী দল মোদীকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে, এমনিই নয়।

৭। যদিও সেনবাবু এক মুসলিম দিনমজুরকে ঢাকা শহরে মরতে দেখেছেন বলে স্পষ্ট মনে করতে পারেন (সেটা কি ১৯৪৪ এ, নাকি’ ৪৬ এ?), ১৯৪৬ এর কলকাতা গণহত্যা তাঁর মনে পড়ে না, যেখানে মুসলিম নেতাদের প্ররোচনায় হাজার হাজার হিন্দুদের খুন করা হয়, হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করা হয়, হিন্দু সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়। মুসলিম লিগের সেই “প্রত্যক্ষ সংগ্রাম” তিনি ভুলেই গেছেন। আশ্চর্য নয়, কারণ তিনি এও ভুলে গেছেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনা আর রাজাকারদের হাতে নিহত ৩০ লক্ষাধিক মানুষের একটা বিরাট অংশই ছিল হিন্দু। ঢাকায় আমেরিকার দূত গ্যারি ব্যাসের “রক্ত চিঠি: নিক্সন, কিসিঞ্জার এবং বিস্মৃত এক গণহত্যা” বইটার কথাও তো দেখছি আপনি কোথাও বলেন নি, অমর্ত্যবাবু! কী ভাবে ১৯৪৭ এর পর পাকিস্তান আর বাংলাদেশের হিন্দু শতাংশ যথাক্রমে ১৫% ও ৩১% থেকে ১.৫% ও ৮% – এ নেমেছে, সেটাও চেপে গেলেন। গত পাঁচ বছরে একটাও বিজেপি শাসিত রাজ্যে একটাও দাঙ্গা হয় নি? কেন বলুন তো? অবশ্য বলবেন কী করে? আপনি তো একটা জাদু ঠুলি চোখে পরে আছেন, তাই এত কিছুর পরেও হিন্দুদের অত্যাচারী আর মুসলিমদের অত্যাচারিত ভেবে নিতে আপনার সমস্যা হয় না। আপনাদের মতো প্রগতিশীল, উদারমনাদের আকাশকুসুম কল্পনার কোনো লেখাজোখা নেই।

অনেকেই মনে করেন ডঃ সেন নোবেল পুরস্কারের যোগ্যই ছিলেন না। “নানা ব্যবহার্য সামগ্রীর ব্যবহারে প্রাপ্ত হয় বিশেষ একটি কার্যকারিতা, আর নানা কার্যকারিতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ব্যক্তির সামগ্রিক ক্ষমতা” – অমর্ত্যবাবুর এই তত্ত্বের বিরোধিতা করেছেন অনেকেই। কিন্তু খুব দক্ষভাবে পরিচালিত ওয়েবসাইটগুলোতে সেসব সমালোচনা সহজে চোখে পড়বে না। তাছাড়া, সবার জন্য শৌচাগার, রান্নার গ্যাস, ব্যাঙ্কিং সুবিধা – মোদী সরকারের এই সমস্ত দুর্দান্ত কল্যাণকর প্রকল্পগুলোকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ডঃ সেন পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি কতটা একপেশে সমালোচক আর কতটা নীতিহীন ভাবে তিনি মানুষকে বোকা বানাতে তৎপর।

ধিক্ আপনাকে, অমর্ত্য বাবু! ধিক্ ধিক্।

 

আমেরিকা প্রবাসী অধ্যাপক শ্রী রমেশ রাওয়ের লেখা মূল লেখাটি মীডিয়ামে প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলায় অনুবাদ করেছেন সূর্যদেব।