ভারত মহাসাগরে নৌশক্তিতে ‘এডভান্টেজ’ ভারতের, আধিপত্য মানতে বাধ্য চীন

0
623

বঙ্গদেশ দেস্ক – ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনার ক্ষোভ প্রকাশের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেল ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে। একটি আর্টিকেলের মাধ্যমে তারা স্বীকার করে নিয়েছে যে ভারত মহাসাগরীয় এলাকায়, ভারতের কিছু “অনন্য ভৌগলিক সুবিধা” (Unique Geographical Advantages) রয়েছে।

১৭ ই ডিসেম্বর ‘গ্লোবাল টাইমস’ এ প্রকাশিত “ভারতের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য বহুপক্ষীয় বিশ্বের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এই আলোচনা সকলের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। চীনের সমসাময়িক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের “ইনস্টিটিউট ফর দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজ” -এর পরিচালক জিন হু শিশেং উল্লেখ করেছিলেন, “ভারত মহাসাগরের ক্ষুদ্র কিন্তু বহুমাত্রিক, বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রক্রিয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে ভারত‌ও নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছে। ”। কিন্তু বারবার অভিযোগ ওঠে, ‘গ্লোবাল টাইমস’ একটি চীনা কমিউনিস্টদের মুখপত্র এবং এখানে ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরোধিতা করে ‘প্রোপাগান্ডা’ই লেখা হয়।

ক্রমবর্ধমানভাবে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্বন্ধ নির্মাণে আইওআরএ বা ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের গ্রুপিংয়ের অধীনে, নয়াদিল্লি, ভারতের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলিতে আরও বেশি সংখ্যক দেশের যোগদানের ফলে বেশ কিছু সুবিধা অর্জন করেছে। প্রকৃতপক্ষে এই ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকাগুলোতে সম্পর্ক বিস্তারের মাধ্যমে ভারত, আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে আমেরিকার পশ্চিম উপকূল অবধি ভারতীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরের শক্তিগুলিকে সংযুক্ত করছে। বিদেশমন্ত্রী হিসাবে ডঃ এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক সম্বন্ধ আগামীকালকের পূর্বাভাস নয় বরং গতকালের বাস্তবতা।”

বস্তুত বিগত কয়েক বছরে ভারত, ভারত মহাসাগরে নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে। যেমন, ৫ টি দেশে মহামারীর মধ্যেও খাদ্য ও চিকিৎসা সাহায্যের জন্য মানবিক সহায়তা দেখিয়েছে এবং দুর্যোগকালে ত্রাণ পাঠিয়েছে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে অবস্থিত মালদ্বীপ, মরিশাস, মাদাগাস্কার, কোমোরোস এবং সেশেলস একাধিক বার ভারতের প্রদেয় সাহায্যের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

২০১৯ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগর এলাকায় বিশেষ উদ্যোগের (আইপিওআই) প্রস্তাব করেছিলেন। এটির অধীনে অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং আসিয়ান ভুক্ত দেশগুলি পরিবহণ এবং সামুদ্রিক সুরক্ষার মতো ইস্যুতে ভারতের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারবে।

গুরুগ্রামে ভারতের তথ্য সংশ্লেষণ কেন্দ্র, যা ভারত মহাসাগর অঞ্চলে জাহাজের চলাচলের উপর নজর রাখে, তা এই অঞ্চলে রিয়েল-টাইম তথ্যের নোডাল কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স ইতিমধ্যেই তাদের লিয়াজঁ অফিসারকে এখানে প্রেরণ করেছে, অদূর ভবিষ্যতেই আরও বেশি দেশ এতে যোগদান করছে। প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় ভারত, ভিয়েতনাম থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত ১১ টি দেশকে, তার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারকে মোবাইল প্রশিক্ষণ দল পাঠিয়েছে।

ইতিমধ্যেই কোয়াড গ্রুপ গঠন এবং অস্ট্রেলিয়াকে মালাবার অনুশীলনে আমন্ত্রিত করায় বেইজিং চিন্তিত হয়ে পড়েছে। তার সাথে নিত্য নতুন অস্ত্রশস্ত্র কেনা ও টেকনোলজি তৈরির মাধ্যমে ভারত, চীনের দুশ্চিন্তা আরোই বাড়িয়েছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে ভারত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্র সমরের দখলও যে ভারতের হাতেই থাকবে, চীনের ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ থেকেও তা পরিস্কার।