দুমুখো চীন, আগামী সপ্তাহে অষ্টম দফার বৈঠকের আগে আত্মবিশ্বাসী ভারত

0
448

বঙ্গদেশ ডেস্ক – মে মাস থেকে সীমান্তে চলমান ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘর্ষ এখনও অমীমাংসিত, পরিস্থিতি কালবৈশাখী ঝড়ের আগের মতোই থমথমে। উভয় দেশ একে অপরের দিকে অগ্নিলেহনকারী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যার কারণে সীমান্তে অস্ত্র ও সেনা মোতায়েন উত্তরোত্তর বাড়ানো হচ্ছে দুতরফেই, পারদ চড়ছে উত্তেজনার। ভারত ও চীনের মধ্যে ইতিমধ্যে সাত দফা আলোচনা হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থাতেও ধৈর্য্যর পরীক্ষা দিয়ে চলেছে চাণ্যক্যের দেশ ভারত। তাই আবারও ভারত এবং চীন আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত বিরোধ অবসানের প্রয়াস করতে চলেছে শীঘ্রই।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, লাদাখে সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য ভারত ও চীনের মধ্যে অষ্টম দফার সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে। শীত এবং তুষারপাতের সম্ভাবনা মাথায় রেখেও দুই দেশের সেনাবাহিনীই ১,৫৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনা মোতায়েন করেছে।

এইবার ভারতের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি জি কে মেনন। মেনন সদ্য লেহ অঞ্চলে ১৪ কর্পসের দায়িত্ব পেয়েছেন। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বিদেশমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (পূর্ব এশিয়া) নবীন শ্রীবাস্তব।

চিনের তরফে সম্ভবত বৈঠকে থাকতে চলেছেন মেজর জেনারেল লিন লিউ ও বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র। প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত নিয়ে ঘোরতর জটিলতা রয়েছে। ভারতীয় সেনা কৌশলগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বলে চিন্তায় রয়েছে চীন। উল্লেখ্য, ভারতীয় সেনা স্পানগার থেকে রিচিন লা পর্যন্ত এলাকার দখল নিয়েছে অনেক আগেই।

ভারতের দাবি ফিঙ্গার ৮ পর্যন্ত বিস্তৃত ভারতীয় ভূখন্ড, সেখানে অনধিকার প্রবেশ ঘটিয়ে হানা দিয়েছে চিন। সেই হিসেবে ফিঙ্গার থ্রিতে যে ভারতীয় সেনাঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে, তা অনৈতিক নয়। দাবি,কেন সেই এলাকা ছাড়বে ভারত? মে মাসের আগে পর্যন্ত ফিঙ্গার ৮ অবধি টহলদারি চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। এখন সেই অবস্থানে জোরপূর্বক বদল ঘটানো হয়েছে।

ভারতের অভিযোগ, চীনা সেনাই আগে এগিয়ে এসেছে। তাই তারাই আগে পিছু হটবে। এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে। এছাড়াও প্যাংগং লেক এলাকায় ট্যাংকের সংখ্যা কমানোর বিষয়েও চাপ দিতে পারে ভারত।

চীনা সেনার কাছে এই মুহুর্তে ৩০০ থেকে ৪০০টি ট্যাংক মজুত রয়েছে। ডেপসাংয়ে মোতায়েন রয়েছে অত্যাধুনিক জেডটিজেড-৯৯ ভার্সন। এদিকে, রিচিং লা, রুদক, হটস্প্রিং এলাকাতেও কড়া নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে ভারত।

চিনের তরফে রয়েছে ভারি মর্টার, মাল্টি ব্যারেলড রকেট লঞ্চার, এয়ার ডিফেন্স অস্ত্র, অ্যান্টি ট্যাংক গান। সপ্তম রাউন্ড সামরিক বৈঠকের অচলাবস্থা দূর করার লক্ষ্যে আলোচনা করবে ভারত।

তবে চীনের দখলদারি মনোভাব নিয়ে আগেও বৈঠকে বসা হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। ভারতের সামনে সেনা অবস্থান বদলের নানা শর্ত রাখে দুমুখো চীন। জানানো হয় ভারতকে নিজের এলাকা ছেড়ে পিছনে সরে যেতে হবে। ফিঙ্গার ফোর থেকে সরে ফিঙ্গার ২য়ে চলে যেতে হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে।

সিনিয়র অফিসারদের মতে, এই মুহূর্তে তারা সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হলেও লালফৌজ সদিচ্ছা প্রকাশ করছে না। তবে ভারত দেশের স্বার্থে সামরিক কমান্ডার ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা জারি রাখবেন। একদিকে ডোভাল ও জয়শঙ্করের সাঁড়াশি কূটনীতি এবং মোদীর সশক্ত বিদেশনীতি অন্যদিকে কোভীড পরবর্তী চীনকে নিয়ে বিশ্বার ঋণাত্মক মানসিকতা, সব মিলিয়ে বৈঠকের আগেই ‘এডভান্টেজ ভারত’।