করোনা-চ্যালেঞ্জ, জন-স্বাস্থ্য ও জনতা-কারফিউ: ভারতের সামনে এক ‘সুযোগ’

0
359

করোনা, আরও স্পষ্ট করে, কোভিড- ১৯ ভাইরাস এখন বিশ্বের ত্রাস; চিনের উইয়ান প্রদেশ থেকে যা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের কোনায় কোনায়। আক্রান্তের সংখ্যা যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। করোনা এখন এপিডেমিক থেকে প্যানডেমিক- পৃথিবীব্যাপী মহামারীতে পরিণত হয়েছে। ভারতও এখন আক্রান্ত। ভারত সরকার ও সব রাজ্য সরকার এক সাথে এই করোনা-চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় নেমেছে।

ইতিমধ্যে জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র মোদী ভারতবাসীকে রবিবার ২২ মার্চ সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ‘জনতা-কারফিউ’ করার জন্য আবেদন করেছেন, যাতে আমরা সবাই স্ব-ইচ্ছায় ঘরে স্বেচ্ছা-বন্দী থেকে এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে পারি। এছাড়াও তিনি অন্যান্য পদক্ষেপের কথা বলেছেন। ঠিক এখানেই জন-স্বাস্থ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ভারতে সংবিধান অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা এবং হাসপাতাল ও ঔষধালয় ইত্যাদি রাজ্য-তালিকাভুক্ত। তাই এই করোনা-চ্যালেঞ্জকে ঠিক মতো মোকাবিলা করতে হলে কেন্দ্রীয় ভাবে ভারত সরকারকে সব রাজ্যকে সঙ্গে নিয়েই প্রযুক্তিগত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এগুতে হবে। এটা অস্বীকার করা যাবে না, জনস্বাস্থ্য-ব্যবস্থা ভারতে এখনো এতো উন্নত হয়ে ওঠেনি যে, করোনা ভাইরাস যদি মহামারীতে পরিণত হয়, তাহলে আমরা তাকে আজকের সীমিত স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা দিয়ে তার মোকাবিলা করতে পারব। তাই, প্রতিরোধই এখন একমাত্র রাস্তা। সেই প্রতিরোধে ‘কোঅপারেটিভ ফেডেরালিজমের’ পথেই কেন্দ্র-রাজ্য সমবায়িক স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে হবে।

একেবারে নিম্নতম স্তরের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপজেলা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, শেষে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষ রিসার্চ কেন্দ্রগুলিকে একসূত্রে গেঁথে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মতো জনবহুল দেশে জনস্বাস্থ্যকে বিচ্ছিন্ন ভাবে না দেখে সামগ্রিক স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে দেখতে হবে, যার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে খাদ্য-সুরক্ষা, অপুষ্টি-দূরীকরণ, পরিকাঠামো তৈরী করা, স্বাস্থ্য-কর্মী নিয়োগ ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, সর্বোপরি স্বাস্থ্য-বিধি প্রচার।

ভারত সরকার জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, ২০১৭ তৈরি করেছে। আজকের করোনা-চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে সেই নীতির আরও পরিমার্জনা ও সংযোজনা দরকার। ভারত সরকারের ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’, ‘আয়ুস্মান ভারত প্রকল্প’, ‘প্রধানমন্ত্রী জন ঔষধি প্রকল্প’ ইত্যাদি পদক্ষেপের পুরোপুরি সাফল্য তখনই আসবে যখন কেন্দ্র-রাজ্য মিলিত স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এই ‘ইউনিফায়েড হেল্থ সিস্টেম’ গড়ে তুলতে হলে সংবিধান সংশোধন করে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা এবং হাসপাতাল ও ঔষধালয় ব্যবস্থাকে সংবিধানের সপ্তম তফসিলের যৌথ-তালিকাভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথভাবে সরকারি ব্যয় ভারতের সামগ্রিক জিডিপির অন্তত ৩ শতাংশ করা দরকার, যাতে জনস্বাস্থ্যজনিত নীতিগুলিকে আরো কার্যকরী ভাবে রূপায়ণ করা যায়।

সামগ্রিক ভাবে যদি আমরা দেখি, ভারতে নাগরিকত্ব যেহেতু একক, তাই প্রতিটি নাগরিকের অধিকার আছে, কেন্দ্র-রাজ্য নির্বিশেষে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি যে কোনো মৌলিক অধিকারগত সেবা ও পরিষেবা দাবী করা ও পাওয়া। কেন্দ্র-রাজ্য অধিকার-জনিত বিবাদে কোনো ভারতীয় নাগরিক এইসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে না।

শেষে, সামাজিক জন-সচেতনতা। কোনো ব্যবস্থাই কার্যকরী ও সফল হবে না, যদি না নাগরিকরা সচেতন ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সেই পদক্ষেপের সঙ্গে জড়িত হয় ও অংশগ্রহণ করে। ‘জনতা কারফিউ’ আমাদের সামনে যেন এক ‘অ্যাসিড টেস্ট’! করোনা-চ্যালেঞ্জকে আমাদেরকেই মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরই হাতে!