পশ্চিমবঙ্গ রত্নভাণ্ডার

ভেজাল কিনা কেউ জানেন না ৷ তবে চটকদার বেশ ৷ একজন “শিক্ষারত্ন” পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র খুলে ছবি তুলে সমাধান সহ পাঠিয়েছিলেন ইস্কুলের ‘ফার্স্ট বয়’-কে ! এনিয়ে যিনি প্রতিবাদ করেন সেই ইস্কুল সমূহের নজরদার ভদ্রলোক পড়েছেন ফাঁপরে  ! তাঁর চলভাষটি সরকারি গুপ্তচররা তদন্তের স্বার্থে বাজেয়াপ্ত করেছেন ৷ সুতরাং প্রত্যক্ষ প্রমাণ কিছু নেই আর ! শুধু কি তাই, ক্রমান্বয়ে হুমকি আসছে ! প্রাণনাশ হবে তাঁর ৷ পরশুদিন গুলি চলেছে ! ভদ্রলোকের পৈতৃক-প্রাণ আপাতত সুরক্ষিত , কারণ গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট ৷

আরেকজন শিক্ষক — তিনি নাকি সংবাদ মাধ্যমকে ডেকে এনেছিলেন, তাঁকেও কড়কে দিয়েছে গভর্ণিং বডি ৷ শিক্ষা-ব্যবস্থার গঙ্গাযাত্রা আর খুব দেরি আছে কি ?

শিক্ষারত্ম মহাত্মা প্রধানশিক্ষক বহালতবিয়ত আছেন ৷ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তা, যিনি ছিলেন বাম আমলে শিক্ষক আন্দোলনের আগুনখোর নেতা — এখন আরামকেদারায় পা দুলিয়ে বলছেন : ‘সব ঝুট হ্যায় ৷’ এমন কত বিচিত্র কাণ্ডই আমরা দেখছি ! একদা কানোরিয়া চটকল শ্রমিকদের আন্দোলন চালানো অন্য ঘরানার বিপ্লবী এখন সদম্ভে গদিয়ান হয়ে অঞ্চল শাসন আর রাজনৈতিক ত্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন ! তাঁর সংগ্রামী সহচর এখন ছবি ঝুলিয়ে রত্নভাণ্ডার আর চকচকে ডাণ্ডার সত্যিকারের মালকিন হয়েছেন ৷ কদিন আগে এক কর্মবীরের ছবি ছড়িয়ে পড়ল ৷ এক ফুল বিক্রি করা বয়স্কা মালিনীর কথা শুনলাম ৷ লোকনাথ মন্দিরের সামনে বসতেন ৷ কয়েকদিন ছিলেন না ৷ ‘কোথায় ছিলে মাসী ?’ পরিচিত এক সাহিত্যিক উত্তর পেলেন : ‘ওই দিকে এক জনপ্রিয় নেতার বাড়ীর সামনে গিয়েছিলাম বাবা !’ ওখানে ফুল- মালার চাহিদা খুব কদিন বেশি ছিল ! পশ্চিমবঙ্গ রত্নভাণ্ডার এইভাবে ফুলে ফেঁপে উঠছে ৷

মাননীয় মন্ত্রী মশাই হুঙ্কার দিয়েছেন, ক্যাম্পাস ইনটারভিউ না হলে, ছাত্র ছাত্রীদের চাকরির ব্যবস্থা না হলে কলেজ বন্ধ করে দিন ! এই ফরমান অনেকটা যেন হীরকরাজার কণ্ঠ-নিসৃত মনে হচ্ছে ! ঠিক কথা, রাজ্যের দিকে দিকে লক্ষ-কোটি চাকরি হচ্ছে আর কলেজগুলি শিক্ষিত বেকার তৈরি করবে কেন ? এতে যুবসমাজের আশা বাড়ছে, বাড়ছে আশাভঙ্গের ক্ষোভ ৷ এতে ডক্টরেট ডিলিট-রত্নদের অসুবিধা হতে পারে ? কে জানে ?

হিসাব চাইতে গেলে মহাবিদ্যারত্ন-রা তোমার কাপড় খুলে নিয়ে ছড়িয়ে দেবে ছবি ! মনঃপুত না হলে গবেষণার তত্ত্বাবধায়ককে চড়িয়ে লাল করবে মহারত্ন ছাত্রনেতা ! নামকা ওয়াস্তে কিছু হবে ?  কে জানে ! টুকলি করবার দাবিতে দু’শ বছরের মহাবিদ্যালয়ের রত্নাবলিরা বিপক্ষের প্রতিবাদী শিক্ষকদের কাঁদিয়ে ছাড়বে ! দিকে দিকে এইরকমভাবে শিক্ষা শ্রীমন্ডিত হচ্ছে ! অভাবিতপূর্ব ব্যাপার বটে ৷ আমরা এইসব রত্নখচিত মহান রাজ্যের বাসিন্দা ৷ নিজেদেরই ডিগ্রী কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া তার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না ! ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রী দেওয়া শিক্ষায়তনের ঠিকানা কি ডিগ্রী দেবার ক্ষমতা আছে কি নেই ! তাতে কি ! রত্নরাজির প্রাসাদে ঝলমল করবে ঝাড়বাতির ঠিকরে পড়া অপার্থিব আলো ৷

নির্বিকল্প সমাধি হয়েছে বিবেকের ৷ প্রতিকারহীন পরাভব আজ সেখানে ৷ বেছে বেছে প্রতিক্রিয়া আর মোমবাতি মিছিল বা পথযাত্রার নাটক হচ্ছে ৷ অক্সিজেনের অভাবে নাভিশ্বাস উঠছে বাংলার ৷ এঁরাও রত্ন ! ফল পশ্চিমবঙ্গে তরুণসমাজ উদ্বন্ধনে তনুত্যাগ করছে নাকি তাদের মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ? কেউ জানে না ৷ প্রতিবাদী শিক্ষক পাঁচ টুকরো হয়ে পড়ে থাকছেন ৷ আর তার প্রতিবাদ করে কারাবাস করছেন আত্মসমর্পণ না করা কিছু শিক্ষক ৷ শিক্ষাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ! পিছনে পিস্তল হাতে আততায়ী ৷ যথারীতি রাজ্যের  রত্নভাণ্ডার জমজমাট ৷৷