হঠাৎ জঙ্গল মহলে বাড়ছে মাওবাদী সক্রিয়তা! মাটি খুঁড়ে উদ্ধার ৩০ টি বন্দুক

0
549

বঙ্গদেশ ডেস্ক: গোয়ালতোড়ের জঙ্গলে তল্লাশি। মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। উদ্ধার সন্দেহজনক কৌটো ও ইলেকট্রিকের তার।

শুক্রবার সকালে ওই এলাকায় তল্লাশিতে যায় গোয়ালতোড় থানার পুলিশ। উখলা গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয় প্রায় ৩০ টি বন্দুক, টিফিন কৌটো ও ইলেকট্রিকের তার। বন্দুকগুলি কম্বলে মুড়ে পলিথিনের বস্তায় মাটির নিচে চাপা ছিল।

গভীর জঙ্গলে এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কারা মজুত করে রেখেছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। একসঙ্গে এত বন্দুক উদ্ধার হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়। তবে এই আগ্নেয়াস্ত্রগুলি বহুদিন আগে মাটির নীচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অনুমান। পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি গোয়ালতোড় থেকে গ্রেফতার করা হয় অতীতের একজন মাওবাদী নেতাকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই বিপুল অস্ত্রভাণ্ডারের হদিশ মেলে।

সম্প্রতি জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের আনাগোনা বাড়ছে বলে খবর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার। তারই প্রেক্ষিতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে ঝাড়গ্রাম-পশ্চিম মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে। অগস্ট মাসে দাবি মতো টাকা না দেওয়ায় বেলপাহাড়ির এক বাসিন্দাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে।

জানা গিয়েছে, রাতের অন্ধকারে বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পচাপানি গ্রামে গ্যাস এজেন্সির মালিক বিদ্যুত দাসকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। প্রাণে বাঁচতে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন তিনি। এতে পা ভাঙে ওই ব্যবসায়ীর। বান্দোয়ান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে।

স্বাধীনতা দিবসের সকালে বেলপাহাড়ি ব্লকের ভুলাভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভুলাভেদা থেকে বাঁশপাহাড়ি যাওয়া পথে ঝাড়গ্রাম পুরুলিয়া পাঁচ নম্বর রাজ্য সড়কের উপর বাঁকশোল, শালতল নামে দু’টি গ্রামে কালা দিবস পালনের আর্জি জানিয়ে মাওবাদীদের নাম নামাঙ্কিত পোস্টার পড়ে। ঘুম ভাঙতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার মানুষ। খবর পেয়ে পোস্টারগুলি নিয়ে যায় বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ।

সেপ্টেম্বর মাসে বেলপাহাড়ি থেকে বাঁশপাহাড়ি যাওয়ার পথে হরদা গ্রামের মোড়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে লাল কালিতে লেখা মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার দেখতে পান স্থানীয় মানুষ। রাস্তার সাইনবোর্ড এবং রাস্তার কাজে ব্যবহার হওয়া গাড়িগুলির উপর এই পোস্টারগুলি সাঁটানো ছিল।

একসময় মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে সংগঠনের ভিত নড়ে যায় ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে। গত কয়েক বছরে মাওবাদী কার্যকলাপ আস্তে আস্তে স্মৃতি হয়ে গেছিল জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে। কিষানজীর মৃত্যুর পর প্রথম সারিতে থাকা মাওবাদী নেতৃত্বের অনেকেই ধরা পড়ে যান। বাকিরাও সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে ন’মাসে-ছ’মাসে হঠাৎ করে কোথাও দুয়েকবার পোস্টার উদ্ধার হলেও, মাওবাদী কার্যকলাপের তেমন কোনও ঘটনা আর সামনে আসেনি।

কিন্তু এত বছর পরে আবার সিঁদূরে মেঘ। গোয়েন্দাসূত্রে খবর মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পুলিশের কাছে যাঁদের সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য ছিল না, তাঁরাই এখন নতুন করে সংগঠনের ভিত শক্ত করার চেষ্টা শুরু করেছেন। যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন গ্রামের মানুষের সঙ্গে। সংগঠনের সক্রিয় মেম্বাররা দু-একজন করে গ্রামে আসছেন। মাওবাদীদের নিয়ে নরম মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে তৈরি হচ্ছে আন্দোলনের রূপরেখা। আর এতেই তৎপরতা বেড়েছে পুলিশের। শুক্রবার ভোরে গোয়ালতোড়ের জঙ্গল থেকে অস্ত্র উদ্ধার সেই তৎপরতারই নজির।