“বিশ্বের যা কিছু মহান/সৃষ্টি চির কল্যাণকর / অর্ধেক তার করিয়াছে নারী/ অর্ধেক তার নর।”
“শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী –/ পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি/ আপন অন্তর হতে।”
“অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।”
“কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও। তারি রথ নিত্যই উধাও…./দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে/ তোমা হতে বহুদূরে/ মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে পার হয়ে আসিলাম…/ফিরিবার পথ নাহি/ দূর হতে যদি দেখ চাহি/ পারিবে না চিনিতে আমায়।/ হে বন্ধু বিদায়।…”
“নরসমাজে নারীশক্তিকে বলা যেতে পারে আদ্যাশক্তি। এই সেই শক্তি যা জীবলোকে প্রাণকে বহন করে। প্রাণকে পোষণ করে।”
“ভারতের নারীসমাজের জন্য, পুরুষের চেয়ে নারীর — একজন প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন। ভারতবর্ষ এখন মহীয়সী মহিলার জন্মদান করতে পারছে না, তাই অন্য জাতি থেকে তাকে ধার করতে হবে।”
তাতে সাড়া দিয়ে আটাশ বছরের পূর্ণ যুবতী তেত্রিশের এক তরুণ সন্ন্যাসীর কাছে নিজেকে নিবেদন করলেন; বলা ভাল, ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। বঙ্গদেশে নারী জাগরণ ও নবজাগরণে মহতী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন।
প্রতি বছর ৮ই মার্চ পালিত হয় বিশ্ব নারী দিবস। ১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিল সুতো কারখানার নারী শ্রমিকেরা, তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। এই নিউইয়র্ক-ই ১৯০৯ সালে অনুষ্ঠিত হতে দেখেছে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৯৭৫ সাল থেকে নারীবাদীদের প্রচেষ্টায় ৮ই মার্চ দিনটিকে রাষ্ট্রসংঘ বিশ্ব নারী দিবস হিসাবে পালন করে চলেছে। ২০১৮ সালে নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল
‘Time is now — Rural and Urban activists transforming women’s lives’।
“it is proposed that we should get ready to give appropriate honour to mother power. From family to workplace and in society where we move, our vision towards women should be completely positive, honour-worthy and benchmark for others. This should be reflected in our day to day behaviour towards women. May the upliftment of women-power result into upliftment of society. The objective of this proposal is to make Bharat Vishvaguru through mother power upliftment.” (Abstracted)
মৈত্রেয়ী জিজ্ঞাসা করছেন, নাথ! আপনি কেন যাচ্ছেন?
ঋষি: অমৃতের সন্ধানে।
মৈত্রেয়ী: এ সব সম্পদ দিয়ে কি লাভ করা যাবে সেই পরম শ্রেয়কে?
ঋষি: সম্ভব নয়।
মৈত্রেয়ী: যেনাহং নামৃতা স্যাং কিমহং তেন কুর্য্যাম্? (যা আমায় অমৃতত্বে সহায়তা করবেই না, তা আমার কী প্রয়োজন?) প্রাচীন ভারতীয় নারী জানতেন জীবনের পরম লক্ষ্য কী!
মুসলমানি অন্ধকার যুগেও যখন সুযোগ ঘটেছে কোথাও কোথাও ঐশী সাধিকার আবির্ভাব সম্ভব হয়েছে ‘ভক্তি-আন্দোলন’-কে কেন্দ্র করে। মীরাবাঈ, অহল্যাবাঈ, মুক্তাবাঈ, আক্কা মহাদেবী, রানি ভবানীর মত বিদূষী নারীরা জন্মেছেন ভারতবর্ষে।
এলেন শ্রীরামকৃষ্ণ; স্বামীজি বলছেন, “He was the saviour of women.” তিনি নারীদের পরিত্রাতা; মাতৃভাবের পূজারী তিনি, মা ভবতারিণী তাঁর আরাধ্যা আর নারীরা সেই জগজ্জননীর প্রতিভূ। রানী রাসমণির প্রতিষ্ঠিত দেবালয়কে তিনি সাধনভূমি বানালেন; তন্ত্র সাধিকা ভৈরবী ব্রাহ্মণী হলেন তাঁর গুরু। সাগ্রহে সারদাদেবীকে গ্রহণ করে সাধনার জপমালা অর্পণ করলেন তাঁকে; কৃপা করলেন নটি বিনোদিনী, গৌরী মা, গোপাল মা-কে।
আমাদের সমাজে যেটা দরকার মেয়ে মানুষ থেকে মানুষ হওয়া, দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক নয়, সামনের সারিতে উঠে আসা। মনে করানোর এই সংকল্প; নারীকে খাঁচা বন্দী করে রাখার বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব। পরিবারে নারীর উন্নতি না হলে পরিবারের উন্নতি হবে না; পরিবারের উন্নতি ব্যতিরেকে সমাজের উন্নতি কিছুতেই সম্ভব নয়; সমাজের উন্নতি বিনা জাতির উন্নতি অসম্ভব। যারা ভূমির চাইতে নারীর হাট বেশি বিস্তৃত করতে চান, তারা সাবধান! লাভ-জেহাদীদের ছোবল থেকে ভারতীয় নারীকে বাঁচতে সহায়তা করুন; তাদের শারীরিক প্রশিক্ষণ দিতে বাবা-মা সহায়তা করুন; সর্বত্র ভারতীয় কন্যার মানসিক শক্তি বাড়াতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-অধ্যাপকেরা এগিয়ে আসুন।