গাড়িতে ‘ব্রাহ্মণ’, ‘রাজপুত’,‘যাদব’ স্টিকার থাকলেই বাজেয়াপ্ত গাড়ি, উত্তরপ্রদেশে জারি নয়া নির্দেশিকা

0
2110

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- বাইক বা গাড়িতে সচরাচর চিকিৎসক, আর্মি, উকিল লেখা স্টিকার চোখে পড়ে। এক্ষেত্রে অবশ্যই পেশাগত বাধ্যবাধকতার চেয়ে ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস প্রদর্শনই প্রধান উদ্দেশ্য বলে কটাক্ষ করেন অনেকে। কিন্তু নিজের গাড়িতে জাত লেখা স্টিকার বসিয়ে বংশমর্যাদা প্রদর্শন করা হয় শুনলে অনেকেই ভ্রু কুঁচকে তাকাবেন। কিন্তু এমন ঘটনা উত্তরপ্রদেশে জলভাত। তাই এই রকম বিদ্বেষপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক প্রথায় ইতি টানতে চাইছে উত্তর প্রদেশ সরকার। সরকার ঘোষণা করে দিয়েছেন, গাড়ি বা মোটরসাইকেলে জাত লেখা স্টিকার সাঁটিয়ে রাস্তায় বেরোলেই বাজেয়াপ্ত হবে বাহন।

অভিযোগ, সমাজবাদী পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন মুলায়ম সিং যাদবের আমলে ২০০৩-০৭ সালে গাড়িতে জাতপাতের উল্লেখ করা স্টিকার তুমুল জনপ্রিয় হয়। গাড়ি আর বাইকে যাদব লেখা স্টিকার ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে ওঠে। এছাড়া, উত্তরপ্রদেশে যাদব, জাঠ, গুর্জর, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়- এমনই জাত উল্লেখ করে প্রচারমূলক স্টিকার লাগানো থাকে গাড়িতে। এতে সামাজিক প্রতিপত্তি যেমন বোঝানো যায়, তেমনই বুঝিয়ে দেওয়া হয় রাজনৈতিক দিক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কতটা মর্যাদা। কিন্তু যোগী সরকার এবার জানিয়ে দিয়েছে, জাতপাত নিয়ে আত্মগরিমা ছড়ানোর এই পন্থা রাজ্যজুড়ে আর মেনে নেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য পরিবহণ দপ্তর জাতপাতের স্টিকার লাগানো গাড়ির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। এই মর্মে সমস্ত রিজিয়নাল ট্রান্সপোর্ট অফিসগুলির উদ্দেশে গত ২৪ ডিসেম্বর একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে অ্যাডিশনাল ট্রান্সপোর্ট কমিশনার মুকেশ চন্দ্রের পক্ষ থেকে।

কিন্তু এতদিন পর এই সিদ্ধান্ত কেন? গাড়িতে জাতপাত উল্লেখিত স্টিকার বন্ধের আর্জি জানিয়ে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি লেখেন মহারাষ্ট্রের কল্যাণের বাসিন্দা হর্ষল প্রভু। পেশায় শিক্ষক প্রভু চিঠিতে লেখেন, “এহেন বৈষম্যমূলক স্টিকার সমাজের গঠনতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলার পরিপন্থী। আমি অতি সত্বর এই ধরনের স্টিকার বন্ধের আর্জি জানাচ্ছি।”

এই চিঠি হাতে পেতেই প্রধানমন্ত্রীর অফিস সেই চিঠির কপি উত্তর প্রদেশ সরকারকে পাঠিয়ে দেয়। পরিবহণ দপ্তরের ডেপুটি কমিশনার ডিকে ত্রিপাঠী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এ ধরনের স্টিকার আর গাড়িতে লাগানো চলবে না। তারপরেও যারা এই কাজ করবেন তাদের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে। রাজ্য এনফোর্সমেন্ট টিম তদন্ত সাপেক্ষে জানিয়েছেন, প্রতি ২০টি গাড়ি পিছু একটি গাড়িতে এ ধরনের স্টিকারের দেখা মিলেছে। সদর দপ্তর নির্দেশ দিয়েছে, এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এক্ষেত্রে যানবাহনে কোনও বর্ণের সূচক থাকলে চালান বা গাড়িটি ১৭৭ ধারা অনুযায়ী বাজেয়াপ্ত করা হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনৌতে দুই চাকা এবং চার চাকার মোট ২৫ লক্ষ যানবাহন রয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছে, যার গাড়িতে জাত উল্লেখ করে শব্দ লেখা থাকবে সে যদি সরিয়ে না নেয়, তাহলে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
https://twitter.com/TOILucknow/sta/1343133106828546048?s=19