দুর্ঘটনার প্রস্তুতি 

শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

অযোধ্যা পাহাড়ে আগুন লেগেছে যেটা আমি শুকনো মরশুমে প্রাকৃতিক দাবানল ভেবেছিলাম। উড়িষ্যাতেও হচ্ছে। আমাদের পশ্চিম বর্ধমানে ডিশেরগড়ে বাড়ির ছাদ থেকে পাঞ্চেত পাহাড়েও এরকম অকাল দীপাবলির দৃশ্য দেখেছি যেটাকে দাবানল বলেই জেনে এসেছি।  আরেকটা কারণ হতে পারে, শুকনো পাতা অনেক সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয় বনভূমির মাটি সহজে পরিষ্কার করতে। পাতা পোড়া আবার সার হয়ে যায়। সেটা করতে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যদি না যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। 

কিন্তু অনেকের সন্দেহ কাঠ চোরাচালান চক্র এর সঙ্গে যুক্ত। হতেও পারে। তবে কাঠ যারা চালান করবে তারা গাছ কাটতে চাইবে, গাছ পোড়া ছাইভস্ম কোন কাজের? আবার অ্যামাজ়ন বনে মনে করা হয়, আগুন লাগানো হয়েছিল স্থানীয় বনবাসীদের উৎখাত করে সরকার জমি দখল করবে বলে। কিন্তু অযোধ্যা পাহাড়ের মতো রুক্ষ বন্ধুর জনবিরল জায়গায় কৃষিকাজ, আবাসন, শপিং মল — কোনটা সম্ভব যে আগুন লাগিয়ে জমি দখল করতে হবে? দাবানল না হলে অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা — এ ছাড়া মোটিভ খুঁজে পাচ্ছি না। কিংবা নিছক দেশ ও রাজ্যের ক্ষতি চায় এমন শক্তির পাগলাটে নাশকতা। জানি না, আমার যুক্তি ও চিন্তাভাবনার মধ্যে ভুল থাকতেই পারে। তবে আগুনটা প্রকৃতি লাগাক বা মানুষ, নেভানো যে দরকার অতি সত্বর, তাতে সন্দেহ নেই। এতদিনে নিভেও গেছে সরকারী গাফিলতি ও স্থানীয় মানুষের তৎপরতায়। বনভূমি ছারখার হয়ে গেলে একদিনেই যে প্রকৃতি দূষণ হয়, তা ছ মাস কারখানা চলার সমতুল্য হতে পারে। 

কিন্তু কয়লাঘাটায় রেল অফিসে যে আগুনটা লাগল তা যদি ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগ নাও হয়ে থাকে, তাহলেও অবহেলা ও অব্যবস্থার কারণে তো বটেই। আগুন নেভানোর চেষ্টায় এখনও পর্যন্ত ন জন আরপিএফ নিরাপত্তা রক্ষী ও দমকল কর্মীরা নেহাত বেঘোরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন। লিফট ব্যবহার না করার প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণ তো তাদের থাকার কথা। তবু কী করে ভুল হল? কিন্তু পরের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে সেই ভুলের মাসুল কিছু অসম সাহসী মানুষ নিজেরাই দিলেন। এখানে অসাবধানতা ছাড়াও কিন্তু ইচ্ছাকৃত নাশকতার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বোমা বিস্ফোরণকে সরাসরি সন্ত্রাস বলে সনাক্ত করা যায়। কিন্তু এই ধরণের দুর্ঘটনাতে সব সময় অব্যবস্থাই কাঠগড়ায় ওঠে। 

যাই হোক ধরে নিচ্ছি দুর্ঘটনা। তা আপতকালে কী ব্যবস্থা থাকা দরকার? সঙ্গের ছবিটা দেখুন। সোদপুর জীবনকৃষ্ণ চ্যাটার্জী রোডের ছবি। গভীর নলকূপের বিকল্প হিসেবে গঙ্গার জল পরিশ্রুত করে সরবারহের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগ সন্দেহ নেই। তার জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলেছে এখানে বেশ অনেকটা অঞ্চল জুড়ে। তার ওপর পাঁচ বছর ধরে সোদপুর স্টেশন রোড থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত রাস্তা মেরামতির যে মহান ব্রত নেওয়া হয়েছে, তাতে রাস্তাকে পথিপার্বস্থ দোকানগুলো থেকে কমপক্ষে এক থেকে দু মিটার উচ্চ মঞ্চের মতো বানানো হচ্ছে। বিটি রোডের মুখ থেকে ফ্লাই ওভার পর্যন্ত মাচা নির্মাণ শেষ যা আবার নষ্ট হওয়ার মুখে। কিন্তু ফ্লাইওভার থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত মঞ্চায়নের কাজ এমন বিপজ্জনক পর্যায়ে রাস্তার অর্ধেকের বেশি আটকে বছরের পর বছর ধরে চলেছে, যে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী না হলে তা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। 

বড় রাস্তার যেখানে মেয়াদী নির্মাণ পর্ব শেষই হতে চায় না, সেখানে সামনে নির্বাচন বলেই কিনা জানি না, উন্নয়নের প্রবল জোয়ারে ভেতরকার মেজো রাস্তাও পুরো খুঁড়ে পাথর স্তূপীকৃত করে নিখুঁত ডামাডোল করে রাখা আছে। এই অবস্থায় কারো জীবন মরণ সমস্যা হলে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে না। আর দমকল — প্রশ্নই নেই। ভাগ্যের করুণা ছাড়া আপাতত আর কিছু সহায় নেই এলাকাবাসীর।