বঙ্গদেশ ডেস্ক: দিল্লী নিবাসী এক ভারতীয় নাগরিককে তলব করায় সুপ্রিম কোর্টের কড়া তিরস্কারের মুখে পড়লো মমতা সরকার। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৯ বছর বয়সী দিল্লি নিবাসী রোশনি বিশ্বাসকে পশ্চিমবঙ্গের তদন্তকারী অফিসারের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোডের সেকশন ৪১এ এর আন্ডারে একটি নোটিশ ইস্যু করা হয়।
রোশনী বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে, পশ্চিমবঙ্গে করোনা ভাইরাস লকডাউনের নিয়মনীতি প্রয়োগের দায়িত্বে অবহেলা নিয়ে সমালোচনামূলক একটি পোস্ট দেয়। এই পোস্টের সূত্রেই, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ রোশনি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি সমন জারি করে। এর পরপরই রোশনি বিশ্বাস কলকাতা হাইকোর্টে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও হাইকোর্টের জারি করা সমনটিকে চ্যালেঞ্জ করে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট এই সমনের ওপর স্টে অর্ডার জারি করে এবং একজন ভারতীয় নাগরিককে সরকারের সমালোচনামূলক ফেসবুক পোস্টের জন্য তলব করায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়। একই সাথে কলকাতা হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্টে অর্ডার জারি করে।
জাস্টিস ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ আরও বলে দেন যে যদি এভাবে পুলিশ সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে তবে সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত বাকস্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের আর্টিকেল ১৯(১)(এ) অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট বারবার মধ্যস্থতা করবে।
সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করে বলেন, “এটা এমন হয়ে গেছে যে কেউ যদি সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলে তাহলে আমরা তাকে সমন জারির মাধ্যমে যে কোন স্থান থেকে তুলে আনবো। ওনাকে দিল্লি থেকে কলকাতায় তলব করাটা সরাসরি হয়রানি। কাল তো তাহলে কলকাতা, মুম্বাই, মণিপুর বা চেন্নাই পুলিশও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নাগরিকদেরকে তলব করে বার্তা দেবে যে তোমরা ফ্রিডম অফ স্পীচ চাও তো আমরা তোমায় শিক্ষা দেবো।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকা আর বানসাল বলেন যে বিশ্বাস বাবুকে গ্রেফতার করা হবে না, শুধুমাত্র কিছু প্রশ্ন করা হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় জাস্টিস ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা চর্চার প্রতি এটি পরিষ্কার চোখ রাঙানো। প্যান্ডেমিক সিচুয়েশন যথেষ্ট দায়িত্বশীলভাবে সামলানো হয়নি, এই সমালোচনার জন্যে কাউকে বিচারের সম্মুখীন করা যায় না। ”
সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেন, ” সীমা অতিক্রম করবেন না। ভারতকে স্বাধীন রাষ্ট্র থাকতে দিন। সুপ্রিম কোর্ট হিসেবে বাকস্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট এই জন্যেই তৈরি করা হয়েছিল যাতে রাষ্ট্র কর্তৃক সাধারণ নাগরিকরা হয়রানির সম্মুখীন না হয়। ”
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ রোশনি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ান পেনাল কোড এর ধারা ১৫৩এ সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো, ধারা ২৯৫এ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধারা ৫০০ মানহানি, ধারা ৫০৪ শান্তিভঙ্গ, ধারা ৫০৫ পাবলিক মিসচিফ এবং আইটি অ্যাক্ট ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট এর অন্যান্য ধারায় মামলা করেছে। একইরকম মামলায় গত বছরের মে মাসে বিজেপি যুব মোর্চার এক কার্যকর্তা প্রিয়াঙ্কা শর্মাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি মিম পোস্ট করায় গ্রেফতার করা হয়।
তার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আইটি অ্যাক্টের সেকশন ৫০০ মানহানী ধারায় মামলা করে এবং জামিন অযোগ্য ধারায় তাকে ১৪ দিনের হাজতবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট পরবর্তীতে তাকে জামিন প্রদান করে। যদিও বিচারকগণ তাকে প্রাথমিক বলেছে যে যদি তিনি জামিন চান তবে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রিয়াঙ্কা শর্মার উকিল এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং পরবর্তীতে বিচারকগণ তা ক্ল্যারিফাই করে দেন যে প্রিয়াঙ্কা শর্মার ক্ষমা প্রার্থনা তার জামিনের জন্য কোন শর্ত রূপে ছিল না।