নমি আপনারে শ্রীশচন্দ্র

যে জাতি যত পতনোন্মুখ হয়, তার ইতিহাস চেতনা তত দুর্বল হয়। এক কথায়, বাস্তবতার ক্রুর নিষ্পেষণে সে বিস্মৃত হয় তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের যার দ্বারা বলীয়ান হয়ে একদা তার পূর্বপুরুষেরা বিজয়ী হয়েছিল। এ কথা সর্বজনবিদিত। নতুন কিছু নয়। আবার এটাও সত্য, সেই একই জাতির অভ্যন্তরে যদি উত্তরণের স্পৃহা জেগে ওঠে তখন সেই একই ইতিহাস তার সর্বশ্রেষ্ঠ শস্ত্রে রূপান্তরিত হয়। তার মধ্য দিয়েই সে বুঝতে চায় তার গৌরবময় অতীত যা তার আগামীর সংগ্রামের প্রেরণার উৎসস্থলে পরিণত হবে। ঊনিশ শতকের বঙ্গের নবজাগরণে এই বিশেষ ধারার প্রচলন হয়েছিল তৎকালীন বিদ্যাচর্চা র মহারথীদের কল্যাণে ও সেই ভাবেই আমরা ঋদ্ধ হয়েছিলাম, অনুভব করতে শিখেছিলাম দনুজমর্দন গণেশ, রাজা প্রতাপাদিত্য, রাণী ভবশঙ্করী ও অন্যান্য বিশিষ্ট যোদ্ধাদের, যাঁদের অসি বারংবার ঝলসে উঠেছিল যবনের বিরুদ্ধে মাতৃভূমির সম্মান রক্ষার্থে। অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর, আত্মোন্নতি সমিতি, শ্রীসঙ্ঘ ইত্যাদি সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠনের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রাম সেই একই ধারার পদানুসরণ করে। কিন্তু বর্তমান বাঙালী এসব বিস্মৃত হয়েছে। তমসাচ্ছন্ন বর্তমান থেকে ভবিষ্যৎহীন এক শূন্যের দিকে তার যাত্রা চলেছে।

কেন তার এই দুর্দশা, কিভাবে তা সংগঠিত হয়েছে – এরও এক ধারবাহিক ইতিহাস রয়েছে যা বহু শক্তির সমাহারে সযত্নে গঠিত হয়েছে। যদি কেউ সংক্ষিপ্ত উত্তরের অভিলাষী হয় তো সেই অনুসন্ধিৎসু পাঠকের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলার – ৭০০ বছরের ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত হিন্দু সমাজ পরবর্তীকালে আবদ্ধ হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা ও এসবের মিলিত শক্তি তীক্ষ্ণ আঘাতে বিদ্ধ করেছিল উল্কার গতিতে আবির্ভূত হওয়া ঊনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গের নবজাগরণের মেধা চর্চা কে যা মনন, তিতিক্ষা, শ্রম ও অনন্য জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছিল এক অবিভাজ্য ভারতচিন্তাকে। কিন্তু এটিও অমোঘ সত্য যে এই অপশক্তির ধ্বংসাবলীকে রোধ করার উপযুক্ত ধর্মের সামর্থ্য সম্পন্ন ব্যাক্তির আবির্ভাব হয়েছে যুগে যুগে। যা নির্মাণ করেছে উপলব্ধি ও সংগ্রামের নব পথ অনাগত প্রজন্মের উন্নতির জন্য। কিন্তু এই সকল মহারথীদের আমরা বিস্মৃত হয়েছি। যাঁরা নিজের পাঁজরে হোমানল জ্বেলে আত্মোৎসর্গ করলেন দেশমাতৃকার উদ্দেশ্যে, মানুষের মুক্তির হেতু তাঁরা আজ লুপ্ত। তাঁদের স্মৃতি ধরে রাখার, কার্যপদ্ধতি থেকে প্রেরণা লাভ করার ন্যূন্যতম প্রচেষ্টাও আমাদের মধ্যে নেই। যদি থাকতো, শ্রী শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের কাছে বিস্মৃত হতেন না।

প্রশ্ন উঠবে কে ইনি? কে এই শ্রী শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়? অতি সংক্ষেপে বললে, তিনি অনুশীলন সমিতির এক প্রখ্যাত বিপ্লবী ছিলেন, পরবর্তী জীবনে কংগ্রেসের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন কিন্তু মহাত্মা গান্ধী কর্তৃক অনুসৃত অহিংসা তত্ত্বের মার্গের অনুসারী ছিলেন না। ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা, বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলা ও গৌহাটির গুলিচালনা সংক্রান্ত মোকদ্দমায় বন্দিদের পক্ষে লড়ে তিনি প্রভূত খ্যাতি লাভ করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে আপ্রাণ সাহায্য করেন স্বরাজ্য দলের প্রতিষ্ঠায়। ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নেন, ‘৪৭ সালে দেশভাগের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে থেকে যান। ১৯৪৮ সালে তিনি, সক্রিয় কংগ্রেস নেতার ভূমিকায়, পূর্ববঙ্গের আইনসভায় প্রবেশ করেন, হিন্দু স্বার্থের পক্ষে তিনি জোরালো ভূমিকা রাখেন। পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। অবশেষে, তিনি ১৯৬২ সালে ভারতে চিরতরে চলে আসেন ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন।

এতক্ষণ পর্যন্ত যা বলা হল সেটি শ্রীশবাবুর ব্যাক্তিত্বময় জীবনের একটি prelude মাত্র। ওঁর আগ্নেয় চরিত্রের কিয়দংশ পাওয়া যায় শ্রী প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী দ্বারা লিখিত “পাক-ভারতের রূপরেখা” নামক গ্রন্থে। ১৯৫০ র পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রযন্ত্রের সক্রিয় সমর্থনে যখন ভয়ঙ্করতম হিন্দু গণহত্যা সমগ্র পৃথিবীকে স্তম্ভিত করে তখন তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি রুখে দাঁড়ান। প্রভাসবাবু লিখছেন,

“পূর্বেই বলেছি, ঢাকার হিন্দু মুসলমানগণ বরাবর সবগুলো সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘর্ষের মধ্য দিয়েই আত্মরক্ষার কৌশল বেশ ভালোভাবেই আয়ত্তকরে নিজেদের রক্ষাই শুধু করেন নি, প্রতিপক্ষকে চরম আঘাতও হেনেছেন। হিন্দুরাও যে সেদিক দিয়ে মুসলমানের পেছনে ছিলেন, তা’ মোটেই না। তার প্রমাণ আমরা দেখেছি ঢাকার নবাবপুরে রাস্তার পাশে একেবারে জেলা-কোর্টের গায়ে লাগা একটা মসজিদের ভাঙা স্তুপ থেকে। ঢাকার হিন্দুরাও ছিলেন বেপরোয়া, অকুতোভয়। দেশ বিভাগ, তথা পাকিস্তান সৃষ্টির এই আড়াই বছরেরও কিছু কম সময়ের মধ্যেই হিন্দুর সেই সাহস – সেই মনোবল একদম ভেঙে গিয়েছে। আমরা ঢাকায় থেকে ১৯৫০ সালের দাঙ্গায় যা দেখেছি, তাকে ‘দাঙ্গা’ বলা ঠিক নয়। সেটি হয়েছিল একতরফা হিন্দু-গৃহ-লুন্ঠন ও হিন্দুর হত্যা। ……গেন্ডারিয়া অঞ্চলেই তখন ঢাকার প্রখ্যাত নেতা শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয় ছিলেন। তাঁর বাড়িও আক্রান্ত হয়েছিল। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, অন্তত ঐ অঞ্চলে যিনি আক্রমণকারীদের সামনে সিংহ-গর্জনে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বলে শুনেছি। তাঁর প্রতিরোধশক্তি দেখে আক্রমণকারীরা পিছিয়ে যায়। এই শ্রীশবাবুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় পূর্ববঙ্গে “অনুশীলন সমিতি” র স্রষ্টা পুলিনবিহারী দাশ মহাশয়ের সহকর্মী হিসাবে। তিনিঢাকার উকিল ছিলেন এবং বিপ্লবী কর্মীদের বহু মামলায় তিনি আসামীপক্ষের সমর্থনে বরাবর এগিয়ে গিয়েছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আসামের গৌহাটি শহরে ফেরারি বিপ্লবীদের সাথে পুলিশের যে খণ্ডযুদ্ধ হয় এবং যার ফলে আমরা ৫ (পাঁচ) জন ধৃত হই – আমিপুলিশের গুলিতে আহত হয়ে পরে কামাখ্যা পাহাড়ের উপরে ধরা পড়ি, এবং সেই ঘটনাকে অবলম্বন করে যখন আমাদের তৎকালীন ভারতরক্ষা আইনে “স্পেশাল ট্রিবিউনালে” বিচার হয়, তখন সেই মামলায় কলকাতা থেকে ব্যারিস্টার শ্রী এস এন হালদার ও ঢাকাথেকে শ্রীশবাবু আমাদের পক্ষ সমর্থন করতে বাংলাদেশ থেকে যান। শ্রীশবাবু বরাবরই ছিলেন অত্যন্ত নির্ভীক। ১৯২১ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মহাশয়ই তাঁকে গান্ধীজি পরিচালিত কংগ্রেসের নেতৃত্বে নিয়ে আসেন। তিনি গান্ধীজি পরিচালিত কংগ্রেসে আসেন বটেএবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত (তিনি কিছুকাল আগে পশ্চিমবাংলায় এসে ৯১ বছর বয়সে পরলোকগমন করেছেন) যদিও কংগ্রেসসেবীই ছিলেন, তবু তিনি কোনও দিনই গান্ধীজীকে ‘মহাত্মা’ বলতেন না। আমার রচিত – “India Partitioned and Minorities in Pakistan” ইংরেজি বইখানির ভূমিকা তিনিই লিখেছিলেন। তাতেই, গান্ধীজীর নামের আগে তিনি ‘মহাত্মা’ কথাটি লেখেন নি -আমি বলা সত্বেও তিনি লিখতে রাজী হন নি। এরকমই একরোখা তিনি বরাবরই ছিলেন।  এইটেই ছিল তাঁর চরিত্রের ও স্বভাবের বৈশিষ্ট্য।এই বৈশিষ্ট্য ছিল বলেই তিনি লিখতে রাজী হন নি। এই বৈশিষ্ট্য ছিল বলেই তিনি সেদিন তাঁর বাড়িতে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পেরেছিলেন।”

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত  উত্থাপন করেন প্রস্তাব – বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। এই প্রস্তাবের গুটিকয়েক সমর্থকের অন্যতম ছিলেন শ্রীশবাবু। পাকিস্তানের আইনসভায় হিন্দু তথা অমুসলিম সংখ্যালঘুর জীবন ও স্বার্থরক্ষায় তিনি ছিলেন সদা তৎপর। এক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অথবা সরকারের কোন প্রকারের আপত্তি, জীবননাশের হুমকি তাঁকে টলাতে পারেনি কখনোই। কিন্তু বাঙালী বিস্মৃত হয়েছে তাঁর দ্বারা প্রদত্ত  বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক বক্তব্য পাকিস্তানের Constituent Assembly র প্রথম অধিবেশনে (মার্চ ১২, ১৯৪৯)। এই বক্তব্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দু জনগণের সুরক্ষার জন্য – যা পাকিস্তান পার্লামেন্ট তাদের মহাফেজখানায় রেখেছে আজও।

পাকিস্তানকে এক ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও সেই চিন্তাধারার ওপর সাংবিধানিক সিলমোহর দেওয়ার ক্ষণে করাচিতে অবস্থিত গণপরিষদে দৃপ্ত কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন,

“আমরা হিন্দুরা পূর্ববঙ্গে বাস করি এবং সমগ্র পাকিস্তানের এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যা হল অমুসলিম। সেক্ষেত্রে, এই দেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের পরম কর্তব্য দেশের সংবিধানের রচনাকালে তার প্রতি প্রখর দৃষ্টি রাখা। কোন অবস্থাতেই আমরা আমাদের মাতৃভূমি পূর্ববঙ্গ ত্যাগ করতে প্রস্তুত নই। এই জমিটি আমরা অন্য কারো থেকে গ্রহণ করিনি।আমরা এই ভূমি থেকেই জন্মগ্রহন করেছি আর এখানেই আমরা মিশে যাবো। আমার পূর্বপুরুষ, আমার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা, সহস্র বৎসর পূর্বে বঙ্গের তৎকালীন নৃপতি র আমন্ত্রণে এই ভূমিতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আরম্ভ করেছিলেন। আমি তাঁর ২৭ তমপ্রজন্ম। যেহেতু পূর্ববঙ্গ আমার ভূমি। পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘোষণা করি পূর্ববঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তান আমার জন্মভূমি যেমন তা একজন মুসলিম ব্যক্তির। এবং সেইজন্যে এ আমার পরম কর্তব্য পাকিস্তানকে এক মহান, সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী দেশ গড়ে তোলার জন্য- আমি নিজেও একজন পাকিস্তানী। এই দেশকে সর্বাঙ্গসুন্দর গড়ে তুলতে হবে যাতে বিশ্বের মাঝখানে সে নিজের বলিষ্ঠ, উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বজায় রাখে। তাই হবে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের, কি মুসলিম কি অমুসলিম, একমাত্র আকাঙ্খা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গোলযোগহেতু কিছু ব্যক্তি পূর্ববঙ্গ ত্যাগ করেছেন – সম্ভবত পূর্বতন জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ, যদিও আমার ব্যক্তিগত ধারণা তাও নয়। অবশ্য, অন্যান্য সূত্র মতে তা ১০ লক্ষের কাছাকাছি। পূর্ববঙ্গে আমরা বসবাস করছি আমাদের মুসলমান প্রতিবেশীদের সাথে গত শত শত বছরের পরম্পরা অনুযায়ী। এই ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখতে পাকিস্তানের এমন একটি সংবিধান প্রয়োজন যাতে সেটি মুসলিম ও অমুসলিম – দুই সম্প্রদায়ের জনসাধারণের উপযোগী হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, এই সংবিধানের রচনা অন্য বার্তা দিচ্ছে। আমি Resolution টি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে অধ্যয়ন করেছি, জনাব লিয়াকত আলী খান র বক্তব্যও শুনেছি এবং সর্বশেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি এই Resolution ত্রুটিপূর্ণ।  কোনোমতেই আমি এটিকে সমর্থন করতে প্রস্তুত নই এবং আমি আমার পার্টিকে এটি সমর্থন না করার পরামর্শই দেব।”

শ্রীশবাবু আরও বলেন,

“এই গৃহীত সিদ্ধান্ত টি প্রতিক্রিয়ার বাণী বহন করছে। এবং এই চিন্তা শুধু আইনসভার অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা। এই প্রতিক্রিয়া র বাসনা সমগ্র পাকিস্তানকে গ্রাস করবে।  বর্তমানে, আমি নিদ্রাহীন রাত্রিবাস করছি এই চিন্তায় যে আমি কিভাবে আমার স্বধর্মালম্বীদের, যাঁদের আমি এতকাল পরামর্শ দিয়েছি জন্মভূমি ত্যাগ না করার, কি বলবো? …শুধু এটিই বলার এই ইসলামিক রাষ্ট্রের resolution/সংকল্প তাঁদের এক অবদমিত, চিরকালের নিকৃষ্ট অবস্থানে নিক্ষেপ করল। প্রত্যেক ধরণের শুভচিন্তা, সম্মানীয় জীবনের প্রত্যেক আকাঙ্খার সম্মুখে আজ এক শক্তিশালী দুয়ার এসে উপস্থিত হল। এরপরে আমি তাঁদের কোন ভাষায় সান্ত্বনা দিতে পারি? আপনাদের সাথে দুঃখপ্রকাশ, যুক্তির সংগ্রাম করা অনাবশ্যক। নম্রতা অথবা যুক্তির প্রত্যাশা করা আপনাদের কাছে অরণ্যে রোদন করা সম।”

গত ৭০ বছরে পার্শ্ববর্তী পাকিস্তান ও বাংলাদশে হিন্দু ও অন্যান্য অমুসলিম জাতির ভাগ্য বিপর্যয়, বর্তমান অবস্থান শ্রী শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যের অভ্রান্ততা প্রকাশ করে। এরকম তেজস্বী, কর্তব্যপরায়ণ, আমরণ সংগ্রামী ব্যক্তি প্রত্যেক যুগেই, প্রত্যেক জাতির কাছেই এক শ্রেষ্ঠ সম্পদ। কিন্তু বাঙালী হিন্দু র সর্বনাশের এই ক্রান্তিকালে  তিনি আমাদের কাছে একপ্রকার বিস্মৃত। প্রণাম করি তাঁকে, জাতি তাঁকে অনুভব করে উদ্বুদ্ধ হোক, শত শ্রীশচন্দ্র জন্ম নিক পুনরায়।