ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক লাভের রূপকথা

0
2516

আজ প্রাতঃস্মরণীয় শ্র্রীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্য়াসাগরের জন্মদিনে বঙ্গদেশ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ শুরু করছে সংক্রান্ত সানুর বই The English Medium Myth – Dismantling Barriers to Indias Growth. এই বইটিতে শ্রীসানু দেখিয়েছেন মাতৃভাষায় শিক্ষাদান কেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং ইংরাজী মাধ্যমে শিক্ষাদান সমৃদ্ধির পরিপন্থী। শ্রীসানু একজন প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষাবিদ, লেখক এবং উদ্যোগপতি। অনুবাদ করেছেন দেবদীপ চট্টোপাধ্যায়। 

ইংরাজী মাধ্যমের রূপকথা

– সংক্রান্ত সানু

ভারতের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্ৰগতির পিছনে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার অবদান রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। এই অধ্যায়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও শিক্ষার মাধ্যমের প্রাথমিক পর্যালোচনা করে উপরোক্ত ধারণাটি যাচাই করার চেষ্টা করা হবে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি শিক্ষা ও কথোপকথনে ব্যবহার এবং ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষালাভএই দুটিকে এখানে পৃথক বলে গণ্য করা হবে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে যে, ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার ও অর্থনৈতিক অগ্ৰগতির মধ্যে কল্পিত সম্পর্কটি বেশ সন্দেহজনক এবং এই নিয়ে গভীরতর পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।

ভারতে ভাষানীতি নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক মূলত দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে হয়ে থাকেসাধারণ জাতীয় বা সংযোগকারী ভাষা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে ব্যবহার্য ভাষানীতি। সাধারণ জাতীয় ভাষা সংক্রান্ত বিতর্কে মূলত দুটি পক্ষএকপক্ষ হিন্দি এবং অপরপক্ষ ইংরেজির সমর্থক। হিন্দির সমর্থকরা সাধারণত সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদভিত্তিক বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন, অপরদিকে ইংরেজিপক্ষ বাস্তববাদী, তাঁরা ইংরেজির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও বিশ্বস্তরে এর অপরিহার্যতা দর্শিয়ে থাকেন।

শিক্ষায় ইংরেজি ব্যবহারের দুটি আঙ্গিক নিয়ে তেমন গভীরভাবে কোনো চিন্তাভাবনা এযাবৎ হয় নি। ভারতের জাতিভেদ প্রথা নিয়ে পাহাড়প্রমাণ গবেষণার সম্ভার আপনি পেয়ে যাবেন; কিন্তু ইংরেজি ভাষাকেন্দ্রিক যে শ্রেণিভেদ প্রথা ভারতের নগরজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেই নিয়ে খুব একটা গবেষণা করার প্রয়োজন কেউ বোধ করেন নি। ভারতের ইংরেজিকেন্দ্রিক শ্রেণিব্যবস্থা, অর্থাৎ ইংরেজি জ্ঞান ও বলার কায়দার ভিত্তিতে সামাজিক স্তরবিন্যাস এবং আনুষঙ্গিক সামাজিক ভেদাভেদ ও বৈষম্য নিয়ে সমাজবৈজ্ঞানিক চর্চার অভাব সত্যিই অবাক করে।

দ্বিতীয়ত, আর্থিক উন্নতির সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার একটি সংযোগ কল্পনা করা হলেও, বাস্তবে এই কার্যকারণ সম্পর্ক বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার বিশেষ কোনো চেষ্টাই এতদিন হয় নি। যেমন ধরুন, ভারতে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার জিডিপি বৃদ্ধির পক্ষে‌‌ অনুকূল নাকি প্রতিকূল? বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ হয় নি।‌ সাক্ষরতার হার এবং প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক প্রসারের সঙ্গে আর্থিক উন্নতির সম্পর্ক নিয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে, কিন্তু অর্থনীতির বিভিন্ন মাপকাঠির সম্পর্ক নিয়ে ভালো কাজের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

এই অধ্যায়ে ভারতে ইংরেজি শিক্ষার এই দুটি আঙ্গিক নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করা হয়েছে, আশা করা যায় এথেকেই আমরা পেয়ে যাবো গভীরতর অনুসন্ধানের রসদ।

 

.১ ভাষার অর্থনীতি

ইংরেজিকে সরকারি ভাষা করলে অর্থনৈতিক অগ্ৰগতি ত্বরান্বিত হয় নাকি মন্দীভূত? ভাষা কীভাবে প্রভাবিত করে, তা জানতে বিভিন্ন দেশের জিডিপি ও সরকারি ভাষার তুলনা করা হবে। ফলাফল আপনাদের অবাক করবেই, কোনো সন্দেহ নেই।

জনপ্রতি জিডিপির দিক দিয়ে বিশ্বের প্রথম ও শেষ ২০ টা করে আমরা নেবো এবং এরসাথে সরকারি ভাষার সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করবো। কোনো দেশের জনসংখ্যা খুব কম হলে হয়তো ফলাফলের ক্ষেত্রে তার তেমন গুরুত্ব থাকবে না, তাই ৫০ লক্ষের চেয়ে কম জনসংখ্যার দেশগুলিকে বাদ দেওয়া হবে। এরপর দেশগুলিকে জনপ্রতি জিডিপির ক্রমে সাজিয়ে নেবো।

..১ ধনীতম বিশ

ক্রম দেশ জনপ্রতি জিডিপি ($) সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা সরকারি ভাষা
সুইজারল্যান্ড ৭৯,৮৮৮ জার্মান/ফ্রেঞ্চ/ইতালীয় জার্মান/ফ্রেঞ্চ/ইতালীয়
নরওয়ে ৭০,৮৬৮ নরওয়েজীয় নরওয়েজীয়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫৭,৬৩৮ ইংরেজি ইংরেজি
ডেনমার্ক ৫৩,৫৭৯ দিনেমার দিনেমার
সিঙ্গাপুর ৫২,৯৬২ মালয়/ইংরেজি/চীনা মান্দারিন মালয়/ইংরেজি/চীনা মান্দারিন
সুইডেন ৫১,৮৪৫ সুইডিশ সুইডিশ
অস্ট্রেলিয়া ৪৯,৭৫৫ ইংরেজি ইংরেজি
নেদারল্যান্ডস ৪৫,৬৩৮ ডাচ ডাচ
অস্ট্রিয়া ৪৪,৭৫৮ জার্মান জার্মান
১০ ফিনল্যান্ড ৪৩,৪৩৩ ফিনিশ ফিনিশ
১১ কানাডা ৪২,৩৪৯ ইংরেজি/ফরাসি ইংরেজি/ফরাসি
১২ জার্মানি ৪২,১৬১ জার্মান জার্মান
১৩ বেলজিয়াম ৪১,২৭১ ডাচ/ফরাসি ডাচ/ফরাসি
১৪ ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য ৪০,৪১২ ইংরেজি ইংরেজি
১৫ জাপান ৩৮,৯৭২ জাপানি জাপানি
১৬ সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ৩৭,৬২২ আরবি আরবি
১৭ ইজরায়েল ৩৭,১৮১ হিব্রু হিব্রু
১৮ ফ্রান্স ৩৬,৮৫৭ ফরাসি ফরাসি
১৯ ইতালি ৩০,৬৬৯ ইতালীয় ইতালীয়
২০ দক্ষিণ কোরিয়া ২৭,৫৩৯ কোরীয় কোরীয়

তালিকা ১: জনপ্রতি জিডিপিতে প্রথম ২০টি দেশ

২০১৬ র তথ্য, ৫০ লক্ষের বেশি জনসংখ্যা, সূত্র: বিশ্বব্যাঙ্ক, সিসাইএ ফ্যাক্টবুক প্রভৃতি

প্রতিটি দেশের সবচেয়ে বড়ো জনগোষ্ঠীগুলি যে যে ভাষায় কথা বলে, সেগুলোকেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বলে ধরা হয়েছে। এই তালিকায় বেশিরভাগ ভাষাই ইউরোপীয়, তবে বৈচিত্র্য রয়েছে ভালোই। বড়ো কথা হলো, এদের মধ্যে একটিতেও সরকারি ভাষা তথা সর্বস্তরের শিক্ষার প্রধান মাধ্যম সর্বাধিক প্রচলিত ভাষার চেয়ে পৃথক নয়। সুইজারল্যান্ড সহ যেসব দেশে ভাষা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রচলিত, সেখানে প্রত্যেক ক্যান্টনের সর্বোচ্চ প্রচলিত ভাষাই ওই ক্যান্টনের প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম এবং কোনো ঔপনিবেশিক ভাষাকেন্দ্রিক শ্রেণিবিভেদ হতে না দিয়ে একাধিক ভাষাকে সরকারি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি দেশে সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাতেই সর্বোচ্চস্তর অব্দি শিক্ষালাভ করা যায়। সুতরাং ইংরেজি নয় এমন একাধিক স্থানীয় ভাষায় উচ্চশিক্ষা স্বচ্ছন্দেই চলছে এবং দেখা যাচ্ছে জনপ্রতি জিডিপি অনুযায়ী প্রথম ২০ টি দেশের মধ্যে মাত্র ৪টি (নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুরকে ধরলে ৫টি) তে ইংরেজি ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। কেবল ইউরোপীয় ভাষাই তালিকায় রয়েছে, তা কিন্তু নয়। জাপান ও কোরিয়া তাদের স্বজাতীয় ভাষাকে বিজ্ঞানসহ সমস্তরকম শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেই অর্থনীতিতে এত উন্নতি করেছে, ইংরেজি বা অন্য কোনো বিজাতীয় ভাষা ব্যবহার করতে হয় নি। সুইজারল্যান্ড ছাড়া ইজরায়েলেও একাধিক ভাষা প্রচলিত। কিন্তু একটি বিজাতীয় ভাষাকে কেন্দ্র করে সামাজিক স্তরীভবনের শিকার তারা হয় নি। ভারতে এরকমই এক বিজাতীয় ভাষার ব্যবহার একটি ক্ষুদ্র শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। ইজরায়েলের উদাহরণটি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে, পরবর্তীকালে এই নিয়ে বিশদে আলোচনা করা হবে।

 

... দরিদ্রতম বিশ

এবার চলুন দেখে নিই বিশ্বের দরিদ্রতম ২০ টি দেশের তালিকাটি।

ক্রম দেশ জনপ্রতি জিডিপি ($) সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা সরকারি ভাষা
বুরুন্ডি

২৮৬

কিরুন্ডি/সোয়াহিলি ফরাসি/কিরুন্ডি
মালাউই

৩০০

চিচেওয়া ইংরেজি/চিচেওয়া
নাইজার

৩৬৪

হাউসা/জের্মা ফরাসি
মোজাম্বিক

৩৮২

এমাঘুয়া/ক্সিচাঙ্গানা পর্তুগিজ
মাদাগাস্কার

৪০২

মালাগাসি ফরাসি/মালাগাসি
সোমালিয়া

৪৩৪

সোমালি আরবি/সোমালি
কঙ্গো গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র

৪৪৯

লিঙ্গালা/কিঙ্গোয়ানা ফরাসি
সিয়েরা লিওন

৫০৫

মেন্ডে/টেমনে/ক্রিয়ো ইংরেজি
আফগানিস্তান

৫৬২

পুশতু/দারি পুশতু/দারি
১০ টোগো

৫৭৮

ইওয়ে/মিনা/কাবিয়ে/দাগোম্ব ফরাসি
১১ উগান্ডা ৫৮০ গান্ডা/লুগান্ডা ইংরেজি
১২ বুরকিনা ফাসো ৬২৭ সুদানি ভাষাসমূহ ফরাসি
১৩ গিনি ৬৬২ ফুলা/মালিঙ্কে/সুসু ফরাসি
১৪ চাড ৬৬৪ সারা এবং অন্যান্য ভাষা ফরাসি/আরবি
১৫ রোয়ান্ডা ৭০৩ কিনিয়ারোয়ান্ডা ইংরেজি/ফরাসি/

কিনিয়ারোয়ান্ডা

১৬ ইথিওপিয়া ৭০৭ আমহারি/ওরোমিফা/

সোমালি

ইংরেজি/আমহারি
১৭ নেপাল ৭২৯ নেপালি নেপালি/ইংরেজি
১৮ হাইতি ৭৪০ হাইতীয় ক্রেওল/ফরাসি হাইতীয় ক্রেওল/ফরাসি
১৯ মালি ৭৮০ বাম্বারা ফরাসি
২০ বেনিন ৭৮৯ ফোন/ইয়োরুবা/ফরাসি ফরাসি

তালিকা ২: জনপ্রতি জিডিপিতে শেষ ২০টি দেশ

২০১৬ র তথ্য, ৫০ লক্ষের বেশি জনসংখ্যা, সূত্র: বিশ্বব্যাঙ্ক, সিসাইএ ফ্যাক্টবুক প্রভৃতি

আগের তালিকার মতোই এই তালিকাতেও বেশকিছু ইউরোপীয় ভাষা দেখতে পাচ্ছি। পার্থক্যটা কিন্তু স্পষ্ট। দরিদ্রতম দেশগুলির মধ্যে অর্ধেক এমন রয়েছে, যেখানে জনসাধারণের ব্যবহারের ভাষাটি আদৌ সরকারি নয়। কিছুক্ষেত্রে অবশ্য সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা সরকারি মর্যাদা পেয়েছে, যেমন মালাউই দেশের চিচেওয়া ভাষা। কিন্তু এখানেও সরকারি কাজকর্ম ও উচ্চশিক্ষা মূলত ঔপনিবেশিক ভাষাতেই চলে। উদাহরণস্বরূপ মালাউইয়ের চারটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অগ্ৰগণ্য মালাউই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ধরুন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের যোগ্যতা বিচার করা হয়, এটাই আমরা জানি, এখন, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখতে পাবেন, প্রবেশিকা পরীক্ষার অঙ্গরূপে এরা সর্বাগ্ৰে যাচাই করে “ভাষাগত দক্ষতা”, আরও স্পষ্ট করে বললে “ইংরেজি ভাষায় প্রার্থীদের দক্ষতা পরিমাপ করে”।

অর্থাৎ মালাউই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য সবার আগে ইংরেজি জানতে হবে, জনসাধারণের নিত্যব্যবহারের ভাষা তথা দেশের অপর সরকারি ভাষা চিচেওয়াতে ব্যুৎপত্তি যথেষ্ট নয়। মালাউই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কোথাও আপনি চিচেওয়ার উল্লেখ পাবেন না।

উল্টোদিকে, ইজরায়েল তথা বিশ্বের অন্যতম অগ্ৰগণ্য প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয় টেকনিয়নের ওয়েবসাইটে পরিস্কার লেখা রয়েছে:

দেশের জনসাধারণ মূলত হিব্রু ভাষা ব্যবহার করেন এবং টেকনিয়নেও এটাই শিক্ষাদানের মাধ্যম। পঠনপাঠন শুরুর আগে বিদেশ থেকে শীত বা বসন্ত ষাণ্মাসিকে আগত পড়ুয়াদের টেকনিয়নের পাঁচ সপ্তাহব্যাপী সংক্ষিপ্ত হিব্রুপাঠ সম্পূর্ণ করতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।“ টেকনিয়নের মতো একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান এভাবেই হিব্রু মাধ্যমে শিক্ষার উপর যথোচিৎ জোর দিয়েছে। জনপ্রতি জিডিপির দিক দিয়ে ইজরায়েল প্রথম বিশ্বের মধ্যেই রয়েছে, অভাবনীয় উন্নতি করেছে প্রযুক্তিবিদ্যাতেও। অথচ, দরিদ্রতম দেশগুলি আজও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে এক ও একমাত্র ইংরেজিই হতে পারে উন্নয়নের কান্ডারী। দরিদ্রতম ২০টি দেশের ‍অনেকগুলিতেই শ্রেণিবিন্যাসের অস্তিত্ব রয়েছে, কারণ দেশীয় ভাষার চেয়ে ঔপনিবেশিক শাসকদের ভাষা তথা সংস্কৃতি উন্নততর বলে মনে করা হয়। শুধু তাই নয়, উচ্চশিক্ষা, বাণিজ্য, সরকারি কাজকর্ম এমনকী বিচারব্যবস্থাও চলে এই ঔপনিবেশিক ভাষায়, ব্রাত্যই থাকে অধিকাংশ মানুষের মুখের ভাষা। উপরতলার মানুষজন এই ঔপনিবেশিক ভাষামাধ্যমেই শিক্ষালাভ করে এবং নীচু নজরে দেখতে শেখে ঔপনিবেশিক ভাষায় অপটু “দিশি”দের। নিজেদের কিংবা “দিশি”দের জীবন তাদের কথায় বা লেখায় উঠে আসে এই ঔপনিবেশিক ভাষাতেই।

দরিদ্রতম ২০টি দেশের মধ্যে ৬টিতে সরকারি ভাষা তথা উচ্চশিক্ষার ভাষারূপে ইংরেজি রয়েছে, ধনীতম ২০টি দেশের মধ্যে সংখ্যাটি ছিল ৫।

 

.২ উপরোক্ত তথ্যের ব্যাখ্যা কী?

কেবল ভাষাগত শ্রেণিবিভেদের জন্যই দরিদ্র দেশগুলি দরিদ্র, একথা আমরা বলছি না হতেই পারে এই মিল নিতান্তই কাকতালীয়। কার্যকারণ সম্পর্কের ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়, কারণ দরিদ্রতম দেশগুলির দারিদ্রের‍ এর চেয়েও প্রত্যক্ষ কারণ আমরা জানিউক্ত ২০টি দেশের মধ্যে ১৮টিই ইউরোপীয় শক্তির অধীনে শোষিত হয়েছে, বাকি ২টিও কোনো না কোনো ইউরোপীয় শক্তির আশ্রিত ছিলো। এটি অবশ্যই এদের চরম দারিদ্র্যের বড়ো একটি কারণ।

তা সত্বেও উপনিবেশায়ন নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ঔপনিবেশিক ভাষার দাসত্ব এবং সেই জনিত শ্রেণিবিভেদ ও দীর্ঘমেয়াদি আর্থসামাজিক ফলাফলকে গুরুত্ব দিতেই হবে। ভাষাভিত্তিক শ্রেণিবিভাজনের ফলে দেশের জনগণ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যথা: .দেশীয় সংস্কৃতির চেয়ে বিদেশী সংস্কৃতি বেশি মর্যাদা পায়, ফলে সাধারণ মানুষ আত্মবিশ্বাস তথা আত্মসম্মান হারিয়ে ফেলে। ২. দেশের বৌদ্ধিক ও নৈতিক আলাপআলোচনার পরিসরটি ঔপনিবেশিক ভাষা ও ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, ফলে বেশিরভাগ মানুষ এর বাইরেই রয়ে যায়। ৩. এর ফলে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে একটি বিজাতীয় ভাষা শিখতে বাধ্য হয় আপামর জনতা, ফলে স্বস্ব ভাষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের অগ্ৰগতি রুদ্ধ হয় এবং ঔপনিবেশিক মূল্যবোধ পুরোপুরি সম্পৃক্ত অভিজাত শ্রেণিকেই অন্ধঅনুকরণের পথে হাঁটে বাকিরা। অথচ, এই বিষয়ে গবেষণামূলক কাজের অভাব দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। অভিজাত শ্রেণির ভাবনায় ইংরেজি এক অপরিহার্য ভাষা। এমনকী, ভারতের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সফ্টওয়্যার শিল্পে সাফল্যকেও তারা ইংরেজির বর্ধিত ব্যবহারের সঙ্গে জুড়ে দেখতে পছন্দ করে।

 

.. বাণিজ্য তথা অন্যান্য পেশায় সাফল্য কি আদৌ ইংরেজিনির্ভর?

অনেকের মতে, ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার প্রচলনের কারণেই ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে এবং বিশ্ববাজারে আমাদের দেশ অতিরিক্ত সুবিধাও পাচ্ছে। এই জাতীয় দাবিগুলিকে ধ্রুবসত্য বলে ধরেই নেওয়া হয়েছে, তাই গবেষণার মাধ্যমে এগুলোকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাও করে না কেউ।

বিশ্ববাণিজ্যে সাফল্যের সঙ্গে ইংরেজিতে ব্যুৎপত্তির সত্যিই কোনো সম্পর্ক আছে কি? মনে তো হয় না। আগের তালিকাগুলো দেখেও ‍যদি আপনার মনে সন্দেহ জেগে থাকে, তাহলে আরোও কয়েকটা উদাহরণ দেখুন।

জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও চীনপূর্ব এশিয়ার এই চারটি বৃহৎ অর্থনীতির একটিতেও ইংরেজির তেমন প্রচলন নেই। অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতোই বাণিজ্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও শিক্ষাদান হয় যথাক্রমে জাপানি, কোরীয়, চীনা ভাষায় ইংরেজিতে নয়। অথচ এই দেশগুলি থেকে উঠে আসা হোন্ডা, টয়োটা, সোনি, সামসাং সহ অন্যান্য বহু বিশ্বমানের বহুজাতিক কোম্পানি আজ মোটরগাড়ি, বৈদ্যুতিক সামগ্ৰী সহ আরও নানা পন্যের বাজারে রমরমিয়ে ব্যবসা করছে।

ফোর্বস তালিকাভুক্ত বিশ্বের প্রথম ২০০০টি কোম্পানির মধ্যে এশিয়ার ৬৭২টি কোম্পানির নাম পাবেন। স্বস্ব দেশীয় ভাষা প্রতিষ্ঠানিক স্তরে ব্যবহার করেই এই ৬৭২টি কোম্পানির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে উপরোক্ত চারটি দেশের বহু নাম।

তালিকা ৩:এশিয়ার বৃহত্তম কোম্পানিগুলির অবস্থান

জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা তাইওয়ানের কোনো গ্ৰামের এক সাধারণ শিশু নির্দ্ধিধায় চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা বড়ো ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে, উচ্চশিক্ষার জন্য বাধ্যতামূলক ভাষামাধ্যম পরিবর্তনের দুঃস্বপ্ন তাকে গ্ৰাস করতে পারে না। এর ফলে সমগ্ৰ জাতির সর্বমোট প্রতিভা অনেক বেশিমাত্রায় স্ফূরিত হওয়ার সুযোগ পায়, যা কখনোই ভাষাজ্ঞানের কারণে শ্রেণিবিভক্ত একটি সমাজে সম্ভব নয়। কিছুদিন আগে ভারতের গ্ৰামীণ বিদ্যালয়গুলিতে সমীক্ষা চালানোর সময় আমরা দেখেছিলাম, বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় হরিয়ানার খান্ডোদরা গ্ৰামের একটি বিদ্যালয়ের ৩৩% ছাত্রছাত্রী সামগ্ৰিকভাবে প্রথম ১০% এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছিলো। এরা সকলেই তখন হিন্দি মাধ্যমে লেখাপড়া করেছিলো। অথচ, উচ্চশিক্ষার জন্য হিন্দি ছেড়ে ইংরেজি মাধ্যম গ্ৰহণ করতে এরাও বাধ্য হবে পরবর্তীকালে। এর ফলে এদের প্রতিভা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে তা আমাদের বুঝিয়ে বলেন প্রধান শিক্ষক মহাশয় – “আমাদের গ্ৰামীণ এলাকা, তাই সফল হতে গেলে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন। এদিকে বাচ্চারা যখন অষ্টম শ্রেণি পেরিয়ে দশম শ্রেণির দিকে পা বাড়ায়, ইংরেজি জ্ঞানের অভাবের কারণে তার মধ্যে একরকম হীনমন্যতা চলে আসে। এদিকে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যাবতীয় প্রতিযোগিতাও ইংরেজিতেই হয়।“

এবার আমরা যাচাই করবো সফ্টওয়্যার শিল্পে ভারতের সাফল্যের পিছনে ইংরেজির অবদান। ‍এরকম কোনো প্রভাব যদি সত্যিই থাকে, তাহলে ইংরেজি যেসব দেশের সরকারি ভাষা, সেইসব দেশেই তা স্পষ্ট প্রতিভাত হবে। কেনিয়ার কথাই ধরুন। ভারতের মতোই ঔপনিবেশিক ইতিহাস, ইংরেজিভিত্তিক শ্রেণিব্যবস্থা এবং ইংরেজি জানা কর্মী এই দেশের রয়েছে। কিন্তু তারা সফ্টওয়্যার শিল্পে ভারতের ধারেকাছেও সাফল্য অর্জন করতে পারে নি। আবার ধরুন ইজরায়েলের কথা। বিদ্যালয়ে মূলত হিব্রু ও আরবি মাধ্যমেই শিক্ষাদান করা হয় এদেশে, অথচ, সফ্টওয়্যারের জগতে তারা দারুন সফল।

বিংশ শতকে বিশ্বের সমস্ত প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ দলে দলে ইজরায়েলে উপস্থিত হয়। কিন্তু ইজরায়েল ইংরেজির বদলে হিব্রুকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয় এবং একটি ঘোষিতভাবেই মৃত ধ্রুপদী ভাষাকে আধুনিক যুগোপযোগী রূপে ফিরিয়ে আনে। ভারতের ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক ভাষা ইংরেজির বদলে সংস্কৃতকে সরকারি ও সংযোগকারী ভাষা রূপে গ্ৰহণ করলে সিদ্ধান্তটি ইজরায়েলের অনুরূপ হতো।

এত ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০০১ সালে ভারত ৬৫ লক্ষ ডলার মূল্যের সফ্টওয়্যার রপ্তানি করেছে। একই সময়ে ভারতের একশো ভাগের একভাগ (নতুন দিল্লীর অর্ধেকেরও কম) জনসংখ্যা নিয়ে ইজরায়েল রপ্তানি করেছে ২৫ ডলার লক্ষ মূল্যের সফ্টওয়্যার। আবার বলে রাখি, বিশ্বের অগ্ৰণী প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইজরায়েলের টেকনিয়নে শিক্ষাদানের মাধ্যম হল হিব্রু। ইজরায়েলের হাইফায় অবস্থিত মাইক্রোসফ্টের দফতরে আমি দেখে অবাক হয়ে গেছি, সেখানে কর্মচারীরা হিব্রু কীবোর্ড ব্যবহার করে এবং নিজেদের মধ্যে হিব্রু ভাষায় কথা বলে।

মাইক্রোসফ্টের সফটওয়্যার ব্যবস্থাপক রূপে শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠতর প্রতিভার খোঁজে আমি প্রায়শই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রার্থীদের ডেকে তাদের সাক্ষাৎকার নিতাম। এরকমই একবার রাশিয়া থেকে উড়িয়ে এনেছিলাম কয়েকজনকে। নিয়োগ করার সময় তাদের ইংরেজি ভাষাজ্ঞান আমি একেবারেই পরীক্ষা করিনি, বরং, ক্ষেত্রবিশেষে তারা ইংরেজিতে এতই কাঁচা ছিলো যে আমাকে দোভাষীর ব্যবস্থা করতে হয়েছিলো। কিন্তু ওরকম দুর্দান্ত সফ্টওয়্যার প্রকৌশলী আমি কমই দেখেছি।

ইংরেজি মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে গোঁয়ার্তুমির কারণে মোট জনসংখ্যার এক অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশের প্রতিভা নিয়েই ভারতকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়, আর হরিয়ানার খান্ডোদরার প্রতিভাবান শিশুগুলি উন্নতমানের প্রযুক্তিগত ও পেশাগত জ্ঞান অর্জনের পথে ইংরেজি নামক কাচের দেওয়ালে ধাক্কা খায়ইংরেজির ব্যবহার কি এক্ষেত্রে অপরিহার্য? একেবারেই না, কিন্তু এটাই রাষ্ট্রের ঘোষিত নীতি।

ভারতীয় প্রবন্ধন সংস্থান (আই আই এম) গুলির সাধারণ প্রবেশিকা পরীক্ষাটি শুধু যে ইংরেজি মাধ্যমে হয় তাই নয়, ইংরেজি বলতে এবং পড়ে বুঝতে পারার ক্ষমতা বেশ খুঁটিয়েই যাচাই করা হয় এতে। ভারতের যে কোনো হাইকোর্ট বা সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবী কিংবা বিচারক হতে গেলে ইংরেজি ভাষায় ব্যুৎপত্তি থাকা বাধ্যতামূলক। চিকিৎসা ও প্রকৌশলবিদ্যার তাবড় তাবড় সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের একমাত্র মাধ্যম ইংরেজি। প্রশাসনিক সেবায় নিয়োগের জন্য আমলা নির্বাচনের পরীক্ষাগুলিতেও ইংরেজি একটি বাধ্যতামূলক বিষয়।

অর্থাৎ ইংরেজিভিত্তিক শ্রেণিব্যবস্থা কেবল সমাজেই নয়, রাষ্ট্রের নীতির মধ্যেও প্রবলভাবে বিদ্যমান। স্পষ্টতই সরকারের চোখে ভারতীয় ভাষাগুলি “নীচু”, আর ইংরেজি ভাষা তাদের চেয়ে “উঁচু”নিম্ন আদালতে ভারতীয় ভাষা চলে, কিন্তু হাইকোর্টে আইনব্যবসা করতে গেলে ইংরেজি অপরিহার্য। সেনাবাহিনীতে জওয়ান নিয়োগের পরীক্ষা ভারতীয় ভাষায় আপনি দিতে পারবেন, কিন্তু আধিকারিক পদে নিয়োগের পরীক্ষা হয় ইংরেজি মাধ্যমে।

ঔপনিবেশিক মনোভাবাপন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে রাষ্ট্র অনুমোদিত এই বিভেদনীতি এবং বিভিন্ন ভাষার মধ্যে উচ্চনীচ ভেদাভেদ অবশ্য নিতান্তই অপরিহার্য বলে মনে হয়। বৈশ্বিক “বাস্তবতা” এবং ইংরেজির স্বাভাবিক শ্রেষ্ঠত্ব নামক দুই কল্পিত তত্ত্ব এই দাবীকেই সমর্থন করে। আপনি যদি ভিন্নসুরে কথা বলেন, তা হলেই আপনি হয়ে যাবেন অগ্ৰগতি ছেড়ে অনগ্ৰসরতার সমর্থক এবং সুস্পষ্ট আর্থিক লাভ ছেড়ে উগ্ৰ জাতীয়তাবাদ বা আঞ্চলিকতাবাদের সমর্থক। অথচ এই আর্থিক লাভ সংক্রান্ত দাবীটি আদৌ সুস্পষ্ট নয়।

বাস্তবে কিন্তু অধিকাংশ ভারতীয়কে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ভাষামাধ্যম বদলাতে বাধ্য করা হয় বলে দেশের অর্থনীতি যথেষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারণ এই ব্যবস্থায় প্রচুর সংখ্যক ভারতবাসীর প্রতিভা ঠিকমতো কাজে লাগাতে আমরা ব্যর্থ হই। উল্টে ইংরেজি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানিকতা এক নিদারুণ বিভেদের জন্ম দেয়, ফলে দেশের জনতার একটা বড়ো অংশ ক্রমাগত শোষিত হতে থাকে আর দরিদ্রই রয়ে যায়। সুতরাং, ইংরেজিকে ভারতের অগ্ৰগতি নয়, বরং অনগ্ৰসরতার ভাষা বললেই যথার্থ বলা হয়।

.৪ উপসংহার

দেশীয় ভাষাসমূহের বিলুপ্তি তথা আনুষঙ্গিক সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত ক্ষতির আশঙ্কায় ইংরেজির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের বিরোধিতা অনেকেই করেছেন। কিন্তু এর উত্তরে অর্থনৈতিক বাস্তববাদের দোহাই দেওয়া হয়েছে বারবার। একটা বিদেশী ভাষাকে সার্বিকভাবে গ্ৰহণ করতে গিয়ে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি যে ধ্বংস হচ্ছে তা তো বলাই বাহুল্য, কিন্তু অন্তিম বিচারে আদৌ কি আর্থিক লাভ কিছু হচ্ছে? ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার সমর্থনে প্রায়শ উচ্চারিত এই আর্থিক লাভের তত্ত্বটিকে সন্দেহ করার সময় এসেছে।

উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য ইংরেজির “অপরিহার্যতা” ইংরেজি পন্থীদের দ্বারা বহুল ব্যবহৃত একটি যুক্তি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা দেখবো, এই ধরনের যুক্তির সঙ্গে ইংরেজি শ্রেণিব্যবস্থার স্তরবিন্যাসের সম্পর্ক কী এবং ভারতীয় সমাজে এর উৎপত্তির ইতিহাসই বা কী।