গান্ধী-নেহেরু পরিবার রাজবংশ!!

0
791

১) প্রখ্যাত মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের বক্তব্য অনুযায়ী, “রাহুল গান্ধীর পদত্যাগের সাথে সাথে ভারতবর্ষের প্রবর্তক রাজবংশ শেষ সীমায় উপনীত হল”! অর্থাৎ গান্ধী-নেহেরু পরিবার হল ভারতবর্ষের প্রবর্তক! পাশ্চাত্য সংবাদমাধ্যম মাঝে মধ্যেই এই প্রকারের অর্ধসত্য প্রচার করেছে, যার মূলে আছে এক বিশেষ ভাবতত্ত্ব! ১৯৪৭ এর আগে না ভারতবর্ষ ছিল, না স্বাধীণতার যুদ্ধে গান্ধী নেহেরু ব্যতিরেকে বীর সাভারকর, ক্ষুদিরাম বা নেতাজীর কোন ভূমিকা ছিল – পাশ্চাত্য সংবাদমাধ্যমের এই ভ্রান্ত ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে!

জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা তো গান্ধী নেহেরুও নন! নেহেরুর সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার বহু আগে থেকেই অনেক মনীষীরা জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাছাড়া নেহেরু গান্ধী, এই দুই বংশের মধ্যে রক্ত সম্পর্কও নেই! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রবর্তক রাজবংশ’ মতবাদের উৎপত্তিস্থল, আবার ভারতীয় বুদ্ধিজীবিরাও ১৯৪৭ এর পূর্বে ভারতবর্ষের অস্তিত্বও মানতে অক্ষম! কিন্তু এই বুদ্ধিজীবিরাই আবার মুঘল সম্রাটদের গুনগানে মুখর! কিন্তু তারা এটা ভুলে যায় যে আমাদের দেশ হিন্দুবাদী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত যার হাজার হাজার বছরের ইতিহাস বিদ্যমান!

——————————

২) বাংলাদেশে গত বছর নির্বাচনের প্রাক্কালে সেদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ একটি জাতীয় সংখ্যালঘু সংস্থা গড়ার কথা তাদের ঘোষণা-পত্রে উল্লেখ করেছিল, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা আইন প্রণয়ন হবে তাও লেখা ছিল, কিন্তু দীর্ঘ ৬ মাস অতিক্রান্ত হবার পরেও কোন উচ্চবাচ্য নেই আওয়ামি লীগ সরকারের! ভারতে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলেও প্রতিবেশী দুই দেশে তাদের সুরক্ষা নিয়ে কোনরকম ভাবনাচিন্তা হয়না!

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বারংবার অভিযোগ করলেও কোন ফল পাওয়া যায় না। মৌলবাদী তত্ত্বের কাছে সরকারকে নতি স্বীকার করতেই হয়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের সংবিধান পঞ্চম সংশোধনীর পর ধর্মনিরপেক্ষ কথাটা সরিয়ে “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম” সংযোজিত হয়। ধর্মের নামে রাজনীতি শুরু হয় সেখানে। মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত ও সংরক্ষণও সংবিধানে সংযোজিত হয়। ১৯৮৮ সালে আরও একধাপ এগিয়ে অষ্টম সংশোধনের মাধ্যম সংবিধানে সংযোজিত হয় নতুন অনুচ্ছেদ “রাষ্ট্রধর্ম”, “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।” তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি এরশাদের সম্পুর্ন সায় ছিল তাতে। এই “ধর্মরাষ্ট্রে” সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সাংবিধানিকভাবে শুধুমাত্র সম-নাগরিক অধিকারের মর্যাদা থেকেই বিচ্যুত হলো না, তাদের উপর বৈষম্য, নিগৃহণ, নিপীড়ন চালানোর অধিকার প্রকারান্তরে সংবিধানে স্বীকৃতি পেল।

২০১৮ এর ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনোত্তর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভাঙাগড়ার পর্যায়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন, জায়গা-জমি দখল, মন্দির উপাসনালয়ে বিগ্রহ ভাঙচুর সারাদেশে আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পঞ্চগড় জেলে আটকাবস্থায় আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের শরীর আগুনে ঝলসে দিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, সম্পাদক প্রিয়া সাহার পৈত্রিক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের সন্ধানে তার ফরিদপুরের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে, নড়াইলের কালিয়ায় মন্দিরের সেবায়েত অশীতিপর বৃদ্ধা রানু সরদারকে কুপিয়ে তার টাকা লুট করেছে দুর্বৃত্তরা, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে এক সংখ্যালঘু পরিবারকে উচ্ছেদ করতে তাদের বাড়িঘরে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে এক যুবলীগ নেতা, গফরগাঁওয়ে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে একটি হিন্দু পরিবার, রাজশাহীর মোহনপুরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এক হিন্দু পরিবারের আসা-যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে কার্যত তাদের অবরুদ্ধ হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে বাধ্য করেছে, জামালপুরে এক হিন্দু রমনীর জায়গা-জমি দখল করার জন্য তাঁকে গাছের সাথে বেঁধে পিটিয়ে মারা হয়েছে, ধর্মান্তরকরণের মাত্রাও বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০১৯ এর মে মাস অবধি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন গত বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে, ২৫০টা আক্রমণের মধ্যে ২৩টি হত্যা হয়েছে। ২০১৮ সালে ১৭৯২ টি আক্রমণ হয় যার মধ্যে ১০৪ টি বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, ২৯ টি মন্দির উপাসনালয়ে বিগ্রহ ভাঙচুর হয়েছে। ২০১৭ তে ১০০৪ টি ও ২০১৬ তে ১৪৭১ টি আক্রমন হয় সংখ্যালঘুদের ওপর। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের আইনজ্ঞ গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক মনে করেন দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই আইন সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ। ৮০০০ সহিংস আক্রমনের বিবাদ এখনো অমিমাংসিত রয়েছে, ২০০০০ এর ওপর আসামিরা এখনো শাস্তি পায়নি, আইনি অব্যবস্থার কারণে।

যেখানে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত হিন্দুপীড়ন হয় সেখানে অ্যাম্নেষ্টি বা রাষ্ট্রসংঘের উদাসীনতা যথেষ্ট পীড়াদায়ক! রোহিঙ্গা জাতির প্রতি বিশ্বব্যাপি দরদ দেখা যায় কিন্তু পাকিস্তান ও বাংলাদেশের হিন্দুপীড়নে কোন সাড়া পাওয়া যায়না বিশ্বের দরবারে। এই নিগৃহীত হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা কবে রাষ্ট্রসংঘের কাছে উদ্বেগের কারণ হবে, কবে সমগ্র বিশ্ব এই হিন্দুপীড়নে বাধা দিতে সক্ষম হবে বা আদৌ হবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।

——————————

৩) ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছে ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা “র” এক অদ্ভুত আবেদন জানায়। প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বলে “র” অভিযোগ করে তেহরানে তিনি দেশবিরোধী কার্যকলাপ করেছিলেন। ১৯৯০-৯২ সালে ইরানে ভারতের রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন তিনি নাকি “র”-এর ক্রিয়াকান্ডে বাধাদান করেছিলেন। অন্ততঃ চার বার হামিদ আনসারি ইরানি গুপ্তবার্তা সংস্থা সাভাকের সাথে বোঝাপড়া করতে গিয়ে “র”-এর ক্ষতিসাধন করেন। প্রাক্তন র আধিকারিকরা প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির এই হেন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সংক্রান্তে এও জানায় যে, বিদেশ প্রবেশের জাল অনুমতিপত্র নিয়ে তাঁর ভুমিকা, ইরান সরকারের প্ররোচনায় ভারতীয় কূটনীতিবিদদের অপহরণ করাকালীন তাঁর নিষ্ক্রিয়তা এবং নানা সময় “র”-এর ক্ষতিসাধন করা, ইত্যাদি ঘটনাগুলির সঠিক তদন্ত করে তার একটি বিবরণ প্রকাশ করার আবেদন জানিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের মে মাসে যুবা কূটনীতিবিদ সন্দীপ কাপুরকে অপহরণ করে ইরানের সাভাক সংস্থা; মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে তিন দিন ধরে তাঁর ওপর প্রবল অত্যাচার করে মৃতপ্রায় অবস্থায় তাঁকে এক নির্জন সড়কে ফেলে যায়। প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন অনুধাবন করেননি, কর্মচারীদের অনুনয় বিনয় সত্ত্বেও।

ডি বি মাথুর নামক এক কর্মচারী এইরুপ অপহরণের পর প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির উপেক্ষা তদানীন্তন কর্মচারীদের মধ্যে রোষের কারণ হয়ে উঠেছিল, তাঁদের স্ত্রীরা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রদর্শন করলে তখনো তিনি নির্লিপ্ত থেকেছিলেন।কর্মচারীরা মনে করেন যে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি ই ডি বি মাথুরের নাম সাভাককে দিয়েছিলেন প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে! প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির এই সব কীর্তিকলাপ নিয়ে আর এক “র” আধিকারিক এন কে সুদ তেহরান থেকে দিল্লিতে পত্রে লিখে জানান। সেই পত্র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়িকে দেখানো হলে তিনি তৎক্ষণাৎ তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওকে জানান। কয়েকঘন্টার মধ্যেই অপহৃত মাথুর মুক্তি লাভ করেন। আর এক কর্মচারি মহঃ উমরকে যখন অপহরণ করা হয় তখনো এই প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি নিষ্ক্রিয় ছিলেন উমরকে মুক্তি দেবার ক্ষেত্রে। এইরুপ নানাবিধ উপায়ে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি “র” -এর কাজে বাধা দিয়েছিলেন এবং ভারতের ক্ষতিসাধন করতে ইরানকে সাহায্য করেছিলেন।