মহুয়া মৈত্র ও কুনাল কামরা একই প্লেনে করে যাওয়ার সময়ে ‘জোর সে বলো’ বলে বিপাকে পড়েছিলেন?

0
964

অনুবাদক – শ্রী জি সদানন্দ

ইন্ডিয়ান সেকুলার ব্রিগেড চারপাশে বয়ে যাওয়া গেরুয়া ঝড়ের মধ্যে সামান্য আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন মহুয়া মৈত্রের মধ্যে। মহুয়া ‘আপন যোগ্যতাবলে (!)’ লিবারেলদের কাছে নতুন আশার আলো হয়ে উঠছেন। কেননা ইতোমধ্যে তাদের প্রিয় আইকন কানাইয়া কুমার চার লাখের বেশী ভোটে হেরেছেন, হার্দিক প্যাটেল দেশদ্রোহিতার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, আর গুরমেহর কৌরকে ইদানিং কালে কেউ সিরিয়াসলি নেয় না। ফলে তাদের খুব দুর্দিন যাচ্ছে, এই সময়ে মহুয়া মৈত্রকে পেয়ে তারা যে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠবে, তাতে অবাক হবার কিছু নেই।

মহুয়া মৈত্র শুরুতে তার ‘অসাধারণ’ ভাষণের জন্য প্রচুর হাততালি ও অভিনন্দন পেয়েছিলেন, কিন্তু সেসব এখন ম্লান হয়ে পড়ছে — কেননা তার নামে অভিযোগ উঠেছে যে; তিনি নাকি ভাষণটা কুম্ভীলতা (plagiarised) করেছেন। সেটা ধরা পড়ার পর থেকে তিনি মমতা ব্যানার্জি সুলভ ব্যবহার শুরু করেছেন, সাথে যে সাংবাদিক (জি নিউজের সুধীর চৌধুরী) তার কুম্ভীলতার কথা বা পর্দা ফাঁস করেছেন, তার নামে রাজ্যসভায় স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন। তিনি যে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে ফ্যাসিজম ও সংবাদমাধ্যমকে বাকরুদ্ধ করার অভিযোগ করেছিলেন তার ‘বিখ্যাত’ ভাষণের মাধ্যমে, তা এখন ব্যুমেরাং হয়ে তারই দিকে ধেয়ে আসছে। উলটে তার বিরুদ্ধে এখন ফ্যাসিজমের অভিযোগ আনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে মহুয়া মৈত্র খুব একটা স্বস্তিতে নেই।

এদিকে আরেকটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেছে। জনৈক ঋষভ শর্মা টুইটারের মাধ্যমে দাবি তুলেছেন যে, নামী স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান কুনাল কামরা নাকি হুবহু একটা জোকস বলেছেন, যেটা নাকি মহুয়া মৈত্র পার্লামেন্টে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হয়েছিল বলে চালাতে চাইছিলেন।

কামরা তার জোকস বলেছিলেন, সেটা অনেকটা এরকম — তিনি একটা প্লেনে চেপেছিলেন, প্লেনটা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় রীতিমত কাঁপছিল। তখন একজন হিন্দু তার সিটবেল্ট খুলে জোরে জোরে বলতে লাগল, “জোর সে বোলো!..” তারপর কে যেন বলে উঠল, “জয় মাতা দি!..”। তারপরের ঘটনা আরও ভয়ানক। কুনাল কামরার সামনেই বসে থাকা এক বৃদ্ধ মুসলমান ব্যক্তি এই স্লোগানবাজিতে বিরক্ত হয়ে স্থির করল যে, সেও এবার স্লোগান দেবে। কিছুক্ষণ ধরে চিন্তা করল যে, কি স্লোগান দেবে। কিছুক্ষণ বাদে প্রত্যাশা মতই যা যা ঘটবার ঘটল, যেমনটা আশা করা গিয়েছিল — সে ‘ওলা ও উবের’ গোছের একটা ধর্মীয় স্লোগান দিয়েছিল, যেটা সারা বিশ্বে আতঙ্কের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিরঙ্গা টিভিতে বরখা দত্তের সাথে একটা সাক্ষাৎকারে মহুয়া মৈত্র এই জোকসটাই অনেকটা ভদ্র ভাবে বলে বর্ণনা করে বলেছিলেন সেটা নাকি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল। কথা বলার সময় মহুয়া মৈত্র কে অত্যন্ত আন্তরিক দেখাচ্ছিল। তিনি এটাও বলেছিলেন যে, ভারতে মুসলমানদের প্রতি বিমাতৃসুলভ ব্যবহার করা হয়।

নিচের ভিডিওটা টুইটারে দারুণ চাঞ্চল্য ফেলে দেয়, কেননা ভিডিওতে যখন মহুয়া মুখ খোলেন, তার আমেরিকান সহযোগী মার্টিন লংম্যানকে উদ্ধৃত করে বলেন — “ডানপন্থীরা সব দেশেই গাধার মত নির্বোধ”।

ঘটনা যাই হোকনা কেন, এটা গভীর চিন্তার বিষয় যে, প্রত্যেক বামপন্থী ও বিজেপি বিরোধী ব্যক্তিত্ব জোকসকে এমনভাবে  পেশই বা করছে কেন যেখানে একই প্লেনে, একই আবহাওয়ায়, একই ভাবে শুরু হতে দেখা যাচ্ছে? পড়ে কুনাল কামরা বলেছেন তিনি কাউকে ‘জয় মাতা দি বলতে শোনেন নি’। যে প্লেনে মহুয়া মৈত্রও ছিলেন।

সম্ভবত যে হিন্দু ব্যক্তি ‘জয় মাতা দি’ স্লোগান দিয়েছিলেন, তিনি মহুয়া মৈত্রের খুব কাছেই বসেছিলেন। সেজন্যই তিনি স্লোগানটা শুনতে পেয়েছিলেন; অন্যদিকে কামরা অনেকদূরে বসে থাকার জন্যই কিছুই শুনতে পান নি। কামরা শুধু মুসলিম বৃদ্ধের স্লোগানটা শুনতে পেয়েছিলেন। অন্যান্য সেকুলারদের মতই যুগপৎ কামরা ও মৈত্র অনেকটা একই রকম হাস্যকর ও হতবুদ্ধিকর বয়ান দিয়েছেন একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। যেখানে ‘সাম্প্রদায়িক’ জোর সে বোলো দিয়ে ঝামেলা শুরু হয়েছে এবং পাল্টা জবাব এসেছে ‘ওলা হো উবের’ দিয়ে।

কাকতালীয় মনে হতে পারে, কিন্তু কুনাল কামরা যে ধরণের চিন্তাভাবনার পরিচয় দিয়েছেন তার জোকস বলার সময়ে তিনি কেন এটাই ধরে নিচ্ছেন যে, সারা বিশ্বের মানুষ আর.এস.এসের দ্বারা এমনভাবে মুসলিম বিরোধী বিষাক্ত চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়েছে যাতে মুসলিম মানুষটাও পালটা প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য হবেন?

নীচের ভিডিওটা এই ধরণের সোশ্যাল এক্সপেরিমেন্টের একটা নমুনা বলা যেতে পারে। যা দেখে তথাকথিত লিবারেল ব্রিগেড বেজায় চটেছেন। এক্সপেরিমেন্টের ফলাফল এরকম হচ্ছে — মানুষ ‘ওলা হো উবের’ শুনলে কেমন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন এমনকি মুসলিম প্রধান দেশেও।

https://www.youtube.com/watch?v=6Q7HfxG19E8&feature=youtu.be

ভয়টা যে অমূলক তা নয়। সত্যি বলতে ওলা হো উবের শুনলেই মানুষের মনে হচ্ছে এই বুঝি কোথাও বম্ব ব্লাস্ট হল। সেই ১৯৯০ থেকে এতবার ব্লাস্ট হয়েছে ওলা হো উবের ডাক দেবার পর যে; মানুষের মনে আতঙ্ক হয়ে গেছে। প্লেনের ভেতরে যে শেষবার এই প্রাণঘাতী স্লোগান শোনা গেছে, সেবারই ৯/১১ ঘটেছিল।

ভিডিও দেখে এইসব ক্ষেত্রে লিবারেল ব্রিগেড ভাবতেই পারেন যে, বাস্তবেও এরকম মজাদার কিছু হবে, আসলে কিছুই হবে না। কিন্তু ইতিহাস বড়ই নির্মম। সাম্প্রতিক কালেই পুলওয়ামা বিস্ফোরণের খলনায়ক আদিল দার কিন্তু তার শেষ ভিডিওতে সুইসাইড বম্বিং জ্যাকেট পড়ে ঐ ভয়ানক ধর্মীয় স্লোগান দিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলোম্বোয় যে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ৩৩০ জন মারা গিয়েছিল, সে ঘটনাতেও সিসিটিভি ভিডিওতে ব্লাস্টের ঠিক আগে ওলা হো উবের গোছের স্লোগান দিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল আততায়ীটি। কাজেই বোঝা যায় স্লোগানটা মানুষের কাছে এমন ভয়ানক শোনায় কেন!

মূল প্রবন্ধ – Opindia