নতুন ৩ গ্রহানুর সন্ধান দিলেন বাঙ্গলার তরুণ বিজ্ঞানী, সম্মাননা জ্ঞাপন NASA-র

0
482

বঙ্গদেশ ডেস্ক:২০২২-র নাসা-র ‘নাগরিক বিজ্ঞানী’ বা NASA Citizen Scientist হিসেবে খেতাব অর্জন করলেন উত্তর ২৪ পরগনার নিমতার উজ্জ্বল অধিকারী। উজ্জ্বল অধিকারী এর আগে ২০২১ সালে বিশ্বের সর্বতম কনিষ্ঠ এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন।

তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার নিমতায়। নাসা বা ন্যাশনাল এরোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NASA)হল বিশ্বের মহাকাশ গবেষণায় সর্বোচ্চ সংস্থা। এর সঙ্গে এবার জুড়ে গেল বাঙ্গালার নাম। গত বছর তিনিই বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ এরোস্পেস চাটার্ড ইঞ্জিনিয়র (Aerospace Chartered Engineer) হিসেবে নজির গড়েন। উজ্জ্বলের এই সম্মান একজন ইঞ্জিনিয়র হিসাবেই শুধু নয়, একজন ভারতীয় হিসেবেও অত্যন্ত গর্বের।

উজ্জ্বলবাবু বলেছেন, প্রতি বছরই বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নিজেদের মতামত প্রকাশের এবং কাজের অভিজ্ঞতার জন্য আবেদন করা যায় নাসার (NASA)কাছে। যে কোনও নাগরিক, গবেষক, বিজ্ঞানী অথবা বিজ্ঞান সংক্রান্ত পড়াশুনা করেন এমন যে কেউ এই প্রকল্পের আওতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে গবেষণা চালিয়ে প্রাথমিক ভাবনার কথা, প্রস্তাবের কথা জানাতে হয় নাসা-কে। দেশ-বিদেশ থেকে লাখ লাখ গবেষণা-উদ্ভাবন সংক্রান্ত আবেদন এসে জমা হয় নাসার (NASA)কাছে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে এবং তাদের কাজের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন শতাধিক ব্যক্তি। চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত বিশ্বের সেরা কয়েকজনকে ‘সিটিজেন সায়েন্টিস্ট’ অথবা নাসা-র ‘নাগরিক বিজ্ঞানী’র (NASA Citizen Scientist) এই খেতাব দেয় বিশ্বের মহাকাশ গবেষণায় সর্বোচ্চ সংস্থা, সঙ্গে পাঠানো হয় শংসাপত্রও।

একাধিক দেশের বহু আবেদনকারীর পাঠানো তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে নাসার এই সংক্রান্ত বিভাগ। এরপর তালিকা প্রকাশিত হয়। পুনরায় চলে বিচার-পর্ব। শেষ পর্যন্ত সেরা ৩০ জনকে ‘বিজ্ঞানী’ হিসেবে মনোনীত করা হয়। তারপর ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয় শংসাপত্র।

উজ্জ্বল বর্তমানে কাজের সূত্রে রয়েছেন বেঙ্গালুরুতে। ওখানে একটি সংস্থার সঙ্গে বিমানের নকশা করেন তিনি। তাঁর কথায়,এর আগেও চেষ্টা করেছি। কিন্তু ৩০ জনের মধ্যে আসতে পারিনি। এবার পেরেছি। ভালো লাগছে এই সম্মান পেয়ে। তিনি আরও বলেন, “এবছর নাসা দিয়েছিল অ্যাস্টরয়েড (Asteroid) বা গ্রহানু নিয়ে বিশেষ প্রকল্প। এই যে তারাখসা-উল্কা মহাকাশে রকমারি ঝলকানি, নানা গ্রহ, উপগ্রহের অবস্থান সম্পর্কিত কাজ। এই গবেষণায় তিনটি নতুন অ্যাস্টরয়েড বা গ্রহানুর সন্ধান দিতে পেরেছি নাসাকে। প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য পাঠিয়েছিলাম ওই তিনটি নতুন অ্যাস্টরয়েড সম্পর্কে।

উজ্জ্বল বাবু পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তিনি বলেন, চাকরি করছি, নাসা ডাকলে সেখানেও যাব। সেজন্য চাকরি ছাড়তে হবে না। আমার মাধ্যমে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের নজরে পড়া গ্রহানুদের নিয়ে আরও জানার, গবেষণার সুযোগ পাব।

উজ্জ্বল শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ার নন, বিমানের নকশা তৈরির সঙ্গেই তাঁর শখের খাতায় রয়েছে কবিতার সম্ভার। তাঁর ব্যক্তিগত খ্যাতির ঝুলিতে রয়েছে একাধিক পুরস্কার। উজ্জ্বল এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি, এমপিবিল ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ সেন্টারের অ্যাস্ট্রোনমি এস্ট্রো-ফিজিক্স নিয়ে পড়াশোনাও চালিয়েছেন জোরকদমে। ‘বিগ ব্যাং থেওরিরির ওপরে গবেষণা সন্দর্ভ পড়ুয়া অবস্থায় জমা দেন। ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে এরোস্পেস এর ওপরে চার্টার ইঞ্জিনিয়রিংও পাস করেন তিনি।

এরপরই প্রথম জয়ের শিরোপা অর্জন করেন। ২০২০ সালে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে ভারতের কনিষ্ঠতম এরোস্পেস চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়র হিসেবে নাম উঠেছিল তাঁর। তবে এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ২০২২ সালে কানাডা থেকে আন্তর্জতিক সাহিত্য সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বাঙ্গালার ছেলে উজ্জ্বল অধিকারী। এছাড়াও তাঁর ভাগ্যে জুটেছে ডক্টর এপিজে আব্দুল কালাম পুরস্কার, ভারতভূষণ সম্মান, রাষ্ট্রীয় রত্ন পুরস্কার এবং ইন্ডিয়া প্রাইমের বিচারে সেরা ১০০ ভারতীয় লেখকদের তালিকায় তাঁর নাম উঠেছে। ইতালির প্যানোরোমা আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেন তিনি।

উজ্জ্বলবাবু বলেছেন, আমি এই কৃতিত্ব পুরোটাই আমার মা-বাবাকে দিতে চাই। মা-বাবার আশীর্বাদ আর সহযোগিতা ছাড়া আমি কিছুতেই এতদূর পৌঁছতে পারতাম না। পরবর্তীতে আমি দেশের মানুষের জন্য আমাদের দেশের জনকল্যাণের জন্য কিছু কাজ করতে চাই। একজন বাঙ্গালী হিসাবে সহজ-সরল ভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে আরও বোধগম্য করে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে চাই। ছেলেবেলার চাঁদ-তারা দেখার ভাললাগাটাকে মহাকাশ ভালবাসায় রূপান্তরিত করতে চাই সকলের জন্য।