মঙ্গলকোটে প্রাচীন বিষ্ণুমূর্তি ও পূর্ণাঙ্গ সূর্যমূর্তি উদ্ধার জেলের জালে

বঙ্গদেশ ডেস্ক:মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে বিষ্ণুমূর্তি ও পূর্ণাঙ্গ সূর্য দেবতার মূর্তি উদ্ধার হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের খেড়ুয়া গ্রামের কাছে অজয় নদের জল থেকে।নদীতে মাছ ধরার সময় জটাই ধীবর নামে এক জেলের জালের উঠে এসেছে পূর্ণাঙ্গ সূর্যদেবের মূর্তি। পাথরে নির্মিত চুতুর্ভুজ সূর্যদেবের দুই হাতে রয়েছে দুটি প্রস্ফুটিত পদ্ম। অন্য দু’হাতে কী আছে তা বোঝা যায়নি। সাতটি ঘোড়ায় টানা রথের উপর দণ্ডায়মান সূর্য দেব। নীচে রয়েছে উষা ও প্রত্যূষা। তাঁদের পাশেই রয়েছে উষা প্রত্যূষার দুই পরিচারিকা দন্ডী ও পিঙ্গলা। মূর্তিটি একাদশ-দ্বাদশ শতকের বলে অনুমান ঐতিহাসিকদের ।বর্তমানে গ্রামের একটি মন্দিরে রাখা হয়েছে মূর্তি দুটি।

দিন কয়েক আগে অজয় নদের ওই একই জায়গা থেকে জেলেদের জালে উঠে এসেছিল দুটি বিষ্ণুমূর্তি। এগুলো হল বিষ্ণুর বামন বা ত্রিবিক্রম অবতারের শিলামূর্তি ।সন্ন্যাসী ধীবর নামে এক জেলের জালে ওঠে ওই দুটি বিষ্ণু মূর্তি। তার মধ্যে ফুট দুয়েকের বড় বিষ্ণু মূর্তিটি চতুর্ভূজ। চার হাতে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম । নীচের দিকে দুই পাশে আছেন লক্ষ্মী ও সরস্বতী। দুই দেবীর পাশেই আছেন তাঁদের দুজন পরিচারিকা।

কিন্তু ওই একই এলাকায় একের পর এক প্রাচীন মূর্তি উদ্ধারের কারন কী? এই বিষয়ে আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক স্বপন ঠাকুর জানিয়েছেন,’এক সময় ওই এলাকায় বিষ্ণুদেব ও সূর্যদেবের উপাসনা হত। পরবর্তীকালে বন্যা,খরার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা হিন্দুধর্ম বিরোধীদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে এই মূর্তিগুলি স্থানীয় জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয় । এখন সেগুলো উদ্ধার হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,মঙ্গলকোটে রয়েছে দুটি সতীপীঠ। এছাড়াও প্রাচীন সভ্যতার বহু নিদর্শন এই অঞ্চলে পাওয়া যায়। সেগুলি কখনও বা অজয়ের জল থেকে অথবা কখনও কখনও ব্যক্তিগতভাবে খোঁড়াখুঁড়ির সময় উদ্ধার হয়েছে। তবুও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। স্থানীয় গ্রামবাসীরা দাবি করেছেন, এলাকায় খনন কার্য শুরু করুক পুরাতত্ত্ব বিভাগ। মঙ্গলকোটের বিডিও জগদীশচন্দ্র বাড়ুই বলেছেন,’এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন ওনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’একদা অজয় নদের তীরবর্তী নতুনহাট , কোগ্রাম , পাদিমপুর,বকসিনগর,উজানি,মঙ্গলকোট জনপদগুলোকে ঘিরে এক বিস্তৃত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন৷ কিন্তু প্রাচীন ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিস্তৃত খবরাখবর পাওয়ার জন্য যেমন প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের প্রয়োজন ছিল,তা আজও হয়ে ওঠেনি৷উত্তর -পশ্চিম ভারতের প্রাচীন বৌদ্ধতীর্থ ‘উড্ডিটান’ও‘মঙ্গলকাষ্ঠ’-র অনুসরণেই বর্ধমানের ওই দুই জনপদের নাম যথাক্রমে ‘উজানি’ ও ‘মঙ্গলকোট’ রাখা হয়েছিল৷