বিজন সেতু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি ৪০ বছরে

বঙ্গদেশ ডেস্ক:বিজন সেতুর ওপর আনন্দ মার্গ প্রচারক সংঘের ১৭ জন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীকে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস ভাবে হত্যার বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে গত শনিবার পালন করা হয়েছে ‘ দধিচী দিবস’।ওইদিন পূর্ণ হয়েছে ওই ঘটনার চার দশক। আনন্দ মার্গ প্রচারক সংঘের কেন্দ্রীয় জনসংযোগ সচিব আচার্য দিব্যচেতনানন্দ অবধূত বলেছেন, ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল কলকাতার বিজন সেতু ও বঙেল গেটে আনন্দ মার্গ প্রচারক সংঘের ১৭ জন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীকে দিনের আলোতে নৃশংস ভাবে হত্যা করে সিপিআইএম-এর হার্মাদ- ঘাতক বাহিনী। বর্বোরোচিত এই ঘটনার আজ ৪০ বছর পূর্তি হল।

সপ্তদশ দধীচিদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে একটি মৌন মিছিল দেশপ্রিয় পাক থেকে শুরু থেকে শুরু করে বিজন সেতুতে গিয়ে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় পশ্চিমবঙ্গ , উড়িষ্যা ও বিহারের বিভিন্ন জেলা থেকে আনন্দ মার্গের শত শত সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী যোগ দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল প্রভাত সঙ্গীত , বাবা নামা কেবলম কীর্তন ও সমবেত ধ্যানের মাধ্যমে। আনন্দ মার্গের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ এই দধীচিদের ছবিতে পুষ্পস্তবক ও মাল্যদানের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাদান করেন।

অবধূতিকা আনন্দ উন্মেষা আচার্য বিগত ৪০ বছর ধরে আনন্দ মার্গ ন্যায়বিচারের দাবিতে এই নীরব প্রতিবাদের সাক্ষী হয়ে আসছে । এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত , আচার্য প্ৰসুনানন্দ অবধৃত , অবধূতিকা আনন্দ উন্মেষা আচার্যা এবং ডঃ বিশ্বজিৎ ভৌমিক ৷ স্বাধীনতা – উত্তর ইতিহাসে অন্যতম জঘন্য এই অপরাধের বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন তাঁরা । আচার্য মন্ত্ৰসিদ্ধানন্দ অবধূত বিজন সেতুর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ট্র্যাজেডির ইতিহাস এবং কীভাবে সিপিআইএম ন্যায়বিচারের রাস্তা আটকেছিল তা ব্যাখ্যা করেন । তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে কমিউনিস্ট শাসকেরা এই বর্বর নির্যাতনের তদন্তের জন্য বিচারপতি অমিতাভ লালা কমিশন গঠন করেছিল। এই কমিশন ২০১৯ সালে প্রতিবেদন দাখিল করে কিন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেনি।

আনন্দমার্গীরা কমিউনিস্টদের রোষদৃষ্টিতে পড়েন কারণ তাঁরা মতাদর্শগতভাবে কমিউনিস্ট বিরোধী ছিলেন।মার্গীদের ওপর প্রথম হামলা হয় ১৯৬৭ সালে পুরুলিয়ায় তাদের আন্তর্জাতিক সদর দপ্তরে, যেখানে সিপিআইএম কর্মীরা পাঁচজনকে হত্যা করে। তার মাত্র দুবছর পর, আনন্দমার্গের কোচবিহার ধর্মসভায় হামলা হয়। এমনকী বিজন সেতু হত্যাকাণ্ডের পরেও ১৯৯০ সালে আনন্দমার্গের পাঁচ জন সদস্য সিপিএম কর্মীদের হাতে খুন হয়েছেন। ১৯৮২ সালের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে জ্যোতি বসু বলেছিলেন, “কী করা যাবে? এই জিনিস তো হয়েই থাকে”। বাংলায় সিপিএম রাজের দশকগুলিতে এই বিষয়ে কোন ন্যায় দেওয়া হয়নি, এমনকী এখনও নয়।প্রতি বছর ৩০শে এপ্রিল, এই হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকীতে আনন্দমার্গীরা প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা সন্ন্যাসীদের স্মরণের জন্য এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একটি মিছিলের আয়োজন করেন। তবুও এখনও, প্রায় চার দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও, এই বিষয়ে কোনও ন্যায়বিচার দেওয়া হয়নি।