সুধী সম্পাদক মহাশয়,
আমি আমার কিছু ব্যাক্তিগত মতামত এখানে তুলে ধরেছি একটি লেখার মাধ্যমে। আপনাদের মনোনয়ন পেলে লেখাটি প্রকাশ করতে পারেন। মনোনীত না হলে সে তথ্য্যও জানাবেন আশা রাখি। আমি আপনাদের উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। আমার লেখাটি এখানেই মেইল বডিতে টাইপ করে দিলাম।
👇👇
#অন্তরালের_নায়কেরা
সাল ২০১৭ মে মাস চরম চিল্বিলানি গরম। ওড়িশার পশ্চিম প্রান্তে বড়গড় জেলায় ৪২°-৪৫° রুক্ষ তাপমাত্রায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রথম ও দ্বিতীয় সঙ্ঘ শিক্ষাবর্ষের শিবির চলছে। দ্বিতীয় বর্ষের শিবির ক্ষেত্রীয় স্তরে হয়। এই শিবির টি পূর্ব ক্ষেত্রের (চার পাঁচটি প্রান্ত নিয়ে একটি ক্ষেত্র)। আমাদের বাংলায় দুটি প্রান্ত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ, ওড়িশায় দুটি পূর্ব পশ্চিম, এবং আন্দামান কে বাংলার সাথেই ধরা হয় তবে ওটা একটি প্রান্ত। এই শিবিরে এই সমস্ত জায়গার শিক্ষার্থী এসেছেন। এখানে একটু জানিয়ে রাখি দ্বিতীয় বর্ষ করবো বললেই করা যায় না ! স্বয়ংসেবকের উপযুক্ত হবার মাপকাঠি পার করে করে তবে এখানে যাওয়ার যোগ্যতা মেলে।
আমার মত ফালতু টার দ্বিতীয় বর্ষের সুযোগ অনেক আগেই এসেছিল কিন্তু নিজের এটা সেটা ব্যাস্ততার কারণে আমি গিয়ে উঠতে পারিনি। তবে ২০১৭ তে আমি সব ফেলেই একপ্রকার যাই। এত কথা আজ বলছি তার কারণ একটাই। আজ যে #৩৭০_ধারা_ও_৩৫এ_বিলোপ_হলো এর পিছনে যেসব মানুষের অনবদ্য অবদান আছে, যারা শুধু অন্তরালে থেকে ধূপের মত জ্বলে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত তাদেরই মধ্যের একজন কে পেয়েছিলাম এই বর্গে। দ্বিতীয় বর্ষের শিবিরে সরসঙ্ঘচালক (মোহন ভাগবত জী) বেশীরভাগ দিন থাকেন। আর প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অখিল ভারতীয় স্তরের কার্যকর্তা থাকেন। আমাদের দুর্ভাগ্য ২০১৭ তে মোহনজী বড়গড় এ আসতে পারেননি। একসাথে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে শিবির চলায় এবং তৃতীয় বর্ষ থাকায় ওনার বিরাট প্রবাস ছিল। যার ফলে আমরা ওনাকে পাইনি তবে সহ-সরসঙ্ঘচালক এবং সরকার্য্যবাহ দের সান্নিধ্য পেয়েছি।
দুদিনের জন্য এক অখিল ভারতীয় কার্যকর্তা এলেন আমাদের ক্যাম্পে। ওনার নাম উল্লেখ করবো না বিশেষ কারণে। জানলাম উনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন। পূর্ণকালীন কার্যকর্তাটির বাড়ি কিন্তু মধ্যভারতে। পরিচয় হলো। ওনার বৌদ্ধিকও শুনলাম। উনি আমাদের চর্চা কালাংশও নিলেন। এরপর এক দুপুরে প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন হলো। এটা খুব উত্তেজনা পূর্ণ কালাংশ কারণ বহু বহু জিজ্ঞাসা আর এই সর্বমানুষের কাছে অখ্যাত কিন্তু স্বয়ংসেবকদের কাছে অমূল্য কার্যকর্তাদের হাসির ছলে ও সরল ভাবে উত্তর দেওয়া যা আমাদের কে মোহিত করে দেয়। আবার মাঝে মাঝে আমার মত শিক্ষার্থীদের অদ্ভূত বা বিতর্কিত প্রশ্ন যার উত্তর দেওয়া নেওয়া তে কিছু মত পার্থক্য হওয়া এবং পরে একটা উপসংহারে পৌঁছনো এসবই এই কালাংশে ঘটে থাকে। তো এই কার্যকর্তা আমাদের উত্থিত হাত দেখে যাকে প্রশ্ন করতে নির্দেশ দিচ্ছিলেন সেই শিক্ষার্থীই প্রশ্ন করছিলেন। প্রথম প্রথম তেমন হাত উঠছিল না। এক স্বয়ংসেবকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন কাশ্মীরের ওই ঠান্ডায় অত মৌলবাদী মানসিকতার মানুষের মাঝে সঙ্ঘের সংগঠন করার অদ্ভূত সব অভিজ্ঞতা।
প্রথম দিকে উনি ছিলেন জম্মুতে। যেখানে হিন্দু সংখ্যা খারাপ না। ওখানে সংগঠন করতে খুব বেগ পেতে হয়নি। তবে কাশ্মীরের একটু কিছু অংশ ছাড়া বেশী ভিতরে ঢুকে সংগঠন করা খুউবই কঠিন। চরম মৌলবাদীদের মধ্যে থেকে এক একটি গ্রামে মাত্র দশ টি কোথাও চারটি করে হিন্দু পরিবারের বাস। ওখানে গিয়ে গিয়ে সংগঠন করা যে কী তা আমরা কল্পনাও করতে পারবো না। কারণ আমরা এখানেই কিছু করতে পারিনা সেভাবে। উনি চোখের সামনে অনেক নারকীয় কান্ড দেখতে বাধ্য হয়েছেন, বাধ্য হয়েছেন চুপ থাকতে, অন্তর জ্বলে গেলেও কাজ করে গেছেন নিজের সহযোদ্ধাদের রক্তকে উপেক্ষা করেও কাজ করতে হয়েছে ওনাদের। কাশ্মীরের বন্যা মনে আছে আপনার.? চাড্ডি পড়া কয়েকশো স্বয়ংসেবক দু হাত ভরে খাবারের জোগান করছে, হ্যাঁ চাড্ডি। এই গালাগালি টাই বোধহয় দেন আপনিও। কাশ্মীরের বন্যায় সেনার সমতুল্য গতিতে ত্রাণ নিয়ে কোথাও কোথাও সেনা পৌঁছনোর আগেই উদ্ধার কার্যে নেমেছিল যারা তারা প্রত্যেকেই চাড্ডি। আর এই অখিল ভারতীয় কার্যকর্তা তখন একটি জেলায় নেতৃত্ব দিয়ে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে (যদিও ওখানে ডুবন্ত মানুষ একটিই সম্প্রদায় ভুক্ত) সেবা কাজ চালিয়ে গেছেন।
এহেন সাম্প্রদায়িক চাড্ডি কার্যকর্তা কে প্রশ্ন করার জন্য আমার হাত লক্লকিয়ে উঠলো। কিন্তু আমার হাত ওনার দৃষ্টি এড়িয়ে গেল। উনি আমাদেরই গণের একটি স্বয়ংসেবকের হাত পছন্দ করলেন। আমি যে প্রশ্ন করবো ভেবেছিলাম দেখলাম সুন্দরবনের সুমন সেই একই প্রশ্ন করলো ওনাকে- “অমুক জী, মেরা প্রশ্ন ইয়ে হ্যায় কী কাশ্মীর সে ধারা ৩৭০ অউর ৩৫-এ কব হটেগা.?”
– তুমহারা উমর্ ক্যায়া হ্যায়.?
– জী পঁচিশ সাল !
– আগলে পাঁচ সাল তক্ জিন্দা রহোগে না.? (এটা শুনেই আমাদের হো হো হাসি)
– শায়েদ রহুঙ্গা।
– ইশ্বর কে কৃপা সে তুম জিতে রহো, আগ্লে পাঁচ সাল মেইন তুম্হে সব পতা চল্ জায়েগা। তব মুঝে বাতানা.!
সত্যি কথা বলতে কী এই কথা আমার সেদিন বিশ্বাস হয়নি পুরোপুরি। কেমন যেন মনে হচ্ছিল এসব আমাদের স্বান্তনাবাক্য শোনানো হচ্ছে.! কিন্তু আজ তিনশো সত্তর ধারা বিলোপের খবর আসার সাথে সাথেই বিশ্বাস করুন ওই সঙ্ঘকার্যকর্তার বলা কথা সবার আগে মাথায় এসেছে। এবং সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো এখন সাল ২০১৯ অর্থাৎ দু বছর আগে পাঁচবছর অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল অথচ তার অনেক আগেই…
পুস্পেন্দ্র কুলশ্রেষ্ঠ বিখ্যাত সাংবাদিক যিনি এখন সাংবাদিকতা থেকে অবসর নিয়েছেন এবং জাতীয়তাবাদী একাধিক বড় বড় কর্মকাণ্ড কে নিজ জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে এগিয়ে চলেছেন যার মধ্যে রামমন্দির সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে.! সম্প্রতি একবছরের মধ্যে হওয়া এক অনুষ্ঠানে ওনাকে বলতে শুনি- ” কহি লোগ আজ মোদী কো গালি দে রহে হ্যাঁয় কী কিঁউ মোদী জী ইন পিডিপি সে কাশ্মীর মে সরকার গঠন কিয়া.? মোদী জী কুছ কর ভি নেহি পায়ে ফির সরকার তোড় দিয়া। কাশ্মীর সমস্যা কা হল্ করনা ইস্কে ব্যস্ কী বাত নেহি। উয়ো লোগ ইস বাত কো নেহি সমঝ রহে হ্যাঁয় কী কাশ্মীর কী উপর স্টাডি চল রহা থা। উনকো যো লেনা থা লে লিয়ে আভি দে নে কা হ্যায় কুছ ইস লিয়ে সাথ ছোড় দিই হ্যায় অউর কাশ্মীর আজ সেনা কী শাসন পে হ্যায়। লেকিন কুছদিন অপেক্ষা কিজিয়ে খুশ্ খব্রি মিলেগি। উয়ো নাগপুর ওয়ালো নে অ্যায়সি প্রোডাকশন দিই হ্যায় না দেশ কো উসকে সিনে পে ভরোসা রাখিয়ে।” অদ্ভূত ভাবে এই কথাগুলো আজ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মেলাতে পারছি যখন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা দাবী করছে অমিত শাহ্ কাশ্মীরের সংবিধান ঠিক ঠাক করে পড়ছিলেন তার মধ্যেই এই ধারা উঠিয়ে দেওয়ার পন্থা লেখা আছে। আর এটি একটি অস্থায়ী পন্থা ছিল যা রাষ্ট্রপতি ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধানসভায় পাশ করালেই উঠিয়ে দেওয়া যায়। আর ঠিক সেটাই অত্যন্ত সুকৌশলে করে দেখালেন আরেক চাড্ডি যার নাম অমিত শাহ্।
এখন বিধানসভা বলে কাশ্মীর রাজ্যে কিছুই ছিলই না। যার ফলে পুরো বিষয়টিই রাষ্ট্রপতির সইয়ের দ্বারা খুউব সহজেই হয়ে গেছে। এখনও কাশ্মীরের পবিত্র মোমিন গণের হাতে আইনি পথ খোলা আছে। সেই লড়াইয়েও যাতে আমারা চাড্ডিরাই জিতি তার ব্যাবস্থা আমাদেরকেই করতে হবে। কাজেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই দেওয়ার এটাই সময়। এখন ক্ষণিকের আনন্দে গা ভাসিয়ে লাভ নেই। আমাদের মনে রাখা উচিৎ আগামীতেও এইরকম বহু কাজ আসবে। যার জন্য ইতিমধ্যেই এই উপরিউক্ত কাশ্মীরে নিযুক্ত থাকা কার্যকর্তার মত চাড্ডিরা ক্রম আত্মত্যাগ করেই চলেছেন। সমস্তকিছুর অন্তরালে থেকে তারা কাজ করে চলেছেন। সেই সব অন্তরালে থাকা নায়করাই আমাদের অনুপ্রেরণা হোক।
।। জয় মা ভারতী ।।
শ্রী সৌরভ প্রামাণিক