কবি : ডঃ ওমেন্দ্র রত্নু
মূল হিন্দি থেকে বঙ্গানুবাদ : শ্রীজিৎ দত্ত
[অনুবাদকের ভূমিকা : ডঃ ওমেন্দ্র রত্নু পেশায় চিকিৎসক। অবশ্য তাঁর আরো অনেকগুলি পরিচয় রয়েছে – তবে সেগুলির মধ্যে সবচাইতে বেশি ক’রে যেটি উল্লেখযোগ্য তা হ’ল:অ-সরকারি সংস্থা ‘নিমিত্তেকম্’ র একজন কর্ণধার তিনি। এই সংস্থাটি মূলতঃ সেইসব উদ্বাস্তু মানুষজনদের পুনর্বাসনের কাজে সহায়তা করে, যাঁরা প্রায় প্রতিদিন পাকিস্তান থেকে ধন-মান-প্রাণ বাঁচিয়ে এদেশে কোনোমতে পালিয়ে আসেন। এইসব মানুষজনের বেশিরভাগই হিন্দু, শিখ ও জৈন মতাবলম্বী মানুষ। পাকিস্তান ছিল তাঁদের পিতৃপুরুষের বাস্তুভিটে,তাঁরা পাকিস্তানের বৈধ নাগরিক, অথচ সেখান থেকে তাঁদের প্রতিনিয়ত পালিয়ে আসতে হয়, কারণ – খোদ পাকিস্তান রাষ্ট্রের মানবাধিকার কমিশনের প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে – সেদেশে প্রতিদিন গড়ে অন্ততঃ তিনজন ক’রে হিন্দু বালিকা অপহৃত হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়, এবং পরিশেষে জোর ক’রে ধর্মান্তরণ করিয়ে মুসলিম পাত্রের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য নানা উপায়ে নির্যাতন, সন্ত্রাস সৃষ্টি, পথেঘাটে নিগৃহীত করা – এসব তো আছেই। এ সমস্ত কিছুর উদ্দেশ্য একটাই – চাপ সৃষ্টি ক’রে সেদেশের হিন্দু-শিখ-জৈনদের ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা নয়তো দেশছাড়া করানো। এমতাবস্থায় এই দুর্ভাগা হিন্দু শিশুকন্যা-কিশোরী-সদ্যযুবতীদের ততোধিক দুর্ভাগা পিতামাতার পক্ষে ধর্মরক্ষা ও প্রাণরক্ষা ক’রে ভারতে পালিয়ে আসা ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। এদেশে এঁদের পুনর্বাসন করবার জন্য সরকারি সাহায্য আদায় করবার কাজটিই করে চলেছেন ডঃ রত্নু ও তাঁর অ-সরকারি প্রতিষ্ঠান নিমিত্তেকম্। এই কাজ করতে গিয়ে ডঃ রত্নু প্রাণে প্রাণে উপলব্ধি করেছেন ঐসব অসহায় শিশুকন্যাদের পিতাদের অসহায়তা। আর সেই উপলব্ধি থেকেই উঠে আসে এই কবিতাটি। শিকাগোতে অনুষ্ঠিত সদ্যসমাপ্ত বিশ্ব হিন্দু সম্মেলনে পাকিস্তানি হিন্দুদের দুর্গতি সম্পর্কিত বক্তব্য রাখবার সময় ডঃ রত্নু নিজের রচিত এই কবিতাটি আবৃত্তি ক’রে বক্তব্য শেষ করেন। এখানে মূলের প্রতি যথাসম্ভব সাদৃশ্য বজায় রেখে কবিতাটির বঙ্গানুবাদ পরিবেশন করা গেল। মূল হিন্দিটি কবির নিজের উচ্চারণে শুনতে এখানে ক্লিক করুন।]
ওরে আমার প্রাণের বন্ধন, আমার হৃৎস্পন্দন,
আমার শ্বাসলয়তন্ত্রী, দয়াময় পরমেশ্বরের অভিনন্দন
তোর অস্তিত্ব হোক চিরনির্দোষ, মা, তোর সতীত্ব হোক চিরস্থায়ী।
কী যে করি, কি ক’রে করি,
তোকে নিয়ে কি কোথাও হারিয়ে যাব?
যেখানে তোর আঁচল সদা অক্ষত থাকে
এমন দেশ আমি কোথায় পাব?
যে জন্নতের স্বপ্নে মশগুল এই পিশাচেরা
তার মাশুল কেন গুনবে আমাদের মেয়েরা?
কী দোষ করেছে ওরা, কী এমন ওদের কসুর
যে নিয়ে গেলে ওদের বাড়ি ছেড়ে বহুদূর?
ইচ্ছে করে, আমার অসহায় শূন্যতার আঁধারে মিশে যাই
যেখানে তোর আঁচল সদা অক্ষত থাকে
এমন দেশ আমি কোথায় পাই?
কীসের নবরাত্রি, কীসের দীপাবলি!
ত্রাসের বেদীতে সাজানো শত্রুতাই খালি।
এখানে কেবল মরণেই মুক্তি মিলেছে;
প্রতিটি জুলুমই গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে।
অত্যাচারের এই সাগরের ওপারে কী ক’রে যাই–
যেখানে তোর আঁচল সদা অক্ষত থাকে
এমন দেশ আমি কোথায় পাই?
কোথায় সেসব প্রতিশ্রুতি,
মহাত্মা-অবতারদের কীর্তি-স্মৃতি
…তুমি যে আমাদের কথা দিয়েছিলে?
সত্যের, ধর্মের সংস্থাপনের বাণী শুনিয়েছিলে?
চেয়ে দেখো –আমাদের সর্বস্ব গেছে
নিঃশ্বাস নেওয়া অব্দি দুঃসহ হয়েছে
এবার বাড়াও তোমার দক্ষিণ হস্ত, এ ঘোর দাবানল থেকে মুক্তি চাই
…যেখানে তোর আঁচল সদা অক্ষত থাকে
এমন দেশ আমি কোথায় পাই?