ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার আব্রাহামীকরণ ও মৌলানা আজাদ

0
1136

সুরেন্দ্রনাথ

সম্প্রতি, একজন প্রবীণ আই পি এস অফিসার, মিঃ নাগেশ্বর রাও যিনি একসময় সি বি আইয়ের অন্তর্বর্তী আধিকারিকও ছিলেন, ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দু বিশ্বাসের প্রতি বৈরী মনোভাব সম্পর্কে তাঁর মতামত ট্যুইট করেছেন।


নাগেশ্বর রাও জানিয়েছেন যে কিভাবে নীচের কয়েকটি ধাপে ভারতীয় সভ্যতাকে আব্রাহামীকরণের কাজ চলছে।

১। শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দুদের নিজস্ব জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা থেকে তাদের বঞ্চিত করে রাখা

২। হিন্দুধর্মকে কেবল কতকগুলি কুসংস্কারের সমষ্টি বলে বর্ণনা করা

৩। শিক্ষাব্যবস্থার আব্রাহামীকরণ করা

৪। গণমাধ্যম ও বিনোদনের জগৎকে আব্রাহামীকরণ করা

৫। হিন্দুদের তাদের পরিচয়ের জন্য ধিক্কার দেওয়া

৬। ফল হিন্দু সভ্যতার ধ্বংস

তিনি স্বাধীন ভারতের শিক্ষামন্ত্রীদের তালিকা দিয়ে শুরু করেছিলেন – মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, তাঁর পরবর্তী এবং উত্তরাধিকারী হুমায়ুন কবির, এমসি চাগলা এবং পরবর্তীকালে ফারুখদ্দিন আলী আহমেদ।

এটি লক্ষণীয় ব্যাপার যে এই সমস্ত নেতারা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন এবং ইসলামী আদর্শের প্রতি গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।

এটি যেমন‌ই হোক না কেন, এখানে মৌলানা আজাদের একটি ছোট পটভূমিকা ছিল, তাঁর শিক্ষামূলক এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গাটি এখানে জড়িয়ে রয়েছে।

মৌলানা আজাদ আফগান বংশোদ্ভূত পরিবারের ছিলেন যারা বহু বছর ধরে বাংলায় বসবাস করেছিলেন। তাঁর বাবা ১৮৫৭ সালের যুদ্ধের পরে ভারত ত্যাগ করেছিলেন এবং মক্কায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন মদিনার বাসিন্দা এবং ওখানকার একজন বিশিষ্ট আলেমের মেয়ে।

মৌলানা তখন ছোট ছিলেন তখন তাঁর পরিবার কলকাতায় বসতি স্থাপন করেছিল। তিনি ইসলামী ধর্মতত্ত্ব এবং ইসলামী আইনশাস্ত্রে ঘরেই শিক্ষালাভ করেছিলেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং অবাক করা বিষয় হল, ভারতের সমস্ত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এমন একজন ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত ছিল যিনি কখনও নিয়মিত স্কুল বা কলেজে পড়াশোনা করেন নি এবং যাঁর যুক্তিবাদী আলাপ আলোচনার প্রাথমিক ভাষা ছিল আরবী এবং ফারসি।

তিনি নিবিড় বুদ্ধি প্রদর্শন করেছিলেন এবং তাঁর শিক্ষাদীক্ষায় অনেকটাই বয়সের থেকে অগ্রসর ছিলেন যে কারণে মাত্র ১৪ বছর বয়সে একটি সাহিত্য ম্যাগাজিনে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তাঁকে পরিপ্রেক্ষিতকে জানার পর একবার ছোট্ট করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে দেখে নেওয়া যাক মতামত এবং অবস্থান কী ছিল। তাঁর কিছু মতামত তুলে ধরা হলো:-

তাঁর ধারণা ছিল ভারত ও পাকিস্তান সীমানা রক্ষা করার জন্য একটি সাধারণ ইউনাইটেড সেনাবাহিনী ভাগ করে নিয়েছিলেন। রয়্যাল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী মুসলিম কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল, এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অবতীর্ণ হতে হলে হিন্দুদের উপমহাদেশে কী অবস্থান ছিল তা অত্যন্ত বিস্ময়কর ছিল।

দেশ বিভাগের বিরুদ্ধে তাঁর বিরোধিতার পিছনে ইসলাম ও ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে দেওয়া-নেওয়া ও লেনদেনের ধারণা জড়িত ছিল। ‘১১০০ বছর ধরে আমরা আমাদের ধনসম্পদ তার (ভারতের) হাতে তুলে দিয়েছি এবং বদলে সে তার নিজের ধনসম্পদের দরজা খুলে দিয়েছে’। ‘আমাদের ধনসম্পদ’ মানে অনুমান করা যায় ইসলামের বাণী যার ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা হিন্দুস্তানের মানবিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগের অধিকার পেয়েছিল।

মাওলানা আজাদ ছিলেন দৃঢ় প্যান-ইসলামবাদী। খিলাফত আন্দোলনের সমর্থনের উদ্দেশ্যে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন – ‘এমনকি যদি ইসলামিক আদর্শের ছিটেফোঁটা তাঁর অনুসারীদের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে, তবে আমার বলা উচিত যে যুদ্ধের ময়দানে যদি কোনও তুর্কীর হৃদয় গুলিবিদ্ধ হয়, তবে আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি , ভারতের কোন মুসলমান ততক্ষণ মুসলমান হতে পারে না যতক্ষণ না সে এই ক্ষত তার মননে উপলব্ধি করছে শুধুমাত্র হৃদয়ে উপলব্ধি করার পরিবর্তে। মনে করা দরকার মিল্লাত-ই-ইসলাম (বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়) একটি অবিভাজ্য সংস্থা।”

তাঁর ইসলামীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খলিফার বিশ্ব নাগরিক হিসাবে নিজেকে দেখেছিলেন । উসমানীয় খিলাফত যখন পতিত হয়েছিল, তখন তিনি এবং অন্যান্য ভারতীয় আলেমরা হিজরাতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন – মুসলমানরা যেন কাফের ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বাস না করে বরং আফগানিস্তানে চলে যায়, যেখানে একজন মুসলিম শাসন পরিচালনা করছিলেন।

মাই ইণ্ড নামক ইংরাজী পত্রিকায় প্রকাশিত মূল লেখা থেকে অনুবাদ করেছেন দীপান্বিতা।