কৃষকদের স্বাধীনতায় বারবার সিপিএম এবং তৃণমূল বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কেন? 

0
1331

       – সুদীপ্ত গুহ 

 

 ডঃ অমিত মিত্র একটি সাক্ষাৎকারে ২০১১ বিধানসভা ভোটের আগে বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে ৪০% খাবার নষ্ট হয় l খাবার নষ্ট করা পাপl আমরা ক্ষমতায় এলে এই সমস্যার সমাধান করবো l’ কিন্তু খাবার কেন নষ্ট হয় সেই দেশে  যেখানে আবালবৃদ্ধবনিতা অর্ধাহারে ও অনাহারে মারা যাচ্ছে? অপুষ্টি যে দেশে একটা স্বাভাবিক ঘটনা? আমাদের দেশে খাদ্যের দাম বহু পাশ্চাত্য উন্নত দেশের চেয়ে বেশীl অথচ আমাদের চাষীরা প্রতি বছর আত্মহত্যা করেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে আমাদের দেশের কৃষি বিপণন আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের মধ্যেl আর এই স্থিতাবস্থার সবচেয়ে বড় সমর্থক বামপন্থী দলগুলি এবং তৃণমূল কংগ্রেসl একথা স্বীকার করতেই হবে যে কিছুটা স্বস্তি দিতে কংগ্রেসও এই ফড়ে রাজের থেকে কৃষকদের কিছুটা স্বাধীনতা দেবার জন্য খুচরো ব্যবসায় বিদেশী বিনিয়োগের বিল এনেছিল ২০১৩তে l কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রের সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসে l  দুঃখের বিষয় সেই কংগ্রেস আজ সিপিএম ও তৃণমূলের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে আমাদের অভাগা চাষীদের পুনরায় সেই লাইসেন্স রাজের অন্ধকারে নিক্ষেপ করতে চাইছে শুধুমাত্র সস্তা রাজনীতির জন্যl

১৯৯১ তে দেশ থেকে নেহেরুভিয়ান লাইসেন্সরাজের অবসান ঘটিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও l কিন্তু বাদ রেখেছিলেন একমাত্র কৃষি ক্ষেত্র l ফলে যখন একদিকে শহর ও নগর এগিয়ে গেছে, তখন  গ্রামীণ ভারত পরে আছে সেই অন্ধকারেই l কিছু ‘দাস ক্যাপিটালে’ অনুপ্রাণিত জহরলাল নেহরু ও তাঁর কন্যার বস্তাপচা আইন এবং অসৎ সরকারি বাবু, নেতা ও ফোঁড়েদের চক্রবুহ্যে বদ্ধ হয়ে, গ্রামের কৃষক সমাজ দলে দলে পাড়ি দিয়েছে নগরসভ্যতার উন্নয়নযোগ্যের একজন নিপীড়িত শোষিত শ্রমিকরূপে l কৃষিজীবী মানুষ পেটের দায়ে পরিণত হয় অদক্ষ শ্রমিকে এবং শ্রমদান করতে বাধ্য হয় অতি ন্যূনতম বেতনে l ২০২০তে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের কৃষকদের এই সপ্তরথীদের থেকে মুক্ত করলেন l তারসঙ্গে একমাস আগেই গ্রামীণ ভারতকে আত্মনির্ভর করার লক্ষ্যে পরিকাঠামো নির্মাণে এক ট্রিলিয়ন বিনিয়োগের অমৃত নিয়ে এলেন l যাতে গ্রামের শিক্ষিত যুবকযুবতী হিমঘর ও লজিস্টিকস পরিকাঠামো বানিয়ে আত্মনির্ভর হতে পারে l

লালবাহাদুর শাস্ত্রীজি ১৯৬৫তে ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’ প্রকল্প শুরু করার কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের খাদ্য সমস্যার সমাধান হয়ে যায় l কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারেন নি l পরবর্তীকালে, তার উত্তরসূরিরা নেহেরুভিয়ান মিশ্র অর্থনীতিযুগের বিভিন্ন কৃষি ও কৃষিবিপণন আইন পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন বোধ করেন নি l উপরন্তু কৃষকদের রক্ত জল করা ফসল আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে নেতা, বাবু, ফোঁড়ে ও বাহুবলীদের l ২০১৭ তে আমাদের দেশে 0.৯২ ট্রিলিয়ন টাকার  খাদ্য নষ্ট হয় কোল্ড স্টোরেজ ও লজিস্টিকস পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা এবং কিছু লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফোঁড়েদের অনৈতিক গড়াপেটার জন্য l ফলে, কৃষকরা শহরের পাড়ি দিয়েছেন শহরবাসীর জন্য বহুতল বাড়ি, মেট্রো রেল, সড়ক বা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ঠিকা কাজ করতে l এই অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন থেকে কৃষকদের উদ্ধার করতেই তিনটি বড় আর্থিক সংস্কারমূলক বিল এনেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন l আজও অর্থাৎ যেসময়ে এই প্রতিবেদন লিখছি,  বাজারে গেলেই আমরা অনুভব করছি যে এতদিনের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফোঁড়েরা এবছর শেষ কামড় দিয়েছে এবং আলুর দাম আকাশ ছুঁয়েছে l কিন্তু সম্ভবত এটা জন্য শেষবার l

নির্মলাজি কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবিদের জন্য মূলত এগারোটি ঘোষণা করেছিলেন গত মে মাসে l প্রথম আটটি বিভিন্নখাতে অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে আর শেষ তিনটি সংস্কারমূলক, যা কৃষকদের ৭৩ বছরের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেব l ১৯৯১এর পর এটা সম্ভবত দেশের বৃহত্তম সংস্কার যা দেশের ৬০% মানুষকে লাইসেন্সরাজের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করলো l সেই তিনটি ঘোষণা এবার বিল আকারে সংসদের সিলমোহর পেল l

এখানে এই তিনটি যুগান্তকারী সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছি l 

১। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন ১৯৫৫( ECA) সংশোধন 

এই বিলের সংশোধনী আসার ফলে হিমঘর ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিপুল রাস্তা খুলে গেল  সাধারণ যুবকযুবতীদের জন্য l শাস্ত্রীজির সবুজ বিপ্লব (জয় জওয়ান, জয় কিষাণ) আমাদের দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দিয়েছে l তবুও সবুজ বিপ্লবের (১৯৬৫-৬৬) পূর্বের ‘নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আইন ১৯৫৫,  কার স্বার্থে আজও বলবৎ থাকে, যখন আমরা উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনে ও দেশের ৪০% খাদ্য একদল অসৎ ফোঁড়ে নষ্ট করে? ভারতের হিমঘর ব্যবসায় বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা এই আইন ও তার থেকে উদ্ভুত দুর্নীতি l সবজি বা শস্য সারা বছর মানুষকে সরবরাহ করতে গেলে আমাদের হিমঘরে মজুত করতে হবে l কিন্তু বর্তমান মজুত আইন অনুযায়ী, সরকার যেকোন সময় অত্যাবশ্যক পণ্য আইন প্রয়োগ করতে পারে এবং বাজেয়াপ্ত করতে পারে হিমঘরে মজুত খাদ্য দ্রব্য l আর এতে বিপদে পরে বিনিয়োগকারী l

 ধরা যাক, সরকার পেঁয়াজের ফলন কম আন্দাজ করতে না পেরে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করল না এবং পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেল l সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন প্রয়োগ করতে পারে l যে হিমঘরে মজুত করা হয়েছিল ৫০কুইন্টাল পেঁয়াজ,  সরকারি বাবু এসে তার ৪০ কুইন্টাল পেঁয়াজ নিয়ে চলে গেল l সঙ্গে পেল জনতার হাততালি l এই ঝুঁকির ভয়ে কেউ হিমঘরে বিনিয়োগ করতে চাইছে না l ব্যবসার অভাব নেই দেশে l এদিকে, উৎপাদিত ফসল সারা বছর জমানোর মত হিমঘরের অভাবে দেশের ৪০% খাদ্য নষ্ট হচ্ছে l ফলে, একদিকে দাম পায় না কৃষক, আর অন্যদিকে প্রান্তিক ক্রেতা অধিক দামে খাদ্য কিনতে বাধ্য হয় খাদ্যের চাহিদা একটু বাড়লেই l 

 

২। কৃষি বিপণন আইন ( APMC Act ) বিলোপ 

এই আইনের সংশোধনের ফলে কৃষক আর রাজ্যের কৃষিবিপণন দপ্তরের কাছে বা তাঁদের দান করা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফড়েদের কাছে শস্য বিক্রিতে বাধ্য থাকবে না l কৃষকরা তাঁদের ক্রেতা চয়ন করতে পারে l এই আইনের ফলে পারিতোষিক দিয়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত APMC ফড়েদের একাধিপত্য শেষ হয়ে গেল চিরদিনের মত l একসময় টেলিকম, এয়ারলাইন্স এ জনসাধারণের যেমন সরকারি পরিষেবা নেয়া গতি ছিল না, তেমনই আজও কৃষকদের এদের বিক্রি করা ছাড়া গতি নেই l যদি সরকার নিয়ম করে যে রাজ্যের ইঞ্জিনিয়াররা রাজ্যের পাটকল বা কাগজকল বা অবসান সিন্ডিকেট ছাড়া আর কারো কাছে তাদের শ্রম বিক্রয় করতে পারবে না? মানবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিবামপন্থীরা? যদি রাজ্যের ডাক্তারদের  বলা হয়, তুমি রাজ্যের লাইসেন্সপ্রাপ্ত নার্সিংহোমে বা বাইপাসের পাশের বেসরকারি হাসপাতাল (তথা কসাইখানা) বাদে কোথাও চাকরি করতে পারবে না বা প্রাইভেট প্রাকটিস করতে পারবে না, তারা মানবে? যেসব অনিলজীবী/পার্থজীবী শিক্ষক গত কয়েকমাস কৃষিকদের জন্য কেঁদে ভাসাচ্ছেন, তাঁদের যদি প্রাইভেট টিউশন বা টিভি চ্যানেলে বসা বন্ধ করে সরকার, তারা মানবেন? তাহলে, চাষীরা কেন শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত পারিতোষিক দান করে লাইসেন্স পাওয়া কিছু অসৎ ফোঁড়েদের কাছে তাঁদের রক্ত ঘামে উৎপাদিত ফসল বেচতে বাধ্য থাকবে? একজন ডাল চাষী কেন সরাসরি তার ডাল হলদিরামকে বেচবে না? কেন সে তার টমেটো ম্যাগি বা কিসেনকে সরাসরি বেচার অধিকার নেই? কেন সে তার ভুট্টা কর্নফ্লেক্স কোম্পানিকে বেচতে পারবে না? পাটচাষী কেন সরাসরি জুটমিলকে পাট বেচতে পারবে না? সরকার রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, শিক্ষকদের  বিদেশে বা ভিন্ন রাজ্যে যেতে বাধা দিতে পারব ? তাহলে রাজ্যের চাষী কেন বিহার, আসামে কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সঠিক দাম পেলে তাঁদের বেচতে পারবে না? দেশের ৭০% মানুষের কেন খোলা বাজারের অধিকার থাকবে না? 

 

৩।  কন্ট্রাক্ট ফার্মিং

এই নামটি শুনেই বামঘরানার অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলবেন, যে একজন ছোট চাষী ITC, ওয়ালমার্ট  বা ট্রেসকোর সঙ্গে দরদাম করবে কিভাবে? উত্তর হল, চাষীরা সমবায় বানাবে l গুজরাটে আমূল কিভাবে করেছিল l আমূলে গুণগত মান সম্পূর্ণ বাজায় রেখে একটা সমবায় যদি বিশ্বের একনম্বর দুগ্ধশালায় পরিণত হয়, তবে কৃষকরা ওয়ালমার্টের সঙ্গে দরদাম করতে পারবে না কেন? একটা বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রছাত্রী কিভাবে CTS বা IBM এর সঙ্গে দরাদরি করে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে? 

১৯৯১থেকে আজ, দেশের মানুষের আর্থিক উন্নতির সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে l দুধ, দৈ, ডিম, সোয়াবিন ইত্যাদি খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে l কিন্তু কৃষিক্ষেতে সংস্কার না হাওয়ায়,ভারতের খাদ্যের মূল্য আমেরিকা, ইউরোপের চেয়ে বেশী এবং এদেশের কৃষক বিশ্বের দরিদ্রতম l চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য থাকতে দিচ্ছে না রাজনৈতিক নেতা, বাবু ও ফড়েদের অশুভ আঁতাত l এই তিন সংস্কারের ফলে, আগামী দিনে আমাদের চাষীরা শুধু সরকার নির্ধারিত ফসল নয়, ভেষজ পদার্থ ও ওষুধ তৈরির কাঁচামালও বানাবে l সেচ, গ্রামীণ পানীয় জল, হিমঘর ও তার সরবরাহ  প্রকল্পে অন্ততঃ ১০ ট্রিলিয়ন ভারতীয় মুদ্রায় বিনিয়োগ আসবে আগামী কয়েক বছরে l গ্রামের মানুষকে পরিযায়ী হয়ে আজকের মত দুর্দশার সম্মুখীন হতে হবেনা l 

তৃণমূলের সাংসদেরা জিজ্ঞাসা করছেন, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কি হবে?  উত্তর একটাই l  সফটওয়্যার শিল্প মূলত স্পেশাল ইকোনমিক জোনে খোলা হয় যেখানে বহুদিন দেশের শ্রমিক আইন বলবৎ ছিল না l (২০১৫তে এই নির্মলাজিই চালু লাগু করিয়েছেন) l কিন্তু কোনদিন বেতন নিয়ে আপনারা কোন অভিযোগ শুনেছেন? অন্য পেশার ন্যূনতম তিনগুণ বেতন পেত এরা l  কোনদিন আমূল কোম্পানির কোন গোয়ালা দাম পায়নি বলে আপনাদের পত্রিকা অফিসে অভিযোগ করেছে? আগামী দিনে ভারতবর্ষের চাষীরাও করবে না l 

কৃষিসংস্কার গ্রামের অর্থনীতিতে এক বিপুল সম্ভবনা নিয়ে এলো শুধু কৃষকদের জন্য না l গ্রামের শিক্ষিত যুবকদের জন্যও l বহু নতুন কাজের সুযোগ আসবে l.বিভিন্ন নতুন ক্ষেত্রে ব্যবসা ও কাজের জোয়ার আসবে l তার মধ্যে সরাসরি আসবে 

  1. হিমঘর 
  2. লজিস্টিক্স 
  3. পরিকাঠামো 
  4. সেচ 
  5. গ্রামীণ বিদ্যুৎ
  6. উচ্চ প্রযুক্তির ইন্টারনেট 

এছাড়া গ্রামের মানুষের হাতের টাকা এলে, কিছু নতুন ক্ষেত্রে বিপুল সুযোগ এখানে আসবে l 

  1. উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র, প্যাথলজি কেন্দ্র ইত্যাদির চাহিদা বাড়বে মানুষের হাতে টাকা এলে l আয়ুষ্মান ভারত এই সেক্টরে চাহিদা বাড়াবে l
  2. বিভিন্ন নতুন পরিষেবা, যেমন এয়ারকন্ডিশন, টিভি l
  3. বিভিন্ন অটোমোবাইল মেইনটেন্যান্স পরিষেবা 
  4. উচ্চমানের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসবে এখানে l

কিন্তু নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে আধুনিক কোল্ডস্টোরেজ বা লজিস্টিকস দরকার তার পুঁজি কথায় পাবে গ্রামের একজন দারিদ্র বা মধ্যবিত্ত যুবকযুবতী? 

তাই এই এক ট্রিলিয়ন বিনিয়োগের ঘোষণা l সরকার এই এক ট্রিলিয়ন টাকা লোন দেবার জন্য ১১ টি সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে মৌ সাক্ষর করেছে l গ্রামের শিক্ষিত যুবকযুবতীরা এই সহজ লোনের সাহায্যে নিজের গ্রামের বিভিন্ন কৃষি পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ করে নিজের গ্রামেই থাকতে পারবে l আত্মনির্ভর ভারত, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া প্রকল্পে এই যোজনা এক নতুন জীবন দান করবে l যেভাবে ১৯৯১ ও ১৯৯৮ এর সংস্কার ভারতের নগরজীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছিল, গত চার মাসের ধারাবাহিক কৃষি সংস্কার শেষের ৬০% গ্রামবাসীর জীবন পাল্টে দেবে আগামী কয়েক বছরেই l

এবার আসি কংগ্রেস ও তৃণমূলের ভূমিকায় l কংগ্রেস ২০০৪এ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বোঝে যে বাকি নাগরিকদের মত কৃষকরাও একটা বৃহত্তর খোলা বাজারের দাবী রাখে l কিন্তু সমস্যা দুটো l এক, আমাদের দেশের কৃষক নেতারা কেউ কৃষিজীবী নয় এবং তাঁদের অধিকাংশেরই মূল আয় ফড়েদের দেয়া উৎকোচ l দ্বিতীয়ত, মনমোহন প্রণবদের ভয় ছিল ক্ষমতাশীল নেতা,  বাবু এবং ফড়েদের লবি সরকার উল্টে দেবার ক্ষমতা রাখে l বিশেষত UPA-1 এর সমর্থক বামপন্থীদের সঙ্গে এই লবির একটা গভীর সম্পর্ক সম্পর্কে তাঁরা অবহিত এবং ভীত ছিলেন l তাই UPA 1 সরকার চাষীদের বাজার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য খুলে দিতে পারেন নি l UPA 2 তে বামপন্থীদের বদলে তৃণমূলের সমর্থন নিতে হয় কংগ্রেসকে l তৃণমূল ২০১১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের ফল পর্যন্ত সব রকমের সংস্কার থেকে সরকারকে বিরত থাকতে বলে l কংগ্রেস সেটা মেনে নেয় l কিন্তু ভোটের পর বেঁকে বসে তৃণমূল l বিরক্ত মনমোহন, প্রণব, চিদাম্বরমরা ঠিক করেন তাঁরা প্রকাশ কারাতের মত মমতাকেও অগ্রাহ্য করবে l তাঁরা মমতাকে প্রস্তাব দেন যে, তাঁরা একটি ধারা যোগ করবেন যে এই বিলটি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয় l রাজ্যের ইচ্ছা না থাকলে তারা বিদেশী বিনিয়োগকারীকে আটকে দিতে পারেনl এই শর্ত দেখে বিপদে পরে যায় তৃণমূল l যদি দেশের বাকি রাজ্য তাঁদের চাষের বাজার বহুজাতিক সংস্থার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়, তবে পশ্চিমবঙ্গ পড়বে বিপদে l মমতা সরকার থেকে বেরিয়ে আসেন l 

কিন্তু থেকে যায় লাইসেন্স রাজ ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন l ফলে বিদেশী বিনিয়োগ কিছু রাজ্যে এলেও বাকি দেশে সেই আগের অবস্থাতেই থেকে যায় l তাঁর সঙ্গে গ্রামীণ ভারতের মেধা বঞ্চিত হয় এই শিল্প থেকে l বহুজাতিক কোম্পানিগুলি ব্যবসার ঝুঁকি কমাতে হিমঘরে বিনিয়োগ না করে, ই-বাণিজ্যে বিনিয়োগকেই শ্রেয় মনে করল l চাষীদের অবস্থার কোন পরিবর্তন মনমোহন সিং করতে পারলেন না l তাই এবার নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী ঠিক করলেন ‘ফাইল মুছে কিংবা আন্টিভাইরাস চালিয়ে’ কৃষকদের শৃঙ্খলমোচনের গতি ত্বরান্বিত করা অসম্ভব l তাই তিনি ফরম্যাটিংএর রাস্তা নিলেনl গ্রামীণভারতে সমাজতন্ত্রের আড়ালে সামন্ততন্ত্রের খুঁটি উপরে দিলেন এই তিন বিল পাশ করিয়ে l 

 

লেখক ইঞ্জিনিয়ার ও চার্টার্ড ফিনান্সিয়াল এনালিষ্ট ; বর্তমানে বিশ্বব্যাংক ও এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অনূদিত প্রকল্পের পরামর্শদাতা। মতামত লেখকের। বঙ্গদেশ পত্রিকা মতামতের জন্য দায়ী নয়।