“উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোধত” আজ আরো বেশি প্রাসঙ্গিক: এম আই টির অধ্যাপক শ্রী প্রকাশ কোঠারি

0
7635

শিকাগো থেকে আমাদের প্রতিনিধি শ্রীমতী নেহা শ্রীবাস্তবের প্রেরিত রিপোর্টের ভিত্তিতে আমাদের নিবেদন:-

স্বামীজীর ধর্মমহাসভার ঐতিহাসিক শিকাগো বক্তৃতার ১২৫তম বার্ষিকীতে আয়োজিত বিশ্ব হিন্দু সম্মেলনের আজ শুভসূচনা হল স্বামী বিবেকানন্দের প্রকাণ্ড মূর্তি উন্মোচনের মধ্য দিয়ে। স্বামীজীর বলিষ্ঠ মনোভাব, তাঁর শক্তিপূজা ফুটে উঠেছে মূর্তিটিতে। মূর্তির আবরণ উন্মোচনের পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত রাজনীতিকদের নিজস্ব অভিমানকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা জানান। তার আগে এই সম্মেলনের সমন্বয়কারী ডঃ অভয় আস্থানা হিন্দু সংস্কৃতিতে যে মানবতাবাদের কথা সভ্যতার ঊষাকাল থেকে ফুটে উঠেছে তার কথা স্মরণ করান। তাই হিন্দুদের প্রার্থনা সবার সুখের কামনা করে (“সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ”), হিন্দু সভা সবার যোগদান কামনা করে (“সংগচ্ছধ্বম্ সংবদধ্বম্”)। হিন্দু সভ্যতার শিকড় তো বহু প্রাচীন কিন্তু লক্ষ্য অতীতকে নকল করা নয়, চিরন্তন ক্রমবিবর্তন।

সম্মেলনের সভাপতি এম আই টির স্লোন স্কুল অফ ম্যান্যাজমেণ্টের প্রখ্যাত অধ্যাপক ডঃ শ্রী প্রকাশ কোঠারি তাঁর স্বাগত ভাষণে বলেন যে,  স্বামীজীর সেই অমর বাণী “উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোধত” বিশ্বের সমস্ত মানুষের অনুসরণ করার সময় এসে গেছে। বিশ্ব হিন্দু সম্মেলন এই বাণী সবার কাছে নিয়ে যাক যে এক পয়গম্বরের এক কিতাবের বাইরে দাঁড়িয়ে বহুত্বকে স্বীকার করা এবং আধ্যাত্মিকতার চর্চা করা এক উন্নত মননের পরিচায়ক, কোন অপরাধ নয়। আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে এবং নারীদের কল্যাণে আরও অনেক কাজ করতে হবে কিন্তু তা করতে হবে বহুত্বকে স্বীকার করেই। তিনি জানান কিভাবে petition ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁর উপর চাপ দেওয়া হয়েছিল যাতে তিনি এই সম্মেলনে না আসেন। তিনি কোন religion র আধিপত্যের বিরোধী, কিন্তু হিন্দুধর্মের মধ্যস্থ বহুত্ববাদ, আত্মজাগরণ এবং সমন্বয়ের বার্তা তিনি সবার কাছে পৌঁছে দিতে চান। তাই তিনি চাপের কাছে নতিস্বীকার নয়, আপন বিবেকের নির্দেশ মেনে এসেছেন।

সম্মেলনে ৬০টি বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় আড়াই হাজার প্রতিনিধির উৎসাহ ছিল দেখার মত। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কৃষ্ণাঙ্গ শ্রীমতী ভিক্টোরিয়া লক্ষ্মী, যিনি এসেছেন ঘানা থেকে। তিনি জানালেন যে গুরুর নির্দেশে এই সম্মেলনে আসতে পেরে তিনি সাতিশয় আনন্দিত।  ডাঃ শ্রীমতী বিন্ধ্যা প্রসাদ এসেছেন গায়না থেকে। প্রতিভাময়ী এই নারী পেশায় হলেন চিকিৎসক কিন্তু অঙ্গীকারবদ্ধ রাজনীতির প্রতি। তিনি দ্বীপরাষ্ট্রের সাংসদ। জানালেন কিভাবে হিন্দুরা রামায়ণ থেকে আজও অনুপ্রেরণা লাভ করে। দীর্ঘ ২০০ বছর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও তাঁরা কিভাবে আপন সংস্কৃতি রক্ষা করে যাচ্ছেন। সুরিনামের তরুণ উপরাষ্ট্রপতি শ্রীঅশ্বিন অধীন ভাষণ রাখলেন এই সম্মেলনে। জানালেন আপন হিন্দু সংস্কৃতির কথা। ভাষণে তিনি সংস্কৃত শ্লোক উদ্ধৃত করলেন। হিন্দি ভাষায় কিয়ৎক্ষণ বক্তৃতাও করলেন। স্প্যানিশ কূটনীতিক শ্রী অস্কার পুঁজোকে দেখতে পাওয়া গেল। ইনি সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এবং নিষ্ঠাবান হিন্দু। আগে বলা হত বৃটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য কখনও অস্ত যায় না। আজ দেখা যাচ্ছে হিন্দুদের মধ্যেও সূর্য কখনও অস্ত যায় না।

গণমাধ্যমের উপর আলোচনা রত (বাঁ দিক থেকে) অদিত কাপাডিয়া (মাই ইণ্ড মেকারস্), জগন্নাথন (স্বরাজ্য), প্রফুল্ল কেতকর,  ফ্রান্সোয়া গয়টার

ধার্মিক নীতিযুক্ত গণমাধ্যম নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল একটি ট্র্যাকে। স্বরাজ্য ম্যাগাজিনের শ্রী জগন্নাথন রাঘবন জানান কিভাবে প্রযুক্তি আজ সাধারণ মানুষের কাছে আপন বক্তব্য বলার সুযোগ এনে দিয়েছে। সংবাদপত্র সম্পাদকেরা social media র জন্য আপন বক্তব্য মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। সাংবাদিকদের কাজ গল্পের ছলে মূল কথাটি কাহিনীর আকারে মানুষের সামনে পেশ করা। কারণ মানুষ কাহিনী শুনতে পছন্দ করে। সমস্যা এটাই যে সাংবাদিকরা অনেকেই বলেন মিথ্যা কাহিনী। ভারতে দীর্ঘদিন কর্মরত ফরাসীদেশের  ফ্রান্সোয়া গয়টার আপন অভিজ্ঞতা জানান। ইনি বোধহয় একমাত্র শ্বেতাঙ্গ সাংবাদিক যিনি হিন্দুদের পক্ষে কথা বলে গেছেন এবং তার জন্য জীবনে মাশুলও গুণেছেন বহুবার। তিনি বলেন যে শুধু digital media (যেমন আমাদের বঙ্গদেশ) করাটা যথেষ্ট নয়। একইসাথে প্রয়োজন print media এবং electronic media।

বিভিন্ন মনোঞ্জক পোষ্টার সম্মেলনের এক আকর্ষণ

চারটি প্রখ্যাত হিন্দু সংগঠন পেল বিভিন্ন মানপত্র। স্বামীনারায়ণ সংস্থা তাঁদের মন্দিরের অদ্ভূত স্থাপত্য কর্মের জন্য, চিন্ময় মিশন এবং গোরখপুরের গীতা প্রেস তাঁদের প্রচারের জন্য। এলাহাবাদের বাঙালী ভক্তিবেদান্ত স্বামীর সংস্থা ইস্কনও পেল এক মানপত্র তাদের প্রচার কার্যের জন্য। সম্মেলনে বহু হিন্দুরা তাঁদের অসাধারণ পোষ্টার প্রদর্শন করেছেন।