তৃণমূলের ভয়াবহ সন্ত্রাসের শিকার বাঁকুড়া-দুর্গাপুরের হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়া উদ্বাস্তুরা

(বিশেষ সংবাদদাতার সূত্রে প্রাপ্ত – সম্পাদকীয়)

এক অতীব নিষ্ঠুর সত্য উপস্থাপিত হয়েছে আমাদের সামনে সম্প্রতি – তৃণমুলের সন্ত্রাসে ভিটেমাটি-চাষবাস ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে বাঁকুড়া-দূর্গাপুরে সাড়ে তিনদশকের হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়া উদ্বাস্তুরা  এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল –  তিরিশ বছরের বেশী সময়েও তাঁরা জমির পাট্টা পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ দায় কার? অবশ্যই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনের যার legacy অতিবাহিত হচ্ছে বঙ্গে একাদিক্রমে এবং বিনা প্রতিরোধে।

সূত্রমতে প্রকাশ, তৃণমুল কংগ্রেসের লাগামছাড়া সন্ত্রাস আর দুর্নীতির শিকার জামাতি বাংলাদেশ থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়াদের পাশে দাঁড়ানোরও কেউ নেই। বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া থানা-ব্লক, বানজোড়া গ্রাম-পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সোনাইচণ্ডীপুর গ্রামের ওপর তৃণমুল নেতা আনন্দ বিশ্বাস ও তার গুণ্ডাবাহিনীর লাগাম ছাড়া সন্ত্রাস চলছে দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর ধরে। কেউ কেউ ভিটেমাটি ছেড়ে চলে গেছে, কেউ চলে যেতে চাইছে, জমি চাষ করতে না পাড়ায়, অন্যত্র জীবন-জীবীকার সন্ধানে। আসুন দেখে নিই এক ঝলকে সোনাইচণ্ডীপুরের ছিন্নমূল হয়ে আসা হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়াদের লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার কাহিনী।

উদ্বাস্তু হিন্দু নমঃশূদ্র-মতুয়াদের সংগামী ইতিবৃত্ত (দূর্গাপুর ডিভিসি-ডিটিপিএস পশ্চিম-এর জীতেননগর কলোনি ও বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া থানা-ব্লকের বানজোড়া গ্রামপঞ্চায়েতের-এর সোনাইচণ্ডীপুর)

১৯৮০-এর দশকে বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া থানা-ব্লকের অন্তর্গত কুলদিহ মৌজার বানজোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাইচণ্ডীপুর ছিল হোগলা, কাশফুল, কাঁটাগাছের ঝোপ-জঙ্গল ভড়া একটি ভূখন্ড। চন্দ্রবোড়া-গোখরো-ঢ্যামনা (দাঁড়াস), কাঁকড়া-বিছে, শিয়ালদের উন্মুক্ত ভূমি। পদ্মাপাড়ের ওপা্র থেকে জামাতিদের অত্যাচারে ভিটে-মাটি ছেড়ে ছিন্নমূল হয়ে আসা হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তু মানুষ পশ্চিমবঙ্গে এসে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশে জামাতিদের অত্যাচারে পরিবারসহ নিরাপদে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠায় বাঙালি হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।  তাদের এক বড় অংশ যেমন বিভিন্ন উদ্বাস্তু কলোনিতে আশ্রয় নেয়, তেমনি হুগলি-নদীয়া-বাঁকুড়া-দুর্গাপুর-বর্ধমান জেলার রেললাইনের ধারে গড়ে ওঠা জবর-দখল বস্তিতে অথবা কোন খালপাড় বা নদীর পাড়ের জবর-দখল কলোনিতে আশ্রয় নেয়।

১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে দূর্গাপুর ডিভিসি ডিটিপিএস-পশ্চিম-এ মায়াবাজার সংলগ্ন ডিভিসি খালের ধারে পরিত্যক্ত জমিতে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের ভিটেমাটি থেকে জামাতি ইসলামিদের দ্বারা খেদানো হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়া শরণার্থীদের উদ্বাস্তু কলোনি। প্রসঙ্গত, ডিভিসি দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন (এর পরে লেখা হবে ডিটিপিএস)-এর পশ্চিম অংশে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ খাল খনন করে থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টে দামোদর নদী থেকে জল আনান জন্য। এই উদ্বাস্তু কলোনি দূর্গাপুরের ডিভিসি ডিটিপিএস পশ্চিম ফাঁড়ি এলাকায় বা অরবিন্দ থানার নিয়ন্ত্রাধীন। এই নূতন উদ্বাস্তু কলোনিটির নামকরণ করা হয় ওই অঞ্চলের বামপন্থী দলের প্রাক্তন নেতা জীতেন চ্যাটার্জীর স্মরণে। কলোনি স্বীকৃতি পাবার সময় ওই অঞ্চলের বিধায়ক ছিলেন জীতেন চ্যাটার্জীর পুত্র তরুণ চ্যাটার্জী (সিপিএম), এবং এই কলোনিবাসীর পাট্টাসহ স্বীকৃতি পাবার ব্যাপারে তৎকালীন বিধায়ক তরুণ চ্যাটার্জী সহযোগীতাও করেন। এপ্রসঙ্গে স্থানীয় সিপিএম নেতা রুনু ধরের সহযোগীতার কথা জীতেননগর বাসী উল্লেখ করে।

প্রাথমিকভাবে পদ্মাপার থেকে আসা এই ছিন্নমূল পরিবারগুলি দিনমজুরি, ঘরাণি, ফুটের দোকান, মাছ ধরা সহ বিভিন্ন উপায়ে নিজেদের দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করে। কেউ কেউ আবার পুরাতন পেশা হিসাবে নানা অসামাজিক পেশা গ্রহণও করে। কিন্তু এই উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর জিনেই রয়েছে মাছ ধরা, চাষবাস করার বাসনা। তাই তারা ডিভিসি খাল পেড়িয়েই পরিত্যক্ত দামোদরের চরকেই তারা বেছে নেয় চাষের জন্য। যে চরের জমি ছিল তখন হোগলা-জঙ্গল, বিষধর সাপ ও বন্যশূকর-শেয়ালের অবাধ বিচরণভূমি। প্রায় ফি বছর বন্যায় ডুবে যাওয়া চরের জমিতে চাষ করার ঝুঁকি নিতে অনেকেই অস্বীকার করে, কিন্তু জীতেননগর কলোনির কয়েকটি পরিবার প্রকৃতির সাথে লড়াইয়ে নেমে পড়ে। প্রসঙ্গত, এই উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী কৃষিকাজ ও মাছ ধরা ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করে বহু প্রকারের কারিগরি শিল্পদ্রব্য উৎপাদনের বিদ্যাও আয়ত্ত করেছিল (পরম্পরাগতভাবে প্রাপ্ত লোকবিদ্যার জ্ঞানের সাহায্যে)।

জীতেননগর কলোনিবাসীর একাংশ মিলে সোনাইচণ্ডীপুরের চাষাবাদের জন্য দামোদরের চরের জমি দখল করে এবং তাদের দেখাদেখি আরও কিছু উদ্বাস্তু পরিবার একত্রে, সব মিলিয়ে প্রায় ১৮টি পরিবারের সক্রিয়তায় গড়ে ওঠে সোনাইচণ্ডীপুরের উদ্বাস্তু কলোনি। কিন্তু জীতেননগর কলোনীর যে সমস্ত পরিবার দামোদরে চরের জমি চাষের জন্য দখল নেয়, তাদের ভোটার কার্ড দূর্গাপুর ডিভিসি ডিটিপিএস পশ্চিম ফাঁড়ি এলাকায় বা অরবিন্দ থানার এলাকাতেই থেকে যায়। ১৯৮০-এর দশকে জীতেননগর কলোনি ও ১৯৯০-এর দশকে সোনাইচণ্ডীপুরের ছিন্নমূল হয়ে আসা মানুষদের অধিকাংশই ছিল হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়া সম্প্রদায়ের কৃষিজীবি জনগোষ্ঠী এবং সোনাইচণ্ডীপুরের দামোদরের চরের অংশ আবার বাঁকুড়া জেলার মধ্যে অবস্থিত।

গত শতাব্দীর আটের দশকেও যে ভূখন্ডটি ছিল পরিত্যক্ত এবং বিষাক্ত সাপ, বন্য শূকর আর কাঁটা ঝোপ-জঙ্গল দ্বারা পরিপূর্ণ, সেই স্থানই এক দশকের মধ্যে হয়ে ওঠে বাঙ্গালী হিন্দু উদ্বাস্তুদের আবাসভূমি। করে। নানা জায়গা থেকে উদ্বাস্তু মানুষ এসে পুরোনো কলোনিবাসী আর স্থানীয় নেতাদের কিছু অর্থ বিনিময়ে জমি দখল নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তারা ঘর বানিয়েই বসবাস ও চাষাবাদ করতে শুরু করে। যা একদা ছিল কিছু উদ্বাস্তু মানুষের জীবন-ধারনের সংগ্রাম, তা দেড় দশকের মধ্যেই হয়ে উঠল আর্থিক দুর্নীতিমূলক লেনদেন আর ক্ষমতা দখলের কেন্দ্রভূমি। শুরু হয় সোনাইচণ্ডীপুরের জমিতে চাষ এবং বসতকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমুল স্তরের দালালি আর মাতব্বরি রাজনীতি মার-প্যাচ। ছিন্নমূল হয়ে আসা মানুষদের নিয়ে শুরু হয় বিভাজন আর পিংপঙ বল খেলার রাজনীতি। আমরা সবাই কম-বেশী তার শিকার।

১৯৯৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে চাষাবাদ শুরু হয় এবং ২০০১ সালের মধ্যেই সোনাইচণ্ডীপুর একটি পূর্ণ উদ্বাস্তু কলোনিরূপে ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করে। সোনাইচণ্ডীপুরের নূতন কলোনিতে ধীরে ধীরে বসবাসের পরিবারের সংখ্যা বাড়তে থাকায়, প্রথমদিকের উদ্বাস্তু কলোনির বসিন্দাদের নিয়ে কমিটিও গঠিত হয়, যারা বাস্তুভিটে ও চাষের জমি দখলের সুষ্ঠ বণ্টনের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করত। এই বিষয়ে তারা প্রথম থেকেই স্থানীয় বানজোড়া গ্রামপঞ্চায়েত ও তৎকালীন শাসক রাজনৈতিক দলের সম্মতি, সহযোগীতাও পায়। বিশেষত জনৈক স্থানীয় সিপিএম নেতা রুনু ধর তাদের নানা বিষয়ে সহযোগীতা করেন। সোনাইচন্ডীপুরের কলোনির বাসিন্দারা তখনও পর্যন্ত কোন সরকারি স্বীকৃতি পায় নি, শুধুমাত্র স্থানীয় বানজোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে তারা বসবাস ও চাষের আধিকার পেয়েছিল; পাশাপাশি সরকারী প্রশাসন ও শাসকদলের বিষয়ে নীরব সমর্থনও  ছিল। ইতিমধ্যে ২০০৫-০৬ সালের মধ্যে সোনাইচণ্ডীপুর কলোনির পরিবারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫৫টি। ২০/০৩/২০১১ সালে সোনাইচণ্ডীপুর কলোনি ভিলেজ, পোস্ট – মালিয়ারা, পি.এস.- বরজোড়া, জেলা – বাঁকুড়া, উল্লেখিত ছাপা প্যাডে সোনাইচণ্ডীপুর কলোনির গ্রামকমিটি গঠন করা হয় এবং তা স্থানীয় বানজোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নিকট দাখিলও করা হয়।

ইতিমধ্যে, পশ্চিমবঙ্গে সর্বপ্রকারে অধঃপতিত বামফ্রন্ট সরকার ও তার নেতৃত্বাধীন ৩৪ বছরের দলতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আঙিনায় আর এক অগণতান্ত্রিক বিশৃঙ্খলতাপূর্ণ এক ব্যক্তির শাসন। প্রায় সাড়ে তিন দশকের পার্টিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে সামাজিক ব্যাধির মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ করেছে তার নবতম সংযোজন হল ‘মা-মাটি-মানুষ’ নামধারী তৃণমূল সরকার। উচ্ছৃঙ্খল-বেপরোয়া-তোলাবাজির দুর্নীতির-শাসনযন্ত্র হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ একটি অভিধায় পরিণত হয়েছে। জনগণকে ঠকানোর ডোল রাজনীতির এক নয়া জামানার সূত্রপাত। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা বদল হলেও পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে রাজনীতির পিংপঙ বল খেলা অব্যাহত থাকল। আগের জামানায় রাজনীতির কারবারিরা পার্টির ওপরতলা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও প্রশিক্ষিত ছিল, কিন্তু ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর জামানায় যে কোন ডাকাবুকো-মারামারি-তোলাবাজিতে দক্ষ যারা তারাই দলের নেতা-কর্মী। আর স্থানীয় স্তর থেকে ওপরতলা অবধি রাজনৈতিক মাতব্বরীতে অধিকাংশই তোলাবাজ-দুর্নীতিগ্রস্ত।

সোনাইচণ্ডীপুরের উদ্বাস্তু (কলোনি) গ্রাম কমিটির বাসিন্দারা ও জীতেননগর কলোনির কয়েকটি পরিবার আশা করেছিল নূতন সরকার অবশ্যই তাদের সমস্যার সুরাহা করবে, তাদের দখল করা জমিগুলিতে নিয়মানুগভাবে সরকারী বিধি অনুযায়ী পাট্টা বা দলিল পাওয়া সম্ভব হবে কেননা প্রায় ১৯৮৩-৮৪ সাল থেকে এখানে মানুষ জঙ্গল কেটে জমিতে বসবাস ও চাষাবাস করছে। কিন্তু নূতন সরকারের আসার কিছু সময় পর থেকে সোনাইচণ্ডীপুর গ্রাম কমিটির মধ্যে নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে মতপার্থক্য দেখা দেয়। নূতন বাসিন্দা আর পুরানোদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়; সর্বোপরি পরিবার প্রতি জমির পরিমাপ ও আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিবাদ চরমে ওঠে। এর সাথে সাথে ছিল নিজেদের মধ্যেকার পারস্পরিক রেষারেষি-হিংসা-অবিশ্বাস। এই পরিস্থিতি যে কোন শাসক রাজনৈতিক দলের জন্য মেঘ না চাইতেই জল। কেননা গ্রামের জনতা নিজেদের বিবাদ নিজেদের মধ্যে বসে মীমাংসা না করে বাইরের তৃতীয় শক্তিকে যখন তা মেটাবার জন্য ডেকে বসে তখনই সেই সমস্যা আরও জটিল এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্বের গুটি হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

ইতিমধ্যে জীবন-জীবিকা-নিরাপত্তা-ধর্মরক্ষা হেতু পদ্মাপার থেকে আসা হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়াদের সাথে কোন এক অজ্ঞাত কারণে স্থানীয় বাউরি বাগদিদের মধ্যে রেষারেষির এক পরিবেশ তৈরি হয়। নিঃসন্দেহে এর কারণগুলি কোনভাবেই খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-ধর্ম-সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে নয়। মতানৈক্য এতদূর গড়ায় যে স্থানীয় বাউরি-বাগদি পাড়ার কোন গরুর ওপর আঘাত করা হয়েছে এই অভিযোগে সোনাইচণ্ডীপুরের উদ্বাস্তু কলোনির ওপর প্রায় ১৫০-২০০জন মানুষ লাঠি-কাটারি নিয়ে চড়াও হয়। স্থানীয় থানা এবং কিছু মানুষের তৎপরতায় তার মীমাংসা হয়, কিছু লিখিত শর্ত আরোপের মাধ্যমে। এইসব টুকিটাকি মতবিরোধ থেকে তা সশস্ত্র আঘাত-প্রত্যাঘাতের পর্যায়ে পৌছনের ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কর্তাব্যক্তিদের একাংশের যে প্রচ্ছন্ন মদত ছিল তাতে কোন সন্দেহের নেই।

২০১১ সালে সোনাইচণ্ডীপুরের সম্পাদক শ্রী মনোরঞ্জন সরকার বাঁকুড়ার শ্যামপুর মাঝেরমানা নিবাসী শ্রী ধনঞ্জয় রায়ের সহযোগিতায় এবং পঞ্চায়েতের সমর্থন নিয়ে বাঁকুড়ার রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিহাবিলিটেশন দপ্তরের  কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানান জমির পাট্টা বা দলিলের জন্য। প্রথমে বছর খানেক সময় বি.এল.ও কোনরকম সহযোগিতা করে না; কিন্তু বাঁকুড়া জেলার উদ্বাস্তুদের আন্দোলনের অন্যতম শ্রী ধনঞ্জয় রায় (মতুয়া সম্প্রদায়ের অধিকার অন্দোলনের সক্রিয় ও সহানুভূতিশীল) র প্রচেষ্টায় তৎকালীন জেলা ম্যাজিষ্টেট শ্রী অরবিন্দ প্রভাত মহান্তি বিষয়টির প্রতি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করেন এবং বিষয়টি আইনানুগভাবে যাতে নিস্পত্তি করা সম্ভব হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।

সোনাইচণ্ডীপুরের উদ্বাস্তুদের সরকারী স্বীকৃতি তথা পাট্টা দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রশাসনিকভাবে তৎকালীন আমিন শ্রী অলোক চ্যাটার্জী এবং দপ্তরের জমি জরিপ প্রক্রিয়ার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত জনৈক দত্তবাবুর তত্ত্বাবধানে  শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ার শুরুর প্রাথমিক সোপান রূপে-দখলকৃত জমি চাষের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রামপঞ্চায়েতের প্রশংসাপত্রসহ, সম্মতিসূচক স্বীকৃতি এবং আলাদা করে প্রত্যেক প্লট হোল্ডারদের তরফে (প্রতি, বি.এল অ্যান্ড-এল.আর.ও, বড়জোড়া, বাঁকুড়া;) পাট্টা পাবার জন্য আবেদন করতে বলা হয়। সেইমত আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রশাসনিক আইনানুগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তৎকালীন সম্পাদক মনোরঞ্জন সরকার এই সরকারী প্রক্রিয়ার যোগাযোগের মধ্যস্থতা করেন। কিন্তু সরকারী দপ্তরের ওপর তলার ব্যক্তিদের অর্থের প্রয়োজন না হলেও অধঃস্তন কর্মচারীরা যাঁরা হাতে কলমে কাজগুলি করেন তাঁদের জন্য সমগ্র প্রক্রিয়াটি করতে মনোরঞ্জনকে ৮০ হাজার টাকার মতো দিতে হয়ে। সোনাইচণ্ডীপুরের ৫৫টি পরিবারবর্গের মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবারের সামর্থ্য না থাকলেও তাঁরা সমবেতভাবে মনোরঞ্জন সরকারকে সেই টাকা দেন এবং মনোরঞ্জন সরকার তা প্রদান করেন। কিন্তু বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রথম থেকেই অবিশ্বাস তৈরি হয়, এবং এতটাই জলঘোলা হয় যে বিষয়টি ডিএম অফিস অবধি পৌছয়। আসলে সোনাইচণ্ডীপুরের গ্রামবাসীদের তৎকালীন সম্পাদকের কার্যকলাপ নিয়ে অখুশী নূতন প্রজন্মের একাংশ অভিযোগ আনে অর্থ তছরূপের। এমনকি আমিনের তৎপরতায় সোনাইচণ্ডীপুরের জমি জরিপের সময়ও আনন্দ বিশ্বাস ও তার সহযোগীরা বাধা দেয়, যদিও শেষ পর্যন্ত তা বন্ধ করা যায়নি। তখনকার মতো পরিস্থিতি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের তৎপরতায় নিস্পত্তি হলেও ভিতরে ভিতরে আনন্দ বিশ্বাস ও তাঁর সহযোগীরা সক্রিয়ই থাকে।

ইতিমধ্যে B.L & L.R.O. বড়জোড়া, বাঁকুড়া, নির্দেশে জমি জরিপের প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত হয় ( “স্টেটমেন্ট অব অকুপেশন অব ল্যান্ড বাই দ্য ইনমেটস্‌ অব সোনাইচণ্ডীপুর, মৌজা – কুলদিহ, জে.এল.নম্বর- ৩, থানা – বরজোড়া, জেলা বাঁকুড়া” সার্ভেয়র রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন)এবং ০৫/০৪/২০১৩ তারিখে তা প্রকাশিত হয় যাতে ৫৫টি পরিবারের সিরিয়াল নম্বর, এল.ও.পি নম্বর, এরিয়া ইন একর এবং দাগ নম্বর সহ।

বিষয়টি আনন্দ বিশ্বাস, স্বপন মণ্ডল, কালীপদ রায়দের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে তারা দাবার বোড়ে হিসাবে মনোরঞ্জন সরকারের বিরুদ্ধে ভারতী মণ্ডলকে ব্যবহার করে। ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে ভারতী মণ্ডলের-এর বিরুদ্ধে (সোনাইচণ্ডীপুর নিবাসী, স্বামী গোকুল মণ্ডল) সামাজিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীদের তরফে। এবং তৎকালীন সম্পাদক মনোরঞ্জন সরকারের তৎপরতায় প্রায় ৫৪জন গ্রামবাসী ভারতী মণ্ডল সম্পর্কে সোনাইচণ্ডীপুরের সামাজিক স্থিতি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে স্বাক্ষর করেন, ডিভিসি ডিটিপিএস পশ্চিম ফাঁড়িতে অভিযোগ করার জন্য। কিন্তু তখনকার মতো বিবাদ মিটিয়ে নেওয়া হয়।

কিন্তু ঘটনার অনেকদিন পর আনন্দ বিশ্বাস, স্বপন মণ্ডল, কালীপদ রায়-এর সক্রিয় সহযোগীতায় ভারতী মণ্ডল মনোরঞ্জন সরকারের নামে প্রথমে বড়জোড়া থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ করে। কিন্তু বিষয়টির সত্যতা জেনে পুলিশ কেস নিতে অস্বীকার করায়, অভিযোগকারীরা বাঁকুড়া পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করে লিখিতভাবে এবং নিজেরা প্রধান সাক্ষীও হয়। মেজিয়া থানার পুলিশ এসে মনোরঞ্জন সরকারকে গ্রেপ্তার করে বাড়ি থেকে এবং বড়জোড়া থানার তৎকালীন বড় বাবু ও মেজবাবুকে পুলিশ সুপার সাস্পেন্ড করে। প্রসঙ্গত, মিথ্যা কারণে তাদের প্রতি এই অর্ডার প্রযুক্ত হলে তারা সেই দিনই বড়জোড়া থানার ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে ঘটা ডাকাতির ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ গ্রহণে অস্বীকার করেছিল বলে স্থানীয় জনতা জানায়।

মনোরঞ্জন সরকারের নামে শ্লীলতাহানির যে মামলা রুজু হয়, তার মূল অভিযোগকারী শ্রী ভারতী মণ্ডল ছাড়াও অন্যতম প্রধান সাক্ষী হিসাবে ছিলেন স্বপন মণ্ডল, কালীপদ রায় (তৎকালীন মতুয়া মহাসংঘের একজন কর্তাব্যক্তি), আনন্দ বিশ্বাস ছাড়াও মেজিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা শ্রীবিভূতি বৈদ্য-এর নাম।(মেজিয়ার বাজারে তাঁর নিজস্ব দোকান আছে এবং উনি একজন প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক)। মামলা শুরু হলে সাক্ষী হিসাবে শ্রী বিভূতি বৈদ্যকে ডাকা হলে তিনি আদালতে জজের সামনে জানান যে এই মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না, তার সই নকল করে সাক্ষী হিসাবে তার নাম রাখা হয়েছে। প্রায় দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে সেই মামলা চলছে। আদালতে আমাদের দেশের অল্পশিক্ষিত মানুষ কতটা অনভিজ্ঞ তা আমাদের সকলেরই কম-বেশি জানা। মামলার তদন্ত এবং মূল তথ্য অনুসন্ধান এবং অভিযোগকারীর তরফে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ বারবার আদলতের তরফে চাওয়া হলেও তিনি প্রমাণ দাখিলে ব্যর্থ হন। কিন্তু মামলা দীর্ঘায়িত হয়েই চলেছে। আজকের দিন পর্যন্ত অভিযুক্ত শ্রী মনোরঞ্জন সরকারকে তিন মাস অন্তর আদালতে হাজিরা দিতে হয় এবং অভিযোগকারীনীকে ১৫ দিন অন্তর।

মনোরঞ্জন সরকারের অনুপস্থিতি ও মিথ্যা মামলার জড়ানোর ভয়ে সোনাইচণ্ডীপুরের অনেক বাসিন্দাই আনন্দ বিশ্বাস, স্বপন মণ্ডল, কালীপদ রায় সম্পর্কে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে; গ্রামপঞ্চায়েত দখল করে এরা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান অমিত মিশ্র এই সন্ত্রাসে মদত দেয়। এমনকি সার্ভে শিটে সিরিয়াল নম্বর ১-এ থাকা লালমতী বারুই-এর নাম থাকা সত্ত্বেও তাকে এবং তার পরিবারকে জমি থেকে উৎখাত করে এবং সেই জায়গায় আনন্দ বিশ্বাসের বোন জয়ন্তী দাসকে বসায় (স্বামী কুমার দাস)। এই বেআইনি দখলে পঞ্চায়েত প্রধান অমিত মিশ্র, স্বপন মণ্ডল (সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের সম্পাদক) ও বর্ধমান মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি কালিপদ রায়ও যুক্ত থাকে।

এই সময় স্থানীয় মেজিয়া থানার ভারপ্তাপ্ত আধিকারিক ওসি অতনু কাঞ্জিলাল-ও (বর্তমানে বাঁকুড়ার পাত্রশায়র ভারপ্তাপ্ত ওসি) সোনাইচণ্ডীপুরের অরাজগতা সৃষ্টিতে মদত দেয়। বেশ কয়েকটি পরিবার আনন্দ বিশ্বাস, অমিত মিশ্র, স্বপন মণ্ডল, সুফল বিশ্বাস এবং ওসি অতনু কাঞ্জিলালের শাসানি ও ভয়ে সোনাইচণ্ডীপুর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। নামমাত্র অর্থে (স্বপন রায়, তপন শিকদার, গোপাল রায়, হরিপদ রায়, হরেন্দ্রনাথ তালুকদার, নিতাই চৌধুরি, মিলন মণ্ডল, স্বপন কুমার দাস, বৃন্দাবন সরকার) এদের অনেকেই জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় আনন্দ ও তাঁর সহযোগীদের নিত্যদিনের অত্যাচার আর শাসানির ভয়ে। মারের হাত থেকে মহিলারাও বাদ যায়নি। জুরান মণ্ডল, অনিতা মণ্ডল, কুন্তলিকা মণ্ডল, সুষমা মণ্ডল, বাপী মণ্ডল, প্রদীপ বারু্‌ই, পূর্ণিমা বারুই (১৩ বছরের মেয়ে), দেবদাস মণ্ডল প্রমূখরা কোন না কোন ভাবে আনন্দ বিশ্বাস আর তাঁর গুণ্ডাবাহিনীর দ্বারা তোলাবাজি আর শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হয়। এর সাথে সাথে জীতেননগর কলোনির বাসিন্দা যারা, প্রথম থেকে সোনাইচণ্ডীপুরের জঙ্গল সাফাই করে চাষবাস শুরু করেছিল (মনোরঞ্জন সরকার, জগদীশ মণ্ডল,) এদেরকেও সোনাইচণ্ডীপুরে ঢুকতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় ও জমিচাষ করতে গেলে মারধর করা হয়।

বিগত প্রায় ৬-৭ বছর ধরে আনন্দ বিশ্বাস আর তার গুণ্ডা বাহিনী সোনাইচণ্ডীপুর ও জীতেননগর কলোনির বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগে মেজিয়া থানায় ডেকে শাসায় এবং কখনও কখনও থানার পুলিশ রাউন্ডে গিয়ে জীতেননগর কলোনির বাসিন্দাদের হুমকি ও আটকের ভয় দেখিয়ে তাদের জমিতে আসতে বাধা দেয়। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, মেজিয়া থানার ওসির অশুভ আঁতাতের দরুন এক ভয়াবহ সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে। আনন্দ বিশ্বাস ও তাঁর গুণ্ডা বাহিনীর বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের সন্মিলিত অভিযোগ একাধিকবার মেজিয়া থানার ওসি নিতে অস্বীকার করে।

ইতিমধ্যে আনন্দ বিশ্বাস, প্রধান অমিত মিশ্রের, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সহযোগে B.L & L.R.O. বড়জোড়া, বাঁকুড়া, নির্দেশে জমি জরিপের প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত হয়েছিল তাতে পরিবর্তন ঘটায় (“স্টেটমেন্ট অব অকুপেশন অব ল্যান্ড বাই দ্য ইনমেটস্‌ অব সোনাইচণ্ডীপুর, মৌজা – কুলদিহ, জে.এল.নম্বর- ৩, থানা – বরজোড়া, জেলা বাঁকুড়া” সার্ভেয়র রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন)এবং ০৫/০৪/২০১৩ তারিখে তা প্রকাশিত হয় যাতে ৫৫টি পরিবারের সিরিয়াল নম্বর, এল.ও.পি নম্বর, এরিয়া ইন একর এবং দাগ নম্বর সহ।)। কোনরকম জমির জরিপ ছাড়াই একটি লিস্ট তৈরি করে এবং বিপুল অর্থের বিনিময়ে পুরাতনদের ভয় দেখিয়ে উচ্ছেদ করে নূতন কয়েকটি পরিবারকে বসায়। একটি নকল লিস্টও বার করে যার কোন স্বাক্ষর এবং তারিখ থাকে না। তাছাড়া এই তালিকায় আনন্দ বিশ্বাস-এর বোনের নাম রাখা হয়, যা পূর্বতন লিস্টে ছিলই না।

ইতিমধ্যে নির্বাচিত নূতন প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির তরফে বলা হয় যারা সোনাইচণ্ডীপুরের বাসিন্দা নন অর্থাৎ ভোটার লিস্টে যাদের নাম নেই তারা জমি চাষ করতে পারবে না বা জমির দখল পাবেনা। সেইমত জীতেননগর কলোনির বাসিন্দারা স্থানীয় বিডিও অফিসে নাম তোলার জন্য নির্বাচন জয়েন্ট বিডিও ফণিভূষণ মণ্ডল এবং ইলেকশন কমিশনের তরফে আধিকারিক মিঠুন চক্রবর্তী কাছে নিয়মমাফিক আবেদন করলে আনন্দ বিশ্বাস ও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতে তাদের নাম তোলা হয়না।

বর্তমান তৃণমূল দলের একটি নীতি হল তারা নূতন প্রজন্মের যুবকদেরকে দলের তোলাবাজি আর মাস্তানিতে ব্যবহার করার জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষিত, দক্ষ ও অদক্ষ যুবকদের আধিক্য থাকায় তারা এদেরকে সমস্ত অসামাজিক তথা তোলাবাজি-ভীতিপ্রদর্শন-সংগঠিতভাবে জমায়েতেরর কাজে ব্যবহার করে। সোনাইচণ্ডীপুরের ক্ষেত্রেও সেই নীতি অবলম্বন করে। আনন্দ বিশ্বাস নামে বছর ত্রিশের এক যুবককে তৃণমূল দল কাজে লাগায়, এবং এর সাথে সহযোগী হয় সুফল বিশ্বাস (বর্তমান সম্পাদক),পবিত্র নারায়ণ বিশ্বাস (সভাপতি), গোকুল মণ্ডল, রিপণ বিশ্বাস, স্বপন বিশ্বাস, বলাই তালুকদার, হরেন তালুকদার, দুলাল মোহিনী, বিজয় বালা রতন রায়, সুজিত সরকার, শ্যামল বিশ্বাস, মিলন মণ্ডল, সুজয় মণ্ডল, মিঠু সিং, কেষ্ট দাস। আর এদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয় মূলতঃ মতুয়া মহাসংঘের তৃণমূলের নির্বাচিত সাংসদ সদস্যার মমতাবালা ঠাকুরের আশীর্বাদ থাকায়। তার কাছে বেশ কয়েকবার মতুয়া মহাসংঘের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সহযোগীতায় বিষয়টির নিস্পত্তি করার আবেদন জানালে তিনি আনন্দ বিশ্বাসের পক্ষেই মত দেন এবং স্থানীয় পুলিশ সুপার, থানার ওসিদেরকে আনন্দ বিশ্বাস ও তার দল তৃণমূলের হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন।

অত্যাচারের স্বীকার মতুয়ারা মহাসংঘের নেত্রীর এহেন আচরণে যথেষ্ট অখুশি। সাংসদ সদস্যা আবেদনকারী মতুয়াদের আনন্দ বিশ্বাসের সাথে সহযোগীতা করে চলার নির্দেশ দেন। সোনাইচণ্ডীপুরের গ্রামবাসীদের অভিযোগ মমতাবালা ঠাকুর প্রকারান্তরে আনন্দ বিশ্বাসের (পশ্চিম বর্ধমান মতুয়া মহাসংঘের সম্পাদক) কোন অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। এমনকি সংশ্লিষ্ট থানা বা পুলিশ সুপারের অফিসও যাতে আনন্দ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সোনাইচণ্ডীপুর ও জীতেননগরবাসীদের অভিযোগ গ্রহণ না করে, তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন বলে গ্রামবাসী ও কলোনিবাসীদের অভিযোগ। জীতেননগর কলোনীর হিন্দু নমঃশূদ্র ও মতুয়াদের এই দূরাবস্থার কথা প্রতিবেদকের তরফে সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে প্রত্যক্ষ করে এবং বেশ কয়েকজন মতুয়া জনগোষ্ঠীর গুরু গোঁসাই, বৌদ্ধিক চিন্তক ও সাহিত্য কর্মের (মতুয়া দর্পণ পত্রিকার সাথে যুক্ত) সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলে জানতে পারেন তাদের অসহায়তার কথা। তাঁরা জানান বিষয়টি সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অবহিত, এই সোনাইচণ্ডীপুর ও জীতেনবাসীর এই অসহনীয় অবস্থার জন্য তাঁরা পক্ষান্তরে মতুয়া মহাসংঘের নেত্রী এবং তাঁর দুর্নীতিমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট কার্যকলাপকেই দায়ী করেন। এমনকি তারা আনন্দ বিশ্বাস, কালীপদ রায়, স্বপন মণ্ডলদের মত কুচক্রী দুর্নীতিগ্রস্তদের জন্যই মতুয়ামহাসংঘের সংহতি ও একতা নষ্ট হচ্ছে এবং মতুয়াদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তৃণমূলের সন্ত্রাস, তোলাবাজির শিকার আজ গোটা পশ্চিমবঙ্গ। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই নাগরিক জীবন বিভীষিকায়পরিণত হবে যদি কেউ সেই দলের মতে চলতে অস্বীকার করে বা তাদের তোলাবাজি, দুর্নীতিকে নীরবে মেনে না নেয়। সোনাইচণ্ডীপুর ও জীতেননগরবাসীদের অবস্থাও অনেকটা সেইরকম। উদ্বাস্তু হয়ে আসা ছিন্নমূল পরিবারগুলিকে নিয়ে এই নক্কারজনক রাজনীতি বাঙালি হিসাবে আমাদের মাথা হেঁট করে। নিজেদের আশ্রয়হীন, সহায় সম্বলহীন স্বজনদের পাওয়া বাস্তুজমি ও জীবিকা থেকে বঞ্চিত করেই ক্ষান্ত হয়না, নিত্যদিন তাদের ওপর চলে অত্যাচার আর জুলুমবাজি। আর এই সবকিছু জেনে দেখে নিশ্চুপ থাকে মতুয়া মহাসংঘের সাংসদ সদস্যা এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।