বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে ভাসান চরে স্থানান্তরের অভিযোগ

0
465

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- বাংলাদেশের এক নৌ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার বাংলাদেশের দক্ষিণ বন্দর চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গোপসাগরের প্রত্যন্ত দ্বীপ ভাসান চরের উদ্দেশ্যে শুক্রবার ১৬০০ এর বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী যাত্রা করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি বলেছে যে এরা হচ্ছে সেই শরণার্থী যারা ভাসান চরে যেতে ইচ্ছুক। এরা মূলত বাংলাদেশের প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমান যাদের সংখ্যা ১০ মিলিয়নেরও বেশি।

তবে শরণার্থী ও মানবতাবাদী কর্মীরা বলেছেন যে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে জোর করা হচ্ছিল ২০ বছর আগে সমুদ্র থেকে উদ্ভূত একটি বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ দ্বীপ ভাসান চরে যাওয়ার জন্য। বাংলাদেশের এক নৌ কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গারা সাতটি নৌকায় আরোহী ছিল এবং তাদের সাথে আরও দুটি রসদ বহনকারী নৌকা ছিল। একটি জাহাজের ওপর থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে যে শরণার্থীদেরকে নীল রঙের চেয়ারে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে ইউনিফর্মধারী নাবিকদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার জোর করে কাউকে ভাসান চরে নিয়ে যাচ্ছি না। আমরা এই অবস্থানটি বজায় রেখেছি। ”

তবে রয়টার্সের সূত্রে দুজন রোহিঙ্গার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যাদেরকে ভাসান চরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাদের নাম বিনা অনুমতিতে সরকার নিযুক্ত স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে তৈরি তালিকাতে তোলা হয়েছে। সহায়তা কর্মীরা জানিয়েছেন যে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদেরকে স্থানান্তরিত হতে চাপ দেওয়ার জন্য কর্মকর্তারা হুমকি ও প্রলোভন ব্যবহার করেছিলেন। কক্সবাজারের নিকটবর্তী ক্যাম্পগুলো থেকে একটি বাসে তোলার সময় ৩১ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা ব্যক্তি রয়টার্সকে ফোনে বলেছিলেন, ” ওরা আমাদেরকে এখান থেকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। তিন দিন আগে, যখন আমি শুনেছিলাম যে আমার পরিবারের নাম তালিকায় রয়েছে, আমি ব্লক থেকে পালিয়ে এসেছি, কিন্তু গতকাল আমাকে ধরে ফেলা হয়েছে এবং ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ” ১৮ বছর বয়সী এক মহিলা বলেছেন যে তার স্বামী খাদ্য রেশনের তালিকা ভেবে তাদের নাম দিয়েছিল। তাদের ভাসান চরে যাওয়ার কথা বলা হলে তিনি পালিয়ে যান। তিনি আরও জানান যে তিনিও রোহিঙ্গা শিবিরে লুকিয়ে আছেন।

জাতিসংঘের অভিযোগ মায়ানমার সরকার ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালায় এবং ৭,৩০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়। মায়ানমার এই অভিযোগের বিপরীতে গণহত্যা অস্বীকার করে বলেছে যে তাদের সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে শুধুমাত্র রোহিঙ্গা জঙ্গিদেরকে টার্গেট করেছিল যারা পুলিশ পোস্টে হামলা করেছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে যে তারা ভাসান চরের তালিকাভুক্ত ১২ টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল যারা স্বেচ্ছায় ভাসান চরে যায়নি। অন্যদিকে রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে যে এই পদক্ষেপ “এই স্থানান্তর আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করে এবং এটি রোহিঙ্গা জনগণের জন্য একটি বিপজ্জনক গণ-বন্দিদশার থেকে কম নয় “। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন সহায়তাকারী কর্মী বলেছিলেন, শরণার্থীদেরকে এই দ্বীপে স্থানান্তরিত হতে প্ররোচিত করার জন্য হুমকি ও নগদ অর্থ এবং অন্যান্য প্রলোভনের অফার ব্যবহার করেছে সরকারী কর্মকর্তারা, চাপের মুখে পড়ে তারা যেতে বাধ্য হচ্ছে।

জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে বলেছে যে, এই স্থানান্তরের বিষয়ে “সীমিত তথ্য” দেওয়া হয়েছিল এবং তারা এর প্রস্তুতির সাথে জড়িত ছিল না। বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ ছেড়ে সমুদ্রপথে পালানোর চেষ্টার পরে এই বছরের শুরুর দিকে ৩০০ জনেরও বেশি শরণার্থীকে এই দ্বীপে আনা হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে যে এই রোহিঙ্গাদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে এবং তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।