বাংলাদেশের হেফাজতির কুকীর্তি

0
1117

ইসলামিক বাংলাদেশের একটি ইসলামিক উগ্রপন্থী দল হেফাজতে ইসলাম। ইসলাম রক্ষার ধোঁয়া তুলে বিভিন্ন রকম ফতোয়া দেওয়া এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে ইসলামিক বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের জন্য এই হেফাজতে ইসলাম সুপরিচিত। সম্প্রতি ভারতবর্ষেও দলটি পরিচিতি লাভ করেছে কারণ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে গোটা বাংলাদেশে বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে এই দলটির নেতাকর্মীরা। দলটির যুগ্ম- মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক একটি অন্যতম আলোচিত নাম। বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য বক্তব্য এবং উগ্রপন্থী বক্তব্যের জন্য এই মাওলানা মামুনুল হক সুপরিচিত।

হেফাজত নেতা মামুনুল হক সংশ্লিষ্ট সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় বেশ আলোচিত হয়। গত ১৫ মার্চ তারিখে ইসলামিক বাংলাদেশের দিরাইয়ে একটি সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে হেফাজতের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে মামুনুল হক উপস্থিত ছিল এবং সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখে ও হুমকি দেয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় নোয়াগাও গ্রামের ঝুমন দাস নামের এক হিন্দু যুবক। মামুনুল হকের বক্তব্যের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করে। এই পোস্টকে কেন্দ্র ক্ষুব্ধ হয়ে ঝুমনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানির অভিযোগ তুলে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের অনুসারী উগ্র মুসলিমরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে হামলা করে। হামলার পাশাপাশি তারা এই হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালায়

এখানেই থেমে থামেনি মামুনুল হকের অনুসারী হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা ইসলামিক  বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রান্তে তান্ডব চালাতে থাকে৷ এরই ধারাবাহিকতায় তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে ঘিরে পরিকল্পনা করতে থাকে। যার অংশ হিসেবে মামুনুল হকদের দিকনির্দেশনায় নতুন করে ছক সাজাতে থাকে হেফাজতে ইসলাম।

নরেন্দ্র মোদীর সফরকে ঘিরে পরদিন হরতালের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম। এই হরতালের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামুনুল হকদের অনুসারী হেফাজতে ইসলাম সমর্থকরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর পুনরায় তান্ডব চালায়। পুলিশ ও হেফাজত সমর্থক উগ্র মুসলিম জনতার মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বর্তমানে বিরাজ করছে ও বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালী বাড়ি, দক্ষিণ কালীবাড়ি, রেলওয়ে স্টেশন, জেলা পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, প্রেস ক্লাব, পৌর মিলনায়তন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, পুলিশ লাইনস, সদর থানা, খাঁটি হাতা বিশ্বরোড হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয় হেফাজত সমর্থক উগ্র মুসলিম জনতা।

শুধু এসবই নয়। হেফাজত নেতা মামুনুল হক আরও বিভিন্ন কারণে আলোচিত নাম। ধর্মীয় উস্কানীমূলক বক্তব্য, হিন্দু ধর্মের অবমাননাকর বক্তব্য, নারীবিরোধী বক্তব্য ইত্যাদির জন্যেও বেশ সুপরিচিত। নারীদের পড়াশোনা, নারী স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে ধর্মীয় বিধান টেনে বিরোধিতা করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে মামুনুল হক। ধর্মীয় বিধান টেনে মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেও, বাস্তবে মামুনুল হকরা বড় স্তরের দ্বিচারিতা নিয়ে বাস করে। সম্প্রতি ইসলামিক বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে পরস্ত্রীকে সাথে নিয়ে রাতযাপনের সময় স্থানীয় জনতা হাতে আটক হয় এই মাওলানা মামুনুল হক। স্থানীয় জনতা খবর পায় যে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক অন্য এক নারীকে নিয়ে রিসোর্টে অবস্থান করছে। তারা সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে।

আটকের এক পর্যায়ের সে জানায় যে এই নারী তার “দ্বিতীয় স্ত্রী”। কিন্তু বাস্তবে এই নারী অন্য এক ব্যক্তির স্ত্রী। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বাঁচার জন্যে অন্য ব্যক্তির স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দেয় মাওলানা মামুনুল হক।

কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। এক পর্যায়ে ফাঁস হয়ে যায় তার নিজের আসল স্ত্রীর সাথে অডিও কলের রেকর্ডিং৷ সেখানে তাকে স্বীকার করতে শোনা যায় যে ওই নারী অন্য এক ব্যক্তির স্ত্রী। নিজের স্ত্রীকেও সে শিখিয়ে দেয় যে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে যে তার স্ত্রী “ব্যাপারটি” জানে।

ঘটনার পর স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই রিসোর্টে হামলা করে এবং ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে তারা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী একত্রে রাত্রিযাপন করতেই পারে। বিষয়টি ব্যক্তিস্বাধীনতার। কিন্তু ব্যক্তি যখন মাওলানা মামুনুল হক, তখন বিতর্ক আসবেই। কারণ এই মামুনুল হকরাই বিভিন্ন ধর্মীয় বিধান তুলে এক প্রকার ফতোয়া জারি করতেন। কি রয়েছে সেই বিধানে? পরকিয়া বা Adultery হলো দুজন নারী-পুরুষ এর মধ্যে যৌনসম্পর্ক যাদের মধ্যে একজন বিবাহিত তবে অপরজনের সাথে নয়। এক্ষেত্রে দুজনই বিবাহিত হতে পারে, আবার একজন কেবল বিবাহিত হতে পারে। তবে, দুজন পরস্পর বিবাহিত নয়। এ দুই ক্ষেত্রে দু রকম শাস্তি আছে। দুটোই আলোচনা করছি… তবে, এটা মনে রাখতে হবে এ শাস্তি কেবল ইসলামিক রাষ্ট্রতেই দেয়া যাবে। এবং শরিয়া সরকার সেটা প্রয়োগ করবে। কোন ব্যক্তি না। পরকিয়ার শাস্তি হলো, যে অবিবাহিত তাঁকে ১০০ বেত্রাঘাত করতে হবে। আর যে বিবাহিত তাঁকে শরিয়াতের আইন মাফিক পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। আর যদি দুজনেই বিবাহিত হয় তবে দুজনেই পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড। যাতে করে সে তার কুকর্মের উপযুক্ত ফলাফল ভোগ করতে পারে আর হারাম কাজে তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন করে মজা উপভোগ করেছিল, এখন তেমনি করে ঠিক তার উল্টা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। এই মৃত্যুদণ্ডেও যদি তাদের পাপের পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত না হয় এবং তারা উভয়েই তওবা না করে মারা যায় তাহলে তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেওয়া হবে।

মাওলানা মামুনুল হকদের মতো ব্যক্তিরা নিজেদেরকে ব্যপক ধার্মিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ধর্মীয় বিধানের ধোঁয়া তুলে শরিয়া আইন দাবী করলেও, বাস্তবে নিজেরা ধর্মের বিধানের ধারেকাছেও থাকেনা, থাকলেও সেটা লোকদেখানো। ভেতরে নিজেদের ফ্যান্টাসি ঠিকই তারা বজায় রাখে। অন্যের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেও নিজেদের ক্ষেত্রে সবকিছু হালাল মনে করে, কারণ তারা আলেম। তারা চিৎকার করে বিভিন্ন সভায় বলে যে শরিয়া আইন বিশ্ব নেই বলে পৃথিবীতে ব্যভিচার, অবাধ যৌনতা ইত্যাদি বেড়ে গেছে। কিন্তু আদতে মামুনুল হকরা শরিয়া মেনে চললেও নিজেদের অবাধ যৌনতা ঠিকই বজায় রাখে বিভিন্ন উপায়ে। এদিকে অন্যদেরকে শরিয়া মেনে চলতে বাধ্য করে। আর অন্যদিকে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথায় কথায় নির্যাতন চালিয়ে নিজেদেরকে ইসলামের রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু এই ইসলামের রক্ষকদের আসল রূপ এভাবেই বেরিয়ে পড়ে। মাওলানা মামুনুল হকের এই পরস্ত্রী সহ আটক হওয়ার ঘটনার সাথে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর দূর পর্যন্ত কোন সম্পর্ক না থাকলেও গতকাল রাতে হেফাজত নেতাকর্মীরা আক্রোশ মেটানোর জন্য কক্সবাজারে মহেশখালীর পাল পাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। হেফাজতের নেতাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য ইসলামিক বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে বারবার এভাবে আক্রান্ত হতে হয়। কারণ তারা এটা বুঝিয়ে দিতে চায় যে একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে শুধু তারাই যা ইচ্ছা করতে পারবে। অন্যেরা পারবে না। কিন্তু সকলকে ইসলামের বিধান অনুযায়ী চলতে হবে। যারা চলবে না এই হিন্দুদের মতো বাস করতে হবে, নির্যাতিত ও অত্যাচারিত হয়ে, কারণ তারা দিনশেষে কাফের, মালাউন।